হজ্ব ভ্রমন গাইড – কি নিবেন? কোথায় থাকবেন? কি খাবেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর

আমাদের এই পোস্টটি কোন আলেম কিংবা মুফতির লেখা না এবং কোন আলেম দ্বারা যাচায় করাও হয়নি তাই পোস্টের উল্লেখিত কোন কিছুতে ভুল থাকতে পারে কিংবা বুঝার ভুল থাকতে পারে। এজন্য আপনি যখন ওমরাহ্‌ কিংবা হজ্বে যাবেন তখন কোন আলেম এর কাছ থেকে হজ্ব এর বিস্তারিত জেনে নিবেন।

আমাদের এই পোস্টটি এক আপুর লেখা তিনি তার নিজের হজ্ব এর অভিজ্ঞতা থেকে নিজের মত করে কিছু জানাতে চেষ্টা করেছেন। এটা মূলত কোন হজ্ব এর নিয়ম, দোয়া, আমলের গাইড না বরং এই পোস্ট কে বলতে পারেন হজ্ব এর জন্য বাংলাদেশ থেকে সৌদি যাওয়ার এবং থাকার গাইড। আমাদের আজকের পোস্টটি পরে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে বিমান বন্দরে কখন কি হয়, কোথায় ব্যাগ নিবে, আপনি কি কি সাথে নিবেন, হজ্বে গিয়ে কোথায় কিভাবে থাকবেন, সেখানে কি কি পাবেন আর কি পাবেন না। সাথে কি নিবেন এসব বিষয়ে জানতে পারবেন এই পোস্ট থেকে।

অনেকে আছে যারা বিমান ভ্রমণ কিংবা বাংলাদেশের বাইরে কোন দেশে এই হজ্ব এর জন্যই যান তাই তাদের অনেকের জন্যই বিমান বন্দরের কাজ, সৌদি গিয়ে কোথায় কি করবে, এসবে বিপাকে পড়ে যায়। এই পোস্ট আপনাকে ঐ তাল গোল পাকানো থেকে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে আশা করি। 

এই পোস্ট এর মাধ্যমে হজ্ব এর আমল/ ফরজ/ সুন্নত সম্পর্কে জানানো আমাদের মূল উদ্দেশ্য না বরং কিভাবে যাবেন কি খাবেন কি কি সমস্যা হতে পারে সেসব কিভাবে সমাধান করবেন এই বিষয়ে একজন বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হজ্ব করা ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরা।

আমাদের সাজেশন

  1. হজ্ব নিয়ে আস সুন্নাহ ট্রাস্ট কর্মশালা আয়োজন করে। তারা হজ্ব এর বিস্তারিত জানিয়ে থাকে।তাদের সাথে যোগাযোগ করুন
  2. আস সুন্নাহ ট্রাস্টের হজ্ব গাইড বিষয়ক বই আছে সেটি পড়ুন।

হজ্ব এর দিন গুলো – লেখিকাঃ Sabrina Lizee

যায় হোক এবার মূল লেখা শুরু করা যাক।  লেখিকার নামঃ Sabrina Lizee কারো যদি আইডি লিংক প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের পেজে নক করবেন। আমরা লেখিকার অনুমতি সাপেক্ষে লিংক দিতে পারি। 

উমরাহ্‌

হজ্ব – প্রথম ধাপঃ হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু ও ওমরাহ

হজে যাবার আগে,আমার একটা ধারনা ছিলো ৪০দিনই হজ এবং ৪০দিনই এহরাম পরে থাকতে হবে। কিন্তু পরে বুঝতে ব্যাপারটা পারি তেমন না।হজ্বে যাবার আগে অনেকেরই এমন অনেক বিষয় এ অনেক প্রশ্ন থাকে। তাই, যারা সামনে হজ্ব করতে যাবেন এবং আগে ওমরাহ্ করেন নাই। আমার এই লিখাটা তাদের জন্য। প্রথমেই শুরু করছি, হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা থেকেঃ

ওমরাহ্ – মক্কায় প্রবেশ করলেই আপনাকে ওমরাহ্ করতে হবে

১। হজের ফ্লাইট-এর নির্দিষ্ট সময়ের ১২/১৪ ঘন্টা আগে হজ্ব ক্যাম্প এ রিপোর্ট করতে হয়। এই সময়টা বিশাল লাইন এ দাঁড়িয়ে ব্যাগ চেকিং, পেপার চেক করা,এরপর বড় ব্যাগগুলো রেখে দিবে।
২। ছোট হ্যান্ড ব্যাগ সহ আপনাকে বাসে করে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবে।সেখানে ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে,ফ্লাইট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। [ ইমিগ্রেশন ঢাকা এয়ারপোর্ট এ হবে।গতবছর – প্রথম ফ্লাইট জেদ্দা এয়ারপোর্ট এ হয়েছে।]

এই ১২/১৪ ঘন্টা সময় আপনার হ্যান্ডব্যাগ যা লাগবেঃ

  1. শুকনা খাবার – কেক, বিস্কিট, খেজুর,বাদাম।
  2. এয়ারপোর্ট এর খাবার কেনার দোকানে যেতে পারবেন না
  3. যাদের ডায়াবেটিক আছে, অবশ্যই জরুরী ওষুধ, ইনশুলিন সাথে রাখবেন।
  4. পানি,স্যালাইন- (প্লেন এ বসার ৪০/৫০মিনিট পর পানি পাবেন। তাই, ১২/১৪ ঘন্টার হিসাবে পানি সাথে নিতে পারেন।)
  5. মেডিসিন – ৩দিন এর জরুরী মেডিসিন(প্রেসার, ডায়াবেটিক) ,ইনহেলার নিজের সাথেই রাখবেন।
  6. ট্রাভেল পিলো( ক্লান্ত হলে যাতে চেয়ারে বসে একটু ঘুমাতে পারেন।এই পিলো আপনার ৪০দিনের পুরো সফরে অনেক কাজে লাগবে।)
  7. পাতলা জায়নামাজ, তাইমুম এর মাটি,
  8. টয়লেট পেপার(এয়ারপোর্ট এর বাথরুম এ নাও থাকতে পারে)
  9. গন্ধছাড়া সাবান(এহরাম অবস্থায় হাত দোয়ার জন্য)
  10. এক সেট কাপড়(প্রয়োজনে হলে)

প্লেনে করে জেদ্দা এয়ারপোর্ট এ পৌছালেন

প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন এ কাজ শেষ করে, লাগেজ খুজে নিতে হবে।লাগেজ এ অবশ্যই আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার ও জরুরী কন্টাক্ট নাম্বার উপরে লিখে রাখবেন।)
এরপর আপানকে পাঠিয়ে দিবে “হজ্ব প্লাজায়”। এখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে(১০মিনিট থেকে ২ঘন্টা)। বেশিও সময় লাগতে পারে।


হজ্ব প্লাজাতে টয়লেট থাকবে; তবে টয়লেট এ টিস্যু বা হ্যান্ডওয়াস থাকবেনা।
টয়লেট এ পানি থাকবে, তবে এটা একটি পাইপ এর মত। কল খুললে, বুঝে ঊঠার আগেই আপনি গোসল হয়ে যাবেন।তাই, সাবধান এ পানির পাইপ খুলবেন।


নামাজ এর যায়গা থাকবে। নামাজ এর ওয়াক্ত হলে নামাজ পরে নিতে পারবেন।
আপনার লাগেজ মোয়াল্লেম এর সাহায্যে- বাংলাদেশি সাহায্যকর্মিরা নিয়ে নিবে। এই লাগেজ আপনাকে হোটেলে পোঁছে দিবে।
এই সময় অনেকই পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন, বা ভাষা না বুঝে অন্য দলের কাউকে পাসপোর্ট দিয়ে ফেলেন।


শুধুমাত্র আপনার হজ্বের গাইডকেই/মোয়াল্লেমকেই পাসপোর্ট জমা দিবেন।
আপনার দলের সাথে বাসে উঠবেন।বাস আপনাকে হোটেল এ নামিয়ে দিবে।


হোটেলের এন্ট্রেস এ সবার লাগেজ রাখা থাকবে।আপনার ব্যাগ খুজে,নিজেকে রুমে নিয়ে রাখতে হবে।
ক্লান্ত থাকলে খাবার খেয়ে, বিশ্রাম করর নিন।তারপর ওমরাহ এর জন্য কাবার দিকে রউনা করুন।
দুপুরে অনেক রোদ থাকে। ” মাগরিব এর পর থেকে ফজর পর্যন্ত ” তাওয়াফ এর উত্তম সময়। তবে ওই সময়টা অনেক ভীর থাকে।

ওমরাহ্

ধরে নিচ্ছি আপনি ওমরাহ্ এর সকল নিয়ম যানেন। তাই এই সময় কি লাগবে সেটা বলে দিচ্ছি।তাওয়াফ – এর সময় যা লাগবেঃ


৭ দানার তসবি। (বাইতুল মোকারম এ পাবেন।)
২ ফিতার কাধের একটা ব্যাগ।(অবশ্যই নিবেন)


মাটির ঢ্যালা- তাওয়ার এর মাঝে ওজু ভেংগে গেলে, যেনো তাড়াতাড়ি তাইমুম করতে পারেন।
এখানে জুতা পরা যাবেনা। মহিলারা মোজা (এন্টি স্লিপ) পরতে পারেন।


রোদ থাকলে ছাতা, সানগ্লাস নিয়ে নিবেন। জুতা রাখার জন্য ব্যাগ। খালি পানির বোতল- ওখানে জমজম পানি পাবেন।হোটেলে খাবার জন্য বোতল ভরে নিয়ে আসবেন। (অবশ্যই নিবেন)


শুকনা খাবার – খেজুর, বিস্কিট,চকলেট (অনেকেই হাটাহাটি করে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পরেন।)
সায়ী – সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ৭বার চক্কর দেয়াকে সায়ী বলে।


যেখানে সায়ী করবেন, পুরো পাহার এসি করা আর সেখানে ফ্লোরটাও পাথরের। তাই, ফ্লোর এতোটাই ঠান্ডা থাকে যে খালি পায়ে হাটা একটু কষ্ট। মহিলারা এন্টিস্লিপ মোজা পরতে পারেন। ৭দানার তশবি, পানির বোতল,খাবার সাথে রাখবেন।চুল কেটে গোসল এর পর আপনি এহরাম মুক্ত হলেন।

দ্বিতীয় ধাপঃ সাধারন জীবনযাপন –

হজ্ব শুরু হয়ার আগে, মানে ৭ই যিলহজ্ব এর আগ পর্যন্ত, আপনাকে মক্কা ও মদিনাতে হোটেল এ থাকতে হবে। এই সময়টায়ঃ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়া, সময় মত খাবার খাওয়া ও ফ্রি টাইম এ দল বেধে ঘুরাফেরা করা, এটাই আপনার কাজ।

সরকারি ব্যবস্থাপনায়-নিজ খরচে গেলে ৩/৪জন একটি রুমে থাকতে হবে এবং একটি বাথরুম ব্যবহার করতে হবে। তাই,মানিয়ে নেয়ার মন মানুষীকতা থাকতে হবে। অন্যের যেনো কষ্ট /অসুবিধা না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

নামাজ

মক্কাতে নামাজ এর জন্য সবারই একটা তাগিদ /ইচ্ছা থাকে কাবা ঘরের সামনে নামাজ পড়ার। কাবা ঘরের সামনে নামাজ পরতে চাইলে নামাজ এর ওয়াক্ত এর অনেক আগেই(১ঘন্টা আগে) আপনাকে হোটেল থেকে বের হতে হবে। মসজিদের প্রত্যেকটি গেট এ আরবিতে ও ইংরেজিতে গেট নাম্বার লিখা থাকে।প্রবেশের সময় গেট নাম্বারটি মনে রাখুন। তবে, মসজিদ থেকে বের হতে সুবিধা হবেনা। নয়ত, ভুল পথে অন্যদিকে চলে যাবেন,তখন হোটেল পর্যন্ত আসতে অনেকটা পথ হাটতে হবে।


• আজান পরার সাথে সাথে কিছু গেট/রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।সবাইকে তখন বাধ্য হয়ে “কিং ফাহাদ এক্সটেনশন”( মসজিদুল হারাম এর বর্ধিত অংশ) এ গিয়ে নামাজ পরতে হয়। কখনো রাস্তাতেই নামাজ পরতে হয়। তাই, জায়নামাজ সাথে রাখুন।


• ৭৯ নাম্বার গেট দিয়ে ঢুকে সিড়ি দিয়ে নিচে নামলেই কাবাঘরের সামনে পোঁছে যাবেন।
• ফজর নামাজ এর একটু আগে গিয়ে, তাহাজ্জুদ নামাজ পরে নিতে পারে। ফজর নামাজ এরপর, নফল তাওয়াফ করার উপযুক্ত সময়।এই সময় আবহাওয়া সুন্দর থাকে, ভীরও কম থাকে।


• মাগরিব এর সময় এতোই ভীর থাকে যে নামাজ বা সিজদা এর যায়গা পাওয়া যায়না।তাই আসর এর নামাজ এরপর, মসজিদ এর মধ্যেই অথবা মসজিদ এর আশে পাশে অবস্থান করতে পারেন।
• দুই নামাজ এর মাঝখানে ফ্রি টাইমে কুরআন শরীর পরতে পারেন। ছোট কুরান শরিফ সাথে নিবেন। যেটা হজ্ব শেষে মসজিদে দান করে আসতে পারেন।


• মক্কাতে ছেলে মেয়েদের নামাজ এর যায়গা আলাদা। ভীর দেখলে, হঠাৎ করেই এরা(সৌদিরা) দরজা/ এস্কেলেটর (চলন্ত সিড়ি) বন্ধ করে দেয়। তাই, যেদিন দিয়ে মসজিদ এ ঢুকেছেন, সেখান দিয়েই বের হতে পারবেন সেটার কোন গ্যারান্টি নেই।


• সেজন্য, আপনার সফর সাথীর সাথে কথা বলে, আগেই একটি নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে রাখবেন।যেখানে নামাজ শেষে ২জন মিলিত হবেন।


• মসজিদের সাহায্য কর্মী হিসেবে অনেক বাংলাদেশি ভাই পাবেন। রাস্তা না চিনলে,ভয়ের কিছু নেই। উনাদের সমস্যা বললে,সাহায্য পাবেন।


•জুম্মার দিন মসজিদুল হারামে প্রচন্ড ভীর হয়।ভীর ও ধাক্কাধাক্কি দেখলে, সেই পথ,বিশেষ করে সেই সিড়ি এড়িয়ে চলুন। দূরে দাড়িয়ে ভীর কমবার জন্য অপেক্ষা করুন। আমার বেশ কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে এই ভীরের।বিশ্বাস করুন, বেচে থাকলে, হোটেলে পোঁছাতে পারবেন ইনশাল্লাহ। তাই, তাড়াহুড়ার কিছুই নেই।


•৭৯ নাম্বার গেট এর কাছে একটি লাইব্রেরি আছে। সেখানে প্রতিদিন -আসর এরপর থেকে এশা পর্যন্ত, ২/৩ দফায় “ফ্রি খাবার এর প্যাকেট” দিয়ে থাকে সৌদি সরকারের হাদি ফান্ড।প্যাকেট এ থাকে -পনিরের রুটি,জুস, পানি, বিস্কিট, ম্যামুন(খুবই সুস্বাদু খেজুরের কুকিজ)। চেষ্টা করবেন খাবারটা নিতে।


• এছাড়াও অনেক ধনী পরিবার নিজ উদ্দ্যগে মাগরিব থেকে এশার ওয়াক্ত এ,মসজিদের বিভিন্ন স্থানে গাওহা(আরবিও চা) হাজ্বীদের দিয়ে থাকেন,যা আপনার বিকেলের ঝিমঝিম ভাব দূর করবে।

হোটেল এ অবস্থান

• হোটেল এর আশে পাশে অনেক খাবার এর দোকান থাকে,যেখানে থেকে যা ইচ্ছা কিনে এনে রুমে বসে খেতে পারেন। অথবা অখানে বসেও খেতে পারেন।

• অনেকে রাইস কুকার নিয়ে যায়, নিজে রান্নার জন্য।বস্তুতপক্ষে, ,রুমের ৩/৪জন সিরিয়াল দিয়ে টয়লেট ব্যবহার করে,ঠেলাঠেলি করে লিফট উঠে, সময়মত মসজিদে পোঁছানোই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সেখানে,এসব রান্নায় অহেতুক সময় নষ্টের কোন মানে নেই।

বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসবেন

• গুড়া দুধ, চিড়া, কর্নফ্লেলক্স,চিনি (প্রতিদিন যদি হোটেলের নাস্তা খেতে ইচ্ছা না করে।) • জ্যাম/জেলি,নিউট্রেলা,স্প্রেড – ( এখানে ভালো মানের ব্রেড/পাউরুটি কিনতে পাওয়া যায়।) • লবন,সরিষার তেল,আচার,চাট মসল্লা।(দরকার মনে করলে) • *ইলেকট্রিক কেটলি- আবহাওয়া পরিবর্তন কারণে হঠাৎ করেই গলা ব্যাথা, কাশি শুরু হতে পারে। তখন গরম পানির জন্য।


• শুক্না আদা, লং, এলাচি,দারচিনি একটি ছোট কোউটায় করে অবশ্যই নিয়ে নেবেন।

• দোকান থেকে ডিম কিনে ইলেকট্রিক কেটলিতে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। স্বাদ পরিবর্তন এর জন্য।
• টি ব্যাগ,কফি,চিনি (চা/কফি নিজেই রুমে করে নিতে পারবেন।)

• শুকনা খাবার- বিস্কিট, চানাচুর,চকলেট,বাদাম,ম্যাংগোবার ।( ৩বেলা খাবারের বাইরে ক্ষুদা লাগলে অথবা লম্বা পথ যাত্রার জন্য।)
• প্লাস্টিক এর প্লেট- আজকাল রেস্তোরাতে খাবার কিনে রুমে আনলে, সাথে ওয়ান টাইম প্লেট দিয়ে দেয়। তারপরও আপনি নিজেরটা নিতে পারেন।


• মগ(চা/পানি খাবার জন্য), ছুরি (ফল কাটার জন্য), • হ্যাংগার – কাপড় মেলবার জন্য। সবাই দড়ি নিতে বলে। কিন্তু, হোটেলের রুমের মধ্যে দড়ি বাধার যায়গা পাবেন না।
• কাপড়ের ক্লিপ- হোটেলের ছাদে যদি কাপড় মেলার সুযোগ থাকে। • কাপড় কাচার সাবান ও ডিটারজেন্ট। • সাবান, শ্যাম্পু, টয়লেট পেপার – হোটেলের থেকে অল্পকিছু দিবে।তাই, নিজেরটা নেওয়াই ভালো।


• লোশন, তেল,চিরুনী, অন্যান্য যা আপনার লাগে। • অলিভ ওয়েল, ভেসলিন -(পায়ে ও নাকে ব্যবহার করতে হবে।।শুক্না ও প্রচণ্ড গরমের কারনে পা ফেটে যায়, নাক থেকেও রক্ত পরে। তাই,অবশ্যই নিবেন।)
• মোবাইল চার্জার, হ্যাডফোন,তিনপিনের সকেট ( হোটেলের সুইচবোর্ডে তিন পিনের প্লাগ লাগবে।),পাওয়ার ব্যাংক। (সবকিছু অবশ্যই নিবেন) • সুই সুতা, সেফটিপিন,কেচি। (সবকিছু অবশ্যই নিবেন।)


• ডায়রী, কলম, কুরান শরিফ, দোয়ার বই,জায়নামাজ ।(সবকিছু অবশ্যই নিবেন।) • ছাতা, ক্যাপ(লম্বা সময় ছাতা ধরে রাখতে কষ্ট হলে।),মাস্ক।( সবকিছু অবশ্যই নিবেন।)দৈনিক ব্যবহারের সব জিনিশ হোটেলের আশেপাশের দোকানে পাবেন, তবে একটু চড়া দামে।তাই কোন কিছু আনতে ভুলে গেলে টেনশন এর কিছুই নেই।

৩য় ধাপ (মূল হজ্ব) ১ম পর্বঃ হজ্ব কত প্রকার?

হজ্বে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, যারা হজ্ব করতে এসেছেন, তাদের ৫০-৬০% ভাগেরই হজ্বের মুল আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে পূর্ন ধারণা নেই। যে যা বলছেন,তাই অন্ধের মত করছেন। তারা এটাও বলতে পারবেন না, হজ্বের কোনটা ফরজ,কোনটা ওয়াজিব।কিন্তু, হজ্বে যাওয়ার আগে, হজ্বে কখন কি করতে হবে, সেটা যানা খুব জরুরী।


হজ্বের প্রস্তুতি হিসেবে, আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম ” হজ্ব কেমন? ” কেউ বলেছে অনেক কষ্ট। কেউ আবার বলেছে, বেশি কষ্ট হয়না। বস্তুত, সবাই, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই হজ্বকে বর্ণনা করেছেন।
পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো থাকলে, প্রশ্ন যেমন সহজ মনে হয়, তেমনি, “কখন কি করতে হবে”, “কোনটা ফরজ”, “কোনটা নফল” এই বিষয়গুলো যানা থাকলে, হজ্বটা আপনার কাছে অনেক সহজ হয়ে যাবে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

হজ্ব কয় প্রকার

হজ্ব ৩ প্রকার। বাংলাদেশ থেকে যারা ৩০দিন / ৪০দিন এর প্যাকেজ এ যান, তারা “হজ্বে তামাত্তু” করে থাকেন। এই হজ্বে প্রথমে উমরাহ্‌,এরপর হজ্বের জন্য আলাদা ভাবে আবার এহরাম পরতে হয়।

২য় পর্বঃ- হজ্বের ফরজ, ওয়াজিব ও দিনের হিসাব

হজ্ব হতে হবে, রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীদের মত। যার বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসের বইগুলোতে ধারাবাহিক ভাবে, তারিখ ও সময়সহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অন্যকারো ফতোয়া মত হজ্ব কবুল হবেনা। আফসোস হয় তাদের জন্য, যারা এতোগুলো টাকা দিয়ে হজ্ব করতে যাচ্ছেন, অথচ হজ্বের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। নিচে হজ্বের ফরজ ও ওয়াজিব গুলো দেয়া হলো

  1. ইহরাম করাঃ ইহরাম বেধে হজ্বের নিয়ত করা/স্বীকৃতি দেয়া এবং তালবিয়া পড়া।
  2. আরাফায় অবস্থান করাঃ ৯ই যিলহজ্ব আরাফায় অবস্থান।
  3. তাওয়াফুল ইফাদাহঃ হজ্বের পর ফরজ তাওয়াফ ও সায়ী করা।

ফরজ কাজগুলো “ধারাবাহিক ভাবে”, “নির্দিষ্ট স্থানে” ও “অনুমোদিত সময়ের” মধ্যে করতে হবে।
কোন একটি ফরজ বাদ গেলে (ইচ্ছাকৃত /অনিচ্ছাকৃত) হজ্ব সম্পন্ন হবেনা। হজ্ব বাতিল হবে। দম দিয়ে লাভ হবে না।

হজ্বে তামাত্তু ওয়াজিব

  1. মিকাত থেকে ইহরাম করা।
  2. “৯ই যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত” আরাফায় অবস্থান করা।
  3. “১০ই যিলহজ্ব” (৯ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর) মুজদালিফায় রাত্রি যাপন।
  4. নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা।
  5. হাদী/ পশু জবেহ করা।
  6. হলক্ব করা- চুল ছোট/মুন্ডন করে ইহরাম মুক্ত হয়া।
  7. তাশরীকের রাত গুলোতে মিনায় অবস্থা করা।
  8. তাওয়াফে বিদায় করা- হজ্ব শেষে মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদাই তাওয়াফ করা।

কোন একটি ওয়াজিব বাদ গেলে (ইচ্ছাকৃত /অনিচ্ছাকৃত) হজ্ব বাতিল হবেনা। কাফফারা হিসেবে দম দিতে হবে। দম দেয়ার পাশাপাশি, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া বাঞ্ছনীয়।

হজ্বের কিছু গুরুত্বপূর্ন সুন্নত

হজ্বের দিন ও রাতের হিসাব

আমার মত অনেকেই হজ্বের দিনগুলো (৮,৯,১০ ই যিলহজ্ব) হিসাব করতে গিয়ে ইংরেজি ক্যালেন্ডার এর দিন-রাত এর সাথে হিজরী ক্যালেন্ডার এর দিন রাত্রি মিলিয়ে ফেলেন।তাই রি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ঘড়িতে রাত ১২টা বাজলে পরের দিন শুরু হয়।কিন্তু, হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সূর্যাস্তের পর থেকে নতুন দিনের হিসাব শুরু হয়। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায়- প্রথম ১২ঘন্টা রাত্রি ও পরের ১২ ঘন্টা দিন।

৩য় ধাপ (মূল হজ্ব ৩য় পর্বঃ- হজ্বের ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা

আমাদের দেশে, অনেকে ওমরাহ্‌কে ছোট হজ্ব বলে থাকেন। কিন্তু ওমরাহ্ সাথে মূল হজ্ব এর আনুষ্ঠানিকতার কোন মিল নেই। খুব সংক্ষেপে হজ্বের জরুরী বিষয় গুলো উল্লেখ করছি

  • তাবুতে থাকতে হবেঃ ৮ই যিলহজ্ব থেকে ১২/১৩ই যিলহজ্ব।
  • তাবু ছাড়তে হবে ১২ই অথবা ১৩ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগে।
  • আরবী দিনের হিসাব শুরু হয় সূর্যাস্তের পর। প্রথম ১২ঘন্টা রাত এরপর ১২ঘন্টা দিন। ৭ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর (মাগরিম নামাজ এর পর) থেকেই ৮ই যিলহজ্ব হিসাব করা হবে।
  • আপনার গাইড/মুয়াল্লেম আপনাকে হজ্বের আইডি কার্ড ও হাতের ব্যান্ড দিবেন। ওটাতে আপনার হজ্ব_আইডিসহ, সব লিখা থাকবে। এটা কোন ভাবেই হারিয়ে ফেলা যাবেনা।
  • হজ্বের দিনগুলোতে এটা আপনার সাথে রাখতে হবে। রাস্তা বা তাবু হারিয়ে ফেললে ওই আইডি আপনার লাগবে।
  • আগেই বলেছি, জেদ্দা এয়ারপোর্ট এ আপনার পাসপোর্ট জমা রেখে দিবে।তাই,যে কদিন সৌদিতে আছেন, এই আইডি কার্ডই আপনার সৌদির পাসপোর্ট।

নির্দিষ্ট যেকদিন আপনাকে তাবুতে থাকতে হবে,তার ধারাবাহিক বর্ণনা নিচে দেয়া হলো।এবং তাবুতে থাকাকালীন এই সময়টাতে আপনার কি কি লাগবে, তাও সাথে বলে দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা,হজ্বের অভিজ্ঞতাও প্রত্যেকের আলাদা। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে, আমার যা প্রয়োজন মনে হচ্ছে তাই উল্লেখ করছি।

৭ই যিলহজ্ব ( হজ্বের পূর্বে করণীয়)

ব্যাগ গুছানোঃ পরবর্তি ৫/৬দিনের প্রয়োজনীয় জিনিশ একটি ব্যাগে নিবেন। আর বাকি জিনিশ বড় লাগেজ/ সুটকেস এ তালা মেরে হোটেলে রেখে যাবেন।যে ব্যাগ নিবেন তা এমন হবে যা সহজে বহন করা যায়।এই ব্যাগ নিয়ে আপনাকে হাটতে হবে অনেকটা পথ। কাধের ব্যাগ( স্কুলের বাচ্চারা যেগুলো নেয়।), ছোট ট্রলি কেবিন ব্যাগ।হোটেলেই ফরজ গোসল করে নিন।

২ রাকাত তাহিয়্যাতুল ওযু / নফল স্বলাত পরে নিন।এহরাম বাঁধুন। শুধু পোশাক পরলে এহরাম হবেনা।হজ্বের নিয়তে এহরাম এর পোশাক পরিধান করুন।
হজ্বের নিয়োত /স্বীকৃতি দিয়ে, ‘তালবিয়া” পাঠ শুরু করুন।

১ম দিন – ৮ই যিলহজ্ব ( মিনায় অবস্থান )

যাত্রাঃ মক্কার হোটেল থেকে মিনার তাবুতে যেতে সকল হাজ্বী বাস /ট্রেন পাবেন।
৭ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর (এশার নামাজের পর) থেকে এক একটি দলকে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হবে মিনার হজ্ব ক্যাম্পে/তাবুতে। বাসের সময় আপনার গাইড আগের থেকে বলে দিবেন।করনীয়ঃ

১। যোহরের পুর্বে “মিনায়” পৌছানো।২। মিনার তাবুতে দিন ও রাত যাপন করা।৩। ৫ ওয়াক্ত স্বলাত মিনায় “কসর” করে আদায় করা। শুধু ফজর এর ২ রাকাত সুন্নত ও এশার পর ১/৩ রাকাত বেতর পরতে হবে।

মিনার তাবুঃ

মিনার তাবু স্থায়ী।উপরে খুটির সাথে লাইট ও এসি আছে।এসির পাশেই অনেক ঊপরে মোবাইল চার্জ পয়েন্ট। প্রত্যেক হাজ্বীর জন্য আলাদা ১টি বিছানা,১টি বালিশ,১টি বেডসিট পাবেন।

মিনার টয়লেটঃ

  • তাবুগুলো পাশেই একটি বিল্ডিং এ প্রায় ২০টির মত টয়লেট। এক পাশের ১০ টি ছেলেদের,উল্টো পাশে ১০টি মেয়েদের।
  • একটি টয়লেটর সাইজ ২x৩ স্কয়ার ফিট।
  • কাপড় ঝুলানোর কোন যায়গা নেই।
  • টয়লেট পেপার,সাবান কিছু নেই। আপনাকে নিজের টা নিজের জামার পকেটে করে নিতে হবে।
  • মাথার উপরে ঝরনা আছে, গোসলের জন্য।
  • টয়লেট বিল্ডিং এর এক পাশে ওযুর যায়গা। ৫/৬জন এক সাথে ওযু করতে পারবেন।

যামারায় যাবার, টানেলের মত রাস্তায় নতুন কিছু টয়লেট বিল্ডিং করেছে। ওগুলো তাবু থেকে একটু দূরে। কিন্তু, ওগুলো প্রতিদিনই পরিষ্কার করে। দল বেধে গেলে হারিয়ে যাবার ভয় থাকবেনা।

কি কি পাবেনঃ

৩ বেলার খাবার – তাবুর প্রত্যেক মক্তবে (center) আলাদা আলাদা খাবার রান্না হয়। আমাদের দুপুরে ও রাতে যে খাবার ছিলো সেটায় মসল্লা ও লবন ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।

তাই নিজের স্বাধ অনুযায়ী আচার, চাট মসল্লা,লবন, কাচা মরিচ মক্কা থেকে নিয়ে আসতে হবে।
দুধ চা পাবেন- ছোট ফ্লাক্স নিয়ে নেবেন।ওয়ান টাইম গ্লাসে, কিচেন থেকে চা নিয়ে তাবু পর্যন্ত আসতে আসতেই অনেকটা চা মাটিতে পরে যায়।পানি, কোক,জুস -অনেক কোম্পানি দিয়ে থাকেন।গাইড সংগ্রহ করে তাবুতে দিয়ে যাবে।ফল- আপেল, মাল্টা – ছোট ধারালো ছুড়ি লাগবে।
আশেপাশে খাবার /অন্যান্য জিনিশ কেনার দোকান আমার চোখে পরে নাই।

৩য় ধাপ (মূল হজ্ব) ২য় দিন – ৯ই যিলহজ্ব( আরাফা + মুজদালিফা)যাত্রা

৮ই যিলহজ্ব শেষ রাতের দিকে, মিনার তাবু থেকে সকল হাজ্বীকে বাসে করে “আরাফায়” নিয়ে যাওয়া হবে। ৯ই যিলহজ্ব (১দিনের জন্য) আরাফা ও মুজদালিফায় থাকতে হবে।
১০ই যিলহজ্ব সকালে আবার মিনায় ফেরত আসতে হবে।

সাথে কি নিবো?

  • ছোট একটি কাধের ব্যাগ এ ১ দিনের প্রয়োজনীয় জিনিশগুলো নিয়ে নিন। বাকি জিনিশপত্র (ট্রলি ব্যাগ) মিনার তাবুতে, আপনার বিছানার পাশে রেখে দিন।
  • ছাতা,সানগ্লাস, ক্যাপ
  • পাওয়ার ব্যাংক-চার্জ পয়েন্ট খালি পাবেননা।
  • চার্জার,
  • হ্যাডফোন – ভিডিও কলে আপনি যখন পরিবারের সাথে কথা বলেন, পাশের লোকজনের সেটায় ডিটার্ব হয়।
  • পুরানো মোটা বিছানার চাদর- নামাজ পরার জন্য এবং “মুজদালিফায়” রাতে শুবার জন্য । ওজন বেশি হলে সেটা ওইখানেই ফেলে আসবেন।
  • ট্রাভেল পিলো/ যেকোন বালিশ
  • গন্ধছাড়া সাবান -টয়লেট এর জন্য।নিমের ডাল- মিসওয়াক এর জন্য।
  • দোয়ার বই
  • ছোট রুমাল – মুখ মোছার জন্য
  • টিস্যু ও টয়লেট পেপার।
  • অয়েট টিসু (ভিজা টিসু)
  • সব ওষুধ, বিশেষ করে ব্যাথার জন্য ওষূধ। স্যালাইন।
  • ছোট বোতল/পলিথিনের ব্যাগ – পাথর ঊঠানোর জন্য।
  • কাপড়,সেন্ডেল নেয়ার কোন দরকার নেই।

NOTE: এই ব্যাগ নিয়ে পরের দিন(১০ই যিলহজ্ব) আপনাকে অনেক হাটতে হবে। যত ওজন নিবেন, আপনার কষ্ট বাড়বে।
বাস দেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারোনে সৌদি এজেন্ট কথা রাখেন না। যাত্রীর তুলোনায় বাস কম থাকে।
কখনো কখনো আরাফা থেকে মুজদালিফা পায়ে হেটে যেতে হবে পারে।
১০ই যিলহজ্ব মুজদালিফা থেকে মিনায় (ফজরের পর থেকে) বাস ঢোকা বন্ধ থাকে।তাই, সবাইকে পায়ে হেটেই মিনায় আসতে হবে।

আরাফায় করনীয়
১। সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত “আরাফা” এ অবস্থান।
২। যোহরের আউয়াল ওয়াক্তেই এক আযান ও দুই ইকামাতে যথাক্রমে যোহর(২আকাত ফরজ) ও আসর(২ রাকাত ফরজ) কসর করে পর পর আদায় করা।
এই দুই স্বলাতের আগে মধ্যে ও পরে কোন সুন্নাত / নফল স্বলাত পড়া যাবেনা । বুখারী-১৬৬২, আবু দাউদ-১৯১৩।


এই নামাজ মসজিদে নামিরাতে ইমামের পিছনে জামাআতে আদায় করা উত্তম। তবে মসজিদে এতো মানুষ অবস্থান সম্ভব নয়।তাই, আরাফার ময়দানে যেকোন স্থানে/তাবুতে স্বলাত আদায় করা যাবে।
তাবুর পাশে, রাস্তায় মাইক থাকে। আমরা অনেকে রাস্তায়, মাইকে শুনে ইমামের সাথে জামাতে পরেছিলাম।


৩। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেলে( যোহর- আসর স্বলাত এর পর) কিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত সামনে উঁচু করে আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, ক্ষমা চান, দয়া কামনা করুন। এই দু’আ করার জন্যই আপনার আরাফায় আসা।আপনার মনের আশা আল্লাহকে বলুন। দরুদ, তালবিয়াহ, যিকর, ইস্তিগফার করুন।


জোরে শব্দ করে,আওয়াজ করে,দলবদ্ধ ভাবে দুয়া, মুনাজাত করা সুন্নত এর অন্তর্ভুক্ত নয়।এতে অন্যের মনযোগ নষ্ট হয়।


আরাফার দিনে রোজা হাজ্বীদের জন্য নয়। বরং যারা হজ্বে আসেন নি তাদের জন্য। ।হাজীদের জন্য আরাফার দিবসের রোজা রাখা মাখরুহ। রসুলুল্লাহ (সাঃ) আরাফার দিনে রোজা রাখেননি। বুখারী-১৬৫৮,১৬৬১।


৯ই যিলহজ্ব আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব।
প্রত্যেক হাজ্বীকে স্বশরীরে অবস্থান করতে হবে। ৪। র্যাস্তের পর মাগরিবের স্বলাত আদায় না(✘) করে, মুজদালিফার উদ্দেশ্যে, আরাফার ময়দান ত্যাগ করা।

আরাফ-এ তাবুঃ

১। আরাফাএ তাবু গুলো অস্থায়ী। এসি থাকবে।২।একটা তাবুতে ২০০/২৫০ জন থাকার ব্যবস্থা।৩।তাবুর ভিতরে মাটিতে পাতলা ম্যাট বিছানো থাকবে।৪।অল্প কিছু পাতলা ফোমের বিছানা ও ফোমের বালিশ থাকবে। আপনি আগে গেলে বিছানা পাবেন। নাও পেতে পারেন।৫। এখনে তাবুগুলো দেখতে সব একি রকম। তাবু থেকে বের হয়ার আগে,আশেপাশের গাছ,জিনিশ দিয়ে নিজের তাবুর চিনে রাখুন। নয়তো হারিয়ে যাবেন।


আরাফায় কি কি পাবেনঃ
ট্রাকে করে প্রচুর খাবার দেয়। (মসদিজের সামনে রাস্তায়)। দলের পুরুষরা সেগুলো collect করে তাবুতে দিয়ে গেলে সেগুলো পাবেন।


এছাড়া ২ বেলার খাবার (সকালের নাস্তা ও দুপুরে, (ভাত), ফল পাবেন – আনলিমিটেড চা পাবেন।
সেইদিন রাতেই মুজদালিফায় চলে যাবেন। তাই,আরাফায় রাতে কোন খাবার দেয়া হবেনা। তবে সারাদিনই কিছুনা কিছূ প্যাকেট করা রুটি, বিস্কিট,পানি,জুস দেয়া হবে। অগুলো রাতের জন্য সংগ্রহ করে রাখুন।


২০১৯ এর দিকে কিছু খাবার পানির ফিল্টার করা হয়েছিলো। কিন্তু ২০২২ সালে আমরা যখন গিয়েছি, সেগুলো নষ্ট ছিলো।তাই,হুট করেই খাবার পানির সংকট হতে পারে। পানি সংগ্রহে রাখুন। খাবার পানি দিয়ে ওযু করবেন না।
আরাফায় টয়লেট কেমন হবে?

  • ২০১৯ সালে নতুন কিছু টয়লেট বিল্ডিং করা হয়েছিলো। কিন্তু ২০২২ সালে আমরা যখন গিয়েছি।সেটার সব গুলো টয়লেটই নষ্ট এবং অপরিষ্কার ছিলো।
  • পুরোনো টয়লেট ১০টার মত। যা ২০০০/৩০০০ মহিলাদের জন পর্যাপ্ত না।
  • প্রচুর লম্বা সিরিয়াল থাকে।
  • সাবান,টয়লেট পেপার পাবেন না।

মুজদালিফায় করণীয়ঃ

১। মুজদালিফায় পৌছে প্রথম কাজ হলো
এশার স্বলাত এর ওয়াক্তে — মাগরিব (৩ রাকাত) ও এশার (২রাকাত) ফরজ স্বলাত কসর করে একটির পর একটি পরা।
এই স্বলাত এর মাঝে কোন স্বলাত নেই। এশার স্বলাত এর পর ১/৩ রাকাত বিতর হবে। বুখারী- ১৬৭৩,১৬৮৩
২। পরের ৩ /৪ দিনের জন্য পাথর সংগ্রহ করা। মুজদালিফায় পুরো ময়দান এ ছোলার দানার মত ছোট ছোট পাথর আছে। সাথে আনা বোতল /পলিথিনের ব্যাগ-এ গুনে গুনে পাথর নিন।
৩দিন থাকলে –৪৯টি (৭ + ২১x২)
৪দিন থাকলে — ৭০টি (৭+২১x৩)


কিছু পাথর বেশি নিন,যদি পাথর পরে /হারিয়ে যায় তাই।
বড় পাথর নেয়া মাখরুহ। নেয়া যাবেনা।


৩। আজকের দিনের মত কাজ শেষ। খোলা আকাশের নিচে ‘মুজদালিফা’ এ রাত্রি যাপন।

মুজদালিফায় রাত্রি যাপন ওয়াজিব।আগামী দিন( ১০ই যিলহজ্ব ) অনেকগুলো কাজ করতে হবে।অনেক হাটতে হবে। তাই, যতক্ষন পারেন ঘুমানোর চেস্টা করুন।


মুজদালিফায় কি কি পাবেনঃ

  • কোন তাবু থাকবেনা।
  • বালির মধ্যেই আপনার চাদর বিছিয়ে শুতে হবে।
  • প্রথম পোস্ট থেকেই যে ট্রাভেল পিলো আনতে বলেছিলাম।ওইটা আপনার এখন সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
  • টয়লেট এর কাছাকাছি সুবিধাজনক যায়গায় আপনার শোবার বিছানা করুন।
  • হাটার রাস্তায় শুতে যাবেন না।মানুষজন গায়ে পারা দিবে।
  • আপনার মাহরামের ও দলের সাথেই থাকুন। দল এর থেকে অনেক দূরে বিছানা করবেন না।
  • সকালে এই দলের সাথেই আপনাকে হেটে মিনা যেতে হবে। আপনাকে খুজে না পেলে, সকলের যাত্রা দেরি হবে। অনেক সময়, আপনাকে রেখেই দল চলে যেতে পারে।
  • কোন খাবার বা পানি দেয়া হবেনা।
  • আরাফাতে যে প্যাকেট খাবার ও ফল সংগ্রহ করতে বলেছিলাম ওগুলো খেয়ে রাত কাটান।
  • আশেপাশে কোন দোকান নেই।
  • কিছুদূর পর পর টয়লেট বিল্ডিং। টয়লেট গুলো নতুন ও পরিষ্কার।

কমন প্রশ্ন – হজ্বে কি কি সাথে নিবো? বাংলাদেশ থেকে কি কি নিয়ে আসতে হবে?

উল্লেখ্য, প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা,হজ্বের অভিজ্ঞতাও প্রত্যেকের আলাদা। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে, আমার যা প্রয়োজন মনে হচ্ছে তাই উল্লেখ করছি।

হোটেলে থাকা কালিন সময় যা লাগবে

গুড়া দুধ, চিড়া, কর্নফ্লেলক্স,চিনি (প্রতিদিন যদি হোটেলের নাস্তা খেতে ইচ্ছা না করে।)

জ্যাম/জেলি,নিউট্রেলা,স্প্রেড – ( সৌদিতে ভালো মানের ব্রেড/পাউরুটি কিনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে এগুলো নিলে, সকালের নাস্তা হয়ে যাবে।)


লবন,সরিষার তেল।(রুমে আলু ভর্তা,সালাদ করে খেতে চাইলে।)
শুক্না আদা, লং, এলাচি,দারচিনি একটি ছোট কোউটায় করে( ধুলাবালিতে কাশি শুরু হয়।আদা লং কাজে লাগবে।তাই,অবশ্যই নিয়ে নেবেন। এলাচ,দারচিনি মুখে রাখলে- পানি পিপাসা কম লাগে।)


টি ব্যাগ,কফি,চিনি (চা/কফি নিজেই রুমে করে নিতে পারবেন।)
শুকনা খাবার- বিস্কিট, চানাচুর, চকলেট, বাদাম, ম্যাংগোবার ।( ৩বেলা খাবারের বাইরে ক্ষুদা লাগলে অথবা লম্বা পথ যাত্রার জন্য।)


জরুরী জিনিস
ইলেকট্রিক কেটলি- আবহাওয়া পরিবর্তন কারণে হঠাৎ করেই গলা ব্যাথা, কাশি শুরু হতে পারে। তখন গরম পানির জন্য।•দোকান থেকে ডিম,আলু কিনে ইলেকট্রিক কেটলিতে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। স্বাদ পরিবর্তন এর জন্য।( ৩ স্টার/৫স্টার হোটেলে কেটলি থাকে।)

  • হ্যাংগার – কাপড় মেলবার জন্য। সবাই দড়ি নিতে বলে। কিন্তু, হোটেলের রুমের মধ্যে দড়ি বাধার যায়গা পাবেন না। ছাদে অথবা বাথরুমে কাপড় মেলবার জন্য।
  • তালা চাবি
  • কাপড়ের ক্লিপ- হোটেলের ছাদে যদি কাপড় মেলার সুযোগ থাকে।
  • মোবাইল চার্জার,
  • হ্যাডফোন,
  • 3 pin socket converter [ -‘- ] ( হোটেলের সুইচবোর্ডে তিন পিনের প্লাগ লাগবে। সবকিছু অবশ্যই নিবেন)
  • চশমা – অবশ্যই ২সেট নিবেন।একটি পরে থাকবেন,আরেকটি এক্সট্রা
  • সুই সুতা, সেফটিপিন। (সবকিছু অবশ্যই নিবেন।)
  • কেচি
  • ডায়রী, কলম, কুরান শরিফ, দোয়ার বই,
  • জায়নামাজ (পাতলা ও ওজন কম,যেনো ভাজ করে হ্যান্ড ব্যাগ এ নিতে পারেন।)
  • ছাতা (খুব ছোট,ওজন কম,যেনো হ্যান্ড ব্যগ এ নেয়া যায়।
  • ক্যাপ(লম্বা সময় ছাতা ধরে রাখতে কষ্ট হলে।)
  • মাস্ক। হিজাব এর উপর পিনছাড়া পরা যায়।
  • সাত দানার তসবী(বাইতুল মোকারম মার্কেট এ পাবেন।)
  • তাইমুম এর মাটি (বাইতুল মোকারম মার্কেট এ পাবেন।
  • ২দড়ির কাধের ব্যাগ
  • খালি পানির বোতল – ৫০০মি.লি. এর ৪/৬টা – মসজিদ থেকে জমজম এর পানি আনার জন্য।
  • প্লাস্টিক এর প্লেট- আজকাল রেস্তোরাতে খাবার কিনে রুমে আনলে, সাথে ওয়ান টাইম প্লেট দিয়ে দেয়। তারপরও আপনি নিজেরটা নিতে পারেন।
  • মগ(চা/পানি খাবার জন্য)
  • ছুরি (ফল কাটার জন্য)
  • স্কচটেপ, মার্কার„ রংগিন ফিতা- ব্যাগ এ লাগানোর জন্য।
  • লোশন, নারিকেল তেল,চিরুনী, রেজার অন্যান্য যা আপনার লাগে।
  • অলিভ ওয়েল, ভেসলিন -(পায়ে ও নাকে ব্যবহার করতে হবে।।শুক্না ও প্রচণ্ড গরমের কারনে পা ফেটে যায়, নাক থেকেও রক্ত পরে। তাই,অবশ্যই নিবেন।)
  • সাধারন সাবান, শ্যাম্পু, ব্রাস, পেস্ট- হোটেলের থেকে অল্পকিছু দিবে,রুমের ৪জনের জন্য। তাই, নিজেরটা নেওয়াই ভালো।এগুলো হোটেলে থাকা কালিন ব্যাবহারের জন্য।
  • কাপড় কাচার সাবান ও ডিটারজেন্ট।
  • নেইল কাটার, কটনবাট
  • পা ঘসার মাজুনী
  • ইহরাম এর কাপড় ২সেট।
  • মহিলাদের ইহরাম এর বোরকা- ২টা
  • সাধারন দৈনিক পরার জন্য ৩/৪সেট কাপড়
  • মোজা ২ জোড়া
  • কেডস – মহিলারা পরে যাবেন। (পুরুষরা ব্যাগে নিয়ে নেবেন। ইহরাম খুলার পর, পরার জন্য।)
  • ২ ফিতার সেন্ডেল – ১ জোড়া

মেডিসিন?

  • জরুরী প্রতিদিন খান এমন ওষুধ।(অবশ্যই প্রেসক্রিপশন নিবেন।)
  • জ্বর, মাইগ্রেন এর ওষুধ।এন্টাসিড(এসিডিটির জন্য), সেলাইন, এন্টিবায়োটিক।
  • দৈনিক যে ওষুধ খান(প্রেসার, ডায়াবেটিক) – ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন সহ।
  • এন্টিবায়োটিক ওষুধ– ঠান্ডা, গল ব্যাথা, পেট খারাপ হয়া, এগুলো হজ্বের সময় কমন সমস্যা।
  • বিশেষ করে গা, হাত- পা ব্যথার জন্য ওষূধ।
  • মাথা ব্যথার জন্য বাম।
  • ক্র‍্যাপ ব্যান্ডেজ — হা মোচকে যাওয়া ওইখানে খুব কমন।
  • ব্যান্ড এইড – অনেক গুলো – হা, পা কাটলে।
  • মহিলাদের মিউট্রেশন বন্ধের ওষুধ। ডাক্তারকে বলে,দিনে একটা খেতে হয়।এমন মেডিসিন নিবেন। হজ্বের দৌড়াদৌড়িত ৩বেলা খেতে অনেকেরই মনে থাকে না।

দৈনিক ব্যাবহারের সব জিনিশ আশেপাশের দোকানে পাবেন, তবে একটু চড়া দামে।তাই কোন কিছু আনতে ভুলে গেলে টেনশন এর কিছুই নেই।

শেষ কথাঃ আমরা আবারো বলছি এটা লেখিকার নিজের হজ্ব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। এই পোস্টে উল্লেখিত কোন হাদিস আমরা ক্রস চেক করিনি, আমল গুলো আমরা ক্রস চেক করিনি, কোন আলেম কোন বিষয়ে কোন ভুল পেলে বা অভিযোগ থাকলে আমাদের কে এসএমএস করে জানাতে পারবেন।

এই পোস্ট এর মাধ্যমে হজ্ব এর আমল/ ফরজ/ সুন্নত সম্পর্কে জানানো আমাদের মূল উদ্দেশ্য না বরং কিভাবে যাবেন কি খাবেন কি কি সমস্যা হতে পারে সেসব কিভাবে সমাধান করবেন এই বিষয়ে একজন বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হজ্ব করা ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরা।

Scroll to Top