সুন্দরবন কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন? খরচ কত? ট্রাভেল টিপস

অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে সুন্দরবন। প্রাকৃতিক বিস্ময়ের আরেক নাম ম্যাংগ্রোভবন বা সুন্দরবন (Sundarban)। 

আপনি যদি সামনের ছুটিতে সুন্দরবন ঘুরে আসতে চান তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন সুন্দরবন কিভাবে যাব! আপনার ভ্রমণের সঙ্গী হতে আজকের আয়োজনে জানাবো সুন্দরবন কিভাবে যাবেন, সুন্দরবনে গিয়ে কোথায় থাকবেন। পাশাপাশি সুন্দরবন ভ্রমণকে আনন্দময় করে তুলতে সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান সমূহ ছাড়াও আরো প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়।

তবে সুন্দরবন কিভাবে যাবেন সেবিষয়ে জানার আগে সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরী।

পদ্মা, মেঘনা ও ব্রম্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় এটি পৃথিবীর সবথেকে বড় ম্যাংগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বন। যতোদূর দৃষ্টি যায় মনে হবে শিল্পীর হাতে আঁকা সবুজ অরন্য। সারি সারি কেওরা, গেওয়া, সুন্দরী, গরান, গোলপাতা সহ নানা প্রজাতির গাছ।


১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ সুন্দরবনকে জীব ও উদ্ভিদের জাদুঘর বলনেও ভূল হবে না। সুন্দরবনের সৌন্দর্যে বিমোহিত দেশি বিদেশি পর্যটকগন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা নিয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশ। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার যা বাংলাদেশ ও ভারত নিয়ে। বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার।


সুন্দরবনের ১,৮৭৪ কিলোমিটার অংশ জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল অর্থাৎ জলাকীর্ন অঞ্চল। সুন্দরী গাছের নামানুসারে এই বনের নাম রাখা হয়েছে সুন্দরবন।


রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির আবাসস্থলের জন্য সুন্দরবন পরিচিত। এছাড়াও সুন্দর বনে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রকারের উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর।


তবে দুঃখের সংবাদ হলো যে সুন্দরবন রয়েল বেংগল টাইগারের জন্য এতো বিখ্যাত সেই বেংগল টাইগারের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছ। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী -২০১৮ সালের জরিপে দেখা গিয়েছে সুন্দরবনে বাঘ সংখ্যা ১১৪ টি। যা ২০০৪ সালের জরিপ অনুযায়ী ছিলো ৪৪০ টি। ২০২২ এর জুন মাস পর্যন্ত বাঘ মারা গেছে প্রায় ৪৬ টি। এটা খুবই হতাশা জনক।

অনেকেই সুন্দরবন ভ্রমনে যেতে চায় কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য জানে না। তাই ভ্রমন পিপাসুদের কথা মাথায় রেখে জানিয়ে দিচ্ছি সুন্দরবন ভ্রমনের খুটিনাটি বিষয়াদি। সুন্দরবন ভ্রমনে গিয়ে কোথায় থাকবেন, সুন্দরবন কিভাবে যাবেন, সে সর্ম্পকেই জানাচ্ছি।

সুন্দরবন কিভাবে যাবেন?

সুন্দরবন যেতে চাইলে খুলনা অথবা মোংলা হয়েই সুন্দরবনে যেতে হবে আপনাকে। এই দুটো পথ দিয়ে বেশি পর্যটকরা সুন্দরবন যেয়ে থাকে। খুলনা হয়ে গেলেও মংলা দিয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হয়। চলুন সুন্দরবন যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।

ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সুন্দরবন যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে যেকোন বাস স্ট্যান্ড থেকে খুলনা যাবার বাস পাওয়া যাবে। গাবতলী, সায়দাবাদ ও গুলিস্তান থেকে খুলনা যাবার বাস পাওয়া যাবে। ভাড়া এসি বাস ৭০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত আর নন এসি বাসের ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা।


এছাড়া খুলনা চাইলে ট্রেনেও আসা যায়। ঢাকা থেক সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সকালে ছেড়ে আসে আর চিত্রা ছেড়ে আসে সন্ধ্যায়। ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী ভারা ৫০০- ১৭০০ টাকা পর্যন্ত।
খুলনা থেকে প্রতি শুক্র থেকে রবিবার অথবা সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে প্যাকেজে লঞ্চ ভাড়া করে সুন্দরবন যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে মোংলা হয়ে সুন্দরবন যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলা যাবার বাস আছে। দিগন্ত, আরমান পরিহন, রাজধানী এসব বাস মংলা যায়৷ ভাড়া পরবে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া ভালো বাসে যেতে চাইলে খুলনার বাসেই আসতে হবে। এক্ষেত্রে কাটাখালি নামক জায়গায় নেমে যেতে হবে, তারপর মাহেন্দ্রা, আটো বা মোটর সাইকেলে করে ৩২ কিলোমিটার দূরে মোংলা যাওয়া যাবে। অথবা খুলনা গিয়ে মোংলা যেতে হবে।

ঢাকা থেকে খুলনা বা মোংলা যেতে সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। বাস যাত্রায় কোন ফেরি পার হতে হয় না। পদ্মা সেতু হওয়ায় যাওয়া এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। মোংলা থেকে লঞ্চে সুন্দরবন যেতে ৩ ঘন্টা সময় লাগে।

কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণ করার উপায়

আপনি যদি কম খরচে কোন ভ্রমণ প্যাকেজে না গিয়ে একা কিংবা গ্রুপে যেতে যান তাহলে মোংলা ফেরিঘাট থেকে সারাদিনের জন্য একটি নৌযান ভাড়া করে নিতে হবে। শুধু করমজল ঘুরে দেখতে চাইলে ভাড়া লাগবে ১০০০-১৫০০ টাকা। করমজল ও হারবাড়িয়া দুটো জায়গায় গেলে ভাড়া লাগবে প্রায় ৩৫০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত। আগে থেকেই ভাড়ার দরদাম করে নেওয়াই ভালো হবে। হারবাড়িয়া যেতে চাইলে ভালো মানের ট্রলার ভাড়া করা উচিত হবে।


করমজল প্রবেশ টিকেট মূল্য ২৩ টাকা এবং হারবাড়িয়া প্রবেশ টিকেট মূল্য ১০০ টাকা। হারবাড়িয়া ঘুরতে চাইলে সেখানের বন বিভাগের অফিসের অনুমতি নিতে হবে এবং সাথে নিরাপত্তা কর্মী নিতে হবে। দুপুরের খাবার মোংলা থেকে নিতে হবে।

সুন্দরবন ভ্রমনের সময়

আবহাওয়া ও ছুটির কথা মাথায় রেখে সুন্দরবন ভ্রমনের উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। সে কারণে সুন্দরবন যাওয়ার উপযুক্ত সময় হতে পারে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে। এই সময় নদী ও সাগর শান্ত থাকে বলে সুন্দরবনের সকল জায়গা ঘুরে বেড়ানো যায়। এছাড়া বনের মধ্যে ভ্যাপসা গরম লাগে বনে ভ্রমনে অসুবিধা হতে পারে যা শীতের সময় অনুভব হয় না।


খুলনা ও মংলা থেকে সবথেকে কাছে করমজল ও হারবাড়িয়ায় বছরের যেকোন সময় একদিনেই ঘুরে আসা সম্ভব। তবে মূল সুন্দরবনের স্বাদ পেতে হলে গহীনের স্পট গুলোতেই যেতে হবে।


একদিন সবগুলো স্পট ঘুরে দেখা সম্ভব না তাই আপনাকে অবশ্যই সেখানে ২ থেকে ৩ দিন থাকতে হবে।
সুন্দরবন ঘুরে আসার চিন্তা করলে অন্তত ২ দিনের ভ্রমণ প্লান করাই ভালো।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান সমূহ

সুন্দরবন বিশাল একটি বনাঞ্চল নিয়ে তৈরি। নিরাপত্তার খাতিরে এই বনের সব জায়গায় চাইলেই আপনি চেতে পারবেন না। তবে বন বিভাগ কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় পর্যটকদের জন্য ভ্রমনের অনুমতি দিয়েছে। সুন্দরবন ঘুরে দেখা যায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা দিয়ে। সবথেকে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে খুলনা ও বাগেরহাটের মোংলা দিয়ে। খুলনা ও মোংলা দিয়ে ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য স্থান গুলো হলো-

  1. করমজল
  2. হারবাড়িয়া
  3. কাছিখলা
  4. কটকা
  5. জামতলা
  6. হিরন পয়েন্ট ও
  7. দুবলারচর, ইত্যাদি।

১. করমজল

মোংলা থেকে সুন্দরবনের সব থেকে কাছের স্পট হলো করমজল (Karomjol)। এখানে কাঠের পুলের ট্রেইলে হেটে হেটে গাছ গাছালি, পাখি, বানর দেখতে পাবেন। এটিকে বন বিভাগ মূলত হরিণ ও কুমিড়ের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। হাতে সময় না থাকার কারণে গহীন বনে না যেতে পারলে এখানে ঘুরে বনের কিছুটা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

২. হারবাড়িয়া

হারবাড়িয়া সুন্দরবনের আরেকটি সুন্দরতম পর্যটন স্পট। মোংলা থেকে হারবাড়িয়ার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এখানের মূল আর্কষন হলো কাঠের ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে পুরো হারবাড়িয়ার অংশটুকু দেখা যায়। পুরো কাঠের পুল হাটতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো। এখানে আছে একটি পদ্মপুকুর। এখানে গেলে আপনি যখন কাঠের পুল দিয়ে হেটে বনের গভীরে যেতে থাকবেন বনের নিস্তব্ধতা, পাখির ডাক মাঝে মাঝে বানরের ডাক আপনাকে এডভেঞ্চারের আনন্দ দিবে।

৩. কটকা

কটকা অভায়ারন্যের মূল আর্কষন হলো এখানে গেলে দেখা মিলবে হরিণ দলের সাথে। এখানেও কাঠের পুলের ট্রেইল ধরে হাটলে কেওরা বনের মাঝে দেখা মিলবে হরিণ দলের। কটকা অভায়ারন্যের দক্ষিন পাশে বঙ্গোপসাগর। সাগরের পাশ ঘেঁষেই কটকা অভায়ারান্যটি।

৪. কটকা বীচ

কটকা ট্রেইল ধরে কিছু দূর হাটলেই দেখা মিলবে কটকা সমুদ্র সৈকতটি। কটকা সমুদ্র সৈকতটি পরিষ্কার ও অত্যান্ত সুন্দর একটি জায়গা। এখানে গেলে দেখা মিলবে ঝাঁক বাধা লাল কাকড়ার দলের। কটকা বীচে একই সাথে বন ও সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

৫. হিরণ পয়েন্ট

হিরন পয়েন্টেও রয়েছে কাঠের পুলের একটি ট্রেইল। কাঠের পুলের ট্রেইল ধরে হাটতে হাটতে দেখা মিলবে বানর, হরিণ, গুইসাপ, কুমিরের। মকপাল ভালো থাকলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলতে পারে।

৬. দুবলার চর

দুবলার চরের নাম আমরা সবাই শুনেছি। সুন্দরবনের মধ্যে ছোট্ট একটি চর দুবলারচর, যা মূলত মূলত একটি জেলে গ্রাম। কুংগা ও মরা পশুর নদীর মাঝের একটি বিচ্ছিন্ন চর দুবলার চর। চরের আয়তন প্রায় ৮১ বর্গ মাইল। দুবলার চরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। বছরের প্রায় পাঁচ মাস এখানে প্রায় ১০ হাজার জেলেরা অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। মাছ ধরার পাশাপাশি চলে শুটকি তৈরির কাজ। এই জায়গাটি মূলত হিন্দুধর্মের পূন্যস্নান, রাসমেলা ও শুটকির জন্য বিখ্যাত।

৭. জামতলা সৈকত

জামতলা ঘাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পায়ে হেটে গেলেই দেখা মিলবে জামতলা সী বীচের। কটকার কাছেই জামতলা সমুদ্র সৈকত। একাখানেও একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছ, এখানে দাড়িয়ে সুন্দরবনের একাংশে চোখ বুলানো যায়। ভাগ্যক্রমে দেখা মিলতে পারে হরিণ ও বাঘের।


জামতলা ওয়াচ টাওয়ার থেকে কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হেটে যেতে হয়। পথের পাশে হাটার সময় চারপাশের গভীর অরণ্য, দেখা মিলবে সাপ, হরিণ, শূকর তাই সাবধান হতেই হবে। সত্যিই এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। যারা সুন্দরবনের গভীরের স্বাদ নিতে যান তাদের জন্য এই স্পটটির বিকল্প নেই।

৮. মান্দারবাড়িয়া সৈকত

মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবনে যেতে হবে। এখানে সূর্যাদয় ও সূর্যাস্তের দেখা মিলবে। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত উত্তাল সাগর ও সুন্দরবনের এক রূপসী কন্যা যা এখনো পুরোপুরি আবিস্কার হয়নি।

অভায়ারন্যের জন্য ফি ( প্রতিদিনের জনপ্রতি)
দেশি পর্যটক – ১৫০ টাকা
বিদেশি পর্যটক – ১৫০০ টাকা
ছাত্র-ছাত্রীদের – ৩০ টাকা

অভায়ারন্যের বাইরে ফি ( প্রতিদিনের জনপ্রতি)
দেশি পর্যটক – ৭০ টাকা
বিদেশি পর্যটক – ১০০০ টাকা
ছাত্র-ছাত্রীদের – ২০ টাকা

এছাড়া গবেষকদের জন্য ভ্রমণ ফি ৪০ টাকা। করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা আর বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।

বন বিভাগের ভ্রমন ফি ছাড়াও অন্যান্য বাবদ যে খরচ রয়েছে:
গাইডের ফি – ৫০০ টাকা
নিরাপত্তার গার্ডের ফি – ৩০০ টাকা
লঞ্চের ক্রুর ফি – ৭০ টাকা

টেলিকমিউনিকেশন বাবদ ফি
ভিডিও ক্যামেরা বাবদ ফি ২০০ টাকা আর (দেশি পর্যটকদের জন্য )
ভিডিও ক্যামেরা বাবদ ফি ৩০০ টাকা (বিদেশি পর্যটকদের জন্য)

সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের জন্য জনপ্রতি ৩ দিনের জন্য ফি ৫০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি ৮০০ টাকা এবং প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ২০০ টাকা দিতে হয়।

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ

সুন্দরবন ভ্রমণের প্যাকেজের খরচ নির্ভর করে শীপের মান ও খাবারের উপর, আপনি কোন কোন জায়গা ঘুরবেন, কতদিন থাকবেন তার উপর। সাধারণত এসব ভ্রমণ প্যাকেজ ২ রাত ৩ দিন বা ৩ রাত ৪ দিনের হয়ে থাকে। মোটামুটি ভালো মানের শিপের জন্য জনপ্রতি প্যাকেজ খরচ হবে ৬০০০-১৪০০০ টাকা। আর বিলাসবহুল টুরিস্ট ভ্যাসেলে (AC LuXURY CRUISE SHIP) ভ্রমণ খরচ হবে ১৫০০০ – ২৫০০০ টাকা।


যদি গ্রুপে ৩০-৪০ জন হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে নিজেরাই একটি শীপ ভাড়া করে নিতে পারেন। খরচ নির্ভর করবে কোন কোন জায়গা ঘুরবেন, কতদিন থাকবেন তার উপর।

সুন্দরবন কিভাবে ঘুরবেন

নিরাপত্তা, খরচ, অনুমতি আর জটিল প্রক্রিয়ার জন্য সুন্দরবন ঘোরার সব থেকে সহজ উপায় হলো কোন ট্যুর গ্রুপের সাথে প্যাকেজে যাওয়া। এখানে আপনাকে কষ্ট করে কোন কিছু ম্যানেজ করতে হবে না। প্যাকেজের মধ্যেই শীপে ওঠার পর ঘাটে ফেরা পর্যন্ত ৩ বেলা খাবার, ২ বেলা নাস্তা। অনুমতি, নিরাপত্তা কর্মী ও গাইড সহ সকল যাবতীয় খরচ যুক্ত থাকে।

এছাড়া আপনি চাইলে একা অথবা ২-৩ জন মিলে বনের গহীনে ঘুরতে যেতে পারেন এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বন বিভাগের অনুমনি নিয়ে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে এবং নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি নৌযানে কমপক্ষে ২ জন করে নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে থাকে বন বিভাগ। আর সব গুলো স্থান ঘুরে দেখতে চাইলে ট্রলার বা শীপের বিকল্প নেই।
একা গেলে বা গ্রুপে কম মানুষ গেলে আপনাকে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবল্বন করে যেতে হবে।

সুন্দরবনে ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন?

শীপ বা লঞ্চে গেলে সেখানেই রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমন করতে চাইলে টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং হিরন পয়েন্টের নীলকমল আর কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজ র‍য়েছে, সেখানে থাকতে পারেন।

মোংলায় থাকার জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল আছে। এছাড়া পশুর বন্দরে থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে।


খুলনা শহরে আবাসিক অনেক হোটেল র‍য়েছে যেমন

  • হোটেল ক্যাসেল
  • টাইগার গার্ডেন
  • হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি।

শ্যমনগরে এনজিও সুশীলনের রেস্ট হাউজ ও ডরমেটরীতে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া সাতক্ষীরায় কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাওয়া যাবে।

সুন্দরবন ভ্রমনে যা মনে রাখতে হবে-

সুন্দরবনে ভ্রমনের সময় নিরাপত্তার জন্য দক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী সাথে রাখুন।
শীতকালে গেলে ভালো শীতের কাপড় নিয়ে নিন।
সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত রাখুন।
নিরাপদ খাবার পানি সাথে রাখুন।
ট্যুর গাইডের কথা মেনে চলুন।


শীপে ওঠার আগে প্রয়োজনীয় সব কিছু চেক করে সব নিয়ে উঠুন।
কোন শীপে বা লঞ্চে নিয়ে যাবে তা আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন।
সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি রাখবেন।
সুন্দরবনের কিছু জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তাই সাথে যে সীমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় সেটি সাথে রাখুন (রবি, টেলিটক)।
প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখুন।


যে এজেন্সির সাথে যাবেন তাদের সর্ম্পকে আগে থেকে জেনে নিন।
বাজেট সমস্যা না হলে ভালো মানের শীপ ভাড়া করাই ভালো।
বনে ঢুকার সময় সবাই একসাথে থাকুন।
গাইডের কথা মেনে চলুন।
নিজের সিদ্ধান্তে কিছু করতে যাবেন না।


ভ্রমণ খরচ কমাতে চাইলে ছুটির দিন এড়িয়ে যান।
অন্য পর্যটকদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
বন্য প্রাণী বা পোকা মাকড় হাত দিয়ে না ধরাই ভালো হবে।
কাউকে কোন রকম ট্রল করবেন না।
বনের মধ্যে অপচনশীল কিছু ফেলবেন না।


উপরোক্ত বিষয়গুলো সুন্দরবন ভ্রমনের সময় অবশ্যই মনে রাখবেন। কেননা নিরাপদ একটি ভ্রমণ আমাদের সকলের কাম্য। নিরাপদ ভ্রমনের মাধ্যমে মিশে যান প্রকৃতির সাথে। নিজের দেশকে জানুন আর জানান পৃথীবির মানুষকে।

ভ্রমন পিপাসুদের জন্য ঝুড়ি ঝুড়ি সৌন্দর্য্য সাজিয়ে বসে আছে সুন্দরবন। জীব বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য থেকে মুগ্ধ হতে যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তাই আর দেরী না করে এই শীত মৌসুমেই পরিবার প্রিয়জন সুন্দরবন চলে যান বাঘ মামা আর মায়া হরিণের সাথে দেখা করতে। 

Scroll to Top