বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মসজিদ গুলোর মধ্যে খুবই বিখ্যাত ও নজরকাড়া মসজিদ হলে টাঙাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদ। মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত।এই মসজিটির বিশেষত্ব হলো এখানে সর্বমোট ২০১ টি গম্বুজ রয়েছে।
এটা একটি মসজিদ হলেও, এর বাহ্যিক সৌন্দর্য ও অসাধারণ নকশার কারনে অনেক মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। শুধু আমাদের দেশের লোকজনই নয় বরং এটা বিদেশি ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদেরও নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।তাই প্রতিদিনই দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এই মসজিদটি দেখতে আসে।
কীভাবে আসবেন টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ২০১ গম্বুজ মসজিদে?
যেহেতু মসজিদটি টাঙ্গাইলে অবস্থিত তাই প্রথমে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে আমাদেরকে টাঙ্গাইল সদরে আসতে হবে।ঢাকার মহাখালী, সায়েদাবাজ,যাত্রাবাড়ী থেকে সরাসরি টাঙ্গাইল সদরের বাসে করে টাঙ্গাইল আসতে পারবেন।বাস ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে বাসে অথবা সিএনজি করে আসতে হবে গোপালপুর উপজেলায়। সেখান থেকে সিএনজি বা লোকাল অটোতে করে সরাসরি চলে আসতে পারবেন একদম ২০১ গম্বুজ মসজিদে।
গোপালপুর থেকে যে কোনো অটো বা সিএনজি সরাসরি মসজিদের সামনে পর্যন্ত আসবে।এক্ষেত্রে অটোতে বা সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া পরবে ২০ থেকে ৩১ টাকা।
রেলপথে আসতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বা এয়ারপোর্ট রেলওেয়ের স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে আসতে হবে টাঙ্গাইল জেলা সদরে। সেখান থেকে বাস বা সিএনজি করে চলে আসবেন গোপালপুর। গোপালপুর থেকে যে কোনো লোকাল অটো বা সিএনজি করে সরাসরি ২০১ গম্বুজ মসজিদের সামনে।
এখানে আসতে বাজেট কতো রাখবেন?
২০১ গম্বুজ মসজিদ ঘুরতে আসতে চাইলে আপনার বাজেট খুব বেশি লাগবে না।কারণ মসজিদে ঢুকতে বা মসজিদ পরিদর্শন করতে কোনো প্রকার টিকেট মূল্য নেই।মানে এই মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলেই যে কোনো সময় এখানে এসে মসজিদ পরিদর্শন করতে পারবে। খরচ বলতে শুধু গাড়িভাড়া, খাওয়া দাওয়া, কিছু কিনতে চাইলে কেনাকাটার খরচ।এখানে সেরকম উন্নতমানের কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁ নেই।যে কয়েকটি খাবারের দোকান তাও লোকাল ধরনের হোটেল।
তাই খাওয়া দাওয়ার বিষয়েও খুব বেশি খরচ হবে না।সাধারণ হোটেলে আমরা সচরাচর যেরকম বিল দেই ঠিক তেমনই বিল হবে এখানেও।আছে ছোট একটি ভাসমান মার্কেট যেখানে যে কোনো পণ্যের মূল মাত্র ৯৯ টাকা।তাই আপনার সাধ্যের মধ্যে আপনি চাইলে যে কোনো কিছু কেনাকাটা করতে পারবেন। সবমিলিয়ে একদম কম খরচে আপনি ঘুরে আসতে পারবেন টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ২০১ গম্বুজ মসজিদ থেকে।
কেন ঘুরতে আসবেন ২০১ গম্বুজ মসজিদে?
আপনি যদি চান গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে, কোলাহল মুক্ত মনোরম পরিবেশে সুন্দর একটা মসজিদ দেখতে তাহলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ২০১ গম্বুজ মসজিদ। চারদিকে সবুজ মাঠ ঘাট,গাছগাছালি ও সবুজ গ্রামের মধ্যে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে বিশাল এই মসজিদটি।চোখ ধাধানো সোনালী পাথরের মোজাইক করা মসজিদটির উপর যখন দুপুরের কড়া রোদ পড়ে দেখে মনে হয় যেন এটি একটি আস্ত সোনা দিয়ে বাধাই করা মসজিদ।
সুবিশাল এই মসজিদের ছাদে আছে ২০১ টি গম্বুজ ও লম্বা লম্বা ৯ টি মিনার।২০১ টি গম্বুজের জন্যই মূলত এই মসজিদটি এতো বেশি বিখ্যাত।
মসজিদের পাশেই আছে ছোট একটি পার্ক এখানে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইড।যেমনঃ নাগরদোলা, যান্ত্রিক নৌকা চড়কি,পাম্প স্লিপার ইত্যাদি। রাইডগুলোর টিকপট মূল্যও তুলনামূলক অনেক কম।প্রতিটি রাইডের টিকেট মূল্য মাত্র ৩০ টাকা।
পার্কের পাশেই আছে ছোট একটি মার্কেট।এই মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই যে কোনো পণ্যে মাত্র ৯৯ টাকা।এটাকে ৯৯ টাকার মার্কেট বললেও ভুল হবে না।এই মার্কেটে পাওয়া যায় ওয়াল মেট, শো পিস,ক্রোকারিজ আইটেম সহ আরও অনেক কিছু।আছে অনেকগুলো খাবারের দোকান।এখানকার লোকাল স্টল গুলোর আচার খুবই সুস্বাদু । বিভিন্ন ধরনের উপাদান মিলিয়ে আচার তৈরি করা হয়, এটা ওদের সিক্রেট রেসিপি এবং একদমই ইউনিক।
মসজিদের আসল আকর্ষণই হলে ছাদ।ছাদে উঠলে দেখা যায় চোখ ধাধানো সোনালী রঙের ২০১ টি গম্বুজ। গম্বুজ গুলোর নকশাও করা হয়েছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে।মসজিদে মহিলাদের নামাজ পড়ার জন্য আছে সু ব্যবস্থা। চাইলেই আপনি এখানে নামাজ পড়তে পারবেন।
এখান নিয়ম শৃঙ্খলা অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর। মসজিদের ছাদে ওঠার জন্য আছে ২ টি সিড়ি।সামনের সিড়ি দিয়ে শুধুমাত্র পুরুষরা ছাদে উঠতে পারবে আর পেছনের সিড়ি দিয়ে মহিলারা উঠবে কেউ চাইলেই এই নিয়ম এলোমেলো করতে পারবে না। কারন প্রতিটা সিড়ির প্রবেশ পথে কর্তৃপক্ষের লোক পাহারায় থাকে।
ছাদের ওপরেও মাঝ বরাবর আছে নেটের পার্টিশন করা তাই কোনো পুরুষ চাইলেই মহিলাদের পাশে আসতে পারবে না। আবার কোনো মহিলাও পুরুষের সাইডে এসে নিয়ম ভঙ্গ করতে পারবে না।মসজিদ কর্তৃপক্ষের এই নিয়মটি সবার কাছেই ইতিবাচক প্রশংসা পেয়েছে।তাই চাইলেই যে কেউ এখানে এসে সুন্দর একটি দিন উপভোগ করতে পারবেন।
যাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
প্রথম যে বিষয়টি মাথায় রাখবেন তা হলো মসজিদটি পুরোপুরি একটি গ্রামের ভেতর।তাই বেশি রাত হলে গাড়ি পেতে সমস্যা হবে।তাই সকাল সকাল যাবেন এবং সন্ধ্যার মধ্যেই ব্যাক করার চেষ্টা করবেন।এখানে রাতে থাকার জন্য কোনো হেটেলের ব্যবস্থাও নেই।হোটেল ভাড়া নিতে চাইলে আপনাকে টাঙ্গাইল জেলা সদরে আসতে হবে।তাই এখানে দিনে দিনে ট্যুর শেষ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তা হলো, এখানে খাওয়ার পানির কোনো সুব্যবস্থা নেই । একটা মাত্র টিউবওয়েল আছে কিন্তু তার পানিও কিছুটা দুর্গন্ধ যুক্ত।তাই এখানে পানি কিনে খেতে হবে বা আসার সময় সাথে করে পানি নিয়ে আসতে হবে।
তৃতীয়ত, এখানে কোনো ভালো মানের রেস্তোরাঁ বা হোটেল নেই। যে কয়েটা খাওয়ার হোটেল আছে সেগুলো লোকাল হোটেল। যাদের স্ট্রিট ফুড বা লোকাল খাবারে সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই সাথে করে খাবার নিয়ে আসা উচিত।
২০১ গম্বুজ মসজিদে আমার অভিজ্ঞতা
এটা ছিল আমাদের ফ্যামিলি ট্যুর। আমরা গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইলের বাসে করে টাঙ্গাইল জেলা সদরে পৌছাই সকাল ১০ টায়।সেখান থেকে সিএনজি করে প্রথমে গোপালগঞ্জ ও পরে আবার সিএনজি করে সোজা ২০১ গম্বুজ মসজিদের সামনে।মসজিদের সামনে গিয়ে তো আমরা সবাই অবাক, এতো সুন্দর একটি মসজিদ এই গ্রামের মধ্যে।
ছাদে উঠতে গিয়ে দেখি পুরুষ মহিলা একসাথে উঠতে দিচ্ছে না তখন আমরা ২ টি দলে ভাগ হয়ে গেলাম এবং প্লান করলাম ছাদে গিয়ে আবার সবাই মিলিত হবো কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখলাম এখানেও পার্টিশন করা। তাই দুই দলে ভাগ হয়েই আমরা মসজিদের ছাদ পরিদর্শন করলাম।তারপর নিচে নেমে আমরা পার্কের দিকে গেলাম।যান্ত্রিক নৌকার চড়কিতে উঠে তো আমি শেষ।
মনে হচ্ছিলে আমি উল্টে পড়ে যাবো। কোনোমতে এখান থেকে নেমে আর কোনো রাইডে ওঠার সাহস পেলাম না। ৯৯ টাকার মর্কেট থেকে বেশ কিছু কেনাকাটা করে আমরা সবাই মিলে আচার খেলাম।এখানকার আচারটা আমার কাছে সবথেকে বেশি ইউনিক মনে হয়েছে।
আমাদের সব থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে কাবার পানির জন্য এখানকার টিউবওয়েল এর পানি ছিল দুর্গন্ধযুক্ত। তাই পানি কিনে খেতে হয়েছে।
মাঝখানে কয়েকজন বিদেশী ট্যুরিস্টদের সাথে দেখা হয়েছিল আমাদের। তাদের সাথে ইংরেজিতে মতবিনিময় করে জানতে পারলাম তারা কাজাখস্তান থেকে এসেছেন।তাদের সাথে কথা হয়ে খুব ভালোই লাগলো। সব মিলিয়ে দিনটি অনেক অনেক ভালো কেটেছিল।