ভাবুন তো কেমন লাগবে যখন, দেশের বাইরে যাওয়ার সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেখবেন আপনার ভিসাই ঠিক নেই! হয়তো মেয়াদ শেষ, নয়তো ফেইক ভিসা! এসব ঝামেলা এড়াতেই আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো কিভাবে অনলাইনে ভিসা চেক করা যায়, তাও শুধু পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে।
কিভাবে পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা চেক করতে হবে তা জানার আগে বলে নেই ভিসা চেক করা কেন গুরুত্বপূর্ণ। এই চেকিং আপনাকে বিদেশের মাটিতে প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। ভিসা চেকিং এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন –
- যে জন্য ভিসা দেয়া হয়েছে অর্থাৎ পড়াশোনা বা আয়মূলক কাজ, ভিসাটা আসলেই সে জন্য কিনা।
- ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সঠিক আছে কিনা।
- ভিসার মেয়াদ বহাল আছে কি না।
- কোন কোম্পানির ভিসা।
- কোন ধরনের ভিসা।
পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা চেক করার উপায়
এখন চলুন জেনে নেই কিভাবে পাসপোর্ট নম্বরের মাধ্যমে ভিসা চেক করতে হয়। আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে আমরা প্রথমেই অনেকগুলো দেশ, যেসব দেশে সাধারণত পড়াশোনা বা কাজকর্মের জন্য বাংলাদেশিরা যেয়ে থাকেন সেসবের অনলাইন ভিসা চেকিং এর জন্য যে লিংকে যেতে হয় তার একটা তালিকা করে দিচ্ছি।
এ তালিকায় উল্লিখিত লিংকে প্রবেশ করে তারপর নির্দেশনা মোতাবেক কাজগুলো করলেই আপনি ঘরে বসে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ভিসা চেক করতে পারবেন। তো চলুন, দেখে নেই বিভিন্ন দেশের অনলাইন ভিসা চেক করার ওয়েব লিঙ্ক:
- সৌদি আরবের ভিসা চেকিং
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা চেকিং
- কাতার এর ভিসা চেকিং
- মালয়েশিয়ার ভিসা চেকিং
- ওমান ভিসা চেকিং
- বাহরাইনের ভিসা চেকিং
প্রিয় পাঠক! বাংলাদেশ থেকে সাধারণত এইসব দেশেই মানুষ পড়াশোনা বা কাজকর্মের জন্য যেয়ে থাকে। এখন পর্যায়ক্রমে বলবো কোন দেশের ভিসা চেক করার লিংকে প্রবেশ করার পর কিভাবে আপডেট জানতে পারবেন।
অর্থাৎ, অনলাইনে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে কিভাবে ভিসা চেক করা যায় তার স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা থাকছে নিচের অংশে।
পাসপোর্ট দিয়ে সৌদি আরবের ভিসা চেক করার উপায়
বাংলাদেশ থেকে চাকুরী, ব্যবসা বা কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি সৌদি আরব যেয়ে থাকে।
- পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে সৌদী ভিসা চেক করার জন্য প্রথমেই উপরে উল্লিখিত সৌদী ভিসা লিংকে যেতে হবে।
- তারপর আপনার সামনে একটি পৃষ্ঠা প্রদর্শিত হবে। সেখানে আপনার পাসপোর্ট নম্বর এবং জাতীয়তা জানতে চাওয়া হবে।
- সতর্কতার সাথে ঘর দুটি ফিলাপ করবেন।
- সাথে একটি ক্যাপচা কোড আসবে, সেটাও পূরণ করে ফেলবেন।
- এরপর একটি অপশন আসবে যেখানে লেখা থাকবে ভিসা ইস্যুয়িং অথরিটি।
- এটা ফিলাপ করার জন্য পাশে থাকা এ্যারো চিহ্নতে ক্লিক করলে একটি ড্রপডাউন বক্স পাবেন। সেখান থেকে ঢাকা সিলেক্ট করবেন।
এভাবে সবগুলো তথ্য সঠিক ভাবে দেয়ার পর সার্চ কিংবা চেক স্ট্যাটাস যেকোনো অপশনে ক্লিক করলেই ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য আপনার সামনে চলে আসবে।
আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সৌদী ভিসা চেকিং এর পুরো প্রক্রিয়াটি স্টেপ বাই স্টেপ উল্লেখ করছি, যাতে সহজেই এই কাজটি আপনারা করে ফেলতে পারেন।
প্রথমেই লিংকটিতে যাবেন।
পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয়তা, ভিসা ইস্যুয়িং অথরিটি, ক্যাপচা কোড সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করবেন। সবশেষে সার্চ বাটনে ক্লিক করবেন।
সৌদী আরবের ভিসা চেকিং এর ক্ষেত্রে চেকারদের মাঝে মাঝে একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো তাদের ভিসা ওয়েবসাইটে লেখা গুলো আরবিতে হয়ে থাকে। তবে ভয় নেই, ড্রপডাউন বক্স থেকে ইংরেজি ভাষা সিলেক্ট করে কাজটি আপনি সহজেই করতে পারবেন। তারপরও যদি কোথাও আরবি থেকেই থাকে তাহলে সরাসরি গুগল ট্রান্সলেটর ফিচার ব্যবহার করুন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বা দুবাইয়ের ভিসা চেকিং
বিশ্বের অন্যতম খরুচে শহর এই দুবাই। এখানে যেমন মানুষ ঘুরতে আসে, তেমনি ব্যবসা বা কাজের জন্যও এসে থাকে। বাংলাদেশ থেকে ২য় সর্বোচ্চ প্রবাসীর পদচারণায় মুখর থাকে এই দেশটি। পাসপোর্ট দিয়ে কিভাবে দুবাই এর ভিসা চেক করবেন তা জানতে পড়ে নিন আমাদের আজকের লেখাটি।
প্রথমে উপরে উল্লিখিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা চেকিং এর লিংকটিতে প্রবেশ করুন। তারপর আপনার সামনে একটি পৃষ্ঠা প্রদর্শিত হবে। যেখানে একটি মেন্যুবার থাকবে। এখান থেকে পাবলিক সার্ভিস অপশনে যান। তখন আপনার সামনে আরো একটি পেইজ আসবে যেখানে আপনার কাঋে জানতে চাওয়া হবে কিসের মাধ্যমে ভিসাটি চেক করতে চাচ্ছেন। তখন পাসপোর্ট নম্বর এন্ট্রি করবেন। একই সাথে পাসপোর্টের মেয়াদ কবে শেষ হবে সেটাও পূরণ করার অপশন থাকবে, সেটাও করে ফেলবেন।
এবারে জানতে চাওয়া হবে কি ধরনের ভিসা। তখন কাজ, ব্যবসা কিংবা পর্যটন যেজন্য যেতে চাচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করবেন৷ এরপর আপনার জাতীয়তা নির্বাচন করবেন। সর্বশেষ ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে সার্চ বাটনে ক্লিক করলেই ভিসার হালনাগাদ তথ্য পেয়ে যাবেন।
সংক্ষেপে দুবাই ভিসা চেকিং এর পুরো প্রক্রিয়াটির ধাপ সমূহ:
- প্রথমেই উপরে উল্লিখিত লিংকটিতে প্রবপষ করবেন।
- তারপর মেন্যুবার থেকে পাবলিক সার্ভিস অপশনে যাবেন।
- সেখানে গিয়ে পাসপোর্ট ইনফরমেশন সিলেক্ট করবেন।
- তারপর কি ধরনের ভিসা সেটা সিলেক্ট করতে বলা হবে।
- তারপর একটি পেজ আসবে , সেখানে পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয়তা এবং পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ দিয়ে ফিলাপ করতে হবে।
- সর্বশেষ, ক্যাপচা কোডটি ঠিকঠাক ভাবে পূরণ করে সার্চ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
আপনার সামনের স্ক্রীণে ভেসে উঠেছে আপনার দুবাই ভিসার হালনাগাদ তথ্য।
মালয়েশিয়ার ভিসা চেকিং
মালয়েশিয়া এশিয়ার অন্যতম একটি সুন্দর দেশ। কাজ, ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে একটা বড় সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়া যেয়ে থাকে। মালয়েশিয়ার ভিসা নানা ভাবে চেক করা যায়। মালয়েশিয়ার ভিসা চেকিং পদ্ধতি গুলো হলো:
- এপ্লিকেশন নম্বর দিয়ে ভিসা চেকিং।
- কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ভিসা চেকিং।
- পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ভিসা চেকিং।
- স্টিকার নম্বর দিয়ে ভিসা চেকিং।
- অ্যাপের মাধ্যমে ভিসা চেকিং।
আমরা আজকে আলোচনা করবো শুধু মাত্র তিন নম্বর অপশনটি নিয়ে অর্থাৎ কিভাবে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে মালয়েশিয়ার ভিসা চেক করবেন সে বিষয়ে। পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে মালয়েশিয়ার ভিসা চেকিং খুবই সহজ কাজ। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো :
- প্রথমেই উপরের লিংক তালিকা থেকে মালয়েশিয়ার ভিসা চেকিং লিংকে প্রবেশ করবেন।
- এরপর আপনার পাসপোর্ট নম্বর এন্ট্রি করার একটি অপশন পাবেন।
- পাসপোর্ট নম্বর এন্ট্রি করার পর সিটিজেন অপশনে গিয়ে বাংলাদেশ সিলেক্ট করবেন।
- এরপর সার্চ বাটনে ক্লিক করলেই আপনি ভিসা সংক্রান্ত তথ্যাদি দেখতে পাবেন।
এভাবে পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে খুব সহজে আপনি মালয়েশিয়ার ভিসা চেক করতে পারবেন।
শেষকথা:
পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা চেকিং একটি খুব সহজ কাজ। এই কাজটির জন্য যেনো দালালের খপ্পরে না পড়া লাগে তাই আমরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ভিসা চেক করার পদ্ধতি গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করলাম।
আমরা বহুল ভ্রমণকৃত তিনটি দেশের ভিসা চেকিং নিয়ে আলোচনা করলেও লিংক দিয়েছি অনেকগুলো দেশের। এসব লিংকে প্রবেশ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ তথ্য দিয়ে ভিসা আপডেট জানতে হয়। এভাবে সতর্কতার সাথে তথ্য গুলো এন্ট্রি করলেই আপনি আপনার ভিসার অবস্থা জেনে নিতে পারবেন।
