হোটেল পেনিনসুলা এর লোকেশন, রুম ভাড়া, সুযোগ সুবিধা ও বুকিং পলিসি

প্রতিটি মানুষই বিনোদন প্রিয়! আর অনাবিল বিনোদন মানেই হলো নতুন জায়গায় বেড়ানো, ঘোরাঘুরি আড্ডা হই হুল্লোড় মজ মাস্তি আর খাওয়া। আর তাই আজ আমরা আলোচনা করব চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেল সম্পর্কে। যা এমন একটি হোটেল যেখানে থাকার জন্য রয়েছে সুনিবিড় পরিবেশ। এবং যেখান থেকে পুরো চট্টগ্রাম ঘুরে দেখা যাবে খুব নির্বিঘ্নে এবং অনায়াসেই। একইসাথে হোটেল পেনিনসুলার রয়েছে নানান সুযোগ সুবিধা। যা যেকোনো ভ্রমন পিপাসুদের সকল প্রয়োজন মেটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাহলে শুরু করা যাক হোটেল পেনিনসুলার আদ্যোপান্ত।

হোটেল পেনিনসুলার অবস্থান

হোটেল পেনিনসুলা একটি ৪ তারকা হোটেল। যা চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় সার্কেলের নিকটে  অবস্থিত। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেট কারে করে হোটেল পেনিনসুলায় আসতে সময় লাগবে (যানজট বিহীন) মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে হোটেল পেনিনসুলায় আসতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তাছাড়া হোটেল পেনিনসুলা এমন জায়গায় অবস্থিত, যেখান থেকে চট্টগ্রামের প্রায় সব জায়গায় খুব সহজে এবং অল্প সময়ে যাওয়া যায়। 

হোটেল পেনিনসুলার দাপ্তরিক ঠিকানা: 

বুলবুল সেন্টার, ৪৮৬/বি বা নিজাম রোড, সিডিএ এভিনিউ, চট্টগ্রাম।

হোটেল পেনিনসুলার রুমের ধরণ ও ভাড়া

বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হোটেল পেনিনসুলায় রয়েছে মোট চার ধরনের রুম সার্ভিসের সুবিধা। এগুলো হচ্ছে, 

  • ডিলাক্স ডাবল রুম
  • সুপিরিয়র ডিলাক্স ডাবল রুম 
  • এক্সিকিউটিভ টুইন রুম
  • বিলাশবহুল স্যুট

ডিলাক্স ডাবল রুম

এই রুমে আকার হচ্ছে ২৬৫ বর্গফুট। যেখানে একজন অতিথি পাচ্ছেন বিশাল আরামদায়ক ব্যয়বহুল বিছানা। কাঠের তৈরি মেঝে, সুন্দর চেয়ার টেবিল,  টিভি, মিনি ফ্রিজ,  মিনি বার, চা কিংবা কফি তৈরির চমৎকার সুবিধা। মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার জন্য রয়েছে ইলেকট্রনিক লকার। আর এই ধরনের রুমে এক দিনের ভাড়া রাখা হয়েছে (সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী যাবতীয় ভ্যাট টেক্স ছাড়া) ৮৭ ডলার বা ৯৫০০ টাকা।  

সুপিরিয়র ডিলাক্স ডাবল রুম 

এই রুম গুলোর আকারও ২৬৫ বর্গফুট। তবে এই রুমে রয়েছে বিশাল বড় সাইজের বিছানা। যেখানে তিন জনের একটি পরিবার যথেষ্টেরও বেশী জায়গা নিয়ে আরামে ঘুমাতে পারেন। এই রুমে নূন্যতম দুইজন অতিথি রাত্রিযাপন করতে পারেন। আর এই সুপিরিয়র ডিলাক্স ডাবল রুমের এক দিনের ভাড়া রাখা হয়েছে (সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী যাবতীয় ভ্যাট টেক্স ছাড়া) ৯৭ ডলার বা ১০৫০০০ টাকা।  

hotel book

এক্সিকিউটিভ টুইন রুম

এই রুমের বিশেষত্ব হলো এখানে রয়েছে দুটি বড় আকারের ব্যয়বহুল বিছানা। সেইসাথে রয়েছে সেগুন কাঠের মেঝেসহ অন্যান্য যাবতীয় সুবিধা। আর এই এক্সিকিউটিভ টুইন রুমের এক দিনের ভাড়া ধরা হয়েছে (সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী যাবতীয় ভ্যাট টেক্স ছাড়া) ৯৭ ডলার বা ১০৫০০ টাকা।  

বিলাশবহুল স্যুইট

এই রুম গুলোর আকার হচ্ছে ৮০০ বর্গফট! এই রুম গুলোর ডিজাইন এবং ইন্টেরিয়রে খুবই অসামান্য চাকচিক্য পরিলক্ষিত হয়। শুধু তাইনয় এইসব রুমের সিলিং থেকে ফ্লোর পর্যন্ত রয়েছে কাচেঁর জানালা। সেইসাথে রয়েছে আলাদা করে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থাসহ ব্যবসায়িক মিটিং করার জন্য যথেষ্ট সুন্দর স্পেস। আর এই বিলাশবহুল স্যুইট রুমের এক দিনের ভাড়া ধরা হয়েছে (সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী যাবতীয় ভ্যাট টেক্স ছাড়া) ১৫০ ডলার বা ১৬০০০ টাকা।  

হোটেল পেনিনসুলার সুযোগ সুবিধা

যেকোনো হোটেলের আউটলুকের চাইতে তার ভিতরের লুকই অতিথিদের বেশী আকৃষ্ট করে। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখে হোটেল পেনিনসুলা তার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা অতিথিদের জন্য নিবেদন করছে। যেখানে শুধু রাত্রিযাপন নয় বরং যেকোনো সভাসহ ব্যবসায়িক সেমিনার  আয়োজনের জন্যও রয়েছে ব্যপক সুযোগ সুবিধা। এছাড়া, আরো যেসব সুবিধা পাচ্ছেন:

  • কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনার
  • স্যাটেলাইট টেলিভিশন
  • বাথরোব এবং হেয়ার ড্রায়ার। 
  • আন্তর্জাতিক সরাসরি ডায়ালিং
  • মিনি বার
  • ইলেকট্রনিক নিরাপদ লকার। 
  • ২৪-ঘন্টা রুম সার্ভিস। 
  • লন্ড্রি সেবা
  • আগমনে স্বাগতম পানীয়। 
  • লেগুনা রেস্টুরেন্টে কমপ্লিমেন্টারি বুফে ব্রেকফাস্ট। 
  • রুমে আগমনে ফ্রুট বাস্কেট অভ্যর্থনা ।
  • প্রতিদিন মিনারেল ওয়াটারের দুটি ৫০০ মিলি বোতল।
  • রুমে চা/কফি তৈরির সুবিধা।
  • প্রতিদিন একটি দৈনিক সংবাদপত্র।
  • ফিটনেস সেন্টারের সুবিধা। 
  • সুইমিং পুল
  • ২৪ ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধা  
  • সম্পূর্ণ জিম, এবং স্টিম বাথসহ  স্পার সুবিধা। 
  • ব্যাংক
  • মিনি মার্কেট

হোটেল পেনিনসুলার রেস্তোরাঁ ও বার

একজন সাধারণ অতিথি ও ব্যবসায়িক যেকোনো প্রোগ্রামের জন্য হোটেল পেনিনসুলার রয়েছে নিজস্ব নান্দনিক বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ও বার। যেখানে একজন অতিথি তার কাছের কিংবা প্রিয়জনদের সাথে চমৎকার স্বরনীয় কিছু সময় কাটাতে পারেন। 

লেগুনা মাল্টি কুজিন হোটেল 

পেনিনসুলার এই লেগুনা মাল্টি কুজিন রেস্তরাঁয় এশিয়ার প্রায় দেশের যাবতীয় খাবারের রয়েছে বিস্তৃত সমারোহ। এই রেস্তোরাঁটি আন্তর্জাতিক মানের বুফেসহ নানান লোভনীয় খাবারে ভরপুর। এই রেস্তোরাঁর সকালের নাস্তার সময়সূচি হচ্ছে সকাল ০৬:৩০ মিনিট থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত। দুপুরের খাবার দুপুর ১২:৩০ মিনিট থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। রাতের খাবারের সময়সূচি সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত। 

ফ্ল্যামিঙ্গো ক্যাফে

এই ফ্ল্যামিঙ্গো ক্যাফেটি সম্প্রতি নতুন উদ্ভোধন করা হয়েছে। এখানে দেশীয় ও উপমহাদেশয়ী মেনুর পাশাপাশি কোরিয়ান এবং জাপানিজ খাবারের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। একইসাথে থাকছে ওয়াইনের দারুন সমাহার। এই রেস্তোরাঁর সময় সকাল ১১ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত। 

আইলস বার 

এই আইলস বার ক্যাফেটি একটি লেট নাইট ক্যাফে। আর এই ক্যাফে খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। (শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার)

স্পোর্টস লাউঞ্জ

অতিথিদের প্রাণবন্ত বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে চমৎকার স্পোর্টস বার। যা চট্টগ্রামে একমাত্র পেনিনসুলাই চালু করেছে। এখানে রয়েছে পুল, ফোসবল, টপ-এ ডার্ট ইত্যাদি। স্পোর্টস বার শুধুমাত্র আবাসিক অতিথি এবং হোটেলের প্রিভিলেজ কার্ড সদস্যধারীদের জন্য জন্য। 

হোটেল পেনিনসুলার মিটিং ইভেন্ট 

এই হোটেলে অতিথিদের ব্যক্তিগত রুম সার্ভিস ছাড়াও যাবতীয় ব্যবসায়িক সভা সেমিনার ও কর্মীসভারও আয়োজনের সুবিধা রয়েছে। আর এই জন্য হোটেল পেনিনসুলা নানান সুযোগ সুবিধা অফার করে। বিশেষ করে সমস্ত অনুষ্ঠানের জন্য সুস্বাদু খাবার ও অত্যাধুনিক ভোজ, মার্জিত কর্পোরেট সেটিংস, যেকোনো ট্রেড শো, প্রাইভেট ফাংশন ইত্যাদি তারা খুবই অভিজ্ঞতার সাথে পালন করে।

১। ডালিয়া

৪০০০ বর্গফুট এলাকার এই অতিথিশালায় ৫০০ জন পর্যন্ত অতিথি বসার ব্যবস্থা রয়েছে। যা বিবাহ, কর্মশালা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ব্যবসার প্রচার প্রচারণা ইত্যাদির মতো বড় বড় জমায়েতের জন্য খুবই উপযুক্ত।

২। সিশেল কনফারেন্স রুম

যে কোন ধরনের কর্পোরেট মিটিং, বোর্ড মিটিংসহ যাবতীয় কনফারেন্সের জন্য এই সিশেলে কনফারেন্স রুমটি খুবই উপযুক্ত। 

৩। জিনিয়া

এই জিনিয়া হলটি মূলত ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ, জন্মদিনের পার্টিসহ যেকোনো প্রশিক্ষণ ও ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্ধারিত।

৪। কোরাল রুম

কোরাল রুম গুলো মূলত লেগুনার সংলগ্ন রুম। যেখানে ব্যবসায়িক মিটিং এবং নিরিবিলিতে লাঞ্চ করার জন্য উপযুক্ত।

হোটেল পেনিনসুলার স্কাইপুল

হোটেল পেনিনসুলার ১৬তম তলায় রয়েছে আউটডোর সুইমিং পুল। এটি খোলা থাকে সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত।

ভার্চুয়াল ট্যুর

যেকোনো অতিথি তার রুম বুক করার আগে চাইলে হোটেল পেনিনসুলার ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ভার্চুয়াল ট্যুর দিতে পারেন। এই ভার্চুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে এই হোটেলের যাবতীয় বিষয় সরাসরি ৩ডি ভার্সনে দেখতে পারবেন। 

হোটেল পেনিনসুলার ঠিকানা 

বুলবুল সেন্টার, ৪৮৬/বি বা নিজাম রোড, সিডিএ এভিনিউ, চট্টগ্রাম ৪১০০, বাংলাদেশ। টেলিফোন: +৮৮- ০২৩৩৩৩৫০৮৬০

ইমেল: [email protected]

ঢাকা অফিস 

৮/এ চন্দ্রশীলা সুভাস্তো টাওয়ার

৬৯/এ গ্রিন রোড (পান্থপথ), ঢাকা-১২০৫

মোবাইল: +৮৮০-১৮৫৫৫৫৪৫৫

বুকিং করার উপায়

যেকোনো কেউ হোটেল পেনিনসুলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে যেকোনো রুম বুকিং দিতে পারবেন। একইসাথে দেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে রুম এবং আনুসাঙ্গিক সবকিছু বুক করা যায়। 

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

  • হোটেল পেনিনসুলার নীতিমালা অনুযায়ী একজন অতিথির চেক-ইন দুপুর ২ এবং চেক আউট দুপুর ১২টায়। 
  • চেক-ইন করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৮। 
  • এই হোটেলে পোষা প্রাণী অনুমোদিত নয়। 
  • শিশু কিংবা অতিরিক্ত ব্যক্তির জন্য আলাদা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।
  • অতিথিরা হোটেল রিসেপশন থেকে ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সের টিকিট বুক করতে পারেন। 
  • চেক-ইন করার সময় অতিথিদের অবশ্যই একটি ছবি এবং ক্রেডিট কার্ড দেখাতে হবে। 
  • ১৮ বছরের কম বয়সী অতিথিরা শুধুমাত্র পিতামাতা বা সরকারী অভিভাবকের সাথে চেক ইন করতে পারবেন। 

শেষ কথা

হোটেল পেনিনসুলা সর্বদাই তাদের অতিথিদের সন্তুষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। তাই আমরা চেষ্টা করেছি একজন ভ্রমনপিপাসু ও একজন ব্যবসায়িককে হোটেল পেনিনসুলার সমস্ত তথ্য সরবরাহ করতে। আশাকরি এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি সবার উপকারে আসবে। 

Scroll to Top