ঢাকা ও তার আশেপাশের কর্মব্যস্ত মানুষ গাজীপুরের শীতল পরিবেশে এসে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায়। তাইতো যে কোনো উপলক্ষে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসে গাজীপুরের বিভিন্ন পার্ক, রিসোর্ট আর পিকনিক স্পট গুলোতে। গাজীপুরে পর্যটন শিল্পের এমন রমরমা পরিবেশ বিদ্যমান বিধায় এই জেলার আনাচে কানাচে ব্যক্তি মালিকানায় অনেক ছোট বড় রিসোর্ট তৈরি হয়েছে।
গাজীপুরের উল্লেখযোগ্য ১০ টি রিসোর্ট এর মধ্যে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট একটি। সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর অসাধারণ ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার জন্যই এটি এতো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই ছুটির দিনে পারিবারিক ট্যুর দিতে চলে আসতে পারেন গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়ের কালামপুর গ্রামে অবস্থিত সোহাগ পল্লী রিসোর্টে।
ব্যক্তিগত ভ্রমণ ছাড়াও যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, কর্পোরেট অনুষ্ঠান ও পার্টির আয়োজন করতে রিসোর্ট বুকিং করার সুযোগ রয়েছে। ১১ একর জমির ওপর নির্মাণ করা এই রিসোর্টে প্রতিনিয়ত প্রায় ৫০ জন কর্মী গেস্ট দের সার্ভিস দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেই সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর সুযোগ সুবিধা, এর সৌন্দর্য, যাওয়ার উপায় ও সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর সার্ভিস সমূহ
সোহাগ পল্লী রিসোর্ট আসলে অবসরে বিনোদনের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। আছে উন্মুক্ত পার্ক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ভিলা এবং সাধারণ কটেজ। এখানে থাকার জন্য সাধারণ থেকে শুরু করে লাক্সারিয়াস মোট ১৭ টি এসি রুম ও ২০ টি নন এসি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুম-ই হাইলি ডেকোরেটেড এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন। এর মধ্যেও আবার পুল সাইড রুম, লেক সাইড রুম, ফ্যামিলি ভিলা এমন কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে।
সোহাগ পল্লী রিসোর্টে ‘মেজবান’ নামে নিজস্ব একটি দ্বীতল খাবারের রেস্তোরা রয়েছে। এখানে বাংলা, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, থাই সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির খাবার পাওয়া যায়। বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদ বা যে কোনো পার্টির আয়োজন করলে রিসোর্ট বুকিং এর সাথে খাবারের জন্য এই রেস্টুরেন্টে অর্ডার করে রাখতে পারবেন।
প্রতিটি রুমে অভিজ্ঞ সার্ভিস ম্যান দ্বারা সার্বক্ষণিক রুম সার্ভিস দেয়া হয়। আছে রিসোর্ট এর নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা, ফ্রী ওয়াইফাই সার্ভিস, কিডস জোন, কৃত্রিম লেক ও লেকের মধ্যে প্যাডেল বোট, ঝুলন্ত সাঁকো, সুইমিং পুল, কনফারেন্স রুম, ডেকোরেশন করা ছোট পাহাড়, মিনি চিড়িয়াখানা, ২৪ ঘন্টা জেনারেটর সার্ভিস, রেডি স্টেজ, ডাইনিং প্লেস। পিকনিক করতে চাইলে রিসোর্ট এর পার্কের মধ্যে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। এছাড়াও আছে ছোট বড় সবার জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ।
মোটকথা আপনার ভ্রমনকে বিলাসবহুল ও আনন্দঘন করে তুলতে যাবতীয় সকল ব্যবস্থা করে রেখেছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। একদম কম বাজেট থেকে শুরু করে হাই বাজেটের সার্ভিস নিয়ে সব সময় কোনো না কোনো অফার চলমান থাকে সোহাগ পল্লী রিসোর্টে। তাই যে কেউ চাইলে ছুটি কাটাতে যেতে পারেন এই রিসোর্টে।

সোহাগ পল্লী রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ
আপনি যদি রিসোর্ট এর শুধুমাত্র কমন প্লেস এবং পার্ক ঘুরে দেখতে চান তাহলে সাধারণ এন্ট্রি ফি দিয়ে রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারেন। সাধারণ এন্ট্রি ফি ধার্য করা হয়েছে – ২০০ টাকা।
রিসোর্টে পুরো দিন কিংবা এক রাত থাকা ও সেই সাথে খাওয়ার পরিকল্পনা করলে নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে রুম বুক করতে হবে৷ সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর নিয়মিত ভাড়ার একটি স্ট্যান্ডার্ড মান রয়েছে। নিচে তার তালিকা দেয়া হলো-
- স্ট্যান্ডার্ড রুম ভাড়া – ৫০০০ টাকা।
- ডিলাক্স রুম ভাড়া – ৬০০০ টাকা।
- পুল সাইড রুম ভাড়া – ১২০০০ টাকা।
- লেক ফ্রন্ট রুম ভাড়া – ৭০০০ টাকা।
- ফ্যামিলি ভিলা – ১৫০০০ টাকা।
- প্রেসিডেন্ট ভিলার অর্ধেক বুকিং করলে ভাড়া – ৩০,০০০ টাকা।
- প্রেসিডেন্ট ভিলা সম্পূর্ণ বুকিং করলে – ৫০,০০০ টাকা।
এসকল রুমের ক্লাস অনুযায়ী সুইমিং পুল ব্যবহার সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ও খাবার যুক্ত থাকে। উপরোক্ত ভাড়ার তালিকাটি সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর নিয়মিত ভাড়ার একটি স্ট্যান্ডার্ড তালিকা৷ কিন্তু রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে থাকে।
এসকল প্যাকেজে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করে তুলনামূলক ডিসকাউন্ট দিয়ে চার্জ নির্ধারণ করে। সুযোগ অনুযায়ী প্যাকেজ ধরতে পারলে তুলনামূলক কম খরচে লাক্সারিয়াস এই রিসোর্ট ভ্রমণ করতে পারবেন। বর্তমানে চলমান কিছু প্যাকেজ অফার দেখে নিন-
১. ফ্রেন্ডস প্যাকেজ
ফ্রেন্ডস প্যাকেজগুলো তুলনামূলক কম বাজেটের হয়। ফ্রেন্ডস প্যাকেজের মধ্যে আবার ৩ টি ক্যাটাগরি রয়েছে একটি হলো সিলভার প্যাকেজ (১০৭৮ টাকা), অন্যটি গোল্ড প্যাকেজ (১২৯৯ টাকা) এবং আরেকটি প্লাটিনাম প্যাকেজ। সিলভার প্যাকেজ ও গোল্ড প্যােকজ এর মূল্য মাথাপিছু উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই প্যাকেজগুলো কমপক্ষে ১০ জনের জন্য বুকিং দিতে হবে।
আর প্লাটিনাম প্যাকেজের মোট মূল্য ১৭,০০০ টাকা। এক প্যাকেজে সর্বোচ্চ ৬ জন সার্ভিস পাবে। ফ্রেন্ডস সিলভার প্যাকেজে থাকবে সুইমিং পুল, কমন এরিয়া ও পার্ক ঘুরে দেখার সুযোগ এবং সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার। গোল্ড প্যাকোজে সিলভার প্যাকেজের সব সার্ভিস থাকবে আর সেই সাথে লাঞ্চ হবে স্পেশাল। প্লাটিনাম প্যাকেজে অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি ফ্যামিলি ভিলায় থাকার সুযোগ রয়েছে।

২. কাপল প্যাকেজ
কাপল প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে কাপল সিলভার (২০০০ টাকা) এবং কাপল গোল্ড (৬৫০০ টাকা)। সিলভার প্যাকেজে থাকবে সুইমিং পুল, সকাল ও বিকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং কমন প্লেস ও পার্কে ঘোরার সুযোগ। কাপল গোল্ড প্যাকেজে থাকবে সুইমিং পুল, এসি রুমে থাকার ব্যবস্থা, সকাল ও বিকালের নাশতা, দুপুরের খাবার।
৩. ফ্যামিলি প্যাকেজ
ফ্যামিলি প্যাকেজ এর মধ্যে আছে ফ্যামিলি গোল্ড (৯০০০ / ৯৫০০ টাকা) এবং ফ্যামিলি প্লাটিনাম (১৬৫০০ টাকা)। ফ্যামিলি গোল্ড এর ৯০০০ টাকার প্যাকেজে থাকবে সুইমিং পুল, এসি রুম, সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার। ৯৫০০ টাকার প্যাকেজের এক্সট্রা সুবিধা হলো সাধারণ এসি রুমের বদলে লেক সাইড এসি রুম পাবেন। যেখানে রুমে বসেই লেকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
ফ্যামিলি প্লাটিনাম প্যাকেজে গোল্ড প্যাকেজের সবই থাকবে আর এক্সট্রা সুবিধা হিসেবে থাকবে লাক্সারিয়াস ফ্যামিলি ভিলায় থাকার সুযোগ। বি. দ্র: প্যাকেজ অফার সারাবছরই কম বেশি থাকে। কিন্তু সময় ভেদে প্যাকেজের সার্ভিস ও মূল্যে তারতম্য হতে পারে। তাই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ভাড়া ও সার্ভিস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ট্যুর প্লান করুন।
সোহাগ পল্লী রিসোর্ট যোগাযোগ
- ঠিকানা- কালামপুর গ্রাম, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা (স্থানীয় ভাষায় চান্দুরা), গাজীপুর।
- মোবাইল- ০১৩২১-২১৩২৩২
- ওয়েবসাইট- www.sohagpolli.com ( তাদের সাইট ডাউন )
সোহাগ পল্লী রিসোর্ট যাওয়ার উপায়:
সোহাগ পল্লী যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে আপনাকে গাজীপুর চৌরাস্তা চলে যেতে হবে। ঢাকার সায়দাবাদ, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী,মহাখালী সহ অন্যান্য বিভিন্ন জায়গা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্যেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো হলো গাজীপুর পরিবহন, আজমেরি গ্লোরি, বলাকা, প্রভাতী বনশ্রী ইত্যাদি। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা যাওয়ার জন্য লোকাল বাস পাবেন। ‘তাকওয়া পরিবহন’ গাজীপুর চৌরাস্তা টু চন্দ্রা রুটে নিয়মিত চলাচল করে। তাছাড়া নবীনগর এর উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া পলাশ পরিবহন কিংবা সাভার পরিবহনে চন্দ্রা পর্যন্ত যেতে পারবেন। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
যারা সাভার বা নবীনগর থেকে আসবেন তারা নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে গাজীপুরের উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসা বাসে চেপে চন্দ্রা পর্যন্ত আসতে পারবেন৷ চন্দ্রা মোড়ে নেমে সিএনজি কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলে যেতে হবে কালামপুর গ্রামের সোহাগ পল্লী রিসোর্টে।
যেহেতু রাস্তা একদম কম নয়, তাই সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। এতে খরচ একটু বেশি পড়লেও সময় কম লাগবে। এখান থেকে গাড়ি রিজার্ভ করার সময় অবশ্যই দরদাম করে নেবেন।যেহেতু রাস্তা ভালো এবং পার্কিং সুবিধা আছে তাই চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন।
এই ছিলো সোহাগ পল্লী রিসোর্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। একটি প্রশান্তিময়, লাক্সারি ট্রিপ প্লান করতে চাইলে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট-কে অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। রিসোর্টের মাঝখানে তৈরি করা কৃত্রিম লেক এর টলটলে পানি আবার তার ওপরে ঝুলন্ত সাঁকোর সৌন্দর্য আপনার মন কেড়ে নেবে।
রিসোর্ট ভবনের দেয়াল ও পিলারের চমৎকার কারুকার্য দেখে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। আর গ্রুপে যদি ছোট বাচ্চা থাকে, তাদের ট্রিপ তো হবে আরও মজাদার। কেননা কিডস জোনে তারা সারাদিন খুব আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারবে। মোটকথা বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই খুব আনন্দঘন পরিবেশে একটি দিন কাটাতে পারবে সোহাগ পল্লী ভ্রমনে এসে।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সোহাগ-পল্লী-রিসোর্ট