বিখ্যাত মহেরা জমিদার বাড়ি – টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান

টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মহেরা জমিদার বাড়ি সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে খুবই বিখ্যাত একটি দর্শনীয় স্থান। টাঙ্গাইল সাদরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি খুবই সযত্নে সংরক্ষিত আছে এখনও পর্যন্ত। দেশ বিদেশের অসংখ্য ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থী ঘুরতে আসে এই মহেরা জমিদার বাড়িতে।


ঢাকা,গাজীপুর, ময়মনসিংহ জেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করলে এই বিখ্যাত মহেরা জমিদার বাড়িকেই সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয়।সুবিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ির আছে তিনটি বিশাল আকৃতির ভবন।আছে পার্ক,জাদুঘর, বাগান। 


টাঙ্গাইলে ঘুরতে আসলেন, কিন্তু মহেরা জমিদার বাড়ি দর্শন না করে চলে গেলেন, মানে আপনি অনেক বড় একটি সুযোগ মিস করলেন।টাঙ্গাইলে বেশ কয়েকটি ছোট বড় জমিদার বাড়ি থাকলেও মহেরা জমিদার বাড়ি সবগুলোর থেকেই অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।তাই টাঙ্গাইলের দিকে ট্যুর প্লান করলে অবশ্যই মহেরা জমিদার বাড়ির বিষয়টি সিডিউলে রাখা উচিত।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে মহেরা জমিদার বাড়ির যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে আসতে হবে।মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি টাঙ্গাইলের গাড়ি পাওয়া যায়।এখান থেকে টাঙ্গাইলের উদ্যেশ্যে রওনা হওয়া বাসে চেপে বসতে হবে।ভারা পড়বে মাথাপিছু ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মতো।


টাঙ্গাইল পৌছে টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়তে হবে।আগে থেকে চেনা না থাকলে অবশ্যই বাসের কনট্রাকটরকে বলে রাখতে হবে নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়ার জন্য। নাটিয়াপাড়া নেমে দেখতে পাবেন বেশ কিছু সিএনজি লোকাল ভাবে যাত্রী আনা নেওয়া করে জমিদার বাড়ির পথে।সেখান থেকে সিএনজি করে চলে যেতে পারবেন একদম জমিদার বাড়ির সামনে।সিএনজি ভারা নিবে জনপ্রতি ১৫ টাকা।

গাজীপুর থেকে মহেরা জমিদার বাড়ির যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে গাজীপুর চৌরাস্তা চলে আসতে হবে।সেখান থেকে সরাসরি টাঙ্গাইলের গাড়িতে উঠতে হবে।টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া বাসটি মির্জাপুর হয়ে ঢুকবে টাঙ্গাইলে।


জমিদার বাড়ি যেতে চাইলে আপনাকে নেমে পড়তে হবে নাটিয়াপাড়া জামে মসজিদ মোড়ে। সেখান থেকে অটো বা সিএনজি নিয়ে চলে আসবেন সরাসরি টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বারে।সিএনজি ভাড়া পরবে জনপ্রতি ১৫ টাকা।চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন।সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৭০/৮০ টাকা।

খরচ কেমন হবে? 

ব্যক্তিগত ভাবে মহেরা জমিদার বাড়ি ঘুরতে গেলে মাথাপিছু হিসেব করে টিকেট কেটে ঢুকতে হবে।জনপ্রতি প্রবেশ টিকেট মূল্য মাত্র ১০০ টাকা।পিকনিক গ্রুপ নিয়ে গেলে অবশ্যই আপনারা আগে থেকে কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিবেন।তাহলে জনপ্রতি ১০০৳ টিকেট মূল্য কিছুটা শিথিল করা হবে। 
জমিদার বাড়ির ভিতরে আছে পার্ক,সেখানে আছে নানা ধরনের রাইড।রাইডের জন্য আলাদা টিকেট কিনতে হবে।

রাইডে ওঠার আগে অবশ্যই টিকেট মূল্য জেনে নিবেন।ট্যুরিস্ট চাপ দেখলে হুট করেই এরা টিকিট মূল্য বৃদ্ধি করে ফেলে।জমিদার বাড়ির মূল ভবনেই আছে জাদুঘর, কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো এই জাদুঘরে ঢুকতে কোনো আলাদা টিকেট চার্জ নেই।জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন আপনি একেবারে বিনামূল্যে।


জাদুঘরের প্রবেশ গেটের সাথেই আছে বড় একটি ক্যান্টিন, আর ভেতরের দিকে আছে দুটো ছোট ছোট ক্যান্টিন। আপনারা চাইলে এখান থেকে খাবার কিনে খেতে পারবেন।খরচ কমাতে চাইলে অবশ্যই বাহির থেকে খাবার নিয়ে ঢুকবেন অথবা বাসা থেকেই খাবার সাথে করে নিয়ে আসবেন।


পিকনিক গ্রুপে আসলে আপনারা এখানে খাবারের অর্ডার করতে পারবেন।ব্যক্তিগত ভাবে কিনে খেলে যে খরচ তার থেকে আগে পিকনিকের জন্য খাবারের বুকিং দিয়ে রাখলপ তুলনামূলকভাবে খরচ বা বিল অনেক কম হয়।নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্না করে খেতে চাইলে সেটা অবশ্যই আপনাকে মূল গেইটের বাইরে করতে হবে। 


জমিদার বাড়ির সামনে আছে সুবিশাল মাঠ ও পানির সুব্যবস্থা। চাইলে এখানে রান্নার আয়োজন করতে পারবেন কিন্তু জমিদার বাড়ির মূল এরিয়ার ভেতরে রান্না করার জন্য কোনো ধরনের অনুমতি দেওয়া হয় না।সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ক্যান্টিনে খাবারের জন্য বুকিং দিয়ে রাখাই বেশি সুবিধাজনক।কারন বাইরে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে, সারাদিন না খেয়ে খেয়ে ঘুরে ফিরে শেষ সময়ে এসে খাবার খেতে হবে

ট্যুর প্লানে মহেরা জমিদার বাড়ি সিলেক্ট করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত?

টাঙ্গাইলের দিকে ট্যুর প্লান করলে মহেরা জমিদার বাড়িকে স্পট হিসেবে সিলেক্ট করা যুক্তিযুক্ত।মহেরা জমিদার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে এখানে আসাটা সার্থক হয়েছে।এতো বড় এরিয়া যে সকালে শুরু করলে বিকেল পর্যন্ত দেখে শেষ করা যাবে না।যেদিকেই তাকাবেন শুধু আশ্চর্য হয়ে যাবেন।


জমিদার বাড়ির একদম সামনের অংশেই আছে ঘাট বাধানো বিশাল এক পুকুর। পুকুর ঘাটের দুদিক দিয়ে সিড়ি নেমে গেছে একদম পুকুরে। দেখতেই জমিদার জমিদার একটা ফিল আসে।পুকুরের মধ্যে প্যাডেল বোড এর ব্যবস্থা আছে,চাইলে ১ ঘন্টার জন্য এই প্যাডেল বোড ভারা নিয়ে পুকুরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।জমিদার বাড়ির ৩ টি প্রধান ভবন আর এই ভবনগুলো এতটাই রাজকীয় স্টাইলে করা যে দেখলেই মনটা ভরে যায়।


৩ টি প্রধান ভবনের একটিকে জাদুঘর হিসেবে ডেকোরেট করা হয়েছে।জাদুঘরের ভেতরে আছে জমিদারের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, প্রাচীন মুদ্রা, টেলিফোনে, কলসি ইত্যাদি প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। আছে জমিদারের ব্যবহৃত একটি রাজকীয় দোলনা। 


দোলানাটা কিন্তু শুধু দেখতেই পারবেন,ভুলেও বসার চেষ্টা করবেন না।তাহলে গার্ড এসে সরাসরি অপমান করবে,কারণ এটাতে বসা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখলেই মনে হবে দোলনাটায় একটু বসি।


মহেরা জমিদার বাড়িটিকে বর্তমানে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিধায় জাদুঘরে বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্কর্য তৈরি করে রাখা হয়েছে।জাদুঘরে একপাশে আছে ফটো গ্যালারি। এখানে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং সাজিয়ে রাখা আছে।জাদুঘরের ভেতরের লাইটিং ব্যবস্থা খুবই চমৎকার তাই এখানে ছবি তুললে লুক ভালো আসে।আর এখানে ছবি তোলার জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।তাই যেভাবে খুশি ছবি তোলা যায় ও ভিডিও করা যায়।

জমিদার বাড়ির পেছনের দিকে আছে আরেকটি ছোট লেক। আর লেকের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি রাউন্ড শেপ কুটির। এখানে বসে আড্ডা দেয়ার মজাই অন্যরকম । আছে ঝর্না, বিভিন্ন প্রানীর ভাষ্কর্য, বাগান, দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং।সব মিলিয়ে চমৎকার একটি ট্যুরিস্ট স্পট ।
কেউ জমিদার বাড়ির রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে তাদের জন্যও আছে সুব্যবস্থা। রাতে থাকতে চাইলে এখানকার বাংলোতে রুম ভাড়া করে থাকতে পারবেন।

মহেরা জমিদার বাড়িতে আমার ভ্রমণ

চাকরির সুবাদে স্কুল থেকে প্রতিবছরই একটা শিক্ষা সফরে যাওয়ার সুযোগ পাই।২০২৩ সালে আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষা সফরের স্পষ্ট নির্ধারণ করা হয় মহেরা জমিদার বাড়ি।আমরা দুটো বাস রিজার্ভ করে জমিদার বাড়ি গিয়েছিলাম, তাই বার বার গাড়ি পরিবর্তন করার মতো কোনো ঝামেলা ছিল না।


গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে জমিদার বাড়ি যাওয়া আসা সব মিলিয়ে ২ বাসের ভাড়া নিয়েছিল ২০,০০০ টাকা। পিকনিক গ্রুপ ছিলাম এবং আগে থেকেই চুক্তি করা ছিল বিধায় আমাদের মাথাপিছু এন্ট্রি টিকেট ফি নিয়েছিল মাত্র ৫০ টাকা।সারাদিন জমিদার বাড়িতে অবস্থান করলাম এবং দুপুরের খাবার আগে থেকে ক্যান্টিনে অর্ডার করা ছিল বলে খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হয়নি আমাদের । 


সকালে আমরা পুরো জমিদার বাড়ির এরিয়া ঘুরে দেখেছি ও জাদুঘর পরিদর্শন করেছি।দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে বিভিন্ন রাইডে উঠেছি এবং সেগুলোর জন্য আলাদা টিকেট কাট হয়েছে নিজ নিজ দায়িত্বে। এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লটারি পর্ব। অবশেষে সন্ধ্যা ৭ টায় আমরা আবার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম।


স্পট কর্তৃপক্ষে ও ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ উভয়ের ব্যবহার ছিল খুবই অমায়িক এবং প্রত্যেকেই ট্যুরিস্ট দের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক ।

Scroll to Top