গাজীপুরের জঙ্গলে একদম নিরিবিলি এক পরিবেশে অবকাশ যাপক করতে চাইলে যেতে পারেন রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে। একদম গহীন বনের মধ্যে এই রিসোর্টটির অবস্থান। সেই সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ আরও বনাবন করেছে।
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার গভীরে শাল বনের ভেতর যৌথ মালিকানায় রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এখানে ১৯ টি চারতলা বিশিষ্ট ভবন ও ২৬ টি কটেজ রয়েছে। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে দু একদিনের ছুটিতে এই ইকো রিসোর্টে বেড়াতে যেতে পারেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রিসোর্টের ডেকোরেশন আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রতিটি ভবনের রুম বেশ চমৎকার ভাবে ডেকোরেশন করা। আছে সুবিশাল একটি সুইমিং পুল, কিডস জোন, প্লে গ্রাউন্ড, মাটির ঘর, বসার জন্য ছোট ছোট কটেজ, মসজিদ, পার্কিং প্লেস, পিঠাঘর, বারবিকিউ করার সিস্টেম সহ এ টু জেড সব কিছু।
যে কোনো পিকনিক বা কর্পোরেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলেও এখানে বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। আপনার অনুষ্ঠানকে প্রানবন্ত করতে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট সকল সার্ভিস দিতে সক্ষম।
রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ
রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে মূলত প্যাকেজ অফারে রুম বুকিং করে থাকতে হয়। সারাদিন থাকতে চাইলেও আপনাকে প্যাকেজ মূল্যে রুম ভাড়া নিতে হবে। আর রাতে থাকতে চাইলে তো অবশ্যই রুম বুকিং দিতে হবে। এছাড়া দলবেঁধে পিকনিক করতে চাইলে এক দিনের জন্য রিসোর্ট বুক করতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও পিকনিক প্যাকেজ রয়েছে। চলমান প্যাকেজ অফার গুলো দেখে নিন-

১. ডে লং প্যাকেজ
এই প্যাকেজটি ২ জনের জন্য প্রযোজ্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে চাইলে ডে লং প্যাকেজটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরের হেভি লাঞ্চ, বিকালের নাশতা, সুইমিং পুল, পার্কিং, প্লে গ্রাউন্ড, কিডস জোন এবং একটি রুম সহ পুরো রিসোর্টে ঘোরাফেরা করার সুযোগ। ডে লং প্যাকেজে কটেজ পার্কের রুম বুক করলে চার্জ হবে ৭০০০ টাকা। আর ওয়াটারফ্রন্ট কটেজে থাকতে চাইলে প্যাকেজ মূল্য ৯০০০ টাকা।
২. নাইট স্টে প্যাকেজ
এই প্যাকেজটিও দুই জনের জন্য প্রযোজ্য। এক দিন এক রাত থাকতে চাইলে নাইট স্টে প্যাকেজ উপযুক্ত হবে। এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে দুপুরের খাবার, রাতের খাবার (চাইলে বারবিকিউ করতে পারবেন), সকালের নাশতা, এন্ট্রি ফি, সুইমিং পুল, প্লে গ্রাউন্ড, একটি রুম, ম্যাসাজ পার্লার, পার্কিং প্লেস এবং কিডস জোন সহ পুরো রিসোর্টে ঘোরাফেরা করার সুযোগ। এখানেও রুম ভেদে প্যাকেজ মূল্যের তারতম্য রয়েছে। কটেজ পার্কের রুম সহ প্যাকেজ মূল্য ১০,০০০ টাকা এবং ওয়াটারফ্রন্ট কটেজের প্যাকেজ মূল্য ১২,৫০০ টাকা।
৩. কর্পোরেট প্যাকেজ অথবা পিকনিক প্যাকেজ
এই প্যাকজে রিসোর্ট বুকিং দিতে চাইলে কমপক্ষে ১০০ জনের জন্য বুকিং দিতে হবে। জনপ্রতি প্যাকেজ চার্জ ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা হতে পারে। পিকনিক প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরে খাবার, বিকালের নাশতা, এন্ট্রি ফি, সুইমিং পুল, পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার সুযোগ, কিডস জোন, প্লে গ্রাউন্ড। এই প্যাকেজে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রিসোর্টে অবস্থান করতে পারবেন। তাই যে কোনো পিকনিক বা কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য এই প্যাকেজটি বাছাই করতে পারেন।
বি. দ্র: প্যাকেজ মূল্য এবং প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সার্ভিস সব সময় এক থাকে না। তাই ট্যুর প্লান করার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নেয়া উচিত। অবশ্য এমনিতেও আপনাদের ভ্রমণ তারিখের কমপক্ষে ৪/৫ দিন আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।
যোগাযোগ:
- রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট, রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট, গাজীপুর।
- মোবাইল- ০১৭১৩-৬৩৮৭২৩ বা, ০১৮৮৬-১৫১৮২১
- ওয়েবসাইট: www.rajendraecoresortltd.com
- ইমেইল- [email protected]
রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট যাওয়ার উপায়

রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে ঢাকা থেকে টঙ্গী ও গাজীপুর চৌরাস্তা পেরিয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোড ধরে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে পারবেন।
বাসে যেতে চাইলে মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা নামতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী বাসে উঠেও রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে পারবেন। তাছাড়া গাজীপুরের গাড়িতে উঠে গাজীপুর চৌরাস্তা নেমে সখান থেকে মিনি বাসে করে রাজেন্দ্রপুর পৌঁছাতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত বাস ভাড়া সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মধ্যেই হয়ে থাকে।
রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে অটো নিয়ে ৪ কিলোমিটার যাওয়ার পরে সামনে পড়বে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এরিয়া সেখান থেকে বা দিকের ছোট রাস্তা ধরে আরও ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে গ্রিন টেক রিসোর্ট পাবেন। সেখান থেকে আরও ২ কিলোমিটার পথ ধরে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলে পৌঁছে যাবেন রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে।
যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাবেন তারা স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞেস করে পথ চিনে নিবেন। আর যারা অটোতে যাবেন তারা রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে আরেকটি অটো নিয়ে রিসোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেন। তবে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে সরাসরি অটো রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। এক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি পড়বে।
রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে যা যা উপভোগ করবেন:
একটি পরিপূর্ণ আনন্দ ভ্রমনের জন্য রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে আপনি বিনোদনের সকল ক্ষেত্রই একত্রে পাবেন। তবুও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপভোগ্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে তুলে ধরা হলো –
১. শালবনে ঘুরে বেড়ানো
গাজীপুরের শালবন ঘুরে দেখার জন্য রাজেন্দ্র ইকো পার্ক একটি আদর্শ জায়গা। সকালের নাশতা টা সেরেই আপনি জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যেতে পারেন৷ শাল বনের নিরব পরিবেশ ও পাখির কূজন আপনাকে অজানা এক জগতে নিয়ে যাবে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কৃত্রিম বনায়ন শালবনের সৌন্দর্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
২. সুইমিং পুলে সাতার
ডে লং প্যাকেজ কিংবা নাইট স্টে প্যাকেজ যেভাবেই রুম বুক করেন না কেন, আপনার জন্য সুইমিং পুল কিন্তু থাকছেই। তাই সুইমিং পুলে সাতার কাটার অভিজ্ঞতা একদমই মিস করা উচিত হবে না। এদিক থেকে বিবেচনা করলে আপনি ভাবতেই পারেন এটি একটি লাক্সারিয়াস ট্রিপ।
৩. রিসোর্ট এর ভেতরেই উৎপাদিত খাবার
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন মৌসুমি সবজির উৎপাদন করা হয়। আপনার খাবারের প্যাকেজে এইসব অথেনটিক খাবার রাখতে পারেন। তাছাড়া রিসোর্ট প্যাকেজের প্রতিটি খাবারই বেশ সুস্বাদু ও উপভোগ্য।
৪. পিঠাঘর
রিসোর্টে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে ছোট একটি পিঠাঘর। আপনি যদি শীতকালে এখানে ঘুরতে যান তাহলে পিঠাঘর থেকে হরেক রকমের পিঠা খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই এটা আপনার প্যাকেজ মূল্যের বাইরে থাকবে। পিঠা খেতে চাইলে অলাদা করে কিনে খেতে হবে৷
৫. ওয়াচটাওয়ার
রিসোর্টের প্রতিটি ভবনের ওপরের ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। সেখান থেকে পুরো রিসোর্টের বিভিন্ন পার্ট খুব ভালোভাবে পরিদর্শন করতে পারবেন। তাছাড়া ওয়াচ টাওয়ারের ভেতরেও বসার জন্য খুব চমৎকার ডেকোরেশন করা হয়েছে।
৬. বারবিকিউ পার্টি
পিকনিক দল নিয়ে গেলে এক্সট্রা চার্জ দিয়ে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করতে পারবেন। তাছাড়া নাইট স্টে প্যাকেজে ডিনারে বারবিকিউ রাখার অপশন আছে। তাই এমন সুন্দর একটা মনোরম শান্ত পরিবেশে বারবিকিউ পার্টি করার সুযোগ নিশ্চয়ই আপনি হাতছাড়া করবেন না।
৭. রিসোর্ট এর অভ্যন্তরীন সৌন্দর্য উপভোগ
পুরো রিসোর্টেটি যেন এক প্রকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবসৃষ্ট ডেকোরেশন এর পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। রিসোর্টের আনাচে কানাচে দেখতে পাবেন অনেক মাটির তৈরি ঘর। এই ঘরগুলো গাজীপুর জেলার একটি শৈল্পিক ঐতিহ্য। তাছাড়াও আছে বাগানের মধ্যে চমৎকার লেন, ছোট ছোট কুটির, ক্যাফেটেরিয়া। সব মিলিয়ে এক চমৎকার ডেকোরেশন।
সতর্কতা:
গহীন বনের মধ্যে রিসোর্ট এর অবস্থান হওয়ায় নিরাপত্তার দিক থেকে খুব বেশি একটা নিশ্চয়তা নেই। তাই যদি রাতে থাকার পরিকল্পনা না থাকে তাহলে সন্ধ্যার আগেই ফিরতি পথে রওয়ানা করতে হবে।
আশেপাশে কোনো ছোটখাটো দোকান-ও পাবেন না। তাই রাজেন্দ্রপুর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও শুকনো খাবার কিনে নেয়া উচিত।
নোটঃ পোস্টে ইউজ করা ছবি Rajendra Eco Resort & Village থেকে নেওয়া