ভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি আর নানান বৈচিত্রের মেলবন্ধনেই ভারত। পৃথিবীর আর কোন দেশে এত রঙের প্রাচুর্য্য দেখা যায় না। আর কম খরচে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তাবৎ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এই বিশাল দেশটি থাকে তালিকার প্রথম সারিতে। ভ্রমণের জন্য ভারত হতে পারে আপনারও পছন্দের গন্তব্য। কিন্তু আপনি হয়তো ৬ মাস ঘুরেও ভারত এর সকল দর্শনীয় স্থান শেষ করতে পারবেন না।
তাই আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে ভারতের সেরা ২০ টি দর্শনীয় স্থান, যেসব না দেখলে ভারত সফর অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
আমরা আমাদের এই পোস্টে ভারতের কিছু দর্শনীয় স্থানের তালিকা করেছি। ফলে লেখায় মাজার রিলেটেড বেশ কিছু পয়েন্ট চলে এসেছে। আমরা পাঠকদের বলবো এগুলো শুধু জানার জন্য জেনে নিন।
কোন সওয়াব এর আশায় পবিত্র ৩ মসজিদ ছাড়া ( মক্কা, মদিনা, আল আকসা) মাজার বা অন্য কোথাও ভ্রমন করা জায়েজ নেই। আপনি দেখার জন্য বা জানার জন্য যেতে পারেন তবে সোওয়াব এর আশা করা কিংবা সাধারনের চেয়ে বেশি পবিত্র বা আধ্যাত্মিক এমন কিছু ভেবে যাওয়াতে আমরা নিরুৎসাহিত করি।
ভারতের সেরা ২০ টি দর্শনীয় স্থান
মোঘল মুসলিম শাসন এর ৩১৬ বছর এবং এর পূর্বে আফগানিস্তানের মুসলিম সালতানাত শাসনের কারণে ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান গুলোর অধিকাংশই ইসলামি ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। তাই ভারত সফরে এসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসলে মনের আনন্দের সাথে ধর্মীয় অনেক ইতহাস সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
তাহলে চলুন ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. আজমীর শরীফ দরগাহ, রাজস্থান
ধর্ম প্রচারক খাজা মইনুদ্দিন চিশতিকে জীবনাবসানের পর আজমীরে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে সুলতান ইলতুতমিশ এই মসজিদের নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন আর মোঘল সম্রাট হুমায়ূন এটির কাজ শেষ করেন।
কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আজমীরের রুটে রয়েছে ১২৯৮৭ শিয়ালদহ-আজমীর এক্সপ্রেস। ট্রেনে দিল্লী গিয়ে সেখান থেকে বাসে/ট্রেনে করেও আজমীর যেতে পারেন। কলকাতা থেকে জয়পুর বিমানে এসে ট্যাক্সিতে বা বাসে আজমীর যাওয়া যায়।
আজমীর শরীফ দরগাহ’র আশেপাশে বিভিন্ন মূল্যমানের হোটেল আছে। খাদেমদের বাড়িতেও বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশিরা কেউ আজমীর শরীফ গেলে সাশ্রয়ী ও বেশি দামে দু’ধরনের কক্ষই পাবেন। ১৫০০ রুপি থেকে শুরু করে ৪৫০০ রুপিতে মিলবে এসি স্যুইট রুমও।
২. দিল্লী
দিল্লীতে বেড়াতে যেতে পারেন যেখানে ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান ইন্ডিয়া গেট, জামে মসজিদ, রেড ফোর্ট, কুতুব মিনার, চাঁদনী চক, লোটাস টেম্পল, হুমায়ুনের সমাধি, লোধী গার্ডেন এবং দ্যা ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখতে পারবেন।
স্পাইসজেট, ইন্ডিগো, বিমান বাংলাদেশ এবং এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইন্স সরাসরি ঢাকা-দিল্লী এবং ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
সড়ক পথে ঢাকা-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যেতে পারবেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে ট্রেনে মৈত্রী এক্সপ্রেসে কলকাতা গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে দিল্লী যাওয়া যায়।

চাঁদনী চক ও রেড ফোর্টের কাছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭৫০ রুপির মধ্যে দুইজনের থাকার রুম পেয়ে যাবেন। এছাড়াও পাহাড়গঞ্জ, করল বাগ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিল্লীতে কম খরচে থাকার জন্য রয়েছে হোম স্টে এবং হোস্টেল।
৩. আগ্রা
ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থাপত্য গুলোর প্রাচুর্য আগ্রাতেই। আগ্রা মানেই যেন দর্শনীয় সব মোগল স্থাপত্য। দেখতে পারেন- তাজমহল, ফতেহপুর সিক্রী, জাহাঙ্গীর মহল, আঙ্গুরী বাগ, আগ্রা ফোর্ট, আকবরের সমাধি, ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি, মেহতাব বাগ, ডলফিন ওয়াটার পার্ক।
কলকাতা থেকে নিউ দিল্লিগামী ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেস। কালকা মেল যায় পুরাতন দিল্লি রেলস্টেশনে। এছাড়াও আছে ইউভা এক্সপ্রেস, যায় আনন্দ বিহার রেলস্টেশন। আনন্দবিহার ষ্টেশনে পৌছে ট্রেন বা বাসে করে আগ্রা যেতে পারবেন।
আগ্রাতে কম খরচের মধ্যে বেশ কিছু হোটেল/হোম স্টে রয়েছে। রে অফ মায়া, থমাস হোম স্টে, সাই প্যালেস, হোটেল সাফারি, ম্যাক্স গেস্ট হাউজ, দা আগ্রা গ্র্যান্ডে, ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউজ ইত্যাদি। এগুলোতে ৮০০ থেকে ২০০০ রুপির মধ্যে দুইজনের থাকার রুম পাওয়া যায়।
৪. হযরতবাল মসজিদ, শ্রীনগর, জম্মু ও কাশ্মীর
কথিত আছে মসজিদটিতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর মাথার চুল সংরক্ষিত আছে। এই নামকরণ করা হয়েছে উর্দু শব্দ “হযরত”(শ্রদ্ধেয়) এবং হিন্দি শব্দ “বাল”(চুল) থেকে। আওরঙ্গজেবের লেখা কোরান শরীফের একটি পারসি অনুবাদও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।
বিমানে গেলে ঢাকা-দিল্লী হয়ে শ্রীনগর যাওয়া যাবে। যেতে পারেন ট্রেনে। কলকাতা থেকে জম্মুগামী ‘হিমগিরি’ ও ‘জম্মু তাওয়াই’ নামের দুটি ট্রেন ছাড়ে। সড়কপথে গেলে যেতে হবে কলকাতা থেকে জম্মু হয়ে শ্রীনগর। অভ্যন্তরীণ বিমানেযোগেও কলকাতা থেকে শ্রীনগর যাওয়া যায়।
বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট ও হাউজবোট পাবেন থাকার জন্য। এর মধ্যে হোটেল জামরুদ, হোটেল জাহাঙ্গীর, গ্র্যান্ড হোটেল উল্লেখযোগ্য। ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপির মধ্যে। হাউজবোটে রুম হিসেবে ভাড়া ১২০০- ২৫০০ রুপির মধ্যে দুই জনের জন্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উক্ত মসজিদে হজরত মোহাম্মদ (সা.) উনার চুল আছে এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। থাকতে পারে আবার না থাকার সম্ভাবনাও আছে। আপনি জেনে শুনে এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন।
৫. তাজ-উল-মসজিদ, ভোপাল
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ। ভোপালের নবাব শাহ জাহান বেগম এই মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। এই মসজিদে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।
দিল্লী, মুম্বাই থেকে ফ্লাইটে ভোপাল যাওয়া যায়। দিল্লী থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেস ইত্যাদি ট্রেনে ভোপাল যেতে পারেন। সড়কপথে যাওয়া যায় দিল্লী থেকে। সব ক্ষেত্রেই অনলাইনে টিকেট কেটে রাখা উচিৎ।
হোটেল ইজি স্টে, ফ্যাভহোটেল সুরিয়া, গোল্ডেন ব্লিজ, হোটেল সিটি ওয়াক সহ বাজেট ফ্রেন্ডলি অসংখ্য হোটেল এবং হোম স্টে রয়েছে। ভাড়া পরে ৮০০ থেকে ১৫০০ রুপির মধ্যে। বুক করতে পারেন বুকিং ডট কম কিংবা ওয়ো এর মত সাইট থেকে।
৬. ডুয়ার্স
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, আসামের ধুবড়ি, বরপেটা, কোকড়াঝাড়, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলা নিয়ে ‘ডুয়ার্স’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছাড়াও রয়েছে চাপরামারি, গজলডোবা, বক্সা টাইগার রিসার্ভ, বক্সা ফোর্ট, গরুমারা জাতীয় উদ্যান, চেলসা, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, বিন্দু, হাসিমারা, গোঁরবাতান, ঝালং, সুনতালেখোলা, রকি আইল্যান্ড, লালিগুরাস ঘোরা ঝালংয়ের মতো অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
ঢাকার কল্যাণপুর থেকে এস.আর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন ছাড়াও বুড়িমারীগামী যে কোন বাসে করে এসে বুড়িমারী সীমান্ত পেরিয়ে টাটাসুমোতে লাটাগুড়ি। কলকাতা থেকে এলে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়িতে এসে ডুয়ার্সের পছন্দমত জায়গায় যেতে পারবেন। শিলিগুড়ি কিংবা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যতদিন প্রয়োজন সে অনুয়াযী গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন। এছাড়া শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে বাস চলাচল করে।
লাটাগুড়িতে অবস্থিত গরুমারা জঙ্গল ক্যাম্পে রাত্রিযাপন করতে চাইলে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের (জলপাইগুড়ি) সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এখানে থাকতে খরচ হয় ১০০০-১৫০০ রুপি। এছাড়াও লাটাগুড়ি, মালবাজার, চালসাতে বিভিন্ন মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
৭. হাজী আলী দরগাহ, মুম্বাই
মুসলিম ব্যবসায়ী সায়েদ সমাধি পীর হাজী আলী শাহ বুখারী’র মাজারকে কেন্দ্র করে ১৪৩১ সালে দরগাহটি নির্মিত হয়। উপকূল হতে ৫০০ মিটার দূরে আরব সাগরের মাঝে এর অবস্থান। উত্তাল সমুদ্রের মাঝখানে একটি মাজারের বছরের পর বছর অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকাটাই বিস্ময়কর।
ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে অথবা ঢাকা-কলকাতা-মুম্বাই বিমান বা ট্রেনে যেতে পারেন। হাওড়া থেকে মুম্বাই যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় রাতের CST Mail ট্রেন।
মুম্বাইতে সব হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকতে দেওয়া হয় না। হোটেল ভাড়াও বেশি। তাই আগে থেকেই অনলাইন বুকিং করে গেলে ভালো। দালালের খপ্পর এড়িয়ে ক্ষেত্রভেদে দৈনিক ৫০০ থেকে ২০০০ রুপির মধ্যে হোটেল পাওয়া যায়।
৮. কলকাতা
কলকাতায় ঘুরে ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে দেখতে পারেন- ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, নাখোদা মসজিদ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, রেসকোর্স, সায়েন্স সিটি পার্ক, সহ অসংখ্য জায়গায়।
বাংলাদেশ বিমান, স্পাইস জেট, এয়ার ইন্ডিয়া ঢাকা থেকে কলকাতা ফ্লাইট পরিচালনা করে। সড়কপথে এসি/ননএসি দুই ধরনের বাসেই বেনাপোল হয়ে কলকাতা যাওয়া যায়। ট্রেনে গেলে যেতে পারেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসের মাধ্যমে। নৌ পথে এমভি মধুমতি জাহাজে চেপেও যেতে পারেন ‘সিটি অব জয়’ খ্যাত শহরটিতে।
কলকাতার নিউমার্কেট, মারকুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিটে এসি/ননএসি রুম বুক করতে পারবেন ৭৫০-১৫০০ রুপির মধ্যে। এছাড়াও বিভিন্ন গেস্ট হাউজ ও ডর্মে থাকতে পারেন বাজেটের মধ্যেই।
৯. বারাণসী বা বেনারস
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর এই বারাণসী বা কাশী।
বিমানে কলকাতা থেকে বারানসী যাওয়া যায়। এছাড়াও যেতে পারেন ট্রেনে- দুন এক্সপ্রেস, বিভূতি এক্সপ্রেস, কুম্ভ স্পেশাল ইত্যাদি।
বেনারসে ধর্মশালা আছে প্রচুর। তবে দামি কমদামি নির্ভর করে মানের ওপর। এসি এবং নন এসি হোটেলের ভাড়া ৯০০ থেকে ২০০ রুপি। তাছাড়া ভাগাভাগি করেও রুম বুক করা যায়।
১০. অমৃতসর, পাঞ্জাব
অমৃতসরে যা যা দেখবেন:- জালিয়ানওয়ালা বাগ, ওয়াগা বর্ডার, ইন্ডিয়া গেট/ ওয়ার মেমোরিয়াল, গোবিন্দগড় ফোর্ট, রামবাগ গার্ডেন, ভাটিন্ডা ফোর্ট।
অমৃতসর যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনে দিল্লী। দিল্লী থেকে অমৃতসর মেইল ট্রেনে অমৃতসর আসতে হবে। দিল্লি থেকে ভলভো বাসেও অমৃতসর যাওয়া যায়। এছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স কলকাতা থেকে অমৃতসর ফ্লাইট পরিচালনা করে।
গোল্ডেন টেম্পল এর আশেপাশে প্রচুর হোটেল আছে। ভাড়াও খুব কম। ৫০০ থেকে ৮০০ রুপির মধ্যে ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন। গোল্ডেন টেম্পল থেকে অমৃতসর রেলওয়ে জংশন এর দুরত্ব মাত্র ২০-৩০ মিনিটের (গাড়ীতে)।
১১. শিমলা
শিমলায় ভারতের অনেক দর্শনীয় স্থান দেখতে পারেন- জাখু পাহাড়, ভ্যাইসরিগেল লজ, সামার হিল, দ্যা রিজ্, মল্ রোড, তত্তপানি, কোটগড়, ফাগু, হিল স্টেশন কুফরি, সিমলা জল-অববাহিকা অভয়ারণ্য।
কলকাতা থেকে দিল্লী হয়ে বাই রোডে শিমলা আসা যায়। চাইলে ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন সিমলা। এছাড়াও কালকা মেইল ট্রেনে কলকাতা থেকে কালকা স্টেশন পৌছে টয় ট্রেনে যাতে পারেন শিমলা। কলকাতা ফেয়ারলি প্লেস থেকে শিবালিক টয় ট্রেনের টিকিট কাটা যায়।
মল রোড বা লাক্কার বাজার এর আশেপাশে ৮০০-১৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন।রুম ঠিক করার আগে রুম হিটার আর গিজার আছে কিনা যাচাই করে নিন।
১২. দার্জিলিং এবং মিরিক, পশ্চিম বঙ্গ
ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান দার্জিলিং এ গেলে যা যা দেখবেন:- টাইগার হিল, রক গার্ডেন, বাতাসিয়া লুপ, ঘুম মনেস্ট্রি, ঘুম স্টেশন, তেনজিং রক, নাইদু জু, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, দার্জিলিং এর চা বাগান, কেবল কার রাইড, মল রোড।
ঢাকা থেকে বুড়িমারী/ফুলবাড়ী পোর্ট দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যেতে পারেন। বুড়িমারী পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ৮২.৯ কিমি। আর ফুলবাড়ী পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ১২ কিমি। আবার কলকাতা থেকে বাস/ট্রেনে শিলিগুড়ি হয়েও দার্জিলিং যেতে পারেন। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যেতে পারেন।
দার্জিলিংয়ে ৫০০-৮০০ রুপির মধ্যে থাকতে পারেন বিকাশ ভবন লজ, মে ফেয়ার লজ, দাদাভাই লজ, কাঞ্চনজঙ্ঘা লজ, হোটেল ব্লু বার্ড, ড্রুক হোমস্টে ইত্যাদি হোটেল ও হোমস্টে তে।
১৩. কোচি
আরব সাগর এবং ভারতে নোনা জলের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ ভেম্বানাড়ের ওপর অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে কোচি। কোচিতে ঘুরে দেখতে পারেন:- আথিরাপাল্লি জলপ্রপাত মুকুন্দাপুরাম জলপ্রপাত, ভজোছাল জলপ্রপাত, ভেম্বানাড়ে নৌকায় ভাইপিন দ্বীপ।
কলকাতার হাওড়া থেকে এর্নাকুলম যাওয়ার দ্রুতগামী ট্রেন অন্ত্যোদয় এক্সপ্রেস। প্রতি শনিবার বিকেল পাঁচটায় হাওড়া ছেড়ে এর্নাকুলম পৌঁছায় সোমবার সকাল ছয়টায়। আছে দ্বিসাপ্তাহিক তিরুঅনন্তপুরম। এছাড়া হাওড়া থেকে করোমণ্ডল বা চেন্নাই মেলে চেন্নাই। চেন্নাই থেকে প্রতিদিন ছাড়ে তিরুঅনন্তপুরম মেল। আছে তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেসও, আলেপ্পি এক্সপ্রেস।
বিমানেও যেতে পারেন। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালুরু হয়ে কোচি। স্পাইস জেট এবং ইন্ডিগোর ফ্লাইট আছে। ভাড়া ৫৫০০-৬৫০০ রুপি জনপ্রতি।
কোচি এয়ারপোর্ট এর আশেপাশে এবং কোচি শহরে প্রচুর হোটেল আছে। ১২০০-১৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
১৪. পেরিয়ার
অভয়ারণ্যের জন্য বিখ্যাত ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান পেরিয়ার। সমুদ্রতল থেকে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের প্রধান বাসিন্দা হাতি। রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাদা বাঘ সহ আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী।
আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার, আলেপ্পি সৈকত, বিকাশনম সৈকত, থুম্পলি সৈকত, কুট্টানাড়, পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক, কুমিলি, পেরিয়ার টাইগার ট্রেইল পেরিয়ারের উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ আকর্ষণ।
পেরিয়ারের নিকটবর্তী স্টেশন কোট্টায়াম। দূরত্ব ৯৭ কিমি। গুরুদেব এক্সপ্রেস কোট্টায়াম পৌঁছোয় বিকেল ৪:৪৫-এ। গুয়াহাটি-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার রাত ১.০৫-এ কোট্টায়াম পৌঁছোয় রবিবার সন্ধে ৬.৪৫-এ। কোচি বা মুন্নার থেকে গাড়ি বা বাসে পেরিয়ার পৌঁছতে পারেন।
পেরিয়ারে ১০০০-১৫০০ রুপির মধ্যে মানসম্পন্ন হোটেল পাওয়া যায়।
১৫. মুন্নার, কেরালা
ভারতের অন্যতম সেরা হিলস্টেশন মুন্নারে দেখতে পারেন- এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, পল্লিভাসাল জলপ্রপাত, ইকো পয়েন্ট, কুন্ডলা ড্যাম,টপ স্টেশন ভিউ পয়েন্ট।
কোচি থেকে মুন্নারের দূরত্ব ১৩০ কিমি। কোচি এয়ার পোর্টের পাশে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। কোচি থেকে মুন্নার যাওয়ার বাসও পাওয়া যাবে।
মুন্নারে থাকার অনেক হোটেল আছে। ১২০০-২০০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
১৬. সিকিম
ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা হবে অথচ সিকিম আলোচনায় থাকবে না তা কি হয়?
কোথায় কোথায় বেড়াবেনঃ
নর্থ সিকিম:- লাচুং, ইয়ুমথাং ভ্যালী, জিরো পয়েন্ট, চোপ্তা ভ্যালী, গুরুডংমার লেক, মাউন্ট কাটাও।
সাউথ সিকিম: নামচি,
ইস্ট সিকিম: ছাংগু লেক, নাথুলা পাস, জুলুক
ওয়েস্ট সিকিম: পেলিং।
সিকিম যেতে হলে যেতে হবে গ্যাংটক। ঢাকা থেকে যে পোর্ট দিয়েই যান শিলিগুড়ি হয়েই আপনাকে গ্যাংটক যেতে হবে। চ্যাংড়াবান্ধা/বুড়িমারি পোর্ট থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮৫.৫ কিমি। আর বাংলাবান্ধা/ফুলবাড়ি পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ১২ কিমি। এই জন্য বাংলাবান্ধা/ফুলবাড়ি পোর্ট দিয়ে যাওয়া সুবিধাজনক। এছাড়া কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি আকাশপথেও যাওয়া যায়।
গ্যাংটক এম.জি মার্গ মল রোডে প্রচুর হোটেল আছে। মল রোডে ১০০০ থেকে ২৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পাবেন। মল রোড থেকে একটু নিচের দিকে গেলে ৮০০-১২০০ রুপির হোটেল পেয়ে যাবেন।
১৭. জামে মসজিদ, আহমেদাবাদ
এটি আহমেদাবাদের সবচেয়ে জৌলুশপূর্ণ মসজিদ। ১৪২৪ সালে সুলতান আহমেদ শাহ এর শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীর ঘেরা শহরের পুরনো অংশে মসজিদটির অবস্থান।
আহমেদাবাদের জামে মসজিদটি সে সময়ে নির্মিত ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ ছিল। মসজিদের পশ্চিমে আহমদ শাহ,তার পুত্র এবং প্রপৌত্র (আহমদ শাহ রওজা) এর সমাধি রয়েছে। কাছাকাছি রাণী এবং সুলতানের অন্যান্য স্ত্রীদের (রানী কা হাজিরা) কবর রয়েছে।
কলকাতা ও গুজরাটের মধ্যে বিমান চালনা করা বিমান সংস্থাগুলি হ’ল ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, গো এয়ার এবং ডেকান এয়ারওয়েজ।কলকাতা থেকে গুজরাটে পৌঁছানোর জন্য যদি আপনি ট্রেনে দু’দিনের বেশি সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত হন তবে ট্রেন নিন। হাওড়া থেকে ট্রেন নম্বর ১২৯০৬, ১২৯৩৮ এবং ১২৮৩৪ আদি এক্সপ্রেস আহমেদাবাদের উদ্দ্যেশে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ছেড়ে যায়।
অনলাইন বুকিংয়ের মাধ্যমে ৮০০-১৪০০ রুপির মধ্যে হোটেল পাওয়া যায়। এছাড়া সরাসরিও হোটেল ঠিক করা যায়।
১৮. নাগাল্যান্ড
ভারতের আরকটি দর্শনীয় জায়গা নাগাল্যান্ডের যে স্পটগুলো ভ্রমণ করতে পারেন:
চাংতংগ্যা, ফকিম অভয়ারণ্য, ইন্টাকি অভয়ারণ্য, জাপফু চূড়া,খোনোমা গেট, মেলুরি, নাগাল্যান্ড মিউজিয়াম, নাগানিমোরা, পুলি ব্যাজ অভয়ারণ্য, নাগাল্যাণ্ড রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম, তুলি শহর এবং ‘ট্রেকারদের স্বর্গ’ খ্যাত জুকৌ উপত্যকা।
শিলং কিংবা গুয়াহাটি যেকোন একটি রুট দিয়ে নাগাল্যান্ড যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাসে/ট্রেনে সিলেট হয়ে প্রথমে ডাউকি সীমান্ত পেরিয়ে ডাউকি থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে অথবা শেয়ার করে শিলং যেতে হবে।
শিলং থেকে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। গুয়াহাটি থেকে নাগাল্যান্ড যেতে হলে আপনাকে শিলং থেকে ট্যাক্সি করে যেতে হবে গুয়াহাটি। গুয়াহাটি থেকে নাগাল্যান্ড এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারেন ডিমাপুর। ডিমাপুর থেকে ট্যাক্সিতে কোহিমা।
১২০০ রুপির মধ্যে নাগাল্যান্ডের যে হোটেল গুলোতে থাকতে পারেন:- হোটেল জাপফু, হোটেল পাইন, হোটেল ক্যাপিটাল, হোটেল শ্যারন।
১৯. হ্যাভলক আইল্যান্ড (রাধানগর বীচ-এলিফ্যান্ট বীচ-কালাপাথর বীচ-বিজয়নগর বীচ) আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
হ্যাভলক আইল্যান্ডের সব থেকে জনপ্রিয় সৈকত হল রাধানগর বীচ৷ ২০০৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন একে ‘বেস্ট বীচ ইন এশিয়া’র স্বীকৃতি দেয়৷ অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিচে শ্বেতশুভ্র রুপোলি বালুচর রোদে ঝকঝক করতে থাকে। রাধানগর ছাড়াও আর যে তিনটি বীচ জনপ্রিয় সেগুলি হল কালাপাথর বীচ, বিজয়নগর বীচ এবং এলিফ্যান্ট বীচ৷
কলকাতা থেকে প্লেনে বা জাহাজে করে পোর্টব্লেয়ার৷ সেখানকার জেটিঘাট থেকে সপ্তাহের প্রতিদিনই সরকারি ও বেসরকারি ফেরি যায় হ্যাভলকে৷ সময় লাগে ২ ঘণ্টা৷ ভাড়া জনপ্রতি ১৪৫০ রুপি। অনলাইন বা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখতে পারেন।
হ্যাভলক আইল্যান্ডে হোটেল/রিসোর্ট বেশ খরচসাধ্য। ১৫০০ থেকে ২০০০ রুপির মধ্যে হোটেল রুম পাওয়া যায়।
২০. মক্কা মসজিদ, হায়দ্রাবাদ
দশ হাজার মুসল্লীর ধারনক্ষমতা সম্বলিত মক্কা মসজিদ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। এটি পুরাতন হায়দ্রাবাদ শহরের একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। মসজিদটির অনতিদূরেই ঐতিহ্যবাহী চৌমহল্লা প্রাসাদ, লাদ বাজার ও চারমিনার অবস্থিত।
মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ এর সময়ে ১৬১৪ সালে মসজিদটির নির্মাণ পরিকল্পনা করা হলেও এর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় ১৬৮৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে। এর মূল ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইট প্রস্তুত করা হয় সৌদি আরবের মক্কা থেকে আনা মাটি দিয়ে। একারণেই মসজিদের নামকরণ করা হয় “মক্কা মসজিদ”।
ঢাকা থেকে কলকাতা বা দিল্লী হয়ে বিমানে হায়দ্রাবাদ যাওয়া যায়। তবে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সরাসরি একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি সেকেন্দ্রাবাদ যায় ১২৭০৩ ফলকনামা এক্সপ্রেস। এছাড়াও ভাইজাগ ভ্রমণ শেষ করে হায়দ্রাবাদ যাওয়া যেতে পারে, ভাইজাগ থেকে সেকেন্দ্রাবাদ যায় ২২২০৩ দুরন্ত এক্সপ্রেস।
হায়দ্রাবাদে থাকার সেরা জায়গা তেলেঙ্গানা পর্যটনের হোটেল তারামাটি, সাধারণ দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৪০০ টাকা, এসি দ্বিশয্যা ২০০০ টাকা, এসি স্যুইট ২৫৫০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০২৩৫২১৮৮৪। এছাড়াও হোটেল রাজমাতা, ভাড়া ১০০০-১৪০০ টাকা, যোগাযোগ – ০৪০৬৬৬৬৫৫৫৫। হোটেল ইম্পিরিয়াল, ভাড়া ৭০০-১২০০ টাকা, যোগাযোগ– ০৯৮৩০১৩৩৫১১। হোটেল রয়্যাল, ভাড়া ৫০০-১২০০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০-২৩২০৪১১১। হোটেল রাজধানী, ভাড়া ১২০০-২১০০ টাকা, যোগাযোগ– ০৯৮০৪৯৭৯৪১৪। রেলের রিটায়ারিং রুম আছে হায়দ্রাবাদে ও সেকেন্দ্রাবাদে।
ভারতের সেরা দর্শনীয় স্থান থেকে মাত্র ২০ টি উল্লেখ করা খুবই কঠিন কাজ। কেননা কথায় আছে, কেউ যদি ভারত ঘুরে দেখতে পারে তবে তার অর্ধেক পৃথিবী দেখা হয়ে যাবে। এতটা ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের অধিকারী ভারত।
আমরা মুসলিম ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সেরা ২০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার ভারত সফরে এই তালিকাটি যথেষ্ট কাজে লাগবে।
শেষ কথাঃ ভারতের রাজনীতি পরিস্থিতি বুঝে ভ্রমন করবেন। মাজার, মন্দির বা রিস্কি এলাকা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করায় উত্তম। একাকি ভ্রমনের চাইতে পরিচিত সঙ্গীর সাথে ভ্রমন করার চেষ্টা করবেন।