শারজাহ এর দর্শনীয় স্থান সমূহ

সংযুক্ত আরব আমিরাত এর সাতটি প্রদেশ এর মধ্যে একটি হলো শারজাহ আমিরাত। এর আয়তন প্রায় ২,৫৯০ বর্গকিলোমিটার। শারজাহ আমিরাত প্রদেশের রাজধানীর নামও শারজাহ। রাজধানী সহ পুরো প্রদেশ জুড়েই আছে অসংখ্য বিষ্ময়কর কির্তি, ঐতিহাসিক নিদর্শন, পার্ক, বিলাসবহুল হোটেল ইত্যাদি। প্রতিবছর অসংখ্য বিদেশী পর্যটক এখানে সুন্দর কিছু ছুটির দিন কাটাতে আসেন। শারজাহ প্রদেশের বেশ কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের তথ্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

১. শারজাহ ডেজার্ট পার্ক

শারজাহ মূল শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শারজাহ ডেজার্ট পার্ক বেশ জনপ্রিয় একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি শুধুমাত্র একটি বিনোদন কেন্দ্রই নয় বরং শিক্ষামূলক দর্শনীয় স্থানও বটে। শারজাহ ডেজার্ট পার্কের মূলত তিনটি পার্ট রয়েছে।

প্রথম পার্টে আছে প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘর।পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ও বিপন্ন প্রায় প্রাণীদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরে। দ্বিতীয় পার্টটি হলো আরবীয় বন্যপ্রাণী কেন্দ্র।এর মাধ্যমে আরবের বিভিন্ন বন্য প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করা যাবে। এবং শেষ পার্টটি হলো শিশু খামার। সবমিলিয়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এক সুবিশাল কেন্দ্র এই শারজাহ ডেজার্ট পার্ক। পার্কটি শারজাহ আল ধাইদ যাওয়ার রাস্তার পাশেই অবস্থিত।

২. আল কাসবা

শারজা শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল কাসবা একটি বানিজ্যিক কমপ্লেক্স। বিনোদনের জন্য এখানে ইনডোর ও আউটডোর উভয় পদ্ধতিতেই বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে। আল কাসবা কমপ্লেক্সে বিলাসবহুল বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ আছে। আছে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য কিডস জোন। এখানে বিনোদন মূলক অনেক কিডস রাইড রয়েছে যা বাচ্চারা খুবই উপভোগ করে।

আরও আছে থিয়েটার যা সুন্দর একটি বিকেল বা সন্ধ্যার আয়োজন করতে নিঃসন্দেহে চমৎকার পছন্দ। রাতের আলো ঝলমলে পরিবেশে আল কাসবা কমপ্লেক্সটিকে আরও বেশি চমৎকার ও আকর্ষনীয় লাগে। ছুটির দিনগুলোতে শারজাহ ভ্রমনের প্লান থাকলে অবশ্যই একটি সুন্দর সন্ধ্যা আল কাসবা কমপ্লেক্সে কাটিয়ে আাসা উচিত।

book air ticket goofly24.com

৩. শারজাহ অ্যাকোয়ারিয়াম

শারজাহ এর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে শারজাহ অ্যাকোয়ারিয়াম সবথেকে বেশি উল্লেখযোগ্য। বৃহৎ আকৃতির ২০ টি ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে একটি কৃত্রিম সামুদ্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দর্শনার্থীদের জন্য ডেকোরেশন করা হয়েছে।

 প্রতিটি ট্যাঙ্কই পুরোপুরি ট্রান্সপারেন্ট হওয়ার ফলে চোখের সামনে পুরো একটি সামুদ্রিক জগৎ দেখতে পাওয়া যাবে।সমুদ্রের তলদেশে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনধারা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে যেতে হবে শারজাহ অ্যাকোয়ারিয়ামে।

শারজাহ অ্যাকোয়ারিয়াম নির্মানের মূল প্রতিপাদ্য হলো সামুদ্রিক জীব রক্ষায় সকলকে সচেতন করা। বিষ্ময়কর ও বৃহৎ এই শারজাহ অ্যাকোয়ারিয়াম মূল শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই মূল শহর থেকে স্থানীয় যে কোনো যানবাহনে সরাসরি এখানে যেতে পারবেন।

৪. শারজাহ মিউজিয়াম অফ ইসলামিক সিভিলাইজেশন

শরজাহ শহরের মধ্যেই অবস্থিত শারজাহ মিউজিয়াম অফ ইসলামিক সিভিলাইজেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী কেন্দ্র। মুসলমান সম্প্রদায়ের ইতিহাসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য জানতে পারবেন এই মিউজিয়াম থেকে।

দুইতলা বিশিষ্ট এই জাদুঘরটিতে রয়েছে পাঁচ হাজার টিরও বেশি প্রাচীন ইসলামিক নিদর্শন যা সাতটি গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ক্যালিগ্রাফি, খোদাই নকশা, সিরামিকের প্রাচীন সামগ্রি, ইসলামিক শাশনামলের প্রাচীন মুদ্রা, কাচের ফসিল, পাণ্ডুলিপি, ধাতুর কাজ এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।

এসকল সংগ্রহ গুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এনে একত্রিত করা হয়েছে। শারজাহ মিউজিয়াম অফ ইসলামিক সিভিলাইজেশন উদ্বোধন করা হয়েছে ২০০৮ সালে। শারজাহ শহরের আল মাজাররাহ এলাকার কর্নিচে স্ট্রিটে জাদুঘরটি অবস্থিত।

৫. আল মাজাজ ওয়াটারফ্রন্ট

শারজাহ শহরে অবস্থিত বিনোদন পার্ক গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আল মাজাজ ওয়াটারফ্রন্ট। এখানে পানির ফোয়ারার সাথে উপভোগ করতে পারবেন সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা। আল মাজাজ ওয়াটারফ্রন্টে আছে বেশ কয়েকটি রাজকীয় রেস্তোরা যেখানো ঐতিহ্যবাহী এরাবিক খাবারের স্বাদ অসাধারণ।

 আরও আছে সাধারণ মানের রেস্তোরা ও ক্যাফে, একটি জগিং ট্রাক, মারায়া আর্ট পার্ক, শিশুদের খেলার মাঠ সহ আরও বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক আয়েজন।পরিবারের সবাই মিলে চমৎকার একটি ডিনার উপভোগ করতে পারবেন আল মাজাজ ওয়াটারফ্রন্টে। পুরো ওয়াটারফ্রন্টটি২,৩১ ০০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে আল মাজাজ ওয়াটারফ্রন্ট দেশ বিদেশের সকল পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

৬.শারজাহ ন্যাশনাল পার্ক

শারজাহ আমিরাত এর সবথেকে বড় সবুজে ঘেরা পার্ক হলো শারজাহ ন্যাশনাল পার্ক। তুলনামূলক কম খরচে পরিবারের সবাই মিলে চমৎকার একটি বিকেল কাটিয়ে আাসা যায় এই পার্ক থেকে। সবুজের সমারোহে ঘেরা সুবিশাল মাঠে বাচ্চাদের হুটোপুটি ও খেলাধুলা বেশ উপভোগ করার মতো।

তাছাড়া পুকুরে ভেসে বেড়ানো সাদা হাঁসের দল, চমৎকার গাছগাছালি ও সবুজে ঘেরা মাঠ যে কারো মনে দোলা লাগাবেই। বাচ্চাদের জন্য আছে চমৎকার ছাউনি যুক্ত কিডস জোন৷ এখানে ছোট ছোট বিভিন্ন রাইডস আছে যা বাচ্চাদের চিত্তবিনোদনে চমৎকার ভূমিকা রাখে।

আরও আছে বারবিকিউ জোন ও গ্রিলিং স্টেশন। বন্ধু বা পরিবারের সাথে দলবেঁধে বারবিকিউ পার্টির সাথে সুন্দর একটি বিকেল উপভোগ করতে চলে যেতে পারেন শারজাহ ন্যাশনাল পার্কে।

tour package goofly24.com

৭. শারজাহ হেরিটেজ এরিয়া

এটা শুধু একটিমাত্র পর্যটন এলাকা নয়। বরং বেশ কয়েকটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভবন, জাদুঘর, স্থাপত্যশৈলীর এক বিশাল সমাহার নিয়ে শারজাহ হেরিটেজ এরিয়া গঠিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হল: শারজাহ হেরিটেজ মিউজিয়াম, আল মিডফা হাউস, শারজাহ ক্যালিগ্রাফি মিউজিয়াম, হিসান ফোর্ট, সউক আল আরসা ইত্যাদি।

 এসকল নিদর্শন গুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এটি বেশ চমৎকার একটি দর্শনীয় স্থান। এখানে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট একটি এলাকা আছে যেখানে পর্দার রক্ষা করে তারা খেলাধুলা সহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। বুর্জ অ্যাভিনিউ এবং আল-মারাইজা রোডের মধ্যে কর্নিচে কাছাকাছি শারজাহ হেরিটেজ এরিয়া অবস্থিত।

৮. অ্যারাবিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার

আরবের একমাত্র চিরিয়াখানা অ্যারাবিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার। এখানে আরব উপদ্বীপের প্রায় ১০০ প্রজাতির প্রাণী আছে। পশুপাখি প্রেমীদের জন্য অ্যারাবিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার একদম পারফেক্ট একটি পর্যটন কেন্দ্র।

এই চিরিয়াখানায় গেলে আরবের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন পশুপাখি সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করা যাবে এবং তার পাশাপাশি চমৎকার পরিবেশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। চিড়িয়াখানাটি ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে এবং সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আল ধাইদ রোডে শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছাকাছি অঞ্চলে অ্যারাবিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার অবস্থিত।

৯. আল নূর আইল্যান্ড

আল নূর আইল্যান্ড শারজাহ শহর থেকে কিছুটা দূরে শারজাহ শহরের খালিদ লেগুনে অবস্থিত। এটি একটি চমৎকার দ্বীপ যেখানে অবকাশ কাটানোর জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই রয়েছে। এই দ্বীপটিতে একটি বাটারফ্লাই হাউস, একটি বই প্যাভিলিয়ন, একটি ক্যাফে, একটি খেলার মাঠ সহ আরও অনেক বিনোদনমূলক আয়োজন রয়েছে। রাতের বেলা পার্কের চমৎকার লাইটিং সিস্টেম দ্বীপটিকে আরও বেশি চমৎকার ভাবে প্রদর্শন করে।

১০. শারজাহ বিজ্ঞান জাদুঘর

দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডের ওপরে বিজ্ঞানের প্রভাব সরাসরি নিজ চোখে দেখতে চাইলে অবশ্যই চলে যেতে হবো শারজাহ বিজ্ঞান জাদুঘরে। এখানে ছোট বড় সবার জন্যই বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বৈজ্ঞানিক শক্তিগুলোর কাজ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে জাদুঘরের কর্মীরা সদা প্রস্তুত থাকে।

শিশুদের জন্য প্রায়ই নানা কর্মশালার আয়োজন করা হয়, এই আয়োজনের ফলে শিশুদের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্পর্কে ব্যপক জ্ঞান অর্জন হয়। শারজাহ বিজ্ঞান জাদুঘর এর একটি আকর্ষণীয় পার্ট হচ্ছে শারজাহ সায়েন্স মিউজিয়াম প্ল্যানেটেরিয়াম। এখানে প্রবেশ করার সাথে সাথে মনে হয় মহাকাশের কোনো এক অচেনা রাজ্যে প্রবেশ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শারজাহ এর আরও কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান

১. ব্লু সউক
২. শারজাহ আর্ট ফাউন্ডেশন
৩. শারজাহ আর্টস মিউজিয়াম
৪. শারজাহ ডিসকভারি সেন্টার
৫. শারজাহ প্রত্নতত্ত্ব যাদুঘর
৬. খোর ফাক্কান
৭. সওক আল জুবাইল
৮. আল নূর মসজিদ
৯. বুহাইরা কর্নিশে
১০. কালবা (ইত্যাদি)

Scroll to Top