প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহে ভরপুর বাংলাদেশের সবথেকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র চট্টগ্রামের বিখ্যাত জেলা রাঙামাটি। একেক ঋতুতে একেক রূপে এসে ওঠে এই জেলা।সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করে বর্ষা ঋতুতে। যে কোনো পর্যটন কেন্দ্রের সাধারনত একটি কিংবা দুটি মূল আকর্ষণ থাকে। কিন্তু রাঙামাটির এদিক থেকে একদমই ব্যতিক্রম।
এখানে আছে ঘুরে দেখার মতো অসংখ্য বিষ্ময়কর ও মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান। পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে হাওড় বাওড়,আদিবাসীদের এলাকা,বিলাসবহুল রিসোর্ট,ঐতিহাসিক সকল নিদর্শন সবই আপনি দেখতে পারবেন এই একটিমাত্র জেলার মধ্যে। তাইতো শুধু দেশেরই নয় বিদেশ থেকে হাজার হাজার ট্যুরিস্ট প্রকৃতির হাতছানিতে ধরা দিতে চলে আসে রাঙামাটি। একবার আসলে বার বার আসতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির এই কোলে।
আপনি কি রাঙামাটি ট্যুরে যাওয়ার কথা ভাবছেন? তাহলে এখানেই থামুন!
রাঙামাটি ট্যুরের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পেয়ে যাবেন এখনই।
কীভাবে রাঙামাটি যাবেন, কী কী দর্শনীয় স্থান ঘুরতে পারবেন এ সবকিছুর প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরতেই মূলত আজকের এই আয়োজন।রাঙামাটি যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার একবার হলেও পুরো লেখাটা পড়া উচিত।
কীভাবে যাবেন রাঙামাটি?
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটির বাস পাওয়া যায়।ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে রাঙামাটিগামী বাস প্রতিনিয়ত চলাচল করে। রাঙামাটির সবগুলো ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই বাসে করে রাঙামাটি শহরে পৌছুতে হবে।সেখান থেকে একেকটি দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার জন্য আছে আলাদা আলাদা যানবাহন। যেমনঃ সিএনজি,নৌকা,স্পিডবোট ইত্যাদি।
ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি গাড়ি প্রতিদিন
রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়
চলুন ঢাকা থেকে নিয়মিত ছাড়ে এমন কয়েকটি রাঙামাটিগামী বাস সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক
১. শ্যামলী পরিবহন
ঢাকার সায়েদাবাদ, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও পান্থপথ কাউন্টার থেকে নিয়মিত সকালে ও রাতে শ্যামলি পরিবহন এর বাস রাঙামাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
যোগাযোগঃ ০২-৯৩৩৩৬৪
অথবা, ০১৯১১-০৪০৮৮১
২. এস আলম সার্ভিস
ঢাকার ফকিরাপুল কাউন্টার থেকে প্রতিদিন রাতে ও সকালে এস আলম সার্ভিস এর গাড়ি রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
যোগাযোগঃ ০২-৯৩৩১৮৬৪
৩. ইউনিক সার্ভিস
এই পরিবহন সার্ভিস এর গাড়ি ঢাকার গাবতলি ও সায়েদাবাদ কাউন্টার থেকে প্রতিদিন সকাল ও রাতে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
যোগাযোগঃ ০১১৯০-৮০৬৪৪৭
৪. ডলফিন এক্সপ্রেস সার্ভিসেস
নিয়মিত রাত ১০ টা ১৫ মিনিট এবং রাত ১১ টায় কলাবাগান থেকে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ডলফিন এক্সপ্রেস সার্ভিসেস এর গাড়ি যাত্রা করে।
যোগাযোগঃ ০১৭৩১-৮২৩৭২১
৫. সৌদিয়া
ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলি, ফকিরাপুল থেকে নিয়মিত সকাল ও রাতে এই পরিবহন কোম্পানির গাড়ি রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
যোগাযোগঃ ০১৯১৯-৬৫৪৮৫৭
অথবা, ০১৯১৯-৬৫৪৮৫৮
এসব পরিবহনের ভাড়া সাধারণত ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যেই হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেও আপনি তাদের প্যাকেজ রেটে ঘুরে আসতে পারবেন রাঙামাটির বিভিন্ন স্পষ্ট। বাংলাদেশে এরকম বিভিন্ন ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর গাইড রয়েছে।
রাঙামাটির উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
রাঙামাটি শহরে পৌছে তো গেলেন,এবার?
এখান থেকে আপনি যে কোনো স্পটে যাওয়ার জন্য লেকাল গাড়ি সিএনজি,নৌকা,ট্রলার ও স্পিডবোট পাবেন।আপনাকে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন কোন স্পটগুলো ঘুরে দেখতে চান।এখানে আছে অসংখ্য আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান ও বিলাসবহুল রিসোর্স। রাঙামাটি যাওয়ার আগে এই স্পষ্ট গুলো সম্পর্কে জেনে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্যুর প্লান করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।চলুন জেনে নেয়া যাক রাঙামাটির উল্লেখযোগ্য সব দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত।
১.কাপ্তাই লেক
রাঙামাটি ভ্রমনে সবার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে কাপ্তাই লেক।রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্র মূলত গড়ে উঠেছে এই কাপ্তাই লেককে কেন্দ্র করেই। রাঙামাটি সদর থেকে সিএনজি করে সরাসরি চলে আসতে পারবেন এই লেকে।

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশপর সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ। আপনি চাইলে সারাদিন বোট ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এই লেকের জলরাশির বুকে।সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।লেকের দুই ধারে দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য ছোট বড় পাহাড় ও টিলা।লেকের পাড়ে আছে নতুন চাকমা রাজবাড়ী ও বৌদ্ধ মন্দির। এই লেকের উপরেই রাঙামাটির আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ “ঝুলন্ত ব্রিজ” এর অবস্থান।
পাহাড় থেকে কাপ্তাই লেকের ভিউ উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে “লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পষ্ট” এ।
কাপ্তাই লেকের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দেশীয় খাবারের রেস্টুরেন্ট।চাইলে এখানে নেমে প্রকৃতির কোলে বসে খাওয়া দাওয়ার এক চমৎকার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
কাপ্তাই লেকের আসেপাশে রাত্রি যাপনের জন্য কেনো সুব্যবস্থা নেই।কাপ্তাই লেখে থাকার পরিকল্পনা থাকলে আপনাকে অবশ্যই কাপ্তাই সরকারি রেস্ট হাউজ কর্তৃপক্ষের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে আসতে হবে।বর্ষার মৌসুমে যখন পানিতে টইটুম্বুর থাকে চারদিক তখন এই লেকের সৌন্দর্য যেন হাজার গুন বেড়ে যায়।
প্রকৃতির কোলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলে বন্ধু ও পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে আসতে পারেন রাঙামাটির মূল আকর্ষণ কাপ্তাই লেকে।
২. ঝুলন্ত সেতু
কাপ্তাই লেকের উপরে অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। ঝুলন্ত সেতুকে বলা হয় “সিম্বল অফ রাঙামাটি “।
এই সেতুতে উঠতে চাইলে পর্যটন কর্পোরেশনকে পাঁচ টাকা পরিশোধ করে ব্রিজে ওঠার অনুমতি নিতে হবে।রাঙামাটি শহর থেকে সিএনজি করে তবলছড়ি সড়ক হয়ে আপনাদেরকে ঝুলন্ত সেতু যেতে হবে। এখানে গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা রয়েছে। তাই পিকনিক ট্যুরে আসলে গাড়ি পার্কিং নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
কাপ্তাই লেকের উপরে অবস্থিত এই সতুটি মুলত দুইটি পাহাড়ের মধ্যে চমৎকার একটি সংযোগ ব্যবস্থা। এই পাহাড়ের ওপরে উঠলে যে কাপুনি অনুভব করবেন তা সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি। ঝুলন্ত ব্রিজের উপর থেকে কাপ্তাই লেকের ভিউ সবথেকে বেশি সুন্দর। ব্রিজের ওপারে আছে আদিবাসীদের গ্রাম।চাইলেই আপনি দেখতে পারবেন আদিবাসীদের জীবন ব্যবস্থা।
রাঙামাটি গেলেন আর ঝুলন্ত সেতু দেখতে গেলেন না এ আবার কখনও হয় নাকি।রাঙামাটি ঘুরতে গিয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে আসে নি এমন পর্যটক হয়তো খুজেই পাওয়া যাবে না।
৩. ধুপপানি পাহাড়
কাপ্তাই লেক থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত রাঙামাটির সবথেকে আকর্ষণীয় ঝর্ণা ” ধুপপানি ঝর্ণা “।এটা একটি স্বচ্ছ পানির সুবৃহৎ ঝর্ণা। যে কোনো প্রকৃতি প্রেমি ভ্রমন পিপাসুদের মন কেড়ে নেবে মুহূর্তেই এই ধুপপানি ঝর্ণা। স্বচ্ছ পানির এই ঝর্ণার জল প্রপাতের শব্দ ২ কিলোমিটার দূরে থেকেও শোনা যায়।
রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে ধুপপানি ঝর্ণার অবস্থান।কাপ্তাই লেক থেকে একমাত্র ট্রলারে করেই বিলাইছড়ি যাওয়া যায়।কাপ্তাই থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া পরবে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।লেকাল ট্রলারে যেতে চাইলে মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।ট্রলারের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮৬১-৭৯২৪৬২ এই নাম্বারে।
বিলাইছড়ি থেকে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আরও ২ ঘন্টার পথ অতিক্রম করতে হবে পৌছাতে হবে ধুপপানি পাড়ায়। এখান থেকে অবশ্যই গাইড সাথে নিয়ে যাবেন।গাইড চার্জ পড়বে আনুমানিক ৫০০ টাকা।ধুপপানি পাড়া থেকে পায়ে হেটে পৌছাতে হবে ঝর্নার কাছে।হেটে যেতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টা। অবশ্যই গাইডের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পথ চলবেন।
বিলাইছড়িতে থাকার জন্য আছে হাসপাতাল ঘাটের ” নিরিবিলি বোর্ডিং “।এই বোর্ডিং এ সিঙ্গেল বেড ভাড়া পরবে ৩০০ টাকা এবং ডাবল বেড ৫০০ টাকার মতে।
নিরিবিলি বোর্ডিং এর পাশেই খাওয়া দাওয়ার জন্য আছে ভাতের হোটেল।এছাড়া বকুলের দোকান থেকে সেরে নিতে পারবেন আপনাদের খাওয়া দাওয়ার পর্ব।
ধুপপানি ঝর্ণার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার আগে অবশ্যই সাথে নিয়ে নেবেন কিছু শুকনো খাবার।
বি. দ্র. আপনার ভোটার আইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড ছাড়া আপনি ধুপপানি ঝর্ণা দেখতে যেতে পারবেন না।এগুলোর একটাও না থাকলে আপনাকে অবশ্যই সাথে নিতে হবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।কোনো ধরনের পরিচয় পত্র সাথে না থাকলে আপনার ধুপপানি ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
৪. শুভলং ঝর্ণা
কাপ্তাই লেক থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শুভলং ঝর্ণা রাঙামাটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুউচ্চ পাহাড়ী ঝর্ণা। শুভলং ঝর্ণা মূলত বরকল উপজেলায় অবস্থিত।
মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই পাহাড়ি ঝর্ণা যে কোনো পর্যটকের মন কেড়ে নিতে সক্ষম। ঝর্নার পানির অদ্ভুদ শব্দ মন মাতাল করে দেয়া প্রকৃতি, পাহাড়ি গাছপালা সবমিলিয়ে সে এক অন্য রকম অনুভূতি।
শুভলং ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো নদীপথ। এখানে যাওয়ার জন্য পাবেন বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলার।
ট্রলার রিজার্ভ করে যাওয়াটাই সবথেকে ভালো।রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার এলাকা বা পর্যটন এলাকা থেকে শুভলং ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য পাবেন বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন চালিত নৌকা।
ট্রলারের সুযোগ সুবিধা ও ছোট বড় সাইজ অনুসারে একেক ট্রলারের ভাড়া একেক রকম হয়।তবে সাধারণত এসব ট্রলারের ভাড়া ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যেই হয়ে থাকে। রিজার্ভ বাজার বা পর্যটন এলাকা থেকে শুভলং ঝর্ণায় পৌছুতে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা।
আঁকাবাকা নদীর মধ্যে দিয়ে ট্রলারে যেতে যেতে উপভোগ করা যায় পাহাড়ি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শুভলং ঝর্ণায় যেতে হয় মূলত কাপ্তাই লেকের উপর দিয়েই।তাই এট ট্রলার ভাড়া দিয়ে ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পাশাপাশি কাপ্তাই লেক ভ্রমনও হয়ে যায়।
এখানে থাকা বা খাওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।তাই সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হবে। যাওয়ার সময় অবশ্যই সাথে করে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যেতে হবে।
ভারা বর্ষার মৌসুমে ৩০০ ফুট উঁচু থেকে এই ঝর্ণার পানিয়ে গড়িয়ে পড়ে নিচে,যা সকলেরই আকর্ষণের প্রধান বিষয়।
৫. কংলাক পাহাড়
আপনি যদি খুব কাছ থেকে বাংলাদেশের পাহাড়ি অধিবাসীদের গ্রাম ও তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি দেখতে চান তাহলে আপনার একবার হলেও যাওয় উচিত রাঙামাটির কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়।
কংলাক পাহাড়ের অবস্থান রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে।জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি।
সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া এই কংলাক পাহাড়।কংলাক পাহাড়ের একদম চূড়ায় আছে কংলাক পাড়া পাহাড়ি গ্রাম। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে কংলাক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।সাজেকের হলিপ্যাড থেকে ৩০/৪০ মিনিট ট্রেকিং করলেই পৌছে যাওয়া যায় কংলাক পাড়ায়।কংলাক পাড়া গ্রাম ছাড়াও এই পাহাড়ে আছে আরও অসংখ্য পাহাড়ি গ্রাম তবে সেসব গ্রামগুলোতে যাওয়ার পথ খুবই দুর্গম।
কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে মনে হবে যেন এক মেঘের রাজ্যে অবস্থিত কোনো এক গ্রামে চলে এসেছি।সাদা মেঘ চারদিকে ঘিরে আছে স্বপ্নের মতো করে।এখানকার আদিবাসীদের জুন চাষ পদ্ধতি ও তাদের নির্দিষ্ট জীবন ধারা দেখতে পারবেন আপনি কংলাক পাহাড়ে এসে।
বি. দ্র. এই পাহাড়ের রাস্তা খুব দুর্গম ও ঝুকিপূর্ণ বলে শারিরীক ভাবে দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের নিয়ে এই পাহাড় ভ্রমন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
৬. দুমলং পর্বত
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দুমলং। বেসরকারি ভাবে দুমলং পর্বতকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে সম্মানিত করা হয়েছে গুগল আার্থেও দুমলং পর্বতকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে দেখানো হয়।।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই পর্বতের রূপ যে কোনো পর্যটকের নজড় কারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় দুমলং পর্বত অবস্থিত।
বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত হলেও বগা লেক হয়ে এখানে সহযে আসা যায়। বিলাইছড়ির সাথে দুমলং যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরত্ব তুলনামূলক বেশি।
বান্দরবন থেকে বগা লেক হয়ে সেখান থেকে পুকুর পড়া দিয়ে সরাসরি দুবলং পর্বতে আসা যায়। আর এটিই দুবলং পর্বতে আসার সবথেকে সহয মাধ্যম।
দুবলং ঘুরতে এসে থাকতে চাইলে আপনাকে বগা রেস্ট হাউজে থাকতে হবে।খাওয়া দাওয়ার বিষয়টিও আপনাকে এখানেই সমাধা করতে হবে।
৭. পলওয়েল ন্যাচার পার্ক
রাঙামাটির সবথেকে বড় কৃত্রিম দর্শনীয় স্থান হলো পলওয়েল ন্যাচার পার্ক। কাপ্তাই হ্রদের ঠিক কোল ঘেসে নির্মাণ করা হয়েছে এই পার্কটি।
রাঙামাটি ঘুরতে আসলে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বিলাসবহুলভাবে ছুটির দিনগুলো কাটাতে চাইলে অবশ্যই চলে আসতে হবে এই পার্কটিতে।
এই পার্কের কৃত্রিম ডেকোরেশন সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এখান থেকে আপনি কাপ্তাই লেক ভ্রমন করতে পারবেন।
পলওয়েল ন্যাচার পার্কের প্রবেশ গেটটি দেখলেই মনে হবে যে রাঙামাটি ঘুরতে আসাটা কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে।
ভেতরে আছে কিডস জোন।শিশুদের খেলার জন্য কিডস জোনে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইড যার টিকেট মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই। আছে সুইমিং পুল, প্যাডেল বোট,লেকভিউ পয়েন্ট, পাহাড়ি কৃত্রিম ঝর্না, ক্রোকোডাইল ব্রিজ,পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া, ফিসিং পিয়ার,কায়াক সহ আরও আকর্ষণীয় সকল এন্টারটেইনিং বিষয়বস্তু।
এই পার্কের সব থেকে আকর্ষনের বিষয় হলো লাভ পয়েন্ট। লাভ পয়েন্ট দেখার জন্যই বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট এই পার্কে আসেন।এটা একটি কৃত্রিম ভাবে তৈরি লাভ জোন।
রাতে থাকার জন্য আছে বিলাসবহুল কটেজ।
আপনার ভ্রমনকে আরও বেশি আনন্দদায়ক ও নিরাপদ করতে রাঙামাটির সবথেকে উল্লেখযোগ্য স্পট হলো এই পলওয়েল ন্যাচার পার্ক।
রাঙামাটির জনপ্রিয় এই পার্কটিতে আপনি সড়ক পথেই যেতে পারবেন। পলওয়েল পার্কে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে রাঙামটি রিজার্ভ বাজার এলাকায়।সেখান থেকে সিএনজি করে চলে যেতে পারবেন সরাসরি পলওয়েল ন্যাচার পার্ক এর ঠিক সামনে।সিএনজি ভারা পরবে ৫০ টাকা।
পরিবার পরিজন নিয়ে একটু নিশ্চিন্তে বিলাসবহুল কায়দায় রাঙামাটি থাকতে চাইলে পলওয়েল পার্কের কটেজে কাটাতে পারেন আপনার ছুটির দিনগুলো।
৮. পেদা টিং টিং
রাঙামাটির বিখ্যাত কাপ্তাই হ্রদের ওপর ভাসমান একটি পর্যন্তটন কেন্দ্র পেদা টিং টিং।এখানকার মূল আকর্ষণ হলো খাবার।পাহাড়ি সব ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে যেতে পারেন পেদা টিং টিং।
কাপ্তাই হ্রদের ভাসমান একটি পাহাড়ের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই ভাসমান পর্যটন এলাকাটি।মূলত একটি সেগুনবাগিচায়কে ডেকোরেট করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এটা নির্মিত হয়েছে।এখানে আসলে দেখতে পারবেন অসংখ্য বানড় ও পাহাড়ি কিছু বণ্য পশুপাখি।হ্রদের মধ্যে গাছপালায় ঘেড়া পাহাড় আপনার ভালো না লেগে পারবেই না।
এখানাকার মূল আকর্ষণ হলো “বাম্বো চিকেন”। মুরগির মাংসকে বিশেষ কায়দায় রান্না করে বাঁশে করে পরিবেশন করা হয় এই বাম্বো চিকেন।এছাড়াও এখানকার উল্লেখযোগ্য খাবারগুলো হলো- বিগল বিচি, কচি বাঁশের তরকারি ইত্যাদি। এসব ঐতিহ্যবাহী খাবার ছাড়াও দেশি বিদেশি নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাবে এখানে।
আপনি যদি চান হ্রদের মধ্যে ভাসমান পাহাড়ের বুকে রাত্রি যাপন করবেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে চলে আসতে হবে ” পেদা টিং টিং”।এখানে রাতে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট কক্ষ, যেগুলো আপনি এক রাতের জন্য ভাড়া নিতে পারবেন। কক্ষগুলো খুবই সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা।
পেদা টিং টিং যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ। কেননা এটা সমতলভূমি থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন।পেদা টিং টিং যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই চলে আসতে হবে রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার এলাকা অথবা পর্যটন এলাকায়।
এখানে আসলে দেখতে পাবেন অসংখ্য ছেট বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকার বসে আছে পর্যটকদের পথ চেয়ে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা রিজার্ভ ভারা করে চলে যেতে পারবেন পেদা টিং টিং।নৌকার ধরন,সুযোগ সুবিধা ও আকৃতির ভিত্তিতে এসব নৌকার ভাড়া বিভিন্ন হয়।
কাপ্তাই এলাকার পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে আপনার অবশ্যই একবার যাওয়া উচিত রাঙামাটির বিখ্যাত ” পেদা টিং টিং ” এ।
অসংখ্য পর্যন্ত কেন্দ্রে ভরপুর বাংলাদেশের সবথেকে আকর্ষণীয় জেলা রাঙামাটি। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক প্রকৃতির মোহে বারবার চলে আসে রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে।এখানকার প্রতিটা টুরিস্ট স্পটই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।তাই রাঙামাটি যেতে হলে অবশ্যই হাতে বেশি সময় নিয়ে যাবেন এবং পুরোপুরি প্রি পারেশান নিয়ে যাবেন।নয়তো ফিরে আসাতে হবে অদেখা স্পটগুলোর সম্পর্কে এক বিশাল কৌতুহল নিয়ে।
ছবিঃ Kabir Uddin ( Canva )