ভুটানের দর্শনীয় স্থানের তালিকা এবং ইতিহাস ভাষা আয়তন ইত্যাদি তথ্য।

দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটান। সরকারি ভাবে দেশটির নাম ভুটান রাজ্য। এই দেশের নাগরিকদের মাতৃভাষা জংখা।আর জংখা ভাষায় তারা নিজের মাতৃভূমিকে ‘দ্রুক ইয়ুল’ বা ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে ডাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত ভুটান যা পূর্বে ছোট বড় অসংখ্য উপত্যকা ভেদে আলাদা আলাদা কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল । সংস্কৃত শব্দ “ভূ-উত্থান” থেকে ভুটান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ “উঁচু ভূমি”। তাহলে বোঝা যায় যে ভুটান একটি উঁচু ভূমির দেশ। ভুটানের আয়তম ৩৮,৩৯৪ বর্গ কিলোমিটার বা ১৪,৮২৪ বর্গ মাইল।

আয়তনের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের ১৩৩ তম বৃহত্তম দেশ।২০১৬ সালের আনুমানিক হিসেব মতে ভুটানের মোট জনসংখ্যা ৭৯৭,৭৬৫। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ভুটানের অবস্থান ১৬৫তম।এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মালদ্বীপের পরে ভুটান কম জনসংখ্যা দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। ভুটানের রাজধানী নাম থিম্ফু এবং এটি ভুটানের বৃহত্তম শহর। অন্যদিকে ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র ফুন্টসলিং। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র।

ভুটানের ভৌগোলিক অবস্থান

ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়,তবে এর পাশাপাশি কিছুটা নিম্নভূমি ও সমভূমিও লক্ষ করা যায়। ভুটানের সাথে চীন ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। ভুটানের উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালার অবস্থান। দেশটির মধ্যাঞ্চলে নিচু পাহাড় এবং মালভূমি রয়েছে এবং একই বৈশিষ্ট্য দেশটির দক্ষিণ প্রান্তেও লক্ষ করা যায়। সেইসাথে দক্ষিণের সীমান্তে সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমিরও দেখা মিলবে৷

দেশটির মধ্যভাগের মালভূমি অঞ্চলের উপত্যকা গুলিতে জনবসতি সবথেকে বেশি। ভুটানের প্রায় শতকার ৭০ ভাগ এলাকাই অরণ্যাবৃত, আর এর মূল কারণ হলো বহির্বিশ্ব থেকে অনেক দিন দেশটির বিচ্ছিন্নতা। ভুটানের উত্তর দিকে চীনের তিব্বত অঞ্চল অবস্থিত। পশ্চিম দিকে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা অবস্থিত।পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশের অবস্থান এবং দক্ষিণ দিকে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত।

ভুটানের ইতিহাস

ভুটানে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠার ইতিহাস চার হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রমান করতে পেরেছেন যে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দে ভুটানে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। ১৭ শতকে দোশটি ড্রুক ইউল বা থান্ডার ড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ছিল,তবে বহির্বিশ্বে তখনও এটি ভুটান নামেই পরিচিত চিল।

কিন্তু ভুটানের ইতিহাসের সমৃদ্ধ অধ্যায় শুরু হয় ৮ম শতাব্দীতে। ৮ম শতাব্দীতে একজন ভারতীয় সাধক গুরু পদ্মসম্ভব ভুটানে আসেন, তিনি গুরু রিনপোচে নামেও পরিচিত। তিনি ধর্মপ্রচারের উদ্যেশ্যে ভুটানে এসেছিলেন৷ এরপর থেকেই ভুটানের বাসিন্দারা সমাজবদ্ধ হয়ে একটি সামাজিক আইন কানুন মেনে জীবনযাপন করতে শুরু করে।

book air ticket goofly24.com

পরবর্তীতে ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে তিব্বত থেকে ঝাবদ্রুং এনগাওয়াং নামগ্যাল ভুটানে আসেন এবং দেশটির খন্ড বিখন্ড কাউন্টিটিকে একীভূত করেন। ঝাবদ্রুং এনগাওয়াং নামগ্যাল এর ভুটানে আসার আগ পর্যন্ত অনেক যুদ্ধবাজ একে অপরের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করে ভুটান শাসন করে।

কিন্তু একত্রীকরনের পর থেকে ভুটানে রাজতন্ত্র চলতে থাকে। ভুটানের চতুর্থ রাজার পদত্যাগ এবং গণতন্ত্র প্রবর্তনের আগে এই রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ২০০৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।পরবর্তীতে দেশটি একটি গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিনত হয়েছে এবং এই শাসনব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান আছে।

ভুটানের জাতীয় পতাকা

হলুদ এবং কমলা রঙের সংমিশ্রণের জমিনের ওপর ড্রাগনের ছবি বসিয়ে ভুটানের পতাকার নকশা করা হয়েছে। ভুটানের বর্তমান পতাকার নকশাটির ডিজাইন গ্রহণ করা হয়েছে ১৯৬০ সালে, যদিও পুরোনো ডিজাইনটির সাথে বর্তমান ডিজাইনের তফাত খুব বেশি নয়।

পতাকার খুঁটির দিকের পারশের নিচের অংশ থেকে শীর্ষবিন্দুকে সমদ্বিখণ্ডিত করে বিপরী শীর্ষবিন্দু বরাবর একটি কর্ন একে পাতাকাটিকে সমান দুইটি ত্রিভুজ আকৃতিতে ভাগ করা হয়েছে। উপরের ত্রিভুজটির রং হলুদ এবং নিচের অংশটি কমলা রঙের।

ভুটানের তিব্বতী ভাষার নাম – ড্রাগনের দেশকে নির্দেশ করতে পতাকার কেন্দ্র স্থলে ড্রাগনের ছবি বসানো হয়েছে। এবং ড্রাগনের নখড়ে ধরে রাখা রত্ন সমৃদ্ধির প্রতীক।পৃথিবীতে শুধুমাত্র ভুটান এবং ওয়েলসের জাতীয় পতাকায়ই ড্রাগনের ছবি শোভা পেয়েছে।

ভুটানের প্রচলিত ভাষা

ভাষাগত দিক থেকে ভুটান বেশ বৈচিত্র্যময় দেশ। ভুটানের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ১৯ টি ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে প্রচলিত রয়েছে। তবে ভুটানের রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে জাংখা ভাষা। জংখা ভুটানের সরকারী এবং জাতীয় ভাষা এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘দুর্গের ভাষা’।

এই দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ জাংখা ভাষায় কথা বলে। জংখা মূলত একটি চীন-তিব্বতি ভাষা যা তিব্বতি বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখা হয়েছে। ১৯৭১ সালে জাংখা ভাষাকে ভুটানের জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ এছাড়াও ভুটানের তিনটি বিশিষ্ট ভাষা রয়েছে।

এগুলো হলো তশাংলাখা, লোটশামখা এবং বুমথাংখা। ভুটানের বেশ কয়েকটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এই ভাষায় কথা বলে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে এখন মাংদেপকা, চো চা, এনগা, চাং খা এবং লেপচা ভাষা বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে।

ভুটানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাংখা ভাষায় পাঠদান করা হলেও ইংরেজি চর্চায়ও বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। ভুটানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই বেশ সাবলীল ভাষায় ইংরেজিতে কথোপকথন করতে পারে৷ তাছাড়া ভারতীয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ার এই অঞ্চলে হিন্দি ভাষার প্রভাবও বেশ লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে বলিউডের সিনেমার জনপ্রিয়তার ফলে হিন্দি ভাষার সহজবোধ্যতা লক্ষ করা যায়।

ভুটানের নাগরিকদের ধর্ম বিশ্বাস

ভুটান একটি বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান দেশ। এই দেশের প্রায় সিংহভাগ জনগনই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৪.৭ ভাগ লোক বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। দেশটির শতকরা ২২.৬ ভাগ লোক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। শতকরা ১.৯ ভাগ জনগন বিভিন্ন আদিবাসী ধর্মে বিশ্বাস, শতকরা ০.৫ ভাগ লোক খ্রীষ্টধর্মের অনুসারী এবং শতকরা ০.২ ভাগ লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

ভুটানের অর্থনীতি

বিশ্বের ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ ভুটান। জল শক্তি এবং পর্যটন শিল্প ভুটানের আয়ের প্রধান উৎস ।ভুটান ভারতের কাছে জলশক্তি রপ্তানি করে সবথেকে বেশি আয় করে। ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করে, যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভুটান সরকার অনেক ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভুটানের অর্থনীতির একটি বড় অংশ কৃষিকাজ এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি লোকজন কৃষি কাজের সাথে যুক্ত। ভুটানের শিল্পের মধ্যে তুলো বা কাপড় শিল্প নির্ভর উল্লেখযোগ্য।

ভুটানের আমদানি পণ্যগুলো সাধারণত ভারত থেকেই আসে। তাছাড়া বাংলাদেশের সাথেও ভুটানের আমদানি রপ্তানির সম্পর্ক রয়েছে। যে কোনো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভুটান ভারতের দক্ষ জনশক্তির উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে শিক্ষা, সামাজ এবং পরিবেশের যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে ভুটানকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে।
বিশ্বের মধ্যে ভুটান সর্বপ্রথম দিজেকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে প্রস্তুত করতে পেরেছে৷

ভুটানের আবহাওয়া ও জলবায়ু

ভুটানের ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময় হওয়ার কারনে এই দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। একই সময়ে দেশের একপ্রান্তে তাপমাত্রা একদমই নিম্ন থাকে আবার অন্যপ্রান্তে থাকে কাঠফাটা গরম। পাহাড়ি অঞ্চলের জলবায়ুর সাথে সমভূমি অঞ্চলের জলবায়ুর অনেক ভিন্নতা রয়েছে। ভুটানের দক্ষিণ অংশে একটি উষ্ণ আর্দ্র উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু রয়েছে।

সারা বছরই এখানে উচ্চ তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। এখানে তাপমাত্রা সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে। দেশের মধ্যাঞ্চলে এটি কিছুটা শীতল। তবুও গ্রীষ্মকালে এখানে যথেষ্ট গরম তবে শীতকালে এখানে অনেক বেশি শীতল আবহাওয়া লক্ষ করা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতকালে ঠাণ্ডা থাকে।

এবং এটি যত বেশি হয় পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এর তাপমাত্রা ততো বেশি কমতে থাকে। কখনও কখনও এই অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে। তবুও একটি গড় হিসেব বিবেচনায় ভুটানের জলবায়ুতে ৪ টি ঋতুর প্রভাব লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ এবং শীতকাল। ঋতুভেদে দেশটিতে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ব্যাপক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

ভুটানের সংস্কৃতি

ভুটানের সংস্কৃতি বহির্বিশ্বের সংস্কৃতি থেকে একদমই সতন্ত্র। দীর্ঘ সময় ধরে ভুটানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এবং বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি ভুটানের বাসিন্দাদের আগ্রহ একদমই নগন্য হওয়ায় তারা তাদের সংস্কৃতিতে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে। ভুটানের আধুনিক সংস্কৃতি এখনও প্রাচীন সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি বহন করে।
বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র পাত্রী নির্বাচনে নিজস্ব গোষ্ঠী ও কাছের আত্মীয় স্বজন যেমন চাচাতো,মামাতো বা ফুফাতো ভাই-বোনকে আগে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে আধুনিক ছেলেমেয়েদের মধ্যে এখন এই প্রবনতা অনেকটাই কমে এসেছে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানকে ভুটানিরা বেশ সাদামাটা ভাবেই সম্পন্ন করে।

ভুটানে সরকারি অফিস আদালতে এবং যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ভুটানি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ‘ঘো’ এবং মহিলারাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ‘কিরা’। ‘ঘো’ একটি ভারী হাঁটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের একটি পোশাক যা বেল্ট এর সাহায্যে বাঁধা থাকে। কিরা হলো একটি গোড়ালি পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের পোশাক, যার উপরে একটি ছোট জ্যাকেট পরা হয়।

ভুটানে লিখিত সাহিত্যের থেকে মৌখিক সাহিত্যের প্রচলন অনেক বেশি। প্রাচীন কাল থেকেই মুখে মুখে রচিত সাহিত্য নিজস্ব ধারা বজায় রেখে বিদ্যমান আছে। ভুটানের উৎসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নাচ ও লোকজ গানের আয়োজন করা হয়। দলীয় নৃত্য ভুটানিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ভুটানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল শেচু। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় অনুষ্ঠান সারা বছর জুড়েই উদযাপিত হতে থাকে।

ভুটানি সংস্কৃতির আরেকটি অন্যতম দিক হলো এর স্থাপত্য শৈলী। সাধারণ উপকরণ ব্যবহার করে অসাধারণ সব স্থাপত্য নির্মাণ করে নিজস্ব ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছে এই জাতি। ভুটানের স্থাপত্যকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ঢালু ছাদ, মাটির দেয়াল এবং কাঠের জটিল কাজ।

ভুটানের নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাস

ভুটানের খাদ্যাভাসে ভারতীয় এবং চীনা রন্ধনপ্রণালীর বেশ প্রভাব লক্ষ করা যায়, কিন্তু ভুটানিজ রন্ধনপ্রণালীতে তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা সবার প্রথমে পরিলক্ষিত হয়। ভুটানের জাতীয় খাবার “ইমা দাতশি”। খাবারটি কাঁচা মরিচ এবং গরুর দুধের পনির সহ বিভিন্ন মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। তাছাড়া ভুটানের প্রাধান খাবার ভাত যা এক ধরনের লাল চাল দিয়ে রান্না করা হয় ।

ভাতের সাথে মাছ, বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাংস,ডাল খেতে পছন্দ করে তারা। ভুটানে উৎপাদিত সবজির মধ্যে টমেটো, শালগম, পেঁয়াজ,বিভিন্ন ধরনের শাক, সবুজ মটরশুটি, এবং মূলা উল্লেখযোগ্য। খাবারকে সুস্বাদু করতে বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়, যেমন : এলাচ, রসুন, হলুদ এবং আদা ইত্যাদি । ভুটানের জনপ্রিয় পানীয়ের মধ্যে আছে মাখন চা, সিরিয়াল শস্য থেকে তৈরি বিয়ার এবং চালের ওয়াইন।

বিকেলের নাশতায় তারা বিভিন্ন ধরনের হালকা খাবার খেতে পছন্দ করে। বিকেলের নাশতায় ডাম্পলিংস এবং নুডলস জনপ্রিয় স্ন্যাক খাবার। ভুটানিরা গমের আটা দিয়ে নুডলস তৈরি করে । ভুটানের নিজস্ব কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, এগুলোর মধ্যে জাশা মারু, পাকশা পা এবং মোমোস উল্লেখযোগ্য।

ভুটানের দর্শনীয় স্থান

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ভুটান যেন এক প্রকৃতিক স্বর্গ৷ এখানে অবস্থিত সমতল ভূমি থেকে শুরু করে উচু পাহাড় ও উপত্যকার পর্যটন স্পট গুলো বিশ্বের সকল প্রকৃতিপ্রেমীকেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। চলুন যেনে নেয়া যাক ভুটানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে –

১. থিম্পু

ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু যা দেশটির অন্যতম পর্যটন এলাকা। এই অঞ্চলের পান্না বনের বিস্ময়কর সৌন্দর্য এবং রায়ডাক বা চুউ নদীর সুন্দর দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তাছাড়া আছে বিভিন্ন প্রাচীন পুরাকীর্তি এবং আধুনিক সব রেস্তোরাঁ। থিম্পু শহরের জনপ্রিয় স্পষ্ট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মেমোরিয়াল চোরটেন, ডেচেনচলিং প্যালেস, ক্লক টাওয়ার স্কোয়ার, মতিথাং টাকিন সংরক্ষণ ইত্যাদি।

২. পারো

ভুটানের একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর পারো যেখানে দেশটির একমাত্র বিমানবন্দর অবস্থিত। পারো শহরের উঁচু নিচু পাহাড় এবং পাহাড়ি খাদে বসবাসরত মানুষের সাবলীল জীবনব্যবস্থা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আরও দেখতে পাবেন বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদ এবং জাদুঘর।

৩. পুনাখা

১৭ শতকের নির্মিত দুর্গ পুনাখা জং এই পর্যটন এলাকাটি ব্যাপকভাবে বিখ্যাত। এছাড়াও এই শহরে অবস্থিত দুটো বিখ্যাত নদী রয়েছে, একটি হলো মো এবং আরেকটি ফো। এই নদীতে বোট রাইডিং সহ নদীর চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

৪. ত্রংসা

ত্রংসা হলো একটি ঘুমন্ত ছোট্ট শহর এবং বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সমষ্টি।দর্শনীয় স্থান ভ্রমনপ পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য গাছপালা দিয়ে সুন্দরভাবে সজ্জিত এবং আনন্দিত স্থানীয়দের ভিড়ের দোকানগুলিতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

৫. জাকার

ভুটানের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা জাকার যা স্থানীয়ভাবে চামখার নামে পরিচিত। এটি মূলত এর বাণিজ্য কেন্দ্রের জন্য পরিচিত। এই স্থানের বিখ্যাত আকর্ষণ জাকার জং। এছাড়াও এখানে ঘুরে দেখার জন্য বেশ কিছু স্পষ্ট রয়েছে। যেমন: ওয়াংডিচোলিং প্যালেস, বুমথাং ব্রুয়ারি, লোড্রাক খার্চু গোয়েম্বা, পনির কারখানা ইত্যাদি।

৬. ফোবজিখা

ফোবজিখা হলো ইউ (U) আকৃতির বিশেষ এক হিমবাহ উপত্যকা। এটি মূলত বৈচিত্র্যময় প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য বিসৃত। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি দর্শনীয় স্থান।

৭. ওয়াংডু ফোড্রং

ভুটানের একটি শান্ত ও ছোট শহর ওয়াংডু ফোড্রং। এই শহরে দেখার জন্য আছে জনপ্রিয় কিছু ট্যুরিস্ট স্পট, যেমন: রাদাক নেইখাং, আর্চারি গ্রাউন্ড, ভেজিটেবল মার্কেট, আর্মি ট্রেনিং সেন্টার, জং গেট, আটটি চোরটেন ইত্যাদি। এই শহরটি বাঁশের পণ্য, স্লেট এবং পাথরের খোদাইয়ের জন্য ব্যাপকভাবে বিখ্যাত।

৮. জিগমে দরজি জাতীয় উদ্যান

এটি ভুটানের দ্বিতীয় বৃহৎ পশুপাখির সংগ্রহ। এখানে আছে চিতাবাঘ, তুষার চিতা, টাকিন, বেঙ্গল টাইগার, হিমালয়ান ব্লু শিপ, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, কালো কস্তুরী হরিণ, লাল পান্ডা এবং উসুরি ঢোল সহ আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী৷ আরও আছে সাম্বার, সেরো, বার্কিং ডিয়ার, মারমোট, গরাল, পিকা এবং সহ ৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল।

নিজস্ব স্বকীয়তা ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত প্রকৃতিতে সমৃদ্ধশালী দেশ ভুটান। এর অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনে বহির্বিশ্বে ভুটান বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে।

Scroll to Top