মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র। এর সরকারি নাম ধিবেহী রাজ্যে জুমহূরিয়া। এটি ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটার রাজধানীর নাম ‘মালে’। অপরূপ সৌন্দর্যের মনোরম শুভ্র বালিকাময় ছোট দ্বীপপুঞ্জ। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র ছয় ফুট এবং গড় উচ্চতা মাত্র তিন ফুট। প্রায় বারশত ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই মালদ্বীপ।
এর অপার সৌন্দর্যের কথা কে না জানে!
সেই সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষ সেখানে ঘুরতে যায়। এই দেশটি ভারতের কেরালা রাজ্যের ১০২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ভারতমহাসাগরে অবস্থিত। শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে।
মালদ্বীপ কীভাবে যাবেন?
বাংলাদেশের অনেক ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে যারা বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে। প্যাকেজ অনুযায়ী মূল্য কম বেশি হতে পারে। তবে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে গেলে আপনার খরচ একটু বেশি হতে পারে। চাইলে আপনি নিজেই অনলাইনে হোটেল, ফ্লাইট, স্পিড বোট বুকিং করে নিজের ইচ্ছেমতো ভ্রমণ করতে পারেন।
মালদ্বীপে যাওয়ার ফ্লাইট
বাংলাদেশ থেকে একমাত্র আকাশ পথেই মালদ্বীপ যাওয়া যায়। অনেকগুলো ফ্লাইট বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ যায়। কিছু ফ্লাইট আছে যারা অন্য কোনো শহরে একটি স্টপেজ দিয়ে তারপর মালদ্বীপ পৌঁছে। আবার কিছু আছে সরাসরি মালদ্বীপ যায়।
• শ্রীলঙ্কান এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে কলম্বো যায়। এরপর সেখানে একটু বিরতি দিয়ে তারপর মালদ্বীপ পৌঁছায়। এটাতে সময় বেশি লাগে। ১০ থেকে ২৫ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। সময় ভেদে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ৪৩-৪৬ হাজার হয়ে থাকে।
• থাই এয়ার এশিয়া ঢাকা থেকে ব্যাংকক যায়। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে মালদ্বীপ পৌঁছায়। সময় প্রায় ১১ ঘণ্টা লেগে যায়। এর ভাড়াও বেশি। সাধারণত ৬০-৬৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে।
• ইউএস বাংলা ঢাকা থেকে সরাসরি মালদ্বীপ পৌঁছায়। এর ভাড়া ৪০-৪৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
ইউএস বাংলা সবগুলোর চেয়ে কম সময়ে ও অল্প টাকার মধ্যে মালদ্বীপ পৌঁছানো যায়। আপনি যদি বেশ কিছুদিন আগে থেকে টিকেট বুকিং দিয়ে রাখেন তাহলে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। বলে রাখা ভালো ইউএস-বাংলাই সর্বপ্রথম সরাসরি ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
মালদ্বীপ যাওয়ার বিকল্প পদ্ধতি
আপনার যদি ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকে তাহলে ভারত হয়ে মালদ্বীপ ট্যুর দিতে পারেন। এতে করে অল্প খরচে দুইটি দেশ ভ্রমণ করা যাবে। পদ্ধতিটা হলো, ভারতের শহর কলকাতা, বাংলাদেশ থেকে ট্রেনে চড়ে কলকাতা যাবেন।
এরপর কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে কেরালা চলে যাবেন। ভারতের ট্রেন ভাড়া তুলনামূলক কম। কেরালা থেকে অনেক ক্রুজ শিপ মালদ্বীপ ভ্রমনে যায়। তিন থেকে চার দিনের খরচ গড়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকার মধ্যে হয়।
এই টাকার মধ্যেই যাওয়া-আসা এবং হোটেলে থাকা খাওয়া যায়। এতে করে আপনি সমুদ্র ভ্রমণের স্বাদও উপলব্ধি করতে পারবেন। এবং আসার সময় কলকাতা শহর ঘুরতে পারবেন। তবে এটায় অনেক সময় নিয়ে ট্যুরে যেতে হবে।
ভিসা লাগবে কি?
বাংলাদেশীদের জন্য মালদ্বীপ সরকার অন এরাইভেল ভিসা প্রদান করে। অর্থাৎ আপনি মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে পৌঁছালে আপনাকে ভিসা প্রদান করা হবে। সেই ভিসা দিয়ে আপনি এক মাস মালদ্বীপে অবস্থান করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে কয়েকটি কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে।
• পাসপোর্ট, যার অন্তত একটি পাতা খালি আছে।
• রিটার্ন এয়ার টিকেট।
• হোটেল বুকিং কনফার্মেশন।
• ট্রাভেল ইন্টারনি।
• পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার অথবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড।
সঠিকভাবে কাগজপত্র দেখাতে পারলে আপনি মালদ্বীপের ভিসা পেয়ে যাবেন। অবশ্য এটাতে জটিলতা নেই বললেই চলে।

কোথায় থাকবেন, হোটেল না কি রিসোর্টে?
কোথায় থাকবেন সেটা জানার জন্য আগে জানতে হবে মালদ্বীপের ভৌগলিক পরিস্থিতি। আমরা আগেই বলেছি মালদ্বীপ অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো একটি গোল বৃত্তাকার সীমানার মধ্যে হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের সমষ্টিকে স্থানীয় ভাষায় এ্যাটোল বলা হয়। একটি এ্যাটোল থেকে অন্য আরেকটি এ্যাটোলে যাওয়ার একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে স্পিডবোট।
আপনি যদি শান্ত সমুদ্রের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে নির্জন কোনো এ্যাটোল অথবা দ্বীপে। নির্জন দ্বীপগুলোতে সাধারণত রিসোর্ট তৈরি করে থাকে। যা খুবই ব্যয়বহুল। আপনি যদি চান তাহলে রিসোর্টেও থাকতে পারেন। তবে এখানেও কিছু কথা আছে।
হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করার জন্য ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন মানের বিভিন্ন দামের রিসোর্ট প্রদর্শন করে থাকে। যেমন ধরুন একটি রিসোর্ট এর পার নাইট প্রাইস ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এর সাথে আরো ১০ থেকে ১৫% টেক্স যুক্ত হবে। এছাড়া আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব। তাই ওয়েবসাইট গুলোতে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দেবেন। সেই সাথে খেয়াল রাখবেন ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার সংযুক্ত কি না। কেননা সেখানে খাবারের দাম অত্যাধিক।
মালদ্বীপ ভ্রমণে খরচ কেমন হবে?
মালদ্বীপ একটি ব্যয়বহুল রাষ্ট্র। যেখানে পদে পদে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট থেকে আপনার বুকিং করা রিসোর্ট এর দূরত্ব অনুযায়ী এর স্পিডবোট ভাড়া নির্ধারিত হয়। আপনি যদি একটু দূরে কোনো রিসোর্ট ভাড়া করে থাকেন যেখানে স্পিডবোট দিয়ে যেতে ৪০থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে।
তাহলে স্পিডবোটের যাওয়া আসার ভাড়া দিতে হবে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটে যাওয়ার খরচের সমান। এছাড়া যদি অনেক দূরে কোনো রিসোর্ট বুকিং করে থাকেন তাহলে স্পিডবোর্ড দিয়ে যাওয়া যাবে না। সেখানে যেতে হলে সী প্লেন দিয়ে যেতে হবে। যার ভাড়া অনেক।
তাই অবশ্যই রিসোর্ট বুকিং দেওয়ার আগে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখবেন যে, এয়ারপোর্ট থেকে ওই রিসোর্ট এর দূরত্ব কত। নচেৎ পরে বিপদে পড়ে যাবেন।
কোন দ্বীপে ঘুরবেন?
মালদ্বীপে অসংখ্য দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দর কয়েকটি দ্বীপের নাম হলো গুলহি, মানধু, ফিয়ালি, ভানি, ভেমানধু, ফানাদু, গেমানফুশি, নেল্লাইধু ইত্যাদি।
তবে বাংলাদেশীদের প্রথম পছন্দ মানফুশি আইল্যান্ড।
কোন কোন খাতে খরচ হয়?
ফ্লাইট, রিসোর্ট ও স্পিড বোট ছাড়াও আরো অন্যান্য খাতে খরচ হবে। যেমন ধরুন সেখানে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার রাইট রয়েছে। ছোট ছোট নৌকা ভাড়া। ডলফিন দেখতে যাওয়ার জন্য স্পিডবোট ভাড়া ইত্যাদি।
এছাড়া আপনি যদি প্যারাসুট দিয়ে আকাশে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চান সেজন্য আলাদা খরচ। খাবার-দাবারের খরচের কথা নাই বা বললাম।
কোন কারেন্সি ব্যবহার করবেন?
মালদ্বীপ যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। তাই এখানে ডলারে লেনদেন হয়ে থাকে ব্যাপক। আপনি স্থানীয় মুদ্রাতেও লেনদেন করতে পারেন কিন্তু সেটা আপনার জন্য সুখকর হবে না। তাই আপনি ডলার দিয়েই লেনদেন করবেন। ছোটখাটো খরচের জন্য কিছু ডলার স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করে নিতে পারেন। তবে বড় বড় খরচ গুলো অবশ্যই ডলারে পরিশোধ করবেন।
কখন যাবেন মালদ্বীপ?
মৌসুম ভেদে এখানে রিসোর্ট এর ভাড়া কমবেশি হয়। পর্যটক পূর্ণ মৌসুম হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। বছরের এই সময়টাতে হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া অনেক বেশি থাকে। তাই চেষ্টা করবেন এই সময়টা ছাড়া অন্য সময় যেতে।
টিপস
আপনি যদি কম খরচে মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে চান তাহলে রিসোর্টের বদলে হোটেল বুকিং করতে পারেন। যে হোটেলগুলো সমুদ্রের তীরে অবস্থিত সেগুলোর খরচ অনেক বেশি। তাই আপনি একটু ভেতরের হোটেল গুলোতে থাকার চেষ্টা করবেন।
নিচের আশেপাশে রেস্তোরাঁ গুলোতে খাবারের দাম বেশি থাকে। আপনি যদি কোনো জনবহুল দ্বীপে অবস্থান করেন তাহলে দেখবেন যে স্থানীয় লোকেরা কোথায় খাবার খায়। আপনিও সেখান থেকে খাবার খাবেন, তাহলে খরচটা কিছুটা কম পড়বে।