ভারতের মেঘালয়ের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকা এবং ভ্রমন গাইড

ভারতের উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেসে মেঘালয় রাজ্য অবস্থিত যা পুরো বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা। মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিন দিকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ এবং সিলেট জেলা, পশ্চিম দিকে রংপুর জেলা আর উত্তর আর পূর্ব দিকে ভারতের আসাম রাজ্য অবস্থিত। মেঘালয় রাজ্যের রাজধানীর নাম শিলং।

মেঘালয় রাজ্যের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সমূহ

শতকরা ৭০ ভাগ বনভূমি নিয়ে গঠিত এই রাজ্যটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক চমৎকার লীলাভূমি। পাহাড়ি উঁচু এলাকা, অসংখ্য পাহাড়ি জলপ্রপাত, কুয়াশা ও মেঘের সমারোহ এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতার জন্য মেঘালয়কে স্কটল্যান্ডের সাথে তুলনা করা হয়।

এখানকার বেশিরভাগ অঞ্চলই পাহাড়ি এবং এই পাহাড়ের হাত ছানিতেই প্রতিবছর হাজার হাজার দেশি ও বিদেশী পর্যটক মেঘালয়ে এসে ভীড় জমায়। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য পাহাড় হলো – খাসি পাহাড়, গারো পাহার ও জৈন্তা পাহাড়।

১. নোহকালিকাই জলপ্রপাত

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ে অবস্থিত নোহকালিকাই জলপ্রপাত যা ভারতের সবথেকে উঁচু জলপ্রপাত। ১১১৫ ফুট উঁচু থেকে পতিত এই জলপ্রপাতটি রাজধানী শিলং থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এর প্রবেশ মূল্য ভারতীয় টাকার ১০ টাকা। শিলং থেকে স্থানীয় বাহনে এবং কিছুটা পথ ট্রেকিং করে নোহকালিকাই জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়।

২. মাওসমাই গুহা

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির কাছে খাসি পাহাড়ের উপরে মাওসমাই নামক চুনাপাথরের গুহাটি অবস্থিত। সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এই গুহা পরিদর্শনের অনুমতি পাওয়া যায় এবং এর টিকেট মূল্য ১০ টাকা। শিলং থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাওসমাই গুহা যেতে চাইলে চেরাপুঞ্জি হয়ে কাসি পাহাড় ট্রেকিং করে গুহায় পৌছুতে পারবেন।

৩. ডন বস্ক মিউজিয়াম

মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং এর অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ জাদুঘর ডন বস্ক মিউজিয়াম। এই জাদুঘরের ৭ টি ফ্লোরে মোট ১৭ টি গ্যালারিতে ভারতের ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে শুরু করে স্থানীয় উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শিত হয়।

সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ করার অনুমতি থাকে এবং রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। শিলং শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে খুব সহযেই ডন বস্ক মিউজিয়াম পৌছানো যায়।

book air ticket goofly24.com

৪. বলপাকরাম জাতীয় উদ্যান

মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ গারো পাহাড় জেলায় গারো পাহাড়ের কাছে অবস্থিত ৩০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বন্যপ্রাণী উদ্যান বলপাকরাম জাতীয় উদ্যান। এই পার্কে ভারতের প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর সন্ধান মিলবে এবং সেই সাথে উপভোগ করতে পারবেন মনোরম পাহাড়ি প্রকৃতির সৌন্দর্য। শিলং থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে অথবা বাসে চেপে বলপাকরাম জাতীয় উদ্যানে পৌঁছানো যায়।

৫. পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়

মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তিয়া পাহাড়ের একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় যা এর উপত্যকা, পাহাড়, গুহা এবং বিভিন্ন রিসোর্ট এর জন্য বিখ্যাত।

পর্যটন অঞ্চলটির সবথেকে বড় আকর্ষণ হলো থাডলাস্কিন লেক ও ক্রাং সুরি জলপ্রপাত। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়ে আসা যায়।

৬. নংরিয়াত

মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অবস্থিত একটি পর্যটন এলাকা নংরিয়াত গ্রাম যেখানে যেতে হলে পুরোটা রাস্তা ট্রেকিং করে পাড়ি দিতে হয়। এই গ্রামে দেখার মতো আছে ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ, সিংগেল রুট ব্রিজ, ন্যাচারাল সুইমিং পুল, সাসপেনশন ব্রীজ এবং রেইনবো ফলের মতো অসংখ্য প্রাকৃতিক আশ্চর্য।

শিলং থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে প্রথমে চেরাপুঞ্জি এসে সেখান থেকে স্থানীয় বাহনে তৃর্না গ্রামে পৌছে বাকিটা পথ পায়ে হেটে ট্রেকিং করতে হবে।

৭. মাফলাং বন

পূর্ব খাসি পাহাড়ের মাফলাং গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন গাছপালায় ঘেরা বন হলো মাফলাং বন যেখানে ১০০০ বছরের পুরোনো গাছও আছে। বণ্য প্রানী, প্রাচীন গাছ ও বনের নির্জন পরিবেশ মাফলাং বনের সবথেকে বড় আকর্ষণ।

শিলং থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাফলং গ্রামে যাওয়ার জন্য আপ ডাউনের চুক্তি করে ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রা করতে হবে।

৮. উমিয়াম লেক

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মানবসৃষ্ট হ্রদ উমিয়াম লেক যা এর জলধারার মনোরম সৌন্দর্য ও পাহাড়ে ঘেরা পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।

২২১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই লেকে আপনি বোটিং এর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি চমৎকার সূর্যাস্তের ভিউ পরিদর্শন করতে পারবেন। শিলং থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে সরাসরি উমিয়াম লেকে আাসা যায়।

৯. ক্রেম লিয়াত প্রাহ

ভারতের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক গুহা ‘ক্রেম লিয়াত প্রাহ’ পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের শ্নংগ্রিম রিজ নামক স্থানে অবস্থিত। গুহাটির বর্তমান দৈর্ঘ্য ৩৪ কিলোমিটার যার পুরোটাই চুনাপাথর দিয়ে তৈরি।

গুহার পার্শবর্তী আরও কিছু জনপ্রিয় স্পট হলো এনটাংকি জাতীয় উদ্যান, ক্রেম বাঁধ, মাওসমাই গুহা ইত্যাদি। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে ক্রেম লিয়াত প্রাহ গুহায় যাওয়া যায়।

১০. খাসি পাহাড়

মেঘালয় রাজ্যের অন্যতম পর্যটন এলাকা খাসি পাহাড় যার পুরোটাই ঘন রেইনফরেস্ট দ্বারা আবৃত। খাসি পাহাড়ের উল্লেখযোগ্য স্পট হলো- ডাউকি নদী, উমিয়াম লেক, মাওলিনং এবং রোমাঞ্চকর পাহাড়ি রাস্তা।

শিলং থেকে ট্যাক্সি বা ক্যাব ভাড়া করে খাসি পাহাড়ের মূল কেন্দ্রে পৌঁছানো যায়,তবে পর্যটন স্পট গুলোর বেশিরভাগই ট্রেকিং উপযুক্ত।

১১. এলিফ্যান্ট ফলস

শিলং থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে সবুজের বুক চিরে বয়ে চলেছে এলিফ্যান্ট ফলস জলপ্রপাত। পুরো জলপ্রপাতটি তিনটি ধাপে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচের দিকে পতিত হয়।

সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জলপ্রপাত পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়। শিলং থেকে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনে খুব সহযেই এলিফ্যান্ট ফলস জলপ্রপাত দেখতে যেতে পারবেন।

১২. মাওলিনং গ্রাম

মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন এলাকা মাওলিনং গ্রাম যা ২০০৩ সালে পুরো এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের মর্যাদা পেয়েছে।

এই গ্রামের উপভোগ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে স্কাই ভিউ পয়েন্ট, জীবন্ত রুট ব্রিজ ও জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য। শিলং থেকে বাসযোগে এবং কিছুটা স্থানীয় বাহনে চেপে ও পায়ে হেটে মাওলিনং গ্রামে পৌঁছানো যায়।

১৩. লাইটলুম ক্যানিয়ন

শিলং থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে স্মিথ গ্রামে অবস্থিত শিলং এর সবথেকে উঁচু ভিউ পয়েন্ট লাইটলুম ক্যানিয়ন যা জিরো পয়েন্ট নামেও পরিচিত। পাহাড়ি ধাপে ধাপে সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় চোখে পড়বে অত্যাশ্চর্য ঝর্ণা, পাহাড়ি ক্ষেত্র ও সবুজে ঘেড়া পাহাড়ি বন সেই সাথে মূল চূড়ায় উঠলে মনে হবে মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে লাইটলুম ক্যানিয়ন এর পাদদেশে আসতে পারবেন এবং সারাদিনের জন্য ক্যাব ভাড়া করলে আশেপাশের আরও কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন।

১৪. উমংগট নদী

শিলং থেকে ৮১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডাউকি গ্রামের উমংগট নদী ভারতের সবচেয়ে স্বচ্ছ নদী যেখানে পানির উপর থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত একদম স্পষ্ট দেখা যায়।

নাদীর উপরে নির্মিত ডাউকি সেতু থেকে নদীর ভিউ সবথেকে ভালো উপভোগ করা যায় তার পাশাপাশি বোটিং এর জন্যও চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে ডাউকি গ্রামে পৌছুতে পারবেন।

১৫. গারো পাহাড়

মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসি রেঞ্জ এর একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা গারো পাহাড় যা এর দীর্ঘ প্রাকৃতিক গুহা, সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, মেঘেদের রাজ্য ও উপজাতীয় সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে মে মাস গারো পাহাড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে বাসে চেপে গাড়ো পাহাড় অঞ্চলের কেন্দ্রে পৌছাতে পারবেন।

১৬. সেভেন সিস্টার্স ফলস

মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের মাউসমাই গ্রামের কাছে অবস্থিত সাত খন্ড বিশিষ্ট জনপ্রপাত সেভেন সিস্টার্স ফলস যা ৩১৫ মিটার উচ্চতা থেকে মালভূমিতে এসে পতিত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সেভেন সিস্টার্স ফলস পরিদর্শন করার উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে মাউসমাই গ্রাম হয়ে সেভেন সিস্টার্স ফলস দেখতে যেতে পারবেন।

১৭. চেরাপুঞ্জি

শিলং থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি গ্রাম মেঘালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা যা এর সবুজে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা, মালভূমি, জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। একদিনের জন্য ট্যাক্সি রিজার্ভ করে পুরো গ্রামটি ঘুরে দেখতে পারবেন।শিলং থেকে লোকাল গাড়ি বা ক্যাব ভাড়া করে চেরাপুঞ্জি গ্রামে আসতে পারবেন।

১৮. মৌসিনরাম

খাসি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মৌসিনরাম পর্যটন এলাকাটি সবথেকে আদ্র ও বেশি বৃটিপাতের অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিভেজা চকচকে প্রকৃতির সাথে গভীর মেলবন্ধন তৈরি করা সম্ভব। এই অঞ্চলের মূল আকর্ষণের মধ্যে আছে মাওজুমবুঁই কেভ, জাকরেম হট স্প্রিং ও বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত। শিলং থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে মৌসিনরাম যেতে পারবেন।

১৯. শিলং ভিউ পয়েন্ট

শিলং থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিলং ভিউ পয়েন্ট মেঘালয়ের সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা যেখানে মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে উপভোগ করতে পারবেন চমৎকার জলপ্রপাত, পাইন গাছের শাড়ি, ল্যান্ডস্কেপ, জাদুঘর সহ আরও বেশ কিছু অত্যাশ্চর্য বিষয়বস্তু। শিলং থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি শিলং ভিউ পয়েন্টে পৌছাতে পারবেন।

২০. সিজু গুহা

মেঘালয়ের ভাগমারা শহরের কাছে সিজু গ্রামের কাছে অবস্থিত ভারতে ভারতের তৃতীয় দীর্ঘতম গুহা ‘সিজু গুহা’ যা ব্যাট কেভ নামেও পরিচিত। চুনাপাথর দিয়ে গঠিত গুহাটিতে অসংখ্য বাদুড় আছে এবং দলবেঁধে বাদুড়ের আনাগোনা আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করবে। শিলং থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি শিজু গ্রামে পৌছে সেখান থেকে ট্রেকিং করে সিজু গুহায় যেতে হবে।

২১. ইয়ালং পার্ক

মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড়ের লালং গ্রামে অবস্থিত চমৎকার ডেকোরেশনের একটি সবুজ উদ্যান ইয়ালং পার্ক। পার্কটিতে বিভিন্ন গাছপালায় ঘেরা শান্ত ও মনোরোম পরিবেশ বিদ্যমান যেখানে থাকার জন্য ডেকোরেটেড কটেজও পাওয়া যায়। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি ইয়ালং পার্কে যাওয়া যায়।

২২. লেডি হায়দারি পার্ক

মেঘালয়ের শিলং শহরে দেখার মতো পার্ক গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেডি হায়দারি পার্ক যেখানে মিনি চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন গাছ দেখতে পাবেন। পার্কের বাগানগুলি জাপানি বাগান শৈলীর উপর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। শিলং থেকে যে কোনো স্থানীয় বাহনে সরাসরি লেডি হায়দারি পার্কের সামনে যেতে পারবেন।

২৩. ডাইন-থলেন জলপ্রপাত

মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডাইন-থলেন জলপ্রপাত এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পিকনিক স্পট। জনপ্রপাতটি ৮০/৯০ মিটার উচ্চতা থেকে পতিত হয়ে নিচের জলাধারের সাথে মিলিত হয়। অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত ডাইন-থলেন জলপ্রপাত ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। চেরাপুঞ্জি থেকে স্থানীয় বাহনে এবং কিছুটা ট্রেকিং করে ডাইন-থলেন জলপ্রপাতে পৌছানো যায়।

২৪. এয়ার ফোর্স মিউজিয়াম

শিলং শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে এয়ার ফোর্স মিউজিয়াম অবস্থিত যেখানে বিমানের ক্ষুদ্র মডেল, বিমান বাহিনীর পাইলটদের ইউনিফর্ম, ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, ভারত-চীন এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বিভিন্ন ছবিসহ নানা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন দেখতে পাবেন। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। শিলং থেকে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনে সরাসরি মিউজিয়াম এর সামনে যেতে পারবেন।

২৫. ওয়ার্ডস লেক

শিলং শহরের পুলিশ বাজার নামক স্থানে অবস্থিত শিলং এর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ওয়ার্ডস লেক, যেখানে সবুজ প্রকৃতির মাঝে কৃত্রিম হ্রদের পাশের চমৎকার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সুন্দর একটি বিকেল কাটাতে পারবেন।প্রায়ই লেকের পাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিলং শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে পায়ে হেটে বা স্থানীয় বাহনে খুব সহযেই ওয়ার্ডস লেকে আসা যায়।

২৬. নকরেক জাতীয় উদ্যান

মেঘালয়ের তুরা পিক থেকে ২কিলেমিটার দূরে পশ্চিম গারো পাহাড়ে অবস্থিত নকরেক জাতীয় উদ্যান যেখানে অসংখ্য দেশী বিদেশী প্রানী ও গাছপালার বিপুল সমাহার রয়েছে। নকরেক জাতীয় উদ্যানের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েছে এশিয়ান এলিফ্যান্ট, মার্বেলড ক্যাট, বাঘ, রেড পান্ডা ইত্যাদি। অক্টোবর থেকে মে মাস নকরেক জাতীয় উদ্যান ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে নকরেক জাতীয় উদ্যানে পৌছুতে পারবেন।

২৭. ওয়াহ কাবা জলপ্রপাত

চেরাপুঞ্জি থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে শিলং – চেরাপুঞ্জি রোডে অবস্থিত ওয়াহ কাবা জলপ্রপাত মেঘালয়ের প্রাকৃতিক আশ্চর্যের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ। কয়েকশত মিটার উঁচু থেকে পতিত এই মৌসুমি জলপ্রপাতটি দেখতে যেতে হলে বেশ কিছুটা পথ পাহাড়ি রাস্তা ট্রেকিং করে যেতে হয়। ক্যাব ভাড়া করে শিলং চেরাপুঞ্জি রোডে নেমে গাইড নিয়ে ওয়াহ কাবা জলপ্রপাতের উদ্যেশ্যে ট্রেকিং এর পথ শুরু করতে হয়।

২৮. থাংখারাং পার্ক

মেঘালয়ের শিলং থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে থাংখারাং রোডে অবস্থিত থাংখারাং পার্ক এর সবুজ বনভূমি, কিনরেম জলপ্রপাত, অসংখ্য ফুট ব্রিজ ও খোহ রামহা রকের বাড়ির জন্য বিখ্যাত। এই পার্ক থেকে বাংলাদেশের একটি চমৎকার ভিউ উপভোগ করা যায়। বর্ষার ঋতুতে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায় তাই বর্ষা ঋতু থাংখারাং পার্ক ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে থাংখারাং পার্ক যাওয়া যায়।

২৯. কিনরেম জলপ্রপাত

ভারতের সপ্তম সর্বোচ্চ জলপ্রপাত কিনরেম জলপ্রপাত যা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জলপ্রপাতটি ৩০৫ মিটার উচ্চতা থেকে তিনটি ধাপে বিভিক্ত হয়ে নিচের দিকে পতিত হয়। শিলং থেকে ক্যাব ভাড়া করে চেরাপুঞ্জি হয়ে কিছুটা পথ ট্রেকিং করলে কিনরেম জলপ্রপাতের দেখা মিলবে।

৩০. রেইনবো ফলস

চেরাপুঞ্জির নোহকালিকাই রোডে অবস্থিত রেইনবো জলপ্রপাতটি অবস্থিত যা জলপ্রপাতের রংধনুর মতো প্রতিফলনের কারনে বেশ জনপ্রিয়। ক্যাব ভাড়া করে টাইরানার গ্রামে পৌছে সেখান থেকে এক ঘন্টা পায়ে হাটা পথ অতিক্রম করলে অসাধারণ সুন্দর জলধারা রেইনবো ফলস এর দেখা মিলবে।

৩১. থাডলাস্কিন লেক

মেঘালয়া ভ্রমণ

মেঘালয়ের জোওয়াই শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে থাডলাস্কিন লেক অবস্থিত যা এই অঞ্চলের এক প্রাচীন সর্দার ও তার শিষ্যরা খনন করেছিল। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে জল কুটিরে একটি সুন্দর বিকেল কাটানানোর পাশাপাশি বোটিং এর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। লেকের বুকে সূর্যের প্রতিফলনের দৃশ্য এই স্পট টির মূল আকর্ষণ। শিলং থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি থাডলাস্কিন লেকে আসতে পারবেন।

৩২. গুহা বাগান

মেঘালয়ের সোহরার একটি ছোট গ্রাম লাইতমাওসিয়াং -এ অবস্থিত একটি শ্বাসরুদ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র গুহা বাগান। ১৪ টি অত্যাশ্চর্য জলপ্রপাত ও বেশ কয়েকটি গুহার সমন্বয়ে স্পটটি গঠিত এবং বেশিরভাগ গুহার তলদেশ থেকেই স্বচ্ছ পানির জলধারা বয়ে চলেছে।আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস গুহা বাগান পরিদর্শনের উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রে ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি পৌছানো যায়।

৩৩. স্প্রেড ঈগল ফলস

শিলং শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত স্প্রেড ঈগল ফলস নিঃসন্দেহে শিলং এর একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। জলপ্রপাতটির পানি প্রবাহের ধারাটি দেখতে আপাতদৃষ্টিতে একটি উড়ন্ত ঈগলের মতো তাই এর নামকরণ করা হয়েছে স্প্রেড ঈগল ফলস।

জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই জলপ্রপাতটি পরিদর্শনের উপযুক্ত সময়। শিলং থেকে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে স্প্রেড ঈগল ফলসে যাওয়া যায়।

মেঘের রাজ্য, জলপ্রপাত, পাহাড়ি উপত্যকা ও বনভূমির এক অনবদ্য সংমিশ্রণে সজ্জিত মেঘালয় রাজ্য নিঃসন্দেহে যে কোনো পর্যটককে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম।

তাইতো প্রতিবছর অসংখ্য দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীড় জমে এই রাজ্যে। মেঘালয়ের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রই এর নিজস্ব স্বকীয়তায় প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের হাতছানি দিতে থাকে সারা বছর জুড়ে।

Scroll to Top