ঠিক যেন স্বপ্নপুরি মালয়েশিয়ার গেনটিং হাইল্যান্ড | ভ্রমন গাইড

গেনটিং হাইল্যান্ড – এ যেন পৃথিবীর বুকে একটি স্বপ্নপুরি। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামাপুর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পৃথিবী বিখ্যাত এই দর্শনীয় স্থানটি। গেনটিং হাইল্যান্ডের মায়ায় ডুবতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে সমতল থেকে ১৮০০ মিটার উঁচুতে।

এটি মূলত একটি আধুনিক হিল স্টেশন যা মালয়েশিয়ার পাহাং নামক এলাকার একটি পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত প্রকৃতির মায়ার ভরা সৌন্দর্য ও আধুনিক প্রযুক্তির এক যুতসই সংমিশ্রণ ঘটেছে গেনটিং হাইল্যান্ডে। আপনার অবসরের প্রতিটা মুহূর্ত কাটবে এখানে অভিনব সব নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।

ক্যাবল কার, থিম পার্ক, লাক্সারিয়াস হোটেল, শপিং মল, রিসোর্ট, স্নিগ্ধ সুন্দর পাহাড়ি প্রকৃতি, মেঘেদের ভেলা, উপত্যকা, পাহাড়ি গ্রাম সহ অসংখ্য আকর্ষণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে গেনটিং হাইল্যান্ডে। তাহলে বিদেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গেনটিং হাইল্যান্ডকে তো প্রথম সারিতে রাখাই উচিত। আর আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি গেনটিং হাইল্যান্ড ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন। 

কী কী আকর্ষণ আছে গেনটিং হাইল্যান্ডে?

ইতোমধ্যে হয়তো মনে প্রশ্ন জেগেছে যে গেনটিং হাইল্যান্ড কেন এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে? ছোট ছোট অনেক আকর্ষণ আছে যা আপনার গেনটিং হাইল্যান্ড ভ্রমণে পরিপূর্ণতা আনবে। তবে এখানে শুধু গেনটিং হাইল্যান্ড এর মূল আকর্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো। 

১. আওয়ানা স্কাইওয়ে

পাখির চোখে পৃথিবী দেখার শখ তো কমবেশি সবারই আছে। আপনার এই স্বপ্ন পূরণ হবে আওয়ানা স্কাইওয়ে এর মাধ্যমে গেনটিং হাইল্যান্ড যাওয়ার পথে। এটি একটি অত্যাধুনিক ক্যাবল কার যেখানে বসে আপনি পাহাড়ি উপত্যকা, পাহাড়ি গ্রাম, রেইনট্রি গাছের সারি, মেঘেদের আনাগোনা দেখতে পারবেন। গেনটিং হাইল্যান্ড যাওয়ার এই স্কাইওয়েটি শুরু হয়েছে গোহটং জায়া নামক শহরের আওয়ানা স্কাইসেন্ট্রাল থেকে এবং শেষ হয়েছে গেনটিং হাইল্যান্ড এর স্কাইএভিনিউ-এ। ভ্রমণকারীদের মধ্যে অনেকেই বলে থাকেন, “গেনটিং হাইল্যান্ড ভ্রমণের মূল আকর্ষণই হলো এই আওয়ানা স্কাইওয়ে।”

২. গেনটিং স্কাইওয়ার্ল্ড থিম পার্ক

গেনটিং হাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে স্কাইওয়ার্ল্ড থিম পার্ক পরিদর্শন করেনি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। মোট নয়টি থিমের ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা জগৎ সৃষ্টি করেছে এই থিম পার্কটি। বিনোদনের জন্য আছে রোমাঞ্চকর সব রাইডস, স্টুডিও প্লাজা, সেন্ট্রাল পার্ক, ঈগল মাউন্টেইন, রোবটস রিভার টাউন, আইস এইজ ইত্যাদি। আপনি অনলাইন কিংবা অফলাইনে টিকেট বুকিং এর মাধ্যমে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত গেনটিং স্কাইওয়ার্ল্ড থিম পার্কে অবস্থান করতে পারবেন। 

৩. স্কাই এভিনিউ

স্কাই এভিনিউ হলো মালয়েশিয়ার সবথেকে উঁচু ও আকর্ষণীয় শপিংমল। এই শপিং সেন্টারে ৭০ টিরও বেশি দোকান ও বৈচিত্র্যময় খাবারের রেস্তোরাঁ রয়েছে। সুতরাং গেনটিং হাইল্যান্ডে গিয়ে কেনাকাটা করার জন্য একটি চমৎকার জায়গা হলো স্কাই এভিনিউ। আর সেই সাথে উপভোগ করতে পারবেন মালয়েশিয়ার অথেনটিক সব খাবার। তবে স্কাই এভিনিউয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় হয় লাইট শো এর জন্য। প্রতি সন্ধ্যায় এই শপিং কমপ্লেক্সে ফ্রী লাইট শো এর আয়োজন করা হয়। এটি আপনাকে একটি আধুনিক বৈচিত্রপূর্ণ মুহূর্ত উপহার দেবে। তাছাড়া এশিয়ার সবথেকে বড় মাল্টিমিডিয়া উইঞ্চ এর রোমাঞ্চকর দৃশ্য আপনি স্কাই এভিনিউয়ে দেখতে পাবেন৷ 

৪. স্কাইট্রোপলিস ফানল্যান্ড

রোমাঞ্চকর সব রাইডস এর সমন্বয়ে সুসজ্জিত একটি ইনডোর থিম পার্ক হলো স্কাইট্রোপলিস ফানল্যান্ড। এই পার্কে রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, ক্যারোজেল এবং বাম্পার কার সহ ২৪ টিরও বেশি আকর্ষণীয় রাইডস রয়েছে। বাচ্চাদের জন্য স্কাইট্রোপলিস ফানল্যান্ড একটি আদর্শ ভ্রমন উপযোগী পার্ক। এখানে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে বিভিন্ন কাল্পনিক জগতে ডুব দিতে পারবেন। তাছাড়াও আছে ভিডিও গেইম ও নানা ধরনের ইনডোর গেইম প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার জেতার সুযোগ। সব মিলিয়ে শিশুদের জন্য একটি আনন্দঘন দিনের পরিকল্পনা করতে পারবেন এই ট্যুরে। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত স্কাইট্রোপলিস ফানল্যান্ড সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। 

৫. ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্লাজা

গেনটিং হাইল্যান্ড এর আরও একটি জনপ্রিয় শপিং মল হলো ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্লাজা। মূলত এটি একটি বহুতল শপিং কমপ্লেক্স যেখানে পর্যটন আকর্ষণ থেকে শুরু করে সাধারণ কোনটার জন্য স্টল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এবং বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রাইডস রয়েছে। এই শপিং সেন্টারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণ গুলোর মধ্যে স্কাইট্রোপলিস ফানল্যান্ড, সেনিকোম পেং হেং, স্নো ওয়ার্ল্ড উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সুস্বাদু খাবারের রেস্তোরাঁ গুলোও আপনার জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত। 

৬. স্নো ওয়ার্ল্ড 

মাইনাস ছয় ডিগ্রি তাপমাত্রা, তার মধ্যে তুষারপাত হচ্ছে – বিষয়টি ভাবলেই কেমন স্বপ্নের ভুবনের মতো মনে হয়! স্নো ওয়ার্ল্ড এমন একটি কৃত্রিম পরিবেশ নিয়ে তৈরি যেখানে আপনি বরফের দেশে হারিয়ে যাবেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছেই স্নো ওয়ার্ল্ড সমানভাবে প্রশংসা পেয়েছে। এটি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্লাজার দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। বরফে আচ্ছাদিত ঘরবাড়ি, গাছপালা ও অন্যান্য কৃত্রিম বিষয়বস্তু পরিবেশটিকে একদম বাস্তব করে তোলে। নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য প্রদানের মাধ্যমে আপনি স্নো ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের পাশাপাশি জ্যাকেট, গ্লাভস, বুট সহ যাবতীয় সব শীতবস্ত্র পেয়ে যাবেন সেখান থেকেই।

৭. টকিং গার্ডেন 

পাহাড়ের চূড়া থেকে চমৎকার ভাবে পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চলে যেতে পারেন টকিং গার্ডেনে। এটি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সবুজ পার্ক। এই পার্কে মুক্ত বাতাসে হাঁটার জন্য আছে সুবিশাল লেন, ফোয়ারা, বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য গোলক ধাঁধাঁ, বেঞ্চ, চেনা অচেনা বাহারি গাছের সমারোহ, গাছের স্টল সহ অনেক কিছুই। তাই প্রকৃতির টানে ছুটে চলুন মালয়েশিয়ার গেনটিং হাইল্যান্ড এর টকিং গার্ডেনে। 

এছাড়াও গেনটিং হাইল্যান্ড এর মূল আকর্ষণ গুলোর মধ্যে আছে সেনিকোম পেং হেং, ভিজিটর’স গ্যালারি, রিপলি’স এডভেঞ্চারল্যান্ড, প্রিমিয়াম আউটলেটস ইত্যাদি। 

কীভাবে যাবেন গেনটিং হাইল্যান্ড? 

বাংলাদেশ থেকে গেনটিং হাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া পৌঁছাতে হবে। আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকলে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে খুব সহজেই মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে পারেন। ভিসা প্রসেসিং এর পরে সুবিধামতো ফ্লাইট বুকিং করে সরাসরি চলে যেতে পারবেন কুয়ালালামপুর। কুয়ালালামপুর থেকে বাস কিংবা ট্যাক্সি যোগে চলে যেতে পারবেন গেনটিং হাইল্যান্ড।

তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি গেনটিং হাইল্যান্ড ট্যুর প্যাকেজ এর আয়োজন করে থাকে। এই ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ঝামেলাহীন ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। গেনটিং হাইল্যান্ড ভ্রমণ বিষয়ক যে কোনো সহযোগিতা কিংবা তথ্য পেতে অথবা সরাসরি ট্যুর প্যাকেজ বুক করতে যোগাযোগ করুন আমাদের ওয়েবসাইট goofly24.com এ। 

গেনটিং হাইল্যান্ডে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা 

সাধারণত এক দিনের মধ্যে গেনটিং হাইল্যান্ড থেকে ঘুরে এসে আপনি কুয়ালালামপুর এর যে কোনো হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে লাক্সারিয়াস ট্যুর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে, একটা রাত গেনটিং হাইল্যান্ডের চূড়ায় কাটিয়ে আসা উচিত। গেনটিং হাইল্যান্ডে ৬২৩ টিরও বেশি মধ্যম মানের হোটেলের পাশাপাশি আছে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। এদের মধ্যে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেল, সুইস গার্ডেন হোটেল, গেনটিং স্কাইওয়ার্ল্ড হোটেল, হ্যাপি প্যারাডাইজ উল্লেখযোগ্য। আপনি চাইলে অনলাইনে অগ্রিম হোটেল বুক করতে পারবেন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।

খাওয়াদাওয়ার জন্য আছে সাধারণ মানের রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে ও ক্যাফে। প্রতিটি পর্যটন স্পটের আশেপাশেই আপনি নিজের পছন্দমতো রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে খুঁজে পাবেন। তাছাড়া বেশিরভাগ হোটেল ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনাকে খাবার প্রোভাইড করবে। মালয়েশিয়ার অথেনটিক রন্ধনশৈলীর স্বাদ পাবেন গেনটিং হাইল্যান্ড এর এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে। 

শেষকথা

একটি মাত্র পর্যটনকেন্দ্রে এতো এতো স্পট ঘুরে দেখার সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়। তাই আপনার অবসর কাটানোর একটি আদর্শ জায়গা হতে পারে মালয়েশিয়ার গেনটিং হাইল্যান্ড। দেরি না করে আজই আপনার ট্যুর প্লান করে ফেলুন স্বপ্নের ভুবনে। একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য শুভকামনা রইলো। ধন্যবাদ। 

Scroll to Top