মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের উপায় | পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদন, খরচ, অন্যান্য

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের স্বপ্ন বা ইচ্ছা মালয়েশিয়ায় সিটিজেনশিপ পাওয়া কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাস করা। উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ, আয়ের হাজারো পথ ও আন্তর্জাতিক বিজনেস হাব হওয়ায় মালয়েশিয়া এখন অনেকেরই ড্রিম কান্ট্রি। বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই অনেকে প্রবাস জীবনের ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মালয়েশিয়াকে।

কেউবা চাচ্ছেন স্থায়ীভাবে ঐ দেশেই থেকে যেতে। কিন্তু কীভাবে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন তা হয়তো জানেন না অনেকেই। কীভাবে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাবেন, কীভাবে আবেদন করবেন, স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কী কী সুযোগ সুবিধা পাবেন এই বিষয়ে হাজারটা প্রশ্ন সবার।

তাই মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের উপায় সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আর্টিকেল। মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বেশ কয়েক ধরনের সুযোগ আপনি পাবেন। এখানে প্রতিটি উপায় সম্পর্কে আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো। মোটকথা, মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের উপায় সম্পর্কে এ টু জেট সব তথ্য পাবেন পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে।

১. মাই পিআর প্রোগ্রাম (PVIP)

স্থায়ীভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাসের জন্য সবথেকে জনপ্রিয় উপায় হলো মাই পিআর প্রোগ্রাম। মাই পিআর প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে একজন ফরেনারকে স্থায়ীভাবে মালয়েশিয়া থাকতে হলে মালয়েশিয়ান সরকারের কাছ অনুমতি হিসেবে ‘পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR)’ সংগ্রহ করতে হয়।

মালয়েশিয়ান পিআর ও একটি আইডেন্টিফিকেশন কার্ড পেয়ে গেলে আপনি মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারবেন।  মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে ফরেনারদের পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) প্রদান করে। আপনি মালয়েশিয়ান পিআর বা পারমানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়ার জন্য সবগুলো শর্ত পূরণ করতে পারলে  ও যাবতীয় নথিপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে পারলে সহজেই পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পেয়ে যাবেন। 

মাই পিআর প্রোগ্রাম আবেদনের শর্ত সমূহ ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য একই চার্টে উল্লেখ করা হলো।

                      শর্ত ও সুবিধা সমূহ                              মানদন্ড 
১. আবেদনকারীর বয়সকোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই
২. বৈদেশিক আয়ের পরিমাণ মাসিক আয় ৪০,০০০ রিংগিত অথবা বাৎসরিক আয় ৪,৮০,০০০ রিংগিত 
৩. তরল সম্পদপ্রয়োজন নেই
৪. মালয়েশিয়ার যে কোনো ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ১ মিলিয়ন রিংগিত 
৫. মালয়েশিয়ায় ন্যূনতম অবস্থানের সময়কালপ্রয়োজন নেই
৬. ব্যবসা পরিচালনা কিংবা চাকরিতে যোগদান কিংবা শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো ইন্সটিটিউটে ভর্তির যোগ্যতা অবশ্যই প্রয়োজন 
৭. ভিসার মেয়াদকাল ২০ বছর (পুনরায় ২০ বছরের জন্য রিনিউ করা যাবে
৮. নির্ভরশীল ব্যক্তি হিসেবে যারা আবেদন করতে পারবেপ্রধান আবেদনকারীর স্ত্রী, সন্তান (২১ বছরের কম বয়সী অবিবাহিত সন্তান), বাবা-মা, শশুড়-শাশুড়ী 

মালয়েশিয়ান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সকল ফি সমূহ এক টেবিলে

    সরকারি ফি এর তালিকা        প্রধান আবেদনকারী          নির্ভরশীল ব্যক্তি 
১. অংশগ্রহণ ফি২,০০,০০০ রিংগিত ১,০০,০০০ রিংগিত 
২. বাৎসরিক পাস ফি২০০০ রিংগিত ২০০০ রিংগিত 
৩. নিরাপত্তা বন্ডআপনি কোন দেশ থেকে মালয়েশিয়া যাবেন তার ওপরে নির্ভর করে নির্দিষ্ট হারে পরিশোধ করতে হবে১০ রিংগিত 

পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) কারা পাবে এবং কীভাবে পাবে?

মালয়েশিয়া সরকার তাদের দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ফরেনারদের বেশ কয়েকটি সুযোগ করে দিয়েছেন। অবশ্য সেই সাথে জুড়ে দিয়েছেন কিছু শর্ত। এই শর্তগুলো পূরণ না হলে আপনি বছরের পর বছর ভিসা রিনিউ করে মালয়েশিয়া থাকলেও পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাবেন না। শুধুমাত্র বিশেষ শ্রেনির লোকজন বিশেষ কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে এই মালয়েশিয়ান পিআর পাবে। চলুন দেখে নেয়া যাক কারা পিআর পাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তগুলো কী কী। 

১. বিনিয়োগকারী বা ব্যবসায়ী

মলয়েশিয়া সরকার বরাবরই বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাই আপনি যদি মালয়েশিয়ায় একজন বিনিয়োগকারী বা ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার যে কোনো ব্যাংকে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

আর সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনার কমপক্ষে ১ মিলিয়ন রিংগিত জমা থাকতে হবে। আর এই টাকা কমপক্ষে ৫ বছরের আগে উত্তোলন করা যাবে না। অর্থাৎ মালয়েশিয়ায় খুব সফল একজন ব্যবসায়ী হতে পারলে তবেই আপনি এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবেন। উল্লেখ যে ৫ বছর পরে আপনার স্ত্রী এবং সন্তান বিনা শর্তে ঐ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবে। 

২. দক্ষ পেশাজীবি 

আপনি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মালয়েশিয়া যান এবং আপনার কাজের ওপরে উল্লেখযোগ্য কারিশমা দেখাতে পারেন তবে আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ আপনাকে একজন দক্ষ পেশাজীবি হতে হবে যাতে আপনার কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) এর জন্য সুপারিশ করতে চায়।

তবে এক্ষেত্রেও আপনার কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত আপনাকে মালয়েশিয়ার যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বেসরকারি কোম্পানিতে কমপক্ষে তিন বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে কিংবা আপনার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত সুপারিশপত্র থাকতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুনাগরিকত্ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সুপারিশপত্র থাকতে হবে। 

৩. বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি

আপনি যদি কোনো কাজের ওপরে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন অর্থাৎ হাইলি স্কিলড হয়ে থাকেন তবে আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা থেকে ওয়ার্ল্ড ক্লাস এক্সপার্ট হিসেবে কোনো কাজের ওপর স্বীকৃতি পেলে পিআর পাওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

ধরুন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, আইটি এক্সপার্ট, এক্সপার্ট অপারেটর, আর্টিস্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ যে কোনো একটি ক্যাটাগরিতে আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ফিল্ডের সাথে রিলেটেড এমন কোনো মালয়েশিয়ান সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সুপারিশপত্র থাকতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক প্রশংসাপত্র থাকতে হবে। 

৪. মালয়েশিয়ান নাগরিককে বিয়ে করার মাধ্যমে 

আপনি মালয়েশিয়ার স্থায়ী কোনো নাগরিরকে বিয়ে করার মাধ্যমে ঐ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার লোকাল কোনো ব্যক্তির পতি বা পত্নী হিসেবে আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার যোগ্য।

তবে এক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের স্থায়ী সম্পর্কে আপনাদের আবদ্ধ থাকতে হবে। এই সম্পর্ক যতোটা আইনানুগ হতে হবে ঠিক ততোটাই সামাজিক হতে হবে। অর্থাৎ সামাজিক ভাবে আপনারা কমপক্ষে পাঁচ বছর একত্রে জীবনযাপন করার পরে আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

৫. পয়েন্ট ভিত্তিক পদ্ধতিতে 

আপনার যদি উপরোক্ত কোনো সুযোগেই পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। বিশেষ শ্রেনির ফরেনারদের বাইরেও যদি কেউ পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পেতে চায় তাদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার পয়েন্ট ভিত্তিক পদ্ধতিতে পিআর আবেদন করার সুযোগ রেখেছে।

আপনার বয়স, আপনার যোগ্যতা, মালয়েশিয়ায় আপনার থাকার সময়কাল, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার পরিচয়, ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার বিনিয়োগের পরিমান, মালয়েশিয়ায় আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে আপনার স্কোর নির্ভর করবে৷ আপনার বর্তমান পয়েন্ট স্কোর কতো তা বের করতে পারবেন মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে।

উক্ত ওয়েবসাইটের পয়েন্ট ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার বর্তমান স্কোর দেখে নিতে পারবেন৷ পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য টোটাল ১২০ পয়েন্ট এর মধ্যে আপনার কমপক্ষে ৬৫ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, মালয়েশিয়ায় থাকার সময়কাল, বয়স, প্রতিষ্ঠানিক পরিচিতি যতো বেশি হবে আপনার স্কোর ততো বাড়তে থাকবে। 

উপরিউক্ত যে কোনো একটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পেতে কী কী লাগবে?

প্রথমত মালয়েশিয়ায়  পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য আপনার একজন মালয়েশিয়ান স্পন্সর লাগবে। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার স্থানীয় কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা লাগবে যিনি আপনাকে অফিসিয়াল ভাবে সকল কাজে সহায়তা করবে এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের ইন্টারভিউ এর সময় আপনার সাথে থাকবে। মনে রাখবেন, মালয়েশিয়ার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কোনো স্পন্সর না থাকলে আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন না। 

এছাড়াও আপনার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। সবগুলো ডকুমেন্টস একত্রিত করে ফাইল প্রস্তুত করে তবেই আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার কী কী ডকুমেন্টস রেডি করতে হবে তার একটি তালিকা এখানে উল্লেখ করা হলো।

  • পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) এর জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা আবেদনপত্র।
  • আপনার দক্ষতা উল্লেখপূর্বক সিভি
  • আপনার এবং নির্ভরশীল ব্যক্তিদের প্রত্যেকের ৮ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
  • আপনার স্পন্সরের দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • স্পন্সরের জাতীয় পরিচয়পত্র। 
  • একটি ব্যক্তিগত আবেদনপত্র যা আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার পথকে অনেক সহজ করবে। 
  • যারা পেশাজীবি বা বিশেষজ্ঞ বিভাগের মাধ্যমে আবেদন করতে চায় তাদের জন্য মালয়েশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রাইভেট কোম্পানির সুপারিশপত্র।
  • বিয়ের মাধ্যমে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদন করলে বৈবাহিক সার্টিফিকেট। 
  • আপনার পাসপোর্টের সম্পূর্ণ ফটোকপি অর্থাৎ পাসপোর্টের প্রতিটি পাতার ফটোকপি। 
  • বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক প্রশংসাপত্র। 
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন পেপার
  • এছাড়াও কিছু অতিরিক্ত ডকুমেন্টস ফাইলে সংযুক্ত করতে পারেন যা আপনাকে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পেতে এক্সট্রা সাপোর্ট করবে। যেমন: ব্যাংক ড্রাফট, ফিজিক্যাল চেকআপ রিপোর্ট, বীমা কভারেজ ইত্যাদি।

সাধারণ ভাবে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদনের জন্য উল্লিখিত ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও ব্যক্তিভেদে বিশেষ কোনো ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হতে পারে। এটা ইমিগ্রেশন বিভাগ কর্তৃপক্ষ ডকুমেন্টস চেকলিস্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। তাই আপনার ব্যক্তিগতভাবে আর কোনো ডকুমেন্টস ফাইলে সংযুক্ত করতে হবে কি-না তা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন। 

কীভাবে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদন করবেন?

আপনি প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন যে মালয়েশিয়ার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার মতো যোগ্যতা ইতোমধ্যে আপনি অর্জন করেছেন। অর্থাৎ উপরোল্লিখিত ৫ টি সুযোগের মধ্যে যে কোনো একটি সুযোগ প্রয়োগ করার ক্ষমতা আপনার আছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আপনাকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে চান।

এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে আপনাকে একটি অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ও ডকুমেন্টস এর চেকলিস্ট দেয়া হবে। এগুলো সংগ্রহ করে যথাযথভাবে ফর্ম পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো একত্রিত করে ফাইল রেডি করতে হবে। সকল ডকুমেন্টস রেডি করে এবং ফর্ম ফিলআপ করে আপনাকে সরাসরি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগে জমা দিতে হবে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ যে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদনের জন্য অবশ্যই সশরীরে আপনাকে মালয়েশিয়ায় উপস্থিত থাকতে হবে। পার্সেল প্রদানের মাধ্যমে কিংবা অনলাইন মাধ্যমে আবেদন করা কিংবা আবেদন ফর্ম গ্রহণ ও জমা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সব ডকুমেন্টস ঠিকঠাক থাকলে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য কল করা হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে এবং আপনার স্পন্সরকে সরাসরি ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে।

আপনার পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) আবেদন গ্রহন হলে আপনাকে এন্ট্রি পারমিট এবং আইডেন্টিফিকেশন কার্ড প্রদান করা হবে। আর অবশেষে আপনি মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন এবং মালয়েশিয়ার একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। 

২. মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H) ২০২৫

বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে মালয়েশিয়া প্রায় সময়ই বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এমনই একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হলো মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H)। এই ভিসা প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আপনি পরিবারে মালয়েশিয়ায় থাকা, কাজ করা, ব্যবসা করা কিংবা ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন।

MM2H এর তিন ধরনের ভিসা রয়েছে। যথা: প্লাটিনাম, গোল্ডেন এবং সিলভার। প্রতিটি ভিসা পাওয়ার জন্য শর্ত বিভিন্ন এবং প্রযোজ্য অর্থের পরিমাণও বিভিন্ন। ঠিক একইভাবে MM2H এর আলাদা আলাদা স্টেজের ভিসার সুযোগ সুবিধার মধ্যেও তারতম্য রয়েছে। আপনি আপনার প্রয়োজন, আপনার আর্থিক অবস্থা ও মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকার প্রয়োজন অনুযায়ী এই তিনটি স্টেজ থেকে যে কোনো একটি ভিসা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারেন। 

MM2H প্রোগ্রাম আবেদনের শর্ত সমূহ ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য একই চার্টে উল্লেখ করা হলো

শর্ত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ         প্লাটিনাম           গোল্ডেন           সিলভার
১. আবেদনকারীর বয়সসীমা ২৫ বছর২৫ বছর২৫ বছর
২. ফিক্সড ব্যাংক ডিপোজিট ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ৫,০০,০০০ মার্কিন ডলার ১,৫০,০০০ মার্কিন ডলার 
৩. তরল সম্পদপ্রয়োজন নেইপ্রয়োজন নেইপ্রয়োজন নেই
৪. ভিসার মেয়াদ২০ বছর১৫ বছর৫ বছর
৫. অংশগ্রহণ ফি২,০০,০০০ রিংগিত ৩,০০০ রিংগিত ১,০০০ রিংগিত 
৬. রিনিউ ফি৫,০০০ রিংগিত ৩,০০০ রিংগিত১৫,০০ রিংগিত 
৭. অনুমোদন পাওয়ার পরে ন্যূনতম যে পরিমাণ সম্পদ ক্রয় করতে হবে ২ মিলিয়ন রিংগিত ১ মিলিয়ন রিংগিত ৬,০০,০০০ রিংগিত 
৮. নির্ভরশীল ব্যক্তি হিসেবে যারা আবেদন করতে পারবেস্ত্রী, সন্তান (২১ বছরের কম বয়সী এবং অক্ষম সন্তানদের জন্য কোনো বয়সসীমা নেই) , বাবা-মা স্ত্রী, সন্তান (২১ বছরের কম বয়সী এবং অক্ষম সন্তানদের জন্য কোনো বয়সসীমা নেই), বাবা-মা স্ত্রী, সন্তান (২১ বছরের কম বয়সী এবং অক্ষম সন্তানদের জন্য কোনো বয়সসীমা নেই), বাবা-মা 
৯. ওয়ার্ক পারমিশন আছেনেইনেই
১০. ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ আছেনেইনেই
১১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা আছেআছেআছে
১২. গৃহ কর্মী রাখার সুযোগ আছেনেইনেই

উল্লেখ যে, মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়ার ১ বছরের মধ্যে উপরের ছকে উল্লিখিত পরিমাণ সম্পদ ক্রয় করতে হবে। এবং ক্রয়কৃত সম্পতি ১০ বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না। সকল স্টেজের আবেদনকারী অনুমোদন পাওয়ার ১ বছর পর ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে জমা ব্যাংক ব্যালেন্স এর ৫০% উত্তোলন করতে পারবে।

শুধুমাত্র সম্পত্তি ক্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ভ্রমণ খাতে ব্যয় করার জন্য এই অর্থ উত্তোলন করা যাবে। অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রধান আবেদনকারী বা প্রধান অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে এর উত্তরাধিকার হবে নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি। 

মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H) প্রোগ্রাম আবেদন করতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র 

MM2H আবেদনের আগে আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস একত্রিত করে একটি ফাইল রেডি করতে হবে। তাই আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো যে MM2H আবেদনের জন্য আপনার কী কী লাগবে। প্রত্যেকটি ডকুমেন্টস সঠিক ও বৈধভাবে সংগ্রহ করে একটি পারফেক্ট ফাইল রেডি করতে পারলে আবেদন করা যেমন সহজ হবে তেমনি অনুমোদন পাওয়ার চান্সও বেড়ে যাবে। তাহলে চলুন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো কী কী তা জেনে নেই।

  • প্রধান আবেদনকারীর পক্ষ থেকে একটি আবেদনপত্র। আবেদনপত্রে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আবেদনের মূল উদ্যেশ্য উল্লেখ করতে হবে।
  • প্রধান আবেদনকারীর একটি জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি। বিগত ১০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা ও এক্সট্রা দক্ষতাগুলো উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার বৃত্তান্ত উল্লেখ থাকতে হবে।
  • MM2H অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম। প্রতিজন আবেদনকারীর জন্য আলাদা আলাদা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এটি সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে ইস্যু করা হবে।
  • ব্লু ব্যাকগ্রাউন্ড এর ৬ কপি রঙিন ছবি।
  • পাসপোর্ট এর সকল পৃষ্ঠার কালার কপি। 
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও চারিত্রিক প্রশংসাপত্র 
  • মেডিকেল রিপোর্ট 
  • ম্যারেজ সার্টিফিকেট (আবেদনকারী বিবাহিত হলে)
  • নির্ভরশীল সন্তানের জন্ম নিবন্ধ ফটোকপি 
  • লাস্ট ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট 
  • ফিক্সড ডিপোজিট স্টেটমেন্ট 
  • ইনকাম সোর্স এর প্রমাণপত্র 

মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস গুলোর একটি তালিকা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। 

মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H) আবেদন প্রক্রিয়া 

মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H) আবেদন করার জন্য প্রথমেই আপনাকে eMM2H.com ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি অ্যাকাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এরপরে ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন আপনার বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী আপনি মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H)  আবেদন করার যোগ্য কিনা।

আবেদনের উপযুক্ত হলে এ পর্যায়ে জেনে নিন প্রাথমিক অবস্থায় আপনার কী কী ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য আপনাকে অফেরতযোগ্য ৫০০ রিংগিত পে করতে হবে৷  প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস অনলাইনে সাবমিট করে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

এরপর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ডকুমেন্টস ও আপনার আবেদন ভেরিফিকেশন করা হবে। আপনার আবেদন প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টস ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে অনুমোদন প্রদান করা হবে এবং তা সরাসরি আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এ পর্যায়ে আপনাকে ভিজিট পাস ও ভিসা এন্ট্রির জন্য নির্ধারিত অর্থ প্রদান করতে হবে। অনুমোদন পত্র পেলে আপনি মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। 

মালয়েশিয়া পৌঁছে ছয় মাসের মধ্যে আপনাকে যাবতীয় ডকুমেন্টস, শর্ত পূরনের প্রমাণপত্র সহ একটি ফাইল তৈরি করে সরাসরি জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম (MM2H) প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আপনাকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগে সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে হবে। ইন্টারভিউ সফল হওয়ার মাধ্যমে আপনার আবেদনের মূল কাজের সমাপ্তি ঘটবে। সবশেষে আপনার এবং নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জন্য মেডিকেল বিমা ক্রয় করতে হবে। পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক নির্ভরশীলদের জন্য স্টুডেন্ট পাশের আবেদন করতে হবে। 

আশাকরি পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ ভাবে বুঝতে পেরেছেন। 

৩. এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP)

এমপ্লয়মেন্ট পাস হলো এক ধরনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। মূলত যারা চাকরির উদ্যেশ্যে মালয়েশিয়া যেতে চান, তাদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেবে এমপ্লয়মেন্ট পাস। মালয়েশিয়ায় এমপ্লয়মেন্ট পাস পেয়ে গেলে (বিশেষ ক্ষেত্র বাদে) আপনি সপরিবারে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন।

মালয়েশিয়ায় চাকরি পেতে গেলে অবশ্যই আপনার একজন নিয়োগকর্তা প্রয়োজন, যিনি আপনাকে চাকরি প্রদান করবেন। মূলত নিয়োগকর্তা তার এমপ্লয়ির জন্য এমপ্লয়মেন্ট পাস এর ব্যবস্থা করেন। মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সরকারি ভাবে এমপ্লয়মেন্ট পাস ইস্যু করা হয়। তো কীভাবে আপনি এমপ্লয়মেন্ট পাস এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় সেটেল্ড হবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখান থেকে। 

এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP) পাওয়ার শর্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ 

আপনার কাজের ধরন, পদবী, মাসিক ইনকামের ওপর ভিত্তি করে এমপ্লয়মেন্ট পাস কে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্যাটাগরির শর্ত যেমন ভিন্ন তেমন ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত সুযোগ সুবিধাও বিভিন্ন। চলুন প্রতিটি ক্যাটাগরি অনুযায়ী এমপ্লয়মেন্ট পাস পাওয়ার শর্ত ও সুযোগ সুবিধা একই ছকে এক নজরে দেখে নেই।

শর্ত ও সুযোগ সুবিধা সমূহ         ক্যাটাগরি – ১      ক্যাটাগরি – ২       ক্যাটাগরি – ৩
যে সকল ব্যক্তি উপযুক্ত কোম্পানির প্রধান পদের ব্যক্তিবর্গ, সিইও, সিওও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিনিয়র পার্টনার ইত্যাদি ম্যানেজার বা সমমান পদের ব্যক্তি, ডিরেক্টর, আর্কিটেক্ট, লেকচারার ইত্যাদি নন এক্সক্লুসিভ পদের লোকজন, ফ্যাশন ডিজাইনার, মার্কেটার, কারিগর, প্রকৌশল, যে কোনো এক্সপার্ট ইত্যাদি 
মিনিমাম মাসিক ইনকাম ১০,০০০ রিংগিত সর্বনিম্ন ৫,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯,৯৯৯ রিংগিত সর্বনিম্ন ৩,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪,৯৯৯ রিংগিত
চুক্তিভিত্তিক কাজের মেয়াদ৫ বছর২ বছর২ বছর
ভিসা রিনিউ সুযোগ আছেআছেসর্বোচ্চ দুইবার রিনিউ করা যাবে
নির্ভরশীল ব্যক্তি স্ত্রী, সন্তান (১৮ বছরের কম অবিবাহিত), বাবা মা, শশুড় শাশুড়ী স্ত্রী, সন্তান (১৮ বছরের কম অবিবাহিত),  বাবা মা, শশুড় শাশুড়ী সুযোগ নেই
বিদেশী হেল্পিং হ্যান্ড নিয়োগের সুযোগ আছেআছেনেই

উল্লেখ যে, উপরোক্ত শর্ত পূরনের পাশাপাশি এই বিষয়গুলো শর্তের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

  • আপনার পদবি অনুযায়ী পর্যাপ্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সনদপত্র
  • সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা 
  • পাশাপাশি একাধিক সেক্টরে কাজ করার দক্ষতা ও মনোবল 

এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP) আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP) আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস একটি ফাইল করে আপনার নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এছাড়া কিছু ডকুমেন্টস নিয়োগকর্তা নিজেই এরেঞ্জ করবে। চলুন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

  • এমপ্লয়মেন্ট পাস অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম 
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ এক কপি ছবি (মালয়েশিয়ায় অনুমোদিত পাসপোর্ট সাইজ ছবির নিয়ম অনুযায়ী) 
  • পাসপোর্ট এর সকল পৃষ্ঠার ফটোকপি। অবশ্যই আপনার মালয়েশিয়া গমনের তারিখ থেকে হিসেব করে আরও ৬ মাস পাসপোর্ট এর মেয়াদ থাকতে হবে। 
  •  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রবাসী পদের জন্য অনুমোদন। 
  • একটি পূর্নাঙ্গ সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত 
  • সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • নিয়োগকর্তার সাথে আপনার কাজের চুক্তিপত্র 
  • মেডিকেল রিপোর্ট 

মোটামুটি এই ডকুমেন্টস গুলো একত্রিত করে একটি ফাইল রেডি করতে হবে। 

এমপ্লয়মেন্ট পাস (EP) আবেদনের নিয়ম

একজন এমপ্লয়মেন্ট পাস প্রত্যাশী হিসেবে আপনাকে সরাসরি কোনো ধরনের আবেদন করতে হবে না। আপনার নিয়োগকর্তা আপনার জন্য এমপ্লয়মেন্ট পাসের আবেদন করবে। আপনার প্রাথমিক কাজ হবে একজন নিয়োগকর্তার নিকট নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা এবং প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস হস্তান্তর করা।

আপনি মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে আপনার নিয়োগকর্তা আপনার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রবাসী পদের জন্য অনুমোদনের আবেদন করবেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা থেকে অনুমোদিত হলে আপনার সকল ডকুমেন্টস, ও প্রবাসী পাসের অনুমোদনপত্র নিয়ে নিয়োগকর্তা আপনার জন্য আবেদন করবে।

এক্ষেত্রে সরাসরি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে পারবে। অথবা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে(অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সম্প্রতি চালু করা হয়েছে)। আবেদন পাস হলে আপনাকে একটি এমপ্লয়মেন্ট পাস প্রদান করা হবে। এমপ্লয়মেন্ট পাস অনুমোদিত হলে আপনি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন। 

মালয়েশিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আপনি যে সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন

পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার মাধ্যমে আপনি স্থায়ীভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাসের সুযোগ পাবেন। মালয়েশিয়ায় জমি ক্রয় করতে পারবেন এবং বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। মোটকথা যে কোনো স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদ বৈধভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। তাছাড়া যে কোনো সেক্টরে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। যে কোনো কোম্পানির পার্টনারশিপ গ্রহন কিংবা বর্জন করতে পারবেন।

পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পেয়ে গেলে আপনি কোনো প্রকার ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই মালয়েশিয়ার যে কোনো সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। মালয়েশিয়ার লোকাল লোকজনের মতো যে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করতে পারবেন। যে কোনো ইন্সটিটিউটে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। মালয়েশিয়ার সব জায়গায় ভ্রমন করতে পারবেন এবং সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। মোটকথা মালয়েশিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা যে সকল সুযোগ সুবিধা পায় তার সবকিছুই আপনি পাবেন। 

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পরেও যে সকল সুযোগ সুবিধা আপনি পাবেন না

পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) পাওয়ার পরেও আপনি মালয়েশিয়ার নাগরিকদের মতো সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন না। প্রথমত আপনি ভোটাধিকার পাবেন না। অর্থাৎ ঐ দেশের নির্বাচনে আপনার ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে না। কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবেন না। অর্থাৎ নির্বাচন সম্পৃক্ত কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ব্যতীত সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আপনি পারমানেন্ট রেসিডেন্স (PR) এর মাধ্যমে পাবেন। 

শেষকথা 

মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের উপায় সম্পর্কে খুব সহজভাবে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশাকরি পুরো প্রসেস সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই নিজের অবস্থান, আর্থিক সক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। আশাকরি আপনার জন্য পুরো জার্নিটা খুব সহজ হবে৷ তবে যেহেতু বেশিরভাগ কাজই অফিসিয়াল সেক্ষেত্রে কোনো এক্সপার্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন করার উপদেশ রইলো। ধন্যবাদ। 

Scroll to Top