মহাসাগর কি? পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরের পরিচিতি ও ছবি। প্রশান্ত, আটলান্টিক, আর্কটিক

মহাসাগর বলতে সাধারনত বোঝায় লবনাক্ত জলরাশির এক সুবিশাল সমাহার যা পুরো পৃথিবীকে বেষ্টন করে রেখেছে। আমরা জানি পৃথিবীর উপরিভাগের মোট আয়তন ৫১০,০৭২,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এই সুবিশাল এলাকার শতকরা ৭০.৯ ভাগ জায়গা দখল করে আছে এই লবনাক্ত জলরাশি।

পৃথিবীর বুকে স্থলভাগের যে অংশটুকু রয়েছে তা আবার বিভিন্ন ছোট বড় বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে মহাসাগর নামক যে সুবিশাল জলরাশি রয়েছে তা কোনো দিক থেকেই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বা ক্ষুদ্র অংশে বিভাজিত নয়। জলরাশির এই প্রাকৃতিক মেলবন্ধনে পুরো পৃথিবী একত্রিত হয়ে আছে।

কেথাও এর গভীরতা কল্পনাতীত আবার কোথাও তুলনামূলক অনেক কম। কোথাও মহাসাগরীয় জলরাশীর রঙ উজ্জ্বল নীল আবার কোথাও বিবর্ণ। এভাবেই নানা বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে স্বগর্বে প্রবহমান এই মহাসাগর। আজকের আয়োজনে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান সব কয়টি মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে পারবেন।

পৃথিবীতে মোট মহাসাগরের সংখ্যা

সামগ্রিক দিক থেকে বিবেচনা করলে পৃথিবীতে সুবিশাল একটি মাত্র লবনাক্ত জলাধার রয়েছে। কেননা পৃথিবীর বুকে অবস্থিত জলরাশি কোনো ভাবেই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়। কোনো না কোনো দিক থেকে সব অঞ্চলের জলরাশির মধ্যেই সংযোগস্থল রয়েছেই।

তবে অঞ্চল ভেদে ও গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্রতার কারনে সুবিশাল এই জলরাশিকে কয়েকটি অদৃশ্য ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত আছে মহাসাগর, সাগর, প্রনালী, উপসাগর, নদী ইত্যাদি।

তবে এই সুবিশাল জলাধারকে বৃহৎ আকারে পাঁচটি মহাসাগরের বিভিক্ত করা হয়েছে। সেদিক থেকে আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে পৃথিবীতে মোট পাঁচটি মহাসাগরের অস্তিত্ব রয়েছে।

ভূতাত্ত্বিকগন পৃথিবীজুড়ে অবস্থিত জলধারারের ভৌগোলিক অবস্থান, গভীরতা ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে একে মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছে।

পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরের নাম-

  1. প্রশান্ত মহাসাগর
  2. আটলান্টিক মহাসাগর
  3. ভারতীয় মহাসাগর
  4. আর্টিক মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর
  5. অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর বা দক্ষিণ মহাসাগর

প্রতিটি মহাসাগরের যেমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে তেমই আছে ভৌগোলিক অবস্থানগত বৈচিত্র্য। সেই সাথে মহাসাগরীয় বৈচিত্র্যময় জলজ প্রাণীদের প্রাচুর্য তো রয়েছেই। চলুন প্রতিটি মহাসাগর সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

১. প্রশান্ত মহাসাগর

পৃষ্ঠতলের আয়তন হোক কিংবা গভীরতার দিক থেকে হোক দুদিক থেকেই প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর সবথেকে বড় মহাসাগর বলে বিবেচিত। এই মহাসাগরটি আপাতদৃষ্টিতে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজের আকৃতির। পৃথিবীর উপরিভাগের ক্ষেত্রফলের শতকরা প্রায় ৩২ শতাংশ এলাকা নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের অবস্থান।

প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের মোট আয়তন ১৬,৫২,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। গভীরতা বিবেচনা করলে দেখা যায় অঞ্চলভেদে এর গভীরতায় ব্যপক বৈচিত্র্য রয়েছে। সবথেকে বেশি গভীরতা এই পর্যন্ত ১০,৯১১ মিটার বা ৩৫,৭৯৭ ফুট বিবেচনা করা হয়েছে৷ গভীরতার গড় হিসেব করলে দাঁড়ায় ৪,২৮০ মিটার বা ১৪,০৪০ ফুট।

প্রশান্ত মহাসাগরে ধারণকৃত পানির মোট আয়তন ৭১,০০,০০,০০০ ঘন কিলোমিটার বা ১৭,০০,০০,০০০ ঘন মাইল।
প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর সীমান্তে রয়েছে আর্টিক মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর যা সুমেরু মহাসাগর নামেও পরিচিত। এর দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর যা কুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত।

অন্যদিকে পশ্চিমের শেষ প্রান্তে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান। আর পূর্ব দিকের সীমানা গিয়ে মিশেছে আমেরিকার সাথে।

আপনি জানলে অবাক হবেন প্রশান্ত মহাসাগর বাদে বাকি চারটি মহাসাগরে সবমিলিয়ে যতোগুলো দ্বীপ রয়েছে তার সর্বমোট সংখ্যার থেকেও বেশি সংখ্যক দ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। এই মহাসাগর সবমিলিয়ে প্রায় ২৫,০০০ দ্বীপ ধারণ করে আছে। এই দ্বীপে নানা বৈচিত্র্যের নানা জাতির লোকজনের বসবাস।

আরেকটি মজার বিষয় হলো এই মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপগুলোর বেশির ভাগই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। এই দ্বীপগুলোকে আবার প্রধান চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা: মহাদেশীয় দ্বীপ, উচ্চ দ্বীপ, প্রবাল প্রাচীর এবং সবশেষে উদ্বর্তিত প্রবাল ভূমি।

আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো এই সাগরের স্রোত সকল অংশে একই দিকে প্রবাহিত হয় না। এক প্রান্তের স্রোত ঘড়ির কাঁটর দিকে চলমান আরেক প্রান্তের স্রোত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চলমান। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর অংশের স্রোত ঘড়ির কাটার সাথে তাল মিলিয়ে একই দিকে আবর্তিত হলেও দক্ষিণ অংশের স্রোত ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে আবর্তিত হয়।

অঞ্চলভেদেও প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং সকল স্থানের স্রোতধারার তাপমাত্রাও একই রকম নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোত গুলোর মধ্যে শীতল স্রোত হলো: কুমেরু স্রোত, পেরু স্রোত অথবা হ্যামবোল্ড স্রোত, ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত, এবং বেরিং স্রোত।

অন্যদিকে উষ্ণ স্রোত গুলো হলো: দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত অথবা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো, আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত এবং নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত।

২. আটলান্টিক মহাসাগর

আটলান্টিক মহাসাগর

পৃথিবীর মোট আয়তনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এলাকাজুড়ে আটলান্টিক মহাসাগর বিস্তৃত। আয়তনের দিক থেকে বিবেচনা করলে আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। তবে এটি প্রশান্ত মহাসাগরের থেকে খুব বেশি ছোট নয়। এর উপরিভাগের বিস্তৃতি অনুযায়ী মোট আয়তন ১০,৬৪,৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৪,১১,০০,০০০ বর্গ মাইল। আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান দুইটি ভাগ রয়েছে। একটি উত্তর আটলান্টিক এবং আরেকটি দক্ষিণ আটলান্টিক।

উত্তর আটলান্টিক এর উপরিতলের মোট আয়তন ৪,১৪,৯০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ১,৬০,২০,০০০ বর্গ মাইল। অন্যদিকে দক্ষিণ আটলান্টিক এর উপরিভাগের মোট আয়তন ৪,০২,৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ১,৫৫,৫০,০০০ বর্গ মাইল।

আটলান্টিক মহাসাগরের সবথেকে গভীরতম অঞ্চল বা পয়েন্ট টিকে বলা হয় ‘পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চ’। এই ‘পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চ’ এর অবস্থান উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এর পশ্চিম প্রান্তে। সর্বোচ্চ গভীর এই বিন্দুর গভীরতা ধরা হয় ৮,৩৭৬ মিটার বা ২৭,৪৮০ ফুট। তবে এই মহাসাগরের গভীরতা অঞ্চলভেদে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।

গড় গভীরতার দিকে বলতে গেলে, আটলান্টিক মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৬৪৬ মিটার বা ১১,৯৬২ ফুট। এই মহাসাগরে ধারণকৃত পানির মোট আয়তন পানির আয়তন ৩১,০৪,১০,৯০০ ঘন কিলোমিটার বা ৭,৪৪,৭১,৫০০ ঘন মাইল। এর উপকূল ১,১১,৮৬৬ কিলোমিটার বা ৬৯,৫১০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।

আটলান্টিক মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত সবগুলো ছোট বড় সাগরের মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম হলো ‘সারগাসো সাগর’। এই সাগরের মোট আয়তন ৩.৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার।

ভৌগোলিক অবস্থানের কথা বলতে গেলে আটলান্টিক মহাসাগর মূলত উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর মহাসাগর ও দক্ষিন মহাসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বিভক্ত। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা অবস্থিত। পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ইউরোপ মহাদেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশ। উত্তর প্রান্তে রয়েছে উত্তর মহাসাগর। আর দক্ষিণ প্রান্তে দক্ষিণ মহাসাগরের অবস্থান।

বিশ্বের সবথেকে দীর্ঘ পর্বতশ্রেণী আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। ‘মিড-আটলান্টিক রিজ’ নামক সর্বোচ্চ দীর্ঘ এই পর্বতশ্রেণীটি ১৬০০০ কিলোমিটার বা ১০০০০ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণের অঞ্চল পর্যন্ত চলে গেছে।

মানব ইতিহাসের এক নির্মম দূর্ঘটনার জলন্ত সাক্ষী এখনও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে বিদ্যমান রয়েছে। হ্যাঁ, বলছিলাম টাইটানিক জাহাজের কথা। ১৯১২ সালে সংঘটিত আইসবার্গের সাথে সংঘর্ষ জনিত দূর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ এখনও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে বিদ্যমান রয়েছে।
পৃথিবীর সবথেকে বড় দ্বীপ হলো গ্রীনল্যান্ড। গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত।

এছাড়াও অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জকে আটলান্টিক মহাসাগর নিজের বুকে ধারণ করে আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দ্বীপ হলো: গ্রেট ব্রিটেন, ফকল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ইত্যাদি।

পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী ও জীবনধারার লোকজন এই আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে জেগে ওঠা দ্বীপে নিজেদের বসতি গড়ে তুলেছে। তাছাড়া হাজার হাজার জানা অজানা জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল এই মহাসাগর। এর লবনাক্ত পানির বিশাল অববাহিকায় বেঁচে আছে তিমি, ডলফিন, হাঙর সহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল,উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক প্রাণী।

আঞ্চলিক জলবায়ু, স্রোতের ধারা ও অববাহিকার স্থান অনুযায়ী আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্রোতধারা হলো: কুমেরু স্রোত, বেঙ্গুয়েলা স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, ব্রাজিল স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, উপসাগরীয় স্রোত, উত্তর আটলান্টিক স্রোত, ক্যানারী স্রোত, ল্যাব্রাডার স্রোত ইত্যাদি।

৩. ভারত মহাসাগর

আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর মহাসাগর গুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান দখল করে আছে ভারত মহাসাগর। ভারত মহাদেশের নামানুসারে এই মহাসাগরের নামকরণ করা হয়েছে ভারত মহাসাগর। মহাসাগরীয় অঞ্চলের শতকরা ২০ ভাগ এলাকাজুড়ে ভারত মহাসাগরের বিস্তৃতি। ভারত মহাসাগরের উপরিভাগের মোট আয়তন ৭,০৫,৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ২,৭২,৪০,০০০ বর্গ মাইল।

গভীরতার দিক থেকে বলতে গেলে, এই মহাসাগরের সবথেকে গভীরের প্রান্তটি ৭,২৫৮ মিটার বা ২৩,৮১২ ফুট নিচে অবস্থিত। তবে গড় গভীরতা হলো ৩,৭৪১ মিটার বা ১২,২৭৪ ফুট। উপকূলের অঞ্চলগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৬৬,৫২৬ কিলোমিটার বা ৪১,৩৩৭ মাইল।

ভারত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে আছে আফ্রিকা। পূর্ব দিকে ইন্দোচীন, সুন্দাদ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান। তাছাড়া উত্তর দিকে আছে ভারত উপমহাদেশ। দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দক্ষিণ মহাসাগর। আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর এই তিনটি সাগরকে ভারত মহাসাগরের তিনটি প্রধান বাহু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ যে আরব সাগরের মধ্যে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও পারস্য উপসাগর অন্তর্ভুক্ত।

ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে উঠেছে শত শত দ্বীপ। এর মধ্যে সবথেকে বৃহত্তম দ্বীপটি হলো মাদাগাস্কার। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্রও। পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মাদাগাস্কার দ্বীপের অবস্থান।

এছাড়াও আরও উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে: রিইউনিয়ন দ্বীপ, কোমোরোস, সেশেল, মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি। এসকল দ্বীপপুঞ্জ ও দ্বীপরাষ্ট্র গুলোতে ডারবান, মুম্বই, পার্থ, কলম্বো, পাডাং, ম্যাপুটো সহ বিভিন্ন ছোট বড় জনগোষ্ঠীর বসতি গড়ে উঠেছে।

৪. আর্টিক মহাসাগর

আর্টিক মহাসাগর যা উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর নামেও পরিচিত। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত বলেই মূলত এটি উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে উত্তর মহাসাগর আয়তনে ও গভীরতায় সবথেকে ছোট বলে বিবেচিত।

তবে পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসাগর হিসেবে বিবেচিত। ইন্টারন্যাশানাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশন এটিকে মহাসাগর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অনেক ভূতত্ত্ববিদ মনে করেন উত্তর মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ভূমধ্যসাগর।

উত্তর মহাসাগর বেরিং প্রণালীর মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। আয়তনের দিক থেকে হিসেব করলে উত্তর মহাসাগরের মোট আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ১,৪০,৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৪,২৭,০০০ বর্গ মাইল। উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন ৪৫,৩৯০ কিলোমিটার বা ২৮,২০০ মাইল।

আর্কটিক মহাসাগরের প্রায় পুরোটাই ইউরেশিয়া, উত্তর আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত। অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় আর্টিক মহাসাগরের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা অনেক কম। কেননা বৃহৎ আকৃতির সকল সাইবেরীয় নদী ও কানাডীয় নদীর মিঠা পানি এসে উত্তর মহাসাগরে পতিত হয়।

বছরের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই উত্তর মহাসাগরের সিংহভাগ পানি বরফে জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকে। তবে গ্রীষ্মকালে শতকরা ৫০ ভাগ বরফ গলে তরলে পরিনত হয়।

উত্তর মহাসাগরের বুকে ছোট বড় অনেক দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলো হলো: ইয়ান মায়েন, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড, উত্তর দ্বীপপুঞ্জ, ওয়ারেঞ্জেল দ্বীপ, নতুন সাইবেরীয় দ্বীপপুঞ্জ, সেভারনায়া জেমল্যা, নোভায়া জেমল্যা, ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ড ইত্যাদি।

৫. দক্ষিণ মহাসাগর

দক্ষিণ মহাসাগর পৃথিবীর দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত সর্বশেষ স্বীকৃত মহাসাগর। ইন্টারনেশনাল হাইড্রোগ্রাফিক অরগানাইজেশন এটিকে মহাসাগর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দক্ষিণ মহাসাগর অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর নামেও পরিচিত। আয়তনের দিক থেকে পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

এন্টার্কটিকাকে পরিবেষ্টিত মহাসাগরটির পৃষ্ঠভাগের মোট আয়তন ২,০৩,২৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৭৮,৪৮,০০০ বর্গ মাইল। দক্ষিণ মহাসাগর সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উদঘাটনের জন্য বিজ্ঞানীরা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে এই বিষয়ে। তবে এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ তথ্য ই বিতর্কিত আকারে রয়েছে।

এই ছিলো পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। মহাসাগরের রহস্য প্রতিনিয়ত উদঘাটিত হচ্ছে। এবং এই সম্পর্কিত তথ্যের পরিধি দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে। আশাকরি পরবর্তীতে পৃথিবীর মহাসাগর সম্পর্কিত নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আবারও হাজির হতে পারবো। জ্ঞান অন্বেষণ করুন, অভিজ্ঞতার পরিধি বৃদ্ধি করুন।

Scroll to Top