মক্কার দর্শনীয় স্থান সমূহ এর তালিকা এবং ছবি

সৌদি আরবের মক্কা প্রদেশের রাজধানী এবং দেশটির সবথেকে ব্যস্ত ও দর্শনার্থীদের ভীরে জমজমাট শহর মক্কা নগরী। মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে সবথেকে পবিত্রতম শহর মক্কা। পবিত্র কাবা শরিফ মক্কা শহরে অবস্থিত। প্রতি বছর সবমিলিয়ে ১৫ মিলিয়ন এরও বেশি মুসলিম হজ্জ্ব ও ওমরাহ পারল করতে মক্কা নগরীতে এসে ভীড় জমায়।

ইসলামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, স্থাপনা ও প্রাচীন নিদর্শন এই শহরে রয়েছে। প্রাণের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রিয় জন্মভূমিতে আগত লক্ষ লক্ষ হাজীগন এই শহরের দর্শনীয় স্থান সমূহ পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন। বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম ভবন ‘মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার’ এই শহরেই অবস্থিত। হজ্জ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিশেষ কিছু দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি অন্যান্য ট্যুরিস্ট স্পট এবং বিভিন্ন শপিং মল বিশ্বের লক্ষ লক্ষ হাজীদের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।চলুন ঘুরে আসা যাক মক্কার বেশ কয়েকটি বিশ্ব বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

১. মসজিদ আল হারাম

মসজিদ আল হারাম মুসলমান সম্প্রদায়ের সবথেকে পবিত্র জায়গা। মাঝখানে পবিত্র কাবা ঘর এবং চারদিকে আলোর ঝলকানি ও হাজার হাজার মুসুল্লিদের পদচারনা যে কারো মনে পবিত্রতার এক অসাধারণ অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। মসজিদ আল হারাম’কে বড় মসজিদও বলা হয়। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে বড় মসজিদ এর সম্মান দখল করে আছে মসজিদ আল হারাম।

 সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের জীবনের সবথেকে বড় সাধনা হলো জীবনে একবার হলেও মসজিদ আল হারাম স্বচক্ষে দেখা। এই মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলে অজানা এক শান্তি মনের মধ্যে বিরাজ করে, মনের সব পাপ ধুয়ে মুছে নতুন এক সত্বার জন্ম হয়। পবিত্র মক্কা নগরীর সবথেকে ব্যস্ত ও সুন্দরতম জায়গা এই মসজিদ আল হারাম।

২. জাবালে নূর

মক্কা নগরী হলো পাহাড়ের শহর।পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়।মক্কা নগরীতে অবস্থিত খুবই ঐতিহাসিক একটি পাহাড় জাবালে নূর। এটাকে সৌদি আরবের আলোকিত পাহাড়ও বলা হয়। এই পাহাড়ের চূড়াতেই বিখ্যাত ও পবিত্র হেরা গুহা অবস্থিত।

যেখানে বসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ধ্যান করতেন। জাবালে নূর পাহাড়ের উচ্চতা ৬৪২ মিটার। মক্কা নগরীতে হজ্জ করতে আসা হাজার হাজার মুসুল্লি নিজ চোখে একবার পবিত্র এই পাহাড় দেখার জন্য ছুটে চলে যায় পাহাড়ের পাদদেশে। শারিরীক সামর্থ্য থাকলে অনেকেই দুর্গম এই পাহাড় অতিক্রম করে হেরা গুহা দর্শন করে আসে।

৩. মক্কা হল

মক্কা শহরের খুবই আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শপিং কমপ্লেক্স হলো মক্কা হল। বহুতল ভবন বিশিষ্ট এই শপিং মলে বিশ্বের নামি দামি ব্রান্ডের বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায়। পুরো শপিং মলটির ডেকোরেশন এতোটাই চাকচিক্যময় ও সুন্দর যে, কেনাকাটা ছাড়াও দেশ বিদেশের অসংখ্য লোকজন এখানে ঘুরতে আসে।

শুধুমাত্র বিলাসবহুল দোকান গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে হলেও সবাই এসে ভীড় জমায় এই শপিং মলে। তাছাড়া হজ্জ থেকে ফেরার পথে পরিবার পরিজনের জন্য বিভিন্ন উপহার সামগ্রী কিনতে এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও অনেকে এখানে আসেন। সৌদি আরবের মক্কা শহরের আভিজাত্য অনেকটাই ফুটে ওঠে মক্কা হল শপিং কমপ্লেক্স এর মাধ্যমে।

৪. মসজিদে তানিম

পবিত্র কাবা থেকে পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত মসজিদে তানিম মক্কা নগরীর আরও একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। সারাবছরই ওমরাহ করতে আসা মুসুল্লিদের সমাগমে মসজিদটি মুখরিত থাকে। মসজিদে তানিম এর অন্য নাম মসজিদ-ই-আয়েশা। হযরত আয়েশা (রা.) এখান থেকে ওমরাহ পারন করার জন্য ইহরাম বেধেছিলেন। পরবর্তীতে এখানে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে বিধায় মসজিদটির নাম হয় মসজিদ-ই-আয়েশা।

অনেক দূর থেকে এই মসজিদ এর মিনার ও গম্বুজ দেখতে পাওয়া যায়। মসজিদের চারপাশে আছে সুসজ্জিত খেজুর গাছ যা দেখতে সত্যিই অসাধারণ। মসজিদের ভেতরে গোসল, পোশাক পরিবর্তন ও শৌচাগারের সুব্যবস্থা আছে। পবিত্র কাবা ঘর থেকে খুব বেশি দূরে নয় বলে হজ্জে আসা প্রায় সকল মুসুল্লিই এই মসজিদটি পরিদর্শন করতে আসে।

৫. আরাফাত পর্বত

ইসলামের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আরাফাত পর্বত। বিদায় হজ্জের দিন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এই পর্বতের ওপরে বসে ভাষন দিয়েছিলেন। আরাফত পর্বতটি গ্রানাইড দিয়ে গঠিত। আরাপাত পর্বতের উচ্চতা প্রায় ৭০ মি।

আরাফাত পাহাড়

পর্বতটির আশেপাশে যে খোলা যায়গা আছে সেটাই মূলত আরাফার ময়দান। হাজীদের বাধ্যতামূলক ভাবে এই আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়।যদি কোনো কারণে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে না পারেন তাহলে পুরো হজ্জ কোনো কাজে আসবে না। আর আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের সময় আরাফাত পর্বত যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। তাইতো আরাফাত পর্বত মক্কা শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।

৬. আল কিসওয়া ফ্যাক্টরি

পবিত্র মক্কা নগরীর অন্যতম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান আল কিসওয়া ফ্যাক্টরি। এখানে প্রতিবছর একটি করে কিসওয়া প্রস্তুত করা হয়। বাদশা আবদুল আজিজের নির্দেশে ৭৫ বছর আগে এই কিসওয়া ফ্যাক্টরি টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। হজ্জ করতে যাওয়া মুসুল্লিরা খুব আগ্রহের সাথে কিসওয়া ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করতে যায় এবং তাদের খুব কাছ থেকে কিসওয়া তৈরির প্রনালী দেখার সৌভাগ্য হয়। কখনও পবিত্র মক্কা নগরীতে যাওয়ার সৌভাগ্য হলে অবশ্যই কিসওয়া ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে আসা উচিত।

৭. মক্কা অকশোন

মক্কা অকশোন সৌদি আরবের মক্কা নগরীর একটি চমৎকার মার্কেট। মূল্যবান সব ধরনের ধাতু যেমন সোনা, রূপা সহ অন্যান্য মেটালিক গহনা ও অন্যান্য জিনিসপত্র এই মার্কেটে পাওয়া যায়। তবে এই মার্কেটটি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ এখানকার বিক্রিত পণ্য নয়, বরং এই মার্কেটের চমৎকার স্থাপত্যশৈলি এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ।

মার্কেটের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে একদমই আলাদা ধাচের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে। যে কেউ প্রথম দেখাতেই মার্কেটটির আউট লুক পছন্দ করবে। সৌদি আরবে আসা বিভিন্ন দেশের লোকজন সাধারণত সোনার গহনা কিনতে এবং এই মার্কেটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন।

৮. হেরা গুহা

মক্কা শহরের সবথেকে ঐতিহাসিক স্থান হেরা গুহা। হেরা গুহায় মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ধ্যানমগ্ন থাকতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম ওহি এসেছিল হেরা গুহায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর স্মৃতি বিজড়িত এই গুহা পরিদর্শন করতে পারাটা সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। জাবালে নূর পর্বতের চূড়ায় হেরা গুহা অবস্থিত। পুরো পর্বত টপকে পর্বতের চূড়ায় উঠে গুহা পরিদর্শন করাটা কিন্তু খুব একটা সহজ বিষয় নয়।তবে যাদের শারিরীক সামর্থ্য ও দৃঢ় মনোবল আছে তারা হজ্জ করতে গেলে হেরা গুহা দেখে আসতে মিস করে না।

৯. গারে ছাওর

গারে ছাওর পাহাড়ের খাদে অবস্থিত একটি ছোট গর্ত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) হিজরতের সময় শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাচতে এই গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। পবিত্র কাবা শরিফ থেকে গারে ছাওর এর দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। গারে ছাওর জাবালে সাওর নামেও পরিচিত। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রায় ৪৫৮ মিটার ওপরে গর্তটি অবস্থিত।গর্তটির উচ্চতা ১.২৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৩.৫ মিটার ও প্রস্থ ৩.৫ মিটার। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর স্মৃতি বিজড়িত এই গর্তটি মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে একটি অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।

১০. জান্নাতুল মুআল্লা

সৌদি আরবের প্রাচীনতম কবরস্থান জান্নাতুুল মুআল্লা। মুআল্লা শব্দের অর্থ উঁচু। মক্কা শহরের তুলনামূলক উঁচু দিকে কবরস্থানটির অবস্থান বলে একে জান্নাতুল মুআল্লা বলা হয়। এখানে ইসলামের বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তিবর্গের কবর রয়েছে।

জান্নাতুল মুআল্লা মসজুদুল হারাম এর একদম কাছে হওয়ায় এখানটায় জনসমাগম সবথেকে বেশি হয়। হজ্জ করতে আসা মুসুল্লিগন এখানে এসে কবর জিয়ারত করেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করেন। তবে মহিলাদের কবরস্থানের ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই,তাই তাদের গেইটের সামনে বসেই দোয়া করতে হয়।

মক্কা শহরের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো:

১. আল জাইরাহ মসজিদ
২. জুরানাহ মসজিদ
৩. জমজম কূপ
৪. হাজরে আসওয়াদ
৫. মসজিদুল হারাম লাইব্রেরি (ইত্যাদি)

Scroll to Top