সরিষা, বরই, কালোজিরা ও সুন্দরবনের মধু সহ অন্যান্য মধুর দাম, উপকারিতা ও খাঁটি মধু চেনার উপায়

মধু একটি ভেষজ গুনে ভরপুর মিষ্টি স্বাদযুক্ত আঠালো ঘনত্বের প্রাকৃতিক রাসায়নিক তরল। মধুতে আছে উচ্চমাত্রার ভেষজ গুনগান। প্রাচীন কাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে মধু বিশেষ ভাবে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। এছাড়া প্রাকৃতিক রূপচর্চায়ও মধুর ব্যবহারের অনুশীলন করা হচ্ছে আদিকাল থেকে।

মধুর উচ্চ মিষ্ট স্বাদ ও সুগন্ধের জন্যও এটি বেশ সমাদৃত। চিনির বদলে স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন যে কোনো খাবারে মধুর ব্যবহার করে। কেননা এই উপাদানটি শরীরের কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন করে না করেই মিষ্টি খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয়।

মধুতে আছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ভিটামিন, এনজাইম সহ প্রায় ৪৫ টি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। মধুতে উচ্চ ঘনত্বের চিনির উপস্থিতির ফলে মধু কখনো নষ্ট হয় না। কারণ চিনির উচ্চ মাত্রা প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে যার কারনে কখনোই মধু নষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকে না।

মধুর মধ্যেও আছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। বিভিন্ন ফুলের নির্জাস অনুযায়ী মধুর স্বাদ, রং ও গুনগুনের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে পাওয়া যায় বিভিন্ন ফুলের মধু।

চলুন পরিচিত হওয়া যাক বিভিন্ন ধরনের মধুর সাথে এবং জেনে নেয়া যাক প্রত্যেক প্রকার মধুর গুনগুন সম্পর্কে।

১. কালোজিরা মধু

মধুর মধ্যে সবথেকে বেশি ঔষধি গুণসম্পন্ন মধু হলো কালোজিরা মধু। অন্যান্য মধুর থেকে এই মধুতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং এটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। কালোজিরা চাষের জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে মৌমাছির বিচরণ ঘটিয়ে কালোজিরা মধু চাষ করা হয়।

আসল কালোজিরা মধু চেনার উপায়

আসল কালোজিরা মধু চেনার সবথেকে ভালো উপায় হলো এর স্বাদ পরিক্ষা। এই মধু খেতে হুবহু খেজুর গুড়ের মতো। তবে গন্ধ খেজুর গুড়ের মতো না, এর একটা আলাদা মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। কালোজিরা মধু দেখতেও খেজুর গুড়ের মতো কিছুটা কালচে বর্ণের। এসকল বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষ ভাবে খেয়াল করলে কালোজিরা মধু চিনতে পারবেন।


আরো জানুনঃ খাবারে ফরমালিন এর ভয়াবহতা

কালোজিরা মধুর উপকারিতা

উপকারিতার দিক থেকে বিবেচনা করলে কালোজিরা মধুই সবথেকে সেরা। কালোজিরা মধু মানবদেহের যে কোনো রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি গলা ব্যথা, কাশি, হাঁপানি এবং ঠাণ্ডা জনিত রোগের জন্য বেশ উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত কালোজিরা মধু সেবন করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের দুর্বলতা হ্রাস পায়। কালোজিরা মধুতে থাকা এন্টি এক্সিডেন্ট ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

কালোজিরা মধুর দাম

মধু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা দোকান ভেদে ১ কেজি কালোজিরা মধুর দাম ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে।

২. সরিষা ফুলের মধু

বাংলাদেশে বিক্রিত প্রাকৃতিক মধুর মধ্যে বর্তমানে সরিষা ফুলের মধু সবচেয়ে বেশি বিক্রিত। সরিষা ক্ষেতের আসেপাশে কৃত্রিম মৌবাক্স স্থাপন করে এই মধু সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যখন কৃষকের সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন এই কৃত্রিম মৌবাক্স গুলো স্থাপন করা হয়। সরিষা ফুলের মধুতে শুধুমাত্র সরিষা ফুলের নির্জাসই থাকে, অন্য কোনো ফুলের মধু মিশ্রিত হলে সেটা খাটি সরিষা ফুলের মধু বলে বিবেচিত হবে না।

  • বিভিন্ন রকমের মধু কিনতে ঘুরে আসুন আমাদের অনলাইন শপঃ দেশীয় বাজার

খাঁটি সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায়

খাঁটি সরিষা ফুলের মধুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই মধু কিছুদিনের মধ্যে জমাট বেধে যাবে। জমাট বাধা মধু সাদা ক্রিমের মতো রূপ ধারণ করবে। সরিষা ফুলের মধুর স্বাদ ও গন্ধে সরিষার একটা ন্যাচারাল প্রভাব থাকবে৷ সদ্য সংগ্রহ করা মধু বেশি পাতলা হলে তার ওপরে ফেনা দেখা যাবে, তবে ঘন হলেও হালকা ফেনা দেখতে পাওয়া যায়। এসকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলে বুঝতে হবে মধু খাঁটি অন্যথায় এটি পুরোপুরি খাঁটি সরিষা ফুলের মধু বলে বিবেচিত হবে না।

সরিষা ফুলের মধুর উপকারিতা

সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি আছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সরিষা ফুলের সাদা মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ সহ অল্প পরিমানে সুক্রোজ ও মালটোজও থাকে। এসকল পুষ্টি উপাদান আমাদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত মিষ্টি হলেও এটি পুরোপুরি কোলেস্টেরল মুক্ত। ফলে অনেকেই চিনির পরিবর্তে খাদ্য তালিকায় মধুকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এই মধু শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে দেহকে কর্মক্ষম করে তোলে, হার্ট শক্তিশালী রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমে সহায়তা করে ও অনিদ্রা দূর করে। তাই প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে এক চামচ করে সরিষা ফুলের মধুত খাওয়া সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকারি বলা চলে।

সরিষা ফুলের মধুর দাম

স্থান ও সময় ভেদে সরিষা ফুলের ১ কেজি মধুর দাম ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
মধুর মধ্যে সবচেয়ে কম দামে সরিষা ফুলের মধুই পাওয়া যায়। 

৩. সুন্দর বনের চাকভাঙা মধু

বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা মধু মূলত মাল্টি ফ্লোরাল মধু। কোনো একটি নির্দিষ্ট ফুলের মধু দিয়ে সুন্দরবনের মধুর চাক তৈরি হয় না। খলিশা, গড়ান, কেওড়া ও বাইন সহ বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে চাক তৈরি করে। তবে খলিশা এবং গরান মৌসুমের ফুলের মধু সবচেয়ে সুস্বাদু।
যারা সুন্দরবন থেকে চাক কেটে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে তাদের বলা হয় মৌয়াল। মৌয়ালরা নৌকা নিয়ে গভীর বনে প্রবেশ করে মধুর চাক খুঁজে বের করে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।

সুন্দরবনের খাঁটি চাকভাঙা মধু চেনার উপায়

সুন্দর বনের মধুর স্বাদ কিছুটা টক টক ভাব মিশ্রিত মিষ্টি এবং কড়া স্বাদযুক্ত। প্রকৃতিগত কারনে সুন্দরবনের মধু তুলনামূলক পাতলা হবে এবং বোতল ঝাঁকি দিলে ফেনা তৈরি হবে। সবথেকে বড় কথা হলো সুন্দরবনের মধু কখনও জমাট বাঁধবে না। তবে চাক কাটা মধু বেশিদিন জমানো থাকলে এর উপরিভাগে একটি হলুদ রঙের আস্তরণ পড়ে যাকে গাদ জমা বলে। এই সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলে বুঝতে হবে আপনার হাতে থাকা মধুটি খাঁটি সুন্দরবনের চাক কাটা মধু।

সুন্দরবনের চাক কাটা মধুর উপকারিতা

বিভিন্ন ফুলের মধুর সংমিশ্রণে তৈরি সুন্দরবনের মধুতে প্রচুর পরিমানে এন্টি এক্সিডেন্ট আছে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া এই মধু বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে কাজ করে। যেমন : কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা, অনিদ্রা, পাকস্থলীর সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের যাবতীয় রোগ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। সুন্দরবনের খাঁটি মধুতে জিরো মাত্রায় ফ্যাট আছে তাই এটি স্বাস্থসচেতন মানুষের প্রতিদিনের ডায়েট চার্টে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।

সুন্দরবনের চাকভাঙা মধুর দাম

সরাসরি মৌয়াল দের কাছ থেকে কিনতে পারলে তুলনামূলক কম দামে এই মধু সংগ্রহ করা যায়। বাজারে বিশ্বস্ত যে কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনলে সাধারণত এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হতে পারে।

৪. লিচু ফুলের মধু

বিভিন্ন ধরনের মধুর মধ্যে লিচু ফুলের মধু সবথেকে বেশি সুস্বাদু। সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে যখন লিচু গাছের মুকুল পরিপক্ব হয়ে ফলে পরিনত হওয়ার সময় চলে আসে তখন মৌ চাষিরা চলে যান লিচু বাগান গুলোতে। বাগানে মৌ বক্স স্থাপন করে দিলে মৌমাছিরা লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌ বক্সে জমা করতে থাকে। সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। লিচু ফুলের মধুতে অন্য কোনো মধুর সংমিশ্রণ করা হয় না।

খাঁটি লিচু ফুলের মধু চেনার উপায়

লিচু ফুলের মধু চেনার সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে এর স্বচ্ছতা পরিক্ষা করা। এই মধু হালকা হলুদ বর্ণের এবং একদম স্বচ্ছ হয়। স্থান ও সময় ভেদে এর ঘনত্বে তারতম্য হতে পারে। পাতলা ঘনত্বের মধু ঝাঁকি লাগলে ফেনা সৃষ্টি করে৷ শীতকালে লিচু ফুলের মধু হালকা জমাট বাঁধে আবার কোনো কোনো সময় জমাট বেধে সাদা বর্ন ধারণ করে। এই ফুলের স্বাদ ও ঘ্রান অনেকটা লিচুর মতো। তবে বেশি দিনের পুরোনো হলে স্বাদে ও গন্ধে তারতম্য হতে পারে।

লিচু ফুলের মধুর উপকারিতা

লিচু ফুলের মধুতে আছে শর্করা, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ সহ বিভিন্ন খাদ্য উপাদান যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে ও শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঠান্ডা,কফ, কাশি,গলা ব্যাথা ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। লিচু ফুলের মধুতে উপস্থিত ফেনোলিক এসিড, এন্টিওক্সিডেন্ট ও এন্টিএনফ্ল্যেমেটরী উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই মধু রূপচর্চায় সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। ত্বকের যে কোনো সমস্যা যেমন- ব্রন, ফুসকুড়ি, রুক্ষতা, মলিনতা দূর করতে লিচু ফুলের মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

লিচু ফুলের মধুর দাম

সরবরাহকারী ও সংগ্রহের স্থান অনুসারে এক কেজি লিচু ফুলের মধুর দাম ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৫. বরই ফুলের মধু

বরই বাগানে যখন ফুলে ফুলে গাছের শাখা প্রশাখা ভরে ওঠে তখন বাগানের ভেতর মৌ বক্স স্থাপন করে যে মধু পাওয়া যায় সেটাই মূলত বরই ফুলের মধু। সাধারণত অক্টোবর মাসে বরই ফুলের মধু সংগ্রহ করার শুরু হয়। বাংলাদেশের ফরিদপুর ও মাদারিপুর অঞ্চলে সবথেকে বেশি বরই ফুলের মধু উৎপাদন করা হয়। সৌদি আরবে এই বরই ফুলের মধুর খুব চাহিদা রয়েছে। সৌদি আরবে বরই ফুলের মধুকে সিডর হানি নামে অবিহিত করা হয়। বরই ফুলের মধু অসাধারণ স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য বেশ জনপ্রিয়।

খাঁটি বরই ফুলের মধুর চেনার উপায়

আপনার হাতে থাকা মধুটি খাঁটি বরই ফুলের মধু কিনা তা বুঝতে পারবেন এর স্বাদ ও গন্ধ পরিক্ষা করে। খাঁটি বরই ফুলের মধু খেতে অনেকটা পাকা বরই এর মতো এবং পাকা বরইয়ের মতোই সুমিষ্ট এর স্বাদ। বরই ফুলের মধুর রং হালকা হলদেটে বা লাল হতে পারে এবং এর ঘনত্ব খুবই পাতলা হয়। হালকা ঝাঁকি লাগলেই পুরো বোতলে ফেনা জমে যায় ও মধুর ভেতরে বুদবুদ সৃষ্টি হয় এবং তখন এটি পুরোপুরি সাদা বর্ন ধারণ করতে পারে। বরই ফুলের মধু সাধারন তাপমাত্রায় কখনো জমাট বাঁধে না। এইসকল বৈশিষ্টগুলো পরিলক্ষিত হলে বুঝতে পারবেন আপনার সংগ্রহে থাকা মধুটি একদম খাঁটি বরই ফুলের মধু।

বরই ফুলের মধুর উপকারিতা :

বরই ফুলের মধু এর উপকারিতার থেকেও স্বাদ ও সুঘ্রাণ এর জন্য সুপরিচিত। কেননা অন্যান্য ফুলের মধুর থেকে বরই ফুলের মধুর পুষ্টিমূল্য তুলনামূলক কম। তবুও এর কিছু ভেষজ গুন রয়েছে। বরই ফুলের মধু নিয়মিত খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক রূপচর্চাতেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ত্বক ও চুলের ময়েশ্চারাইজিং এর ক্ষেত্রে বরই ফুলের মধুর উপকারিতা ব্যাপক। এতে কোনো ধরনের ফ্যাট না থাকায় অনেকেই চিনির পরিবর্তে বরই ফুলের মধু খাবারে ব্যবহার করে।

বড়ই ফুলের মধুর দাম

বিক্রয়ের স্থান, সময় ও ধরন অনুযায়ী বরই ফুলের ১ কেজি মধুর দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৬. মানুকা মধু

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দামি মধু গুলোর মধ্যে একটি হলো মানুকা মধু। বিশ্বব্যাপী এই মধুর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। অনেকেই মানুকা মধুকে মধুর রাজা বলে অভিহিত করে থাকেন। একমাত্র নিউজিল্যান্ডে বিশ্ব বিখ্যাত এই মধু উৎপাদিত হয়। নিউজিল্যান্ডের বিশেষ এক ধরনের ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদে জন্মানো অসাধারণ সুন্দর ফুলের মধু থেকে এই মধু সংগ্রহ করা হয়। এই মধুর উচ্চ মাত্রার ভেষজ গুনা গুনের জন্য এটি তুলনামূলক দামি ও উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন মধু। বাংলাদেশের কিছু আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান এই মানুকা হানি বাজারজাত করে থাকে। বিভিন্ন ব্রান্ডেড শো রুম অথবা অনলাইন শপে মানুকা হানি পাওয়া যায়।

খাটি মানুকা মধু চেনার উপায়

মানুকা মধু চেনার একমাত্র উপায় হলো UMF ট্রেডমার্ক চেক করে দেখা। মানুকা মধু খুব ভালোভাবে প্যাকেজিং করে, সিল বদ্ধ করে বাজারজাত করা হয়। তাই এটা খেয়ে বা গন্ধ শুঁকে বা অন্য কোনো উপায়ে পরিক্ষা করার উপায় নেই। তবে খাঁটি মানুকা মধুর প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই UMF ট্রেডমার্ক চিহ্ন থাকবে। এটা সরাসরি নিউজিল্যান্ড মানুকা মধু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লেবেল করা থাকে। মানুকা মধু কেনার সময় অবশ্যই লেবেলের গায়ে UMF ট্রেডমার্ক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।

মানুকা মধুর উপকারিতা

মানুকা মধুতে আছে উচ্চ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। নিয়মিত মানুকা মধু সেবনের ফলে পাকস্থলীর যে কোনো সমস্যা দূর হয়। ক্ষত নিরাময়ে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া লিভারের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এটি জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, গলাব্যথা সহ বিভিন্ন রোগের উপশমে বেশ উপকারী।

মানুকা মধুর দাম :
আমদানিকারক ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ভেদে ৫০০ গ্রাম মানুকা মধুর দাম সাত হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৭.ইউক্যালিপটাস মধু

একটু ব্যতিক্রমী স্বাদের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধু হলো ইউক্যালিপটাস মধু। এটি অন্যান্য মধুর মতো খুব সুস্বাদু না হলেও ভেষজ গুনা গুনে ভরপুর। সাধারণত অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় সবথেকে বেশি ইউক্যালিপটাস মধু উৎপাদিত হয় এবং সেখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন দেশেও সল্প পরিসরে এই মধু সংগ্রহ করা হয়। ইউক্যালিপটাস গাছের ফুলের রেনু থেকে সংগৃহীত মধুই ইউক্যালিপটাস মধু হিসেবে পরিচিত।

খাঁটি ইউক্যালিপটাস মধু চেনার উপায়

ইউক্যালিপটাস মধু চেনার সবথেকে ভালো মাধ্যম এর স্বাদ। এটা একটু মেন্থল স্বাদের হয়, অন্যান্য মধুর মতো খুব বেশি মিষ্টতা ও সুগন্ধিযুক্ত হয়না। বলা যায় এক প্রকার ভেষজ স্বাদযুক্ত হবে। ইউক্যালিপটাস মধুর রঙ একটু গাড় লালচে অথবা অ্যাম্বার রঙের হয়। খুব বেশি হালকা রঙের হলে বুঝতে হবে এটা খাটি ইউক্যালিপটাস মধু না। একটি পাত্রে সামান্য মধু নিয়ে পাত্রটি ঘোরালে যদি দেখা যায় মধু সমানভাবে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে তাহলে ধরে নেয়া যায় এটি খাঁটি ইউক্যালিপটাস মধু। অন্যথায় নকল মধু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইউক্যালিপটাস মধুর উপকারিতা

ইউক্যালিপটাস মধু উচ্চ ভেষজ গুনে সমৃদ্ধ এক প্রকার মধু। এতে থাকা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান অসংখ্য রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো ক্ষতস্থানে, পোকামাকড়ের কামড়ালে সেই স্থানে এই মধু লাগালে খুব দ্রুত ক্ষত উপশম হয়। যে কোনো পেটের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় ইউক্যালিপটাস মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আয়ুর্বেদিক কসমেটিকস তৈরিতে ইউক্যালিপটাস মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। এছাড়াও অনিদ্রা রোগের সমাধানে নিয়মিত ইউক্যালিপটাস মধু সেবন করা যেতে পারে।

ইউক্যালিপটাস মধুর দাম :
ইউক্যালিপটাস মধুর ৩০০ গ্রামের জার ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

আমাদের সার্বিক শারিরীক পরিস্থিতিকে ঠিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন কমপক্ষে এক চামচ মধু সেবন করা উচিত। মধু যেমন সুস্বাদু একটি ভেষজ ঠিক তেমনই স্বাস্থ্য উপযোগী। তাইতো বহু বছর ধরে চিকিৎসা শাস্ত্রে এবং আয়ুর্বেদ কসমেটিকস সামগ্রী তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের মধুর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত। যে কোনো ধরনের মধুই নিয়মিত সেবনে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

Scroll to Top