সৌরজগত ও গ্রহ উপগ্রহ সম্পর্কে তথ্য ও ছবি | মহাকাশ ও মহাবিশ্বের পিক

সৌরজগত নামক মহাজাগতিক পদ্ধতির এক ক্ষুদ্র অংশজুড়ে আমাদের বসবাস। আমরা বসবাস করছি পৃথিবী নামক গ্রহে। আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবীকে বিশালাকার মনে হলোও মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করলে এটি নিতান্তই ক্ষুদ্র একটি বস্তু। আর মহাবিশ্বে পৃথিবী যদি একটি ক্ষুদ্র বস্তু হয় তাহলে সেখানে মানুষের অবস্থান কোথায় ভোবে দেখেছেন কি!সূর্য ও এর চারপাশে ঘুর্নায়মান গ্রহ সমূহ, উপগ্রহ সমূহ, গ্রহাণু, ধূলিকণা, ধূমকেতু ও গ্যাসের সমন্বয়ে সৌরজগত গঠিত।

সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবী একটি। এই পুরো সৌরজগতটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্ভূক্ত। অসংখ্য নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহের সমন্বয়ে এই গ্যালাক্সি গঠিত হয়। আবার এই গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সির অন্তর্গত সকল পদার্থ, মহাশূন্য ও মহাজাগতিক সকল শক্তির সমন্বয়ে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব। তাহলে বুঝতেই পারছেন মহাবিশ্বের কতো ক্ষুদ্র একটি অংশ পৃথিবীর নামক গ্রহটি। পৃথিবী সহ সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আজকের আয়োজন।

সৌরজগতের গ্রহ সমূহ

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্গত সৌরজগতে পৃথিবী সহ মোট আটটি গ্রহ রয়েছে। সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলো হলো: বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং সর্বশেষ হলো নেপচুন। আগে সৌরজগতের গ্রহ সংখ্যা নয়টি বলে বিবেচিত হতো। তবে ২০০৬ সালে ‘প্লুটো’ নামক গ্রহটিকে বামন গ্রহ বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং একে গ্রহের তালিকা থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্লুটোকে বামন গ্রহ বলে ঘোষণা করেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা।

সৌরজগতের কেন্দ্রস্থল হলো সূর্য। একে সৌরজগতের শক্তি ঘরও বলা হয়। এই সূর্যকে কেন্দ্র করে আটটি গ্রহ তাদের নিজ নিজ অক্ষের ওপর ঘুরছে। আবার গ্রহ গুলোর মধ্যে অনেকেরই এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। উপগ্রহ গুলো নিজ নিজ গ্রহকে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরছে।

সৌরজগতের গ্রহ গুলোর আছে স্বতন্ত্র বৈচিত্র্য, আকার ও আয়তন। এই গ্রহ সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলেরও কোনো শেষ নেই। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন সৌরজগতের গ্রহ, উপগ্র ও মহাজাগতিক অন্যান্য বস্তু নিয়ে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনেক না জানা তথ্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন মহাবিশ্ব সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই সৌরজগতের গ্রহ সমূহ সম্পর্কে জানা অজানা সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১. বুধ গ্রহ

সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা আটটি গ্রহের মধ্যে সবথেকে ছোট গ্রহ বুধ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Mercury। বুধ গ্রহ অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সূর্যের সবথেকে কাছের গ্রহ। সূর্য হতে বুধ গ্রহের দূরত্ব ৪৬,০০০,০০০ থেকে ৭০,০০০,০০০ কিলোমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্ব একেক সময় একেক রকম হয়।

কেননা এই গ্রহের কক্ষপথ তুলনামূলক সবথেকে বেশি উপবৃত্তাকার। সূর্যের সবথেকে কাছের গ্রহ বলে এটি সৌরজগতের সবথেকে উত্তপ্ত বা গরম গ্রহ বলেও পরিচিত। সূর্যের চারদিকে নিজ কক্ষপথে ঘুরে আসতে এই গ্রহের মাত্র ৮৮ দিন সময় লাগে। আপনি শুনলে অবাক হবেন যে বুধ গ্রহের কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদ নেই।
তবে সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে সবথেকে কম তথ্য পাওয়া গেছে বুধ গ্রহ সম্পর্কে।

কেননা এই গ্রহটি সূর্যের সবথেকে কাছে অবস্থিত তাই এর কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা খুব কঠিন বিষয়। ‘মেরিনার ১০’ নামক নভোযান ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সালে বুধ গ্রহের দিকে অগ্রসর হয়ে অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করেছিল। আরেকটি নভোযান ‘মেসেঞ্জার’ ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট চার হাজার বার বুধ গ্রহের দিকে অগ্রসর হয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে। এসকল অভিযান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

আকার ও আয়তনের কথা বলতে গেলে- বুধ গ্রহের মোট ক্ষেত্রফল ৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৯৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীর ক্ষেত্রফলের তুলনায় এটি সাত গুন ছোট। এই গ্রহের মোট আয়তন ৬০৮২,৭২,০৮,৭৪২ ঘন কিলোমিটার।
বুধ গ্রহের ভূপৃষ্ঠের গঠন তুলনামূলক ভাবে বিবেচনা করলে অনেকটা চাঁদের মতো।

এর ভূপৃষ্ঠে অনেক উঁচু নিচু খাদ রয়েছে। এর ভূপৃষ্ঠের শতকরা ৭০ ভাগ ধাতব পদার্থ এবং শতকরা ৩০ ভাগ সিলিকেট জাতীয় পদার্থ নিয়ে গঠিত। এই গ্রহের কেন্দ্রস্থল লৌহ জাতীয় পদার্থ নিয়ে গঠিত এবং কেন্দ্রস্থলটি তুলনামূলক বৃহৎ। এই গ্রহের সমগ্র পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবথেকে বেশি তাপমাত্রা থাকে ‘অর্ধসৌর বিন্দু’ নামক স্থানে। আর সবথেকে কম তাপমাত্রা থাকে ভূপৃষ্ঠের খাদের নিচের দিকে।

বুধ গ্রহের অভিকর্ষ বল খুবই কম। যার ফলে এর কোনো স্থায়ী ও সুগঠিত বায়ুমন্ডল নেই। তবে একেবারে বায়ুমন্ডল নেই বললেও ভুল হবে। খুব পাতলা বায়ুমন্ডল মাঝে মাঝেই গঠিত হয় আবার তা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার পুনরায় গঠিত হয়। এভাবেই বুধ গ্রহের বায়ুমন্ডল অস্থায়ী ভাবে গঠিত হয়ে আবার মিলিয়ে যায়। বুধ গ্রহের অস্থায়ী বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলোর মধ্যে আছে: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম। খুব কম পরিমাণে বাষ্পের উপস্থিতও মাঝে মাঝে থাকে।

২. শুক্র গ্রহের পরিচিতি ও ছবি

পৃথিবী থেকে সকালে ও সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে জ্বলতে থাকা যে উজ্জ্বল বস্তুটিকে আমরা আমরা দেখতে পাই বাংলায় তাকে শুকতারা বলে। এটি আসলে শুক্র গ্রহ যা পৃথিবীর সবথেকে কাছের গ্রহ। শুক্র গ্রহ সূর্যের কাছ থেকে দূরত্বের দিক থেকে দ্বিতীয় নিকটবর্তী গ্রহ।

সাধারণত সৌরজগতের সবগুলো গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার কিন্তু শুক্র গ্রহ এই দিক থেকে ব্যতিক্রম। এই গ্রহের কক্ষপথ গোলাকার তাই সূর্য থেকে এর দূরত্ব সব সময়ই প্রায় সমান। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১০ কোটি ৮২ লক্ষ কিলোমিটার। এই গ্রহটির সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ২২৫ দিন। শুক্র গ্রহেরও নিজস্ব কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদ নেই।

শুক্র গ্রহে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নভোযান পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটি সফল ভাবে অভিযান সম্পন্ন করতে পেরেছে আবার কোনোটি ব্যর্থ হয়েছে। সর্বপ্রথম যে নভোযানটি সফলভাবে শুক্র গ্রহকে অতিক্রম করতে পেরেছে তা হলো ‘মেরিনার -২ ‘। নাসা কর্তৃক প্রেরিত এই নভোযানটি ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে প্রথমবারের মতো শুক্র গ্রহকে অতিক্রম করে।

পরবর্তীতে মেরিনার -৫ সহ নাসা আরও বেশ কয়েকটি নভোযান শুক্র গ্রহের উদ্যেশ্যে সফলভাবে প্রেরণ করতে পেরেছে। এছাড়াও ভেনিরা, ম্যাজেলান, ভেগা, ভেনাস এক্সপ্রেস এবং আকাতসুকি সহ আরও কয়েকটি নভোযান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুক্র গ্রহে সফলভাবে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে শুক্র গ্রহের ভূপৃষ্ঠ, এর গঠন, বায়ুমন্ডল সহ অজানা অনেক রহস্যময় তথ্য উঠে এসেছে।

শুক্র গ্রহের ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তন ৪৬০,২৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি পৃথিবীর থেকে কিছুটা ছোট। শুক্র গ্রহের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনেকটা পৃথিবীর বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। তাই শুক্র গ্রহকে পৃথিবী গ্রহের ‘বোন গ্রহ’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে এর গ্রহের পৃষ্ঠভাগ পৃথিবীর মতো শীতল নয়। এর ভূপৃষ্ঠ মূলত কঠিন শীলা দিয়ে গঠিত আর এই শক্ত শীলা যুক্ত স্তরটি সব সময়ই উত্তপ্ত থাকে। শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা এতোটাই বেশি যে এখানে সীসা রাখলেও গলে যাবে। অত্যন্ত শুষ্ক ও গরম ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ স্থানেই অসংখ্য খাদ রয়েছে। আর গ্রহটির কেন্দ্রভাগ মূলত নিকেল ও লোহা দিয়ে গঠিত।

শুক্র গ্রহ অত্যন্ত ভারী একটি বায়ুমন্ডল দিয়ে আচ্ছাদিত। বায়ুমণ্ডলের পুরোটা জুড়েই রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। তাছাড়া সামান্য পরিমানে অক্সিজেনের অস্তিত্বও লক্ষ করা যায়। আরও আছে খুবই অল্প পরিমানে নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া। শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডল অত্যন্ত উত্তপ্ত। এই গ্রহে এই পর্যন্ত কোনো নভোযান খুব বেশি সময় টিকতে পারেনি। এর একমাত্র কারণ উত্তপ্ত বায়ুমন্ডল। এই উত্তপ্ত বায়ুমন্ডলে আচ্ছাদিত গ্রহে সর্বোচ্চ দু’ঘন্টা পর্যন্ত কোনো নভোযান টিকতে পেরেছিল।

৩. পৃথিবী – গ্রহ উপগ্রহ পরিচিতি

সূর্য থেকে তৃতীয় নিকটবর্তী গ্রহে আমরা বসবাস করছি যার নাম পৃথিবী। সৌরজগতে শুক্র ও মঙ্গল গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে পৃথিবীর অবস্থান। পৃথিবী সৌরজগতের এমন একটি জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশিও নয় আবার একদম কমও নয়।

তাইতো একমাত্র এই গ্রহে মানুষ সহ অন্যান্য জীবের বসবাস উপযোগী পরিবেশ রয়েছে৷ সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব হিসেব করলে দাঁড়ায় ১৪,৯৫,০০,০০০ কিলোমিটার। পৃথিবী এই দূরত্বে অবস্থান নিয়ে সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ অক্ষের ওপর প্রতিনিয়ত ঘুরছে। সূর্যের চারদিকে পুরোটা পথ একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫.২৫৬ দিন। পৃথিবীর একটি নিজস্ব প্রাকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদ রয়েছে।

এই চাঁদ আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। এছাড়াও পৃথিবীর চারপাশে অসংখ্য নতুন পুরাতন, প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কৃত্রিম উপগ্রহ ঘুরছে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী জানা যায় ৪৫৪ কোটি বছর আগে সৌরজগতে পৃথিবী নামক গ্রহটি সৃষ্টি হয়েছিল। পৃথিবীতে পানির প্রাচুর্য ও অন্যান্য বায়ুমন্ডলীয় বৈশিষ্ট্যের কারনে এখানে জীবের বেঁচে থাকার সকল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রহে অবস্থিত খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য জৈব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জীব তার জীবনধারণের সকল অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে নিয়েছে।


পৃথিবীর উপরিভাগের মোট ক্ষেত্রফল হিসেব করলে দাঁড়ায় ৫১০,০৭২,০০০ বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীর উপরিভাগকে ভূত্বক বলে অভিহিত করা হয়। এই উপরিভাগ শীলা, মাটি ও পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। ভূত্বকের শতকরা ৭১ ভাগ পানি দিয়ে আচ্ছাদিত আর বাকি ২৯ ভাগ কঠিন পদার্থ বা স্থলভূমি দিয়ে আচ্ছাদিত। পানি দ্বারা আচ্ছাদিত অংশের বেশিরভাগই সমুদ্র অঞ্চল আর খুব সামান্য পরিমানে মিঠা পানির উৎস রয়েছে।

পৃথিবীর মোট জলভাগের শতকরা ৯৬.৫ ভাগ সমুদ্র অঞ্চল। এই ভূত্বক বাদেও পৃথিবীর অভ্যন্তরে আরও দুইটি স্তর রয়েছে। একটি হলো গুরুমণ্ডল এবং আরেকটি কেন্দ্রমণ্ডল। পৃথিবীর অভ্যন্তরের সবথেকে পাতলা স্তর হলো ভূত্বক। এই স্তরটির গভীরতার গড় হিসেবে করলে দাঁড়ায় ৩০ কিলোমিটার। ভূত্বকের পর থেকে কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যবর্তী অংশটি গুরুমণ্ডল। এই অংশের গড় গভীরতা প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার। গুরুমণ্ডলের পর থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ হলো কেন্দ্রমণ্ডল।

পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে থাকা গ্যাস ও জলীয় বাষ্পের সমন্বয়ে যে স্তরটি গঠিত হয়েছে তাকে বায়ুমন্ডল বলে। কার্বন ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা সহ বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের সমন্বয়ে এই স্তরটি গঠিত। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি দ্বারা ধরে রাখা এই স্তরটি পৃথিবীকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে।

পৃথিবী থেকে যতো উপরের দিকে ওঠা যাবে ততো এই বায়ুমন্ডলের ঘনত্ব পাতলা হতে দেখা যাবে। এদিক থেকে বিবেচনা করে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকে মোট পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ট্রপোমণ্ডল, স্ট্র্যাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল, তাপমণ্ডল এবং এক্সোমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের এই স্তরগুলো ধারাবাহিক ভাবে উপরের দিকে উঠে গেছে।

৪. মঙ্গল গ্রহের কথা ও ছবি

মঙ্গল গ্রহের ছবি

সূ্র্য হতে নৈকট্যের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মঙ্গল। পৃথিবীর পরেই সৌরজগতে মঙ্গল গ্রহের অবস্থান। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন করার সম্ভাব্য সুযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে এখনও কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।

সূর্য থেকে ২২৭,৯৩৯,১০০ কিলোমিটার দূরত্বে মঙ্গল গ্রহের অবস্থান। এটি একটি গড় হিসাব। কক্ষ পথের অবস্থানের ভিত্তিতে কখনও এটি সূর্যের আরও কাছে চলে যায় আবার কখনও দূরে চলে যায়। এভাবে সূর্যের চারদিকের পুরো পথটি একবার অতিক্রম করে আসতে মঙ্গল গ্রহের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। এই গ্রহের দুটি প্রকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদ আছে যার কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি নেই। একটির নাম হলো ফোবোস ও আরেকটি হলো ডিমোস।

মঙ্গল গ্রহে এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ অভিযানই পুরোপুরি সফল হতে পারে নি। আবার সফল হওয়া অভিযান গুলোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে যে, মঙ্গল গ্রহে অবতরণের পরপরই নভোযান গুলোর বিভিন্ন অংশ বিকল হতে শুরু করেছে।

তবুও এর মধ্যে সর্বপ্রথম সফল অভিযান হিসেবে ধরা হয় ১৯৭১ সালের ‘মঙ্গল ৩’ এর অভিযানকে। এর পরে আরও বেশ কয়েকটি অভিযান সফল হয়েছে। মঙ্গল ৩ এর পরে মঙ্ল গ্রহে সফল অভিযান চালানো নভোযান গুলো হলো: ভাইকিং ১, ভাইকিং ২, মার্স পাথফাইন্ডার, সোজার্নার রোভার, স্পিরিট অ্যান্ড অপরচুনিটি রোভারস, ফিনিক্স ল্যান্ডার, কিউরিসিটি রোভার, ইনসাইট ল্যান্ডার, তিয়ানওয়েন -১ ল্যান্ডার, ঝুরং রোভার এবং পারসিভিয়ারেন্স রোভার।

এসকল অভিযানের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানিরা মঙ্গল গ্রহের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য, বায়ুমন্ডলীয় বৈশিষ্ট্য সহ বিভিন্ন অজানা তথ্য বের করে আনতে পেরেছে। আর এটাও ধারনা করা হচ্ছে যে মঙ্গল গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।

আয়তনের দিক থেকে মঙ্গল গ্রহ সৌরজগতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ। বিজ্ঞানীদের বিস্তর গবেষণার ফলস্বরূপ জানা গেছে যে মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তন ১৪৪,৭৯৮,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগের গঠনে অনেক উঁচু নিচু নদী নালা, খালবিল ও হ্রদের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

কিন্তু এখানে কোনো পানির অস্তিত্ব নেই। কোথাও কোথাও জমাট বাঁধা বরফের উপস্থিতি আছে বলে বিজ্ঞানিরা ধারনা করেন। উপরিভাগের বেশিরভাগ স্থানেই ফেরিক অক্সাইডের উচ্চ মাত্রা রয়েছে। যার ফলে আপাতদৃষ্টিতে গ্রহটিকে লাল বর্ণের দেখা যায়। তাই অনেকেই একে ‘লাল গ্রহ’ বলে অভিহিত করে।

মঙ্গলের খুব পাতলা একটি বায়ুমন্ডল রয়েছে যার পুরোটাই কার্বন ডাই-অক্সাইডে ভর্তি। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের থেকে দুই গুন বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড রয়েছে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডলে। এছাড়া খুবই সামান্য পরিমানে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি আছে বলে বিজ্ঞানিরা ধারনা করেন। ভূমির চালচে রঙের প্রতিফলন ঘটে বায়ুমন্ডলের রঙও কিছুটা চাল রঙের দেখা যায়।

৫. বৃহস্পতি

সূর্যের সাথে নৈকট্যের দিক থেকে সৌরজগতে বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান পঞ্চম। বৃহস্পতি গ্রহকে ইংরেজি জুপিটার বলে ডাকা হয়। সূর্য থেকে বৃহস্পতি বা জুপিটার গ্রহ ৭৭,৮০,০০,০০০ কিলোমিটার (গড় হিসাব) দূরে অবস্থিত। পৃথিবীর সময়কালের হিসেবে অনুযায়ী বৃহস্পতি গ্রহ সূর্যকে ১২ বছরে একবার প্রদক্ষিণ করতে পারে (পৃথিবীর বাৎসরিক সময় অনুযায়ী). জোভিয়ান গ্রহ নামেও এই গ্রহটি বেশ জনপ্রিয়।

যতোই দিন যাচ্ছে ততোই বৃহস্পতি গ্রহের নতুন নতুন প্রাকৃতিক উপগ্রহ আবিষ্কার হচ্ছে। সর্বশেষ গবেষণা মতে বৃহস্পতি গ্রহের মোট ৯৫ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। আইয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমেড এবং ক্যালিস্টো নামক এই চারটি উপগ্রহ সবথেকে বড় এবং প্রধান উপগ্রহ বলে বিবেচিত হয়।

বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে রহস্যময় তথ্য উদঘাটন করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহাকাশযান প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতি গ্রহে পাঠানো সফল মহাকাশযানের মধ্যে আছে পাইওনিয়ার এবং ভয়েজার প্রোগ্রামের মহাকাশযান, গ্যালিলিও অরবিটার এবং নিউ হরাইজন্‌স। বর্তমানে বৃহস্পতি গ্রহের বিভিন্ন উপগ্রহে নভোযান প্রেরনের পরিকল্পনা চলছে।

সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে সবথেকে বড় হলো বৃহস্পতি গ্রহ। এই গ্রহের পৃষ্ঠভাগের মোট আয়তন ৬১,৪১৯,০০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। বৃহস্পতি গ্রহ মূলত অসংখ্য গ্যাসীয় উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। তাই এর কঠিন পদার্থ দ্বারা গঠিত অংশ নেই বলে অনেকেই ধারনা করে থাকেন।

আবার কেউ কেউ বলেন এর কেন্দ্রে ভারী মৌল দ্বারা গঠিত অংশের উপস্থিতি থাকতেও পারে। মূলত হাইড্রোজেন এবং খুবই অল্প পরিমাণ হিলিয়ামের সমন্বয়ে বৃহস্পতি গ্রহের উপরিভাগ গঠিত। এই গ্রহের পরিবেশ সাধারণ গাঢ় মেঘে ঢাকা থাকে বেশিরভাগ সময়েই।

তাছাড়া ঝড়, বাতাস ও বিরূপ পরিবেশ এখানকার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতি গ্রহের বলয় আবিষ্কৃত হয়। এই বলয়টি আবিষ্কমত হয় ‘ভয়েজার ১’ এর হাত ধরে৷ তবে বৃহস্পতি গ্রহের বলয়টি সব সময় খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এটি ধূলিকণা দিয়ে গঠিত খুব হালকা একটি বলয়।

৬. শনি গ্রহ

শনি গ্রহের পিক

সূর্য ও শনি গ্রহের দূরত্ব বিবেচনা করলে এটি সূর্যের ষষ্ঠ নিকটবর্তী গ্রহ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ স্যাটার্ন। শনি গ্রহের বিশেষত্ব হলো এর স্পষ্ট একটি বলয় রয়েছে যা অন্যান্য গ্রহ থেকে একে আলাদা রূপ প্রদান করে। সূর্য এবং শনি গ্রহের মধ্যে গড়ে ১৪৩ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। নিজ কক্ষপথ অনুসরণ করে এই গ্রহ ২৯.৫ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পারে। পৃথিবীর হিসেব অনুযায়ী ১০,৭৫৬ দিন।

বৃহস্পতি গ্রহের মতো এই গ্রহে ধারাবাহিক ভাবে নতুন নতুন প্রাকৃতিক উপগ্রহ আবিষ্কার হচ্ছে। সর্বশেষ হিসেব মতে শনি গ্রহে মোট ১৪৫ টি উপগ্রহের সন্ধান এই পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ২৯ টি উপগ্রহকে প্রধান বলে বিবেচনা করা হয়।

এই পর্যন্ত শনি গ্রহে মোট চারটি অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সর্বপ্রথম সফল মহাকাশযানটি ছিল ‘পাইওনিয়ার ১১’। এই মহাকাশযানটি ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শনি গ্রহ সম্পর্কে সবথেকে স্পষ্ট ধারনা প্রদান করতে সক্ষম হয়।

এর পরে ভয়েজার ১, ভয়েজার ২ এবং ক্যাসিনি এই তিনটি মহাকাশযান সফলভাবে শনি গ্রহ থেকে তথ্য প্রদান করতে সক্ষম হয়। এসকল অভিযানের মাধ্যমে শনি গ্রহের উপগ্রহ সম্পর্কে, এর বলয় সম্পর্কে ও গাঠনিক বৈশিষ্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। এখনও শনি গ্রহের রহস্যময় তথ্য উদঘাটনের জন্য নাসা অভিযান পরিক্লপনা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

শনি গ্রহ মূলত গ্যাসীয় পদার্থ দিয়ে গঠিত তবে এর মধ্যাঞ্চলে কিছুটা কঠিন পদার্থের উপস্থিতি আছে বলে ধারনা করা হয়। শনি গ্রহের ভর পৃথিবীর ভরের থেকে প্রায় ৯৫ গুন বেশি। শনি গ্রহের গড় ব্যাসার্ধ হিসেব করলে দেখা যায় ৫৮,২৩২ কিলোমিটার। এটি সৌরজগতের সবথেকে চ্যাপ্টা আকৃতি গ্রহ। শনি গ্রহে উপস্থিত গ্যাসীয় পদার্থ গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমানে আছে হাইড্রোজেন।

মূলত শনি গ্রহ গঠনের মূল উপাদানই হাইড্রোজেন গ্যাস। আরও আছে হিলিয়াম, মিথেন সহ অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থ। ১৬১০ সালে শনি গ্রহের বলয় আবিষ্কৃত হয়। এই বলয়টি গ্রহের চারপাশে আংটার মতো ঘিরে রয়েছে। এটি মূলত বরফের কণা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। বরফের কণার সাথে ধূলিকণা ও ছোট ছোট হালকা পাথরখন্ড নিয়ে এই বলয়ের অস্তিত্ব।

শনি গ্রহের বায়ুমন্ডলও মেঘে আচ্ছাদিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। তবে এই মেঘ কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। কয়েকটি স্তরে বিভক্ত মেঘপুঞ্জের সবথেকে উপারের অংশে আছে অ্যামোনিয়ার বরফ। তার পরের অংশ পুরোপুরি তুষার দ্বারা আবৃত্ত এবং সবশেষে আছে হাইড্রোজেন ও সালফার এর উপস্থিতি।

৭. ইউরেনাস

সূর্য হতে দূরত্বের দিক থেকে সৌরজগতে ইউরেনাস গ্রহের অবস্থান দ্বিতীয়। অনেক বিজ্ঞানী এই গ্রহ সম্পর্কে অবগত থাকলেও সর্বপ্রথম এটিকে গ্রহ হিসেবে আবিষ্কার করেন উইলিয়াম হার্শেল। ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কার ঘটে ১৭৮১ সালের ১৩ মার্চ। ইউরেনাস গ্রহের কক্ষপথের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে সূর্য ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্বে বৈচিত্র্য রয়েছে। সূর্য ও ইউরেনাস গ্রহের সর্বনিম্ন মধ্যবর্তী দূরত্ব ২,৭৪,৮৯,৩৮,৪৬১ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩,০০,৪৪,১৯,৭০৪ কিলোমিটার।

নিজ কক্ষপথ ধরে ইউরেনাস গ্রহ পৃথিবীর হিসেব মতে ৮৪ বছরে একবার সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসতে পারে। ইউরেনাস গ্রহের চারপাশে অনেকগুলো সূক্ষ্ম বলয় দেখতে পাওয়া যায়। ইউরেনাস গ্রহের এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রকৃতিক উপগ্রহের সংখ্যা ২৭ টি। এবং প্রতিটি উপগ্রহেরই আলাদা আলাদা নাম রয়েছে।

সূর্য থেকে এর দূরত্ব তুলনামূলক অনেক বেশি, সেই হিসেবে পৃথিবী থেকেও ইউরেনাস গ্রহের দূরত্ব অনেক। তাই বিজ্ঞানীরা এই গ্রহে অভিযান চালানোর সুযোগ খুব বেশি পায়নি এবং এই দিকে তেমন মনোযোগও দেয়নি। ইউরেনাস গ্রহে একবার সফল অভিযান চালানো হয়েছিল।

১৯৮৬ প্রথম বারের মতো ‘ভয়েজার ২’ ইউরেনাসের সবথেকে কাছাকাছি যেতে পেরেছিল। সৌরজগতে ভ্রমনের সময় এই নভোযানটি ইউরেনাসকে অতিক্রম করেছিল। তখন এই গ্রহ সম্পর্কে অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে।

সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ গুলোর মধ্যে ইউরেনাস এর অবস্থান তৃতীয়। এই গ্রহটির তাপমাত্রা এতোটাই কম যে পুরো গ্রহটি একটি বরফ পিন্ডে পরিনত হয়েছে। ঠিক এই কারনেই ইউরেনাস গ্রহকে বরফদানব বলে অভিহিত করা হয়। কঠিন পদার্থের সংমিশ্রণে এর একটি ছোট কেন্দ্র রয়েছে।

এর কেন্দ্র গঠিত হয়েছে সিলিকেট, লোহা ও নিকেলের সমন্বয়ে। ইউরেনাস গ্রহের কেন্দ্র ২২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। তার ওপরের অংশে রয়েছে সুবিশাল বরফের আবরন। এই বরফে আবৃত্ত স্তরের বিস্তৃতি ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর উপরিভাগে ৫,০০০ কিলোমিটার বিস্তৃতি নিয়ে পৃষ্ঠতল গঠিত। ইউরেনাস গ্রহের উপরিভাগে আছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেনের ও অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদানের সমন্বয়।

ইউরেনাস গ্রহের উপগ্রহ গুলোর ছোট ছোট টুকরোর সংমিশ্রণে বেশ কিছু সংখ্যক বলয় তৈরি হয়েছে। এই বলয় গুলোর বৈচিত্র্যময় বর্ণ রয়েছে। যেমন: ধূসর, লাল, নীল ইত্যাদি। আর পুরো গ্রহটিকে আপাতদৃষ্টিতে নীল বর্ণের দেখা যায়। গ্রহটির বায়ুমন্ডল গঠনের মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও খুব সামান্য পরিমানে মিথেন।

৮. নেপচুন

সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে যে গ্রহটির অবস্থান তা হলো নেপচুন। এটি পৃথিবী থেকেও সবথেকে দূরবর্তী গ্রহ। নেপচুন গ্রহটি আবিষ্কৃত হয় ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর।

জোহান গেল আরবেইন লে ভেরিয়ার এর হাত ধরে এই গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়। একটি বিশালাকৃতির বরফের পিন্ড বলে একে আইসি জায়ান্ট বলেও অভিহিত করা হয়। নিজ অক্ষের ওপর ভিত্তি করে গ্রহটির সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ১৬৪.৮ বছর (পৃথিবীর বাৎসরিক সময় হিসেবে)। এই পর্যন্ত নেপচুন গ্রহের মোট ১৪ টি উপগ্রহ সম্পর্কে জানা গেছে।

১৯৮৯ সালে ২৫ আগষ্ট ‘ভয়েজার -২’ নেপচুন গ্রহের সবথেকে কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছিল। এটিই ছিল ইউরেনাস গ্রহে সর্বপ্রথম ও এই পর্যন্ত একমাত্র সফল অভিযান। এসময় ‘ভয়েজার -২’ নেপচুন গ্রহের বেশ কিছু স্পষ্ট ছবি পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এই ছবির ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা নেপচুন সম্পর্কে নানান অজানা তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করেছেন।

পরিধির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে নেপচুন সৌরজগতের চতুর্থ বৃহত্তম গ্রহ। তবে ভরের দিক থেকে বিবেচনা করলে এর অবস্থান তৃতীয়। ভয়েজার -২ কর্তৃক প্রেরিত তথ্য অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন এর গড় ব্যাসার্ধ ২৪,৬২২ কিলোমিটার। সূর্যের কাছ থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত বলে এটি সৌরজগতের সবথেকে ঠান্ডা অর্থাৎ কম তাপমাত্রা বিশিষ্ট গ্রহ।

এই গ্রহের আনুমানিক গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২০১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গ্রহের গঠগত উপাদানের মূলে রয়েছে জলীয় উপাদান, তরল পদার্থ ও অ্যামোনিয়া। ভয়েজার -২ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে জানা যায় এই গ্রহেরও খুব হালকা কয়েকটি বলয় রয়েছে।

তবে এগুলো শনির বলয়ের মতো এতো পষ্ট ও শক্তিশালী নয়।এই বলয় গুলো তৈরি হয়েছে মূলত উপগ্রহের খণ্ডাংশ ও ধূলিকণার সমন্বয়ে। এখানে জীবের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ একদমই নেই কেননা পুরো গ্রহটিই গ্যাসীয় পদার্থে ঠাসা।

আশাকরি সৌরজগতের গ্রহ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন৷ বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত সৌরজগত ও মহাবিশ্বের অজানা রহস্য আবিষ্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানব জাতির সামনে তুলে আনছেন বিষ্ময়কর সকল বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। এভাবেই যতো দিন যাবে ততো বেশি মহাজাগতিক রহস্য আমাদের সামনে উদঘাটিত হতে থাকবে।

Scroll to Top