মালয়েশিয়ার সেরা ১৫ টি দর্শনীয় স্থান

বিদেশ ভ্রমনের প্ল্যান করতে গেলে বেশিরভাগ মানুষই মালয়েশিয়াকে পছন্দের তালিকায় রাখে। শুধু বাংলাদেশী পর্যটক নয় বরং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ থেকেই পর্যটকদের আনাগোনায় ঘটে এদেশে। ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়া বেশ সহজ বিধায় এই দেশে বিদেশী পর্যটকদের চাপ যেন একটু বেশিই থাকে। বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশের মধ্যে একটি হওয়ায় মালয়েশিয়ার শহরগুলো যে কাউকে সহজেই আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। পাহাড়, সমুদ্র, দ্বীপ, প্রাচীন নিদর্শন, আধুনিক শহর সব মিলিয়ে ভ্রমনের জন্য একটি আদর্শ জায়গা মালয়েশিয়া। হাজারো দর্শনীয় স্থানের মধ্যেও আবার বিশেষ কিছু জায়গায় আছে যা ঘুরে না দেখলেই নয়। মালয়েশিয়ার এমন ১৫ টি সেরা দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে আজকে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। চলুন তাহলে কিছু সময়ের জন্য মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট হয়ে যাওয়া যাক।

১. পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার 

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামাপুরে অবস্থিত পৃথিবীর সবথেকে উঁচু টুইন টাওয়ার হলো পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এটি মালয়েশিয়ার সবথেকে উঁচু ভবন ছিলো। রাজধানী শহরের আশ্চর্য আকর্ষণ গুলোর মধ্যে এই টুইন টাওয়ার সবার আগে প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে রাতের আলো ঝলমলে টাওয়ার দুটি আপনাকে এক লাক্সারিয়াস পরিবেশে নিয়ে যাবে। একই টাওয়ারে আপনি দেখতে পাবেন গিফট শপ, স্কাই ব্রিজ টাওয়ার, অবজারভেশন ডেক, মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্সে রুম, শপিং মল সহ অনেক আকর্ষণীয় আয়োজন। ৮৮ তল বিশিষ্ট এই টাওয়ার দুটির সর্বোচ্চ অবজারভেশন ডেক ৮৩ তলায়। এখান থেকে আপনি পুরো কুয়ালালামপুর শহর ছাড়াও এর আশেপাশের এলাকা পাখির চোখে দেখতে পারবেন। আর টাওয়ার দুটির গ্রাউন্ড এরিয়াতে থাকা পার্ক বাচ্চাদের দেবে এক্সট্রা বিনোদন। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে প্রবেশের জন্য আপনাকে প্রথমে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। চাইলে কাউন্টার থেকে কিংবা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ সময় অফলাইন টিকেট এর জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। তাই অনলাইনে অগ্রিম বুকিং করে নেয়াই ভালো।

২. ল্যাংকাউয়ি দ্বীপ

মালয়েশিয়ার সবথেকে সুন্দরতম দ্বীপ গুলোর মধ্যে ল্যাংকাউয়ি একটি। জনকোলাহল থেকে একদম বিচ্ছিন্ন একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে অবসর কাটাতে চাইলে ল্যাংকাউয়ি দ্বীপ অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত। জনবসতিহীন ১০৪ টি ছোট দ্বীপ দ্বারা বেষ্টিত অকৃত্রিম সুন্দর এই দ্বীপ। এখানে ঘুরে দেখার মতো উল্লেখযোগ্য স্পট গুলোর মধ্যে পালাউ মেরিন পার্ক, দাতান লাং, তামান বুইয়া ল্যাংকাউয়ি, ল্যাংকাউয়ি পাখি স্বর্গ, কুয়াহ মল উল্লেখযোগ্য। বোটিং, স্কুবা ডাইভিং, গলফ প্লেয়িং সহ বিনোদনের জন্য আছে বিভিন্ন আয়োজন। কুয়ালামাপুর থেকে ল্যাংকাউয়ি দ্বীপে যাওয়ার জন্য সরাসরি ফেরি পাওয়া যায়। তাছাড়া আকাশপথে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে। দ্বীপের মধ্যে প্রতিটি স্পট ঘুরে দেখার জন্য রেন্টাল কার, ট্যাক্সি, কিংবা মোটর সাইকেল ভাড়া নিতে পারবেন। তবে মোটরসাইকেলে ঘুরলে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবথেকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। 

৩. এস্কেপ পেনাং

মালয়েশিয়ার পেনাং-এ অবস্থিত অন্যতম সুন্দর একটি থিম পার্ক হলো এস্কেপ পেনাং। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্যই আছে উপযোগী পরিবেশ। অসাধারণ ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও চিত্তাকর্ষক সকল রাইড আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের কোনো ভুবনে৷ বিভিন্ন বয়সী পর্যটকদের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে আপনি এখানে প্রবেশ করতে পারবেন। বিভিন্ন উন্মুক্ত রাইডস এর পাশাপাশি আছে ৩৫ টিরও বেশি এন্ট্রি চার্জ সংযুক্ত রাইড। যেমন: অ্যারোবাট, চেয়ারলিফট, ডেড সি পুল, ডঙ্ক ট্যাঙ্ক, এস্কেপ ক্লাব, ফ্যামিলি টুইস্টার, গেকো টাওয়ার, প্লে হাউস, টিউবি টানেল ইত্যাদি। বেশিরভাগ রাইড ওয়াটার ওয়ার্ল্ড টাইপ হওয়ার সাথে প্রয়োজনীয় এক্সট্রা পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখা উচিত। আছে সুবিশাল পার্কিং স্পেস ও রেস্টুরেন্ট। চাইলে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আপনি এস্কেপ পেনাং পার্কে ভ্রমণ করতে পারবেন। নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সোমবার বন্ধ সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। 

৪. লেগোল্যান্ড মালয়েশিয়া রিসোর্ট 

মালয়েশিয়ার জোহরে অবস্থিত আরও একটি জনপ্রিয় থিম পার্ক লেগোল্যান্ড মালয়েশিয়া রিসোর্ট। যেখানে একই সাথে ৮ টি থিম এরিয়া ঘুরে দেখতে পারবেন। তাছাড়াও আছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও অ্যাকুরিয়াম। প্রতিটি থিম এরিয়াতে আছে কোনো না কোনো রোমাঞ্চকর রাইডস। সব মিলিয়ে লেগোল্যান্ড মালয়েশিয়া রিসোর্টে ৪০ টিরও বেশি উপভোগ্য রাইডস রয়েছে আরও আছে দুটি ওয়াটার রাইডস। তবে রিসোর্টের সামুদ্রিক অ্যাকুরিয়াম থেকে ঘুরে না আসলেই নয়। এখানে মূলত ২৫ টি ডিসপ্লে ট্যাঙ্ক প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে ১২০ প্রজাতির ১৩,০০০ এরও বেশি সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে। খুব কাছ থেকে সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এখান থেকে। তাছাড়াও আছে বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল এবং ডাইনিং লাউঞ্জ। পূর্ণবয়স্ক একজন পর্যটক ১ দিনের জন্য থিম পার্ক বুকিং করতে চাইলে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৬৯ থেকে ১৯৯ রিংগিত। অন্যদিকে থিম পার্ক ও অ্যাকুরিয়াম জোন সহ একন দিনের জন্য টিকেট মূল্য ২১৯ থেকে ২৭৯ রিংগিত পর্যন্ত হতে পারে। বয়স ও ভ্রমণের সময় অনুযায়ী টিকেট মূল্যের তারতম্য ঘটে। ৩ বছরের কম বয়সীদের কোনো এন্ট্রি ফি নেই। আপনি চাইলে লেগোল্যান্ড মালয়েশিয়া রিসোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্য কোনো টিকেট বুকিং সাইট থেকে অনলাইনে এন্ট্রি টিকেট বুক করতে পারেন। অথবা সরাসরি অফলাইনেও টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। 

৫. জালান আলোর

কুয়ালালামপুর শহরের বুকিত বিনতাং এলাকায় অবস্থিত একটি ব্যতিক্রমী রাস্তা জালান আলোর ফুড স্ট্রিট। পুরোটা রাস্তা জুড়ে দেখতে পাবেন লাল লাইটের আলোর অনবদ্য ডেকোরেশন। মূলত স্ট্রিট ফুড এর জন্য জালান আলোর খুব বেশি জনপ্রিয়। রাস্তার দুই ধারে হরেক রকম খাবারের দোকান আপনাকে আশ্চর্যান্বিত করবেই। মালয়েশিয়ান কুইজিন সম্পর্কে জানতে হলে আপনার অবশ্যই একবার জালান আলোর ফুড স্ট্রিট ভ্রমণ করা উচিত। তবে সকালের দিকে গেলে কিছুই আপনার চোখে পড়বে না। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই এই রাস্তাটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। স্থানীয় লোকজনে ছাড়াও চোখে পড়বে ফরেনার পর্যটকদের। মালয়েশিয়ার স্থানীয় খাবার ছাড়াও চাইনিজ আইটেম, ডেজার্ট আইটেম, ড্রিংকস পেয়ে যাবেন একদম কম বাজেটে। তাছাড়া আরও দেখতে পাবেন ছোট ছোট কফি শপ, লাইভ বারবিকিউ স্টলসহ হাজারো খাবারের দোকান৷ তবে সব ধরনের খাবারের স্বাদ একদিনে নেয়া সম্ভব হবে না বললেই চলে, তাই কুয়ালামাপুরে বেশ কিছু দিন থাকার প্ল্যান করলে একাধিকবার জালান আলোর ফুড স্ট্রিটে যাওয়া উচিত। 

৬. পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ

মালয়েশিয়ার বেসুত জেলায় কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মূল আকর্ষণ বেসার এবং কেসিল নামক বৃহৎ দুইটি প্রবাল দ্বীপ। কুয়ালামাপুর থেকে প্রথমে বাস এবং পরে বোটে করে আপনি পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের যেকোনো একটিতে পৌঁছাতে পারবেন। তাছাড়া সরাসরি এয়ার এশিয়ার সাশ্রয়ী ফ্লাইটে চলে যেতে পারবেন পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। সাধারণত মার্চ মাস এবং নভেম্বরের শুরু দিকের দিনগুলো পারহেনশিয়ান দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে সারাবছরই এখানে কমবেশি পর্যটকদের আনাগোনা ঘটে। অসম্ভব সুন্দর দ্বীপের মধ্যে সমুদ্রের তীরের বাংলো বাড়ি কিংবা বিলাসবহুল রিসোর্টে একটা দিন কাটাতে পারলে আপনার মানসিক ক্লান্তির অবসান ঘটবে। দ্বীপের মধ্যের জঙ্গলে হাঁটার সময় চোখে পড়বে বিভিন্ন বুনো পশুপাখি। তাছাড়া বিচে ঝাঁপাঝাপি, কায়াকিং, সুইমিং সহ বিনোদনের জন্য আছে দারুণ সব সুযোগ। তবে পারহেনশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ফিশিং পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আর দিনশেষে সমুদ্রের তীরের সূর্যাস্ত না দেখে ফেরা তো অবশ্যই উচিত হবে না। 

৭. গেন্টিং হাইল্যান্ড

মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের বেন্টং জেলায় অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য হিল স্টেশন গেন্টিং হাইল্যান্ড। কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র এক ঘন্টার দূরত্ব হওয়ায় আপনি খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন সেখান থেকে। চাইলে হিল স্টেশনের বিলাসবহুল রিসোর্টে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আছে আলিশান রেস্তোরাঁ যেখানে মালয়েশিয়ান সংস্কৃতির পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড গেন্টিং হলো গেন্টিং হাইল্যান্ড এর সবথেকে জনপ্রিয় পাহাড়ী রিসোর্ট। আছে থিম পার্ক, শপিং মল, গেন্টিং স্কাইওয়ার্ল্ডস, গেন্টিং স্ট্রবেরি খামার, হ্যাপি বি ফার্ম, ইনসেক্ট ওয়ার্ল্ড, বাটারফ্লাই ওয়ান্ডারল্যান্ড সহ উল্লেখযোগ্য অনেক ট্যুরিস্ট স্পট। আরও ঘুরে দেখতে পারবেন বিখ্যাত মোহাম্মদ নোয়া ফাউন্ডেশন মসজিদ। সবথেকে মজার বিষয় হলো গেন্টিং হাইল্যান্ড হিল স্টেশনে যেতে হবে কেবল কার-এ চেপে, যা একটি অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সুযোগ। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস গেন্টিং হাইল্যান্ড ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। 

৮. জর্জটাউন পেনাং

মালয়েশিয়ার চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল শহর জর্জটাউন পেনাং যা মূলত পেনাং দ্বীপের বুকে অবস্থিত। একদিকে প্রাচীন শহরের গাম্ভীর্যময় সৌন্দর্য অন্যদিকে আধুনিক শহরের আলো ঝলমলে আকাশচুম্বী ভবন, একসাথে দুটোই উপভোগ করতে পারবেন। এই শহরটিকে বহু সংস্কৃতির রাজধানী বলেও আখ্যায়িত করা হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আমলের প্রাচীন ভবন, চীনা সম্প্রদায়ের দোকানপাট, প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, আদিম সমুদ্র সৈকত সব মিলিয়ে এই শহরকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়। ৩৮ টি কক্ষবিশিষ্ট ব্লু ম্যানশন হল পেনাং-এর সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা যা আপনার অবশ্যই ঘুরে দেখা উচিত। তবে এই শহরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে ফোর্ট কর্নওয়ালিস, এসপ্ল্যানেড, পেনাং ক্লক টাওয়ার, সেন্ট জর্জ, মসজিদ কাপিতান কেলিং, রোড মার্কেট, পেনাং পাহাড়, চেওং ফ্যাট জে ম্যানশন, পেনাং বোটানিক গার্ডেন, পেনাং যুদ্ধ জাদুঘর ইত্যদিও উল্লেখযোগ্য। মোটকথা একই ট্রিপে সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, প্রাচীন নিদর্শন, স্ট্রিট মার্কেট, রেঁস্তোরা, আধুনিক স্থাপনা সবই দেখার সৌভাগ্য হবে। জর্জটাউন পেনাং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল।

৯. মেলাকা

মালয়েশিয়ার আরেকটি সুন্দর শহর মেলাকা। খুব ছোট একটি শহর হলেও এর সৌন্দর্য যেন তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন নিদর্শন, শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ছোট নদী সব মিলিয়ে দারুণ এক পরিবেশ। উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে আ’ফামোসা, দ্য শোর স্কাই টাওয়ার, মেলাকা সালতানাত প্রাসাদ যাদুঘর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আছে ছোট-বড় অনেক রেস্তোরাঁ ও স্ট্রিট ফুডের দোকান। মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ পাবেন মেলাকায় এসে। আছে ১২ টি সার্টিফাইড হালাল খাবারের রেস্তোরাঁ। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ শহর বলে ২০০৮ সালে ইউনেস্কো মেলাকা শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। মেলাকা শহর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে মে এবং অক্টোবর মাস৷ 

১০. কেএল টাওয়ার (মেনারা)

খাঁটি ইসলামিক স্থাপত্যের একটি অত্যাশ্চর্য নিদর্শন হলো কেএল টাওয়ার। কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে সুউচ্চ এই টাওয়ারটি অবস্থিত। এটি সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার এবং বিশ্বের সপ্তম উঁচু টাওয়ার হিসেবে খ্যাত। কেএল টাওয়ারে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত একটি স্কাই ডেক রয়েছে যেখান থেকে আপনি কুয়ালালামপুরের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া কাঁচের ওয়াকওয়েতে হাঁটার একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। ওয়াকওয়েটি সম্পূর্ণ ট্রান্সপারেন্ট কাচের তৈরি এবং টাওয়ারের বহির্ভাগে অবস্থিত। এছাড়াও এই টাওয়ারে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন বিদেশী প্রাণীর আবাসস্থল, একটি নীল কোরাল অ্যাকোয়ারিয়াম, আপসাইড ডাউন হাউস সহ উপভোগ্য অনেক আকর্ষণ। আছে একটি ঘুর্নায়মান রেস্টুরেন্ট যেখানে বসে খেতে খেতে কুয়ালালামপুরের চতুর্ভাগ আপনি অনায়াসে দেখতে পারবেন। কেএল টাওয়ার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। 

১১. বাকো ন্যাশনাল পার্ক

অত্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি নির্জন পরিবেশে অবসর যাপন করার জন্য সবথেকে উপযুক্ত ট্যুরিস্ট স্পট হলো বাকো ন্যাশনাল পার্ক। ২৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে অবস্থিত এই পার্কে আছে বেশ কয়েক প্রজাতির বুনো প্রাণী। বুনো শুয়োর, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, লম্বা-লেজযুক্ত ম্যাকাক বানর, মনিটর টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ল্যাঙ্গুর এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জঙ্গল ট্রেকিং, সমুদ্র ভ্রমণ, ক্যাম্পিং, জঙ্গলে নাইট স্টে সহ মজার মজার সব এক্সপেরিয়েন্স নিতে চলে যেতে পারেন বাকো ন্যাশনাল পার্কে। কুয়ালামাপুর থেকে সরাসরি বাস, রেন্ট এ কার, কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে  সরাসরি বাকো ন্যাশনাল পার্কে। সাধারণ টিকেটে ভ্রমণ করতে চাইলে আপনি সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পার্কে অবস্থান করতে পারবেন। আর নাইট স্টে কটেজ কিংবা ক্যাম্পিং বুক করলে পুরো রাত পার্কে অবস্থান করতে পারবেন এবং ন্যাশনাল পার্কের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। 

১২. দাতারান মের্দেকা

একটি ঐতিহাসিক ক্ষণের সাক্ষী হিসেবে মালয়েশিয়ায় সবথেকে বেশি জনপ্রিয় দাতারান মের্দেকা। এই স্থান থেকেই ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল। তাই এটি ইনডিপেনডেন্স স্কোয়ার হিসেবেও বহুল পরিচিত। মালয়েশিয়া ভ্রমণে অবশ্যই এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে তালিকায় রাখা উচিত। দাতারান মের্দেকা বা মের্দেকা স্কোয়ারে আপনি সংরক্ষিত জাদুঘর, ক্যাথেড্রাল, স্মৃতিস্তম্ভ ও বিভিন্ন কাঠামোর আবাসস্থল ঘুরে দেখতে পারবেন। তবে মের্দেকা স্কোয়ার এর সবথেকে বিশেষ আকর্ষণ হলো রাতের আলো ঝলমলে সুলতান আব্দুল সামাদ বিল্ডিং। শারিরীক ভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আছে বিশেষ হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা, তাই যে কেউ চাইলে মের্দেকা স্কোয়ার পরিদর্শন করতে পারবে। ঐতিহাসিক এই স্পটে সারাবছরই কমবেশি দর্শনার্থীদের দেখা যায় তবে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার মাস অর্থাৎ আগস্ট মাসে এই ঐতিহাসিক পয়েন্ট টি যেন তার প্রাণ ফিরে পায়। 

১৩. মালয়েশিয়া জাতীয় মসজিদ

মালয়েশিয়ার কুয়ালামাপুরে অবস্থিত জাতীয় মসজিদ মুসলমান সংস্কৃতির এক আধুনিক নিদর্শন। শুধু নামাজ পড়ার উদ্যেশ্যেই নয়, বরং চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যকলা সমনে থেকে পরিদর্শন করার জন্য হাজার হাজার পর্যটক মালয়েশিয়া জাতীয় মসজিদ ভ্রমণ করে। মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদের নির্মানশৈলীতে দেখতে পাওয়া যায় পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদ আল-হারাম এর ডিজাইনের কিছুটা ছাপ। অসাধারণ এই স্থাপনাটি ১৯৬৫ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং সেই থেকে এটি উল্লেখযোগ্য উপাসনালয়ের পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। কাঁচের সূক্ষ্ম কাজ, মোজাইক, নকশা, সুউচ্চ মিনার এবং বিশাল ছাতা-আকৃতির ছাদ ও চাকচিক্যময় সাজসজ্জা মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য এতোটাই ফুটিয়ে তুলেছে যে মুসলিম-অমুসলিম সকলেই এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তাই মালয়েশিয়া ঘুরবেন আর সে দেশের জাতীয় মসজিদে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করবেন না এ আবার হয় নাকি। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত মসজিদের প্রধান ফটক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। 

১৪. ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম 

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবথেকে বড় ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম মালয়েশিয়ায় অবস্থিত। জাদুঘরটি মূলত পেরদানা বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবস্থিত। তাই বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণের পাশাপাশি ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম পরিদর্শন করতে পারবেন৷ ১৯৯৮ সালের ১২ ই ডিসেম্বর ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে এই জাদুঘরে সাত হাজারেরও বেশি ইসলামিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুগুলো তাদের গুরুত্ব ও শ্রেণি অনুসারে মোট ১২ টি গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে। এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কোরআন ও অন্যান্য ইসলামিক কিতাবের পান্ডুলিপি, গহনা, কাচের তৈরি প্রাচীন জিনিসপত্র, টেক্সটাইল পন্য, সিরামিক পণ্য সহ চীন ও ভারতের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এছাড়াও পুরো জাদুঘরে সাজসজ্জায় রয়েছে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ ছাপ। সব মিলিয়ে আপনার আত্মা একটি পবিত্র অনুভূতি পাবে ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম পরিদর্শন করে। সপ্তাহের যে কোনো দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। 

১৫. চায়না টাউন

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত চীনা সম্প্রদায়ের একটি কোলাহলপূর্ণ বাজার হলো চায়না টাউন। পেটালিং স্ট্রিটের বিশাল এলাকা জুড়ে এই বৈচিত্র্যময় বাজারটি অবস্থিত। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও এখানে বেশিরভাগ সময় ফরেন পর্যটকদের দেখতে পাওয়া যায়। পোশাক, আনুষাঙ্গিক, পারফিউম, কসমেটিকস, বাটিক পণ্য, চীনা হস্তশিল্প থেকে শুরু করে মোটামুটি শপিং রিলেটেড সকল পণ্যই এই বাজারে পেয়ে যাবেন। তবে স্ট্রিট ফুডের জন্যও চায়না টাউন বেশ জনপ্রিয়। মূলত অথেনটিক চাইনিজ খাবারের জন্য চায়না টাউনের দোকান গুলোতে পর্যটকদের ভিড় জমে। হরেক রকম পণ্য বাছাই করে কিনতে কিনতে কখন যে আপনার সময় ফুড়িয়ে যাবে তা টেরই পাবেন না। মূলত বৈচিত্র্যময় পণ্যের দোকানগুলোই চায়না টাউনকে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পটে পরিনত করেছে। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চায়না টাউনে দেশি-বিদেশী ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম ঘটে। 

মালয়েশিয়ার আরও কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান 

  1. বাটু গুহা সাবাহ 
  2. স্টেট মিউজিয়াম 
  3. অ্যাটকিনসন ক্লক টাওয়ার
  4. প্যারাডাইস থ্রিডি মিউজিয়াম
  5. মাউন্ট কিনাবালু
  6. কিলিম কার্স্ট জিওফরেস্ট পার্ক
  7. গুনুং মুলু জাতীয় উদ্যান
  8. পেনাং হিল
  9. সেমেনগোহ নেচার রিজার্ভ
  10. পাংকোর দ্বীপ (ইত্যাদি) 
Scroll to Top