শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল – গাজীপুর

গাজীপুর জেলার সবথেকে বড় সরকারি মেডিকেল “শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”।গাজীপুর সদর হাসপাতাল নামে লোক মুখে প্রচলিত এই হাসপালটি গাজীপুর বাসীর চিকিৎসা সেবার নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান। 


৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয়।আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও সুন্দর পরিবেশে ১৫ তলা ভবন বিশিষ্ট এই হাসপাতালে দিন রাত ২৪ ঘন্টা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যস্ত থাকে অসংখ্য সুদক্ষ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
এটি শুধু হাসপতালই নয়,দেশের স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজও বটে।


সরকারি ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য একদম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি।প্রতিবছর অসংখ্য ডাক্তার ও নার্স চিকিৎসা বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে সরকারি সনদ নিয়ে বের হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে।

গাজীপুর সদর হাসপাতালের সঠিক লোকেশন ও যোগাযোগ মাধ্যম

গাজীপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুরের হাসপাতাল রোডে বৃহৎ এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ” শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”
সঠিক ঠিকানাঃ রথখোলা,সদর হাসপাতাল রোড,গাজীপুর -১৭১২।

মোবাইলঃ ০১৭১২-০৬৯১৯৪
ফোনঃ ৪৯২৬১৪২৩
ওয়েবসাইটঃ www.stamc.edu.bd

কীভাবে আসবেন “শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল” এ?

সদর হাসপাতালে আসতে হলে প্রথমে আপনাকে চলে আসতে হবে জয়দেবপুর। ময়মনসিংহ, মাওনা,বাঘের বাজার,হোতাপারা,রাজিন্দ্রপুরের এদিকে থেকে আসলে “তাকওয়া” নামক হাইওয়ে মিনি বাসে করে চলে আসতে হবে সালনা স্টপেজে।সালনা বাজারের পূর্ব দিকে জয়দেবপুর রেলগেট যাওয়ার জন্য অটো পাবেন।


লোকাল অটোতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০ টাকা।জয়দেবপুর রেলগেট নেমে পেয়ে যাবেন সরাসরি হাসপাল রোডের গাড়ি।অটোতে উঠলে আপনাকে নিয়ে যাবে একদম হাসপাতালে গেইটের সামনে।এখানে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ১০ টাকা।


টাঙ্গাইল টঙ্গী, কোনাবাড়ি,কালিয়াকৈর, মীর্জাপুর থেকে আসতে চাইলে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে বাসে করে।চৌরাস্তা থেকে অটোতে আসবেন জয়দেবপুর রেলগেট।চৌরাস্তা থেকে রেল গেট পর্যন্ত লোকাল অটোতে মাথাপিছু ১০ টাকা ভাড়া।রেলগেট থেকে অটোতে উঠে চলে আসবেন সরাসরি হাসপাতাল গেইটে। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম এখন নতুন ভবনে পরিচালিত হয়।

কোন কেন রোগের চিকিৎসা হয়/ কোন রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যায়?

শহীদ তাজউদ্দিন আহমন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুরের সবথেকে বড় সরকারি হাসপাতাল।এখানকার প্রতিটি ডাক্তারই আলাদা আলাদা রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ এবং তারা দেশের স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে এসেছেন এবং সরকারি সনদপ্রাপ্ত।প্রত্যেক ডাক্তার স্বাস্থ্যে বিসিএস ক্যাডার এবং অনেক দিন যাবৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।

চলুন শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোন কোন রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন রোগী দেখেন তা জেনে আসা যাক-

  • ১. মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
  • ২. ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
  • ৩.নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
  • ৪.চর্ম যৌন সেক্স ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
  • ৫. হাড় ভাঙ্গা ,বাত ব্যাথা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
  • ৬. ইউরোলজিস্ট এন্ড্রোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
  • ৭. নবজাতক শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ
  • ৮. নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ
  • ৯. গাইনি এন্ড অবস বিশেষজ্ঞ
  • ১০. গাইনী বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন
  • ১১. নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
  • ১২. ক্যাস্ট্রো লিভার বিশেষজ্ঞ
  • ১৩. হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

কখন ডাক্তার পাওয়া যাবে?

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।যে কোনো জরুরি ও গুরুতর অসুস্থ রোগীর জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে ইমার্জেন্সি বিভাগ।জরুরি বিভাগে সব সময়ই কর্মরত থাকেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স।


শুক্রবার ব্যাতিত সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে আউটডোরে নিয়মিত ডাক্তার বসেন।যে কোনো রোগের জন্য টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে পারবেন।সাধারণস সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ডাক্তারগন বসেন।শুক্রবারও আউটডোরে সাধারণ ডাক্তারগন নিয়মিত রোগী দেখেন। কিন্তু ভালো ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে চাইলে শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে টিকেট কেটে লাইনে দাড়ানো টাই বুদ্ধিমানের কাজ।

মেডিকেলে টেস্ট ও রিপোর্টঃ

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো ধরনের মেডিকেল টেস্ট এখানে করা হয়।
চলুন দেখে আসা যাক কোন ধরনের টেস্ট আপনি গাজীপুর সদর হাসপাতাল থেকে করাতে পারবেন-

১. সবধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট
২. ডিএনএ টেস্ট
৩. এক্স-রে
৪. আলট্রাসাউন্ড।
৫. সব ধরনের ব্লাড টেস্ট
৬. করোনা টেস্ট
৭. ইসিজি
৮. এমআরআই
৯. সিটি স্ক্যান
৯. যে কোনো ধরনের হরমোনাল টেস্ট
১০. ইকো

মেডিকেল টেস্ট করার জন্য কোথায় যাবেন এবং কীভাবে করাবেন?

যে কোনো ধরনের মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য প্রথমে আপনাকে চলে যেতে হবে একদম গ্রাউন্ড ফ্লোরে।প্রবেশ পথ দিয়ে ডানদিকে তাকালেই দেখতে পাবেন কাউন্টার। কাউন্টারে গিয়ে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে যে কোনো টেস্ট এর টিকেট কাটতে হবে। টিকেট কাটার সময় কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেয়া হবে কোন টেস্ট কতো নম্বর ফ্লোরের কত নম্বর কক্ষে করা হয়।


তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলে যাবেন নির্দিষ্ট কক্ষে।সেখানে টিকেট জমা দিতে হবে সিরিয়ালের জন্য । সিরিয়াল অনুযায়ী নাম ডাকলে তবেই আপনি টেস্ট করাতে পারবেন।যে কক্ষে টেস্ট করিয়েছেন সেখান থেকেই টেস্টের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।সাধারণ বেশিরভাগ টেস্ট নতুন ভবনের চতুর্থ তলায়ই করা হয়।


মনে রাখবেন রোগীর অবস্থা যতো গুরুতরই হোক না কেন দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত একানে কোনো ধরনের টেস্ট করানোর সুযোগ নেই। খুব বেশি জরুরি হলে আপনাকে বাইরে থেকে যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গিয়ে টেস্ট করাতে হবে।

সম্ভাব্য খরচ

গাজীপুর সদর হাসপাতাল পুরোপুরি সরকারি একটি হাসপাতাল।এখানে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ডাক্তারগন চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।আউটডোরে যে কোনো রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হলে কাউন্টার থেকে মাত্র ১০ টাকায় টিকেট কাটতে হয়।


ইমার্জেন্সি বিভাগের ভর্তির জন্য ২০ টাকা দিয়ে একটি ফর্ম কিনতে হবে। ফর্ম পূরণ করলে রোগীর অবস্থা বুঝে রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হবে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে।সেখানে ডিউটিরত ডাক্তার রেগীকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট ও ইনজেকশন বা স্যালাইন দেবেন।এগুলোর জন্য আলাদা কোনো টাকা প্রয়োজন নেই।রোগীর প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ঔষধ ও ইনজেকশন সরকারী ভাবেই দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু ঔষধ নিজস্ব খরচে বাহির থেকে কিনে আনতে হয়।

সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী টেস্ট এর টিকেট মূল্য রাখা হয়। যেখানে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলেতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুন বেশি মূল্যে টেস্টের টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এখানে রোগীকে সরকারিভাবে তিন বেলা খাবার সরবরাহ করা হয়। তাই যাদের আর্থিক সমস্যা আছে, তাদের রোগীর খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।

এই হাসপাতালে সিজারিয়ানের মতে ব্যয়বহুল সার্জারীও করা হয় পুরোপুরি সরকারি খরচে।তাই যাদের প্রাইভেট হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সিজারিয়ান সার্জারী করার সামর্থ্য নেই তাদের একমাত্র ভরসা হলো এই সদর হাসপাতাল।

অন্যান্য সুযোগ সুবিধা

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির আছে আলাদা আলাদা রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ড। প্রতিটা ওয়ার্ডের জন্য ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত থাকেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, পর্যাপ্ত নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আায়া।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত আছেন অসংখ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী ।


সার্বক্ষণিক লিফট ও ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্নভাবে থাকে বিদ্যুৎ সংযোগ।সকাল বিকাল নিয়মিত প্রতিটা ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগী দেখতে যান।রোগীদের জন্য আছে সরকারিভাবে ঔষধ পথ্য ও খাবারের ব্যবস্থা । আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে গাজীপুরের সবথেকে বড় সরকারি হাসপাতাল “শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”।

অসুবিধা

এই হাসপাতালে প্রথমেই যে সমস্যার মুখোমুখি হবেন তা হলো পর্যাপ্ত ” বেড নেই”।ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে রোগীকে রাখা হয় বারান্দায় সেখানে কিন্তু থাকার তেমন পরিবেশ নেই। ওয়ার্ড বয়,নার্স এমনকি ডাক্তাররা পর্যন্ত বলবে পর্যাপ্ত বেড নেই বিধায় আপনার রোগীকে আপাতত বারান্দায়ই থাকতে হবে।আসলে তাদের কিছু করার ও নেই।কারণ বেডের তুলনায় প্রচুর পরিমাণে রোগী প্রতিদিন এখানে আসেন।তবে আপনি যদি ওনাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন তখন বেড খালি হলে খুব দ্রুতই আপনাকে শিফট করে দিবেন।

রাতের বেলা ডিউটিরত নার্সরা ঘুমে কাতর থাকেন বিধায় যদিও একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তবে ওনাদের ডাকলেই সাড়া দেন।

রাতে কোনো ভয়াবহ অবস্থার গর্ভবতী মহিলার সিজার করতে হলে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কারণ রাতে ডক্টর নাও পেতে পারেন। উল্টো তাদেরকে দেয়া হয় কাছাকাছি কোনো ক্লিনিকের ঠিকানা।

তবে সব মিলিয়ে এই এলাকার আশার বাতি এটি ভালোর পাশাপাশি খারাপ কিছু অভিজ্ঞতা ও আপনাকে সাথে নিয়ে আসতে হবে।
তাইতো আমাদের দেশের ধনীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
তবে মারে আল্লাহ রাখে কে বিদেশে গিয়েও যে মরার তারে তো আর বাঁচানো যাইনা।আর এই হাসপাতাল থেকেও অহরহ মানুষ চিকিৎসা নিয়ে আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে।

তবে সবশেষে সরকারের আরেকটু সদিচ্ছা আর স্হানীয় নেতৃবৃন্দ এবং দায়িত্বশীল সবাই যদি চিন্তা করে এখান থেকে আরো উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার তাহলে কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে সময় লাগবেনা।

Scroll to Top