বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা।বান্দরবান মূলত একটি পার্বত্য অঞ্চল। ভৌগোলিক কারনেই এই অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। পাহাড়ে ঘেরা এই জেলার প্রতি দেশ ও বিদেশের অসংখ্য টুরিস্টদের এক বিশেষ মোহ রয়েছে।
তাইতো প্রতিদিনই হাজার হাজার ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা হয় এই জেলায়।একটা দুটো নয় বরং বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্রের জন্য এই জেলা বিখ্যাত। তাইতো বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তের পর্যটক মোটামুটি একটু লং ট্যুর এর প্লান করতে চাইলেই সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয় বান্দরবানকে।সারা বাংলাদেশের মানুষ বান্দরবানের নাম শুনলেই এটাকে কোনো জেলা হিসেবে না ভেবে বড়ং একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে কলপনা করে।এই জেলায় ঘুরে দেখার মতো আছে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
আজকের আয়োজনে বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য সব দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো এবং সেই সাথে এসকল পর্যটন এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।এখান থেকে আরও জানতে পারবেন কিভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলাশ পৌছাবেন ও যেতে ভাড়া কেমন পড়বে।
আপনি যদি বান্দরবান যাওয়ার কথা চিন্তা করে থাকেন অথবা বান্দরবান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে একটুও এদিক সেদিক মনযোগ না দিয়ে পুরো লেখাটা মন দিয়ে পড়ুন। কিছু সময়ের জন্য চলুন ঘুরে আসি বান্দরবান এর বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট গুলো থেকে।
বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানের তালিকা
- আমিয়াখুম জলপ্রপাত
- কিয়াচলং লেক
- ঋজুক জলপ্রপাত
- কেওক্রাডং
- চিংড়ি ঝর্ণা
- জাদিপাই ঝর্ণা
- ডামতুয়া ঝর্ণা
- ডিম পাহাড়
- তাজিংডং
- ত্লাবং ঝর্ণা
- দেবতাখুম
- নাফাখুম জলপ্রপাত
- নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র
- নীলাচল
- বগাকাইন হ্রদ
- বান্দরবান সেনানিবাস
বান্দরবন কিভাবে যাবেন? বাস ভাড়া কত?
ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে অসংখ্য বাস নিয়মিত যাতায়াত করে ঢাকা টু বান্দরবান রুটে।ঢাকা টু বান্দরবান এর বেশ কয়েকটি এসি ও নন এসি বাস সার্ভিসের নাম ও সম্ভাব্য বাস ভাড়া তুলে ধরা হলো।এই বাসে চেপে আপনি সরাসরি ঢাকা থেকে রাঙামাটি চলে যেতে পারবেন।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম নন এসি বাস সার্ভিস
১.ইউনিক সার্ভিস।
ভাড়া– ৯০০ টাকা
২.হানিফ এন্টারপ্রাইজ।
ভাড়াঃ ৯০০ টাকা
৩. এস আলম সার্ভিস।
ভাড়াঃ ৯০০ টাকা
৪. শ্যামলী পরিবহন।
ভাড়াঃ ৯০০ টাকা
৫. সৌদিয়া ট্রাভেলস।
ভাড়াঃ ৯০০ টাকা
৬. ডলফিন পরিবহন।
ভাড়াঃ ৮৫০ টাকা
৭. সেন্টমার্টিন পরিবহন।
ভাড়াঃ ৯০০ টাকা
ঢাকা টু বান্দরবান এসি বাস সার্ভিস
১. সেন্টমার্টিন পরিবহন ( স্লিপার বেড)
ভাড়াঃ ১৮০০ টাকা
২. দেশ ট্রাভেলস।
ভাড়াঃ ১৭০০ টাকা
৩. সৌদিয়া সিল্কি
ভাড়াঃ ১৪০০ টাকা
৪. সেন্টমার্টিন পরিবহন ( ইকোনমি ক্লাস)
ভাড়াঃ ১২০০ টাকা
৫. শ্যামলী পরিবহন
ভাড়াঃ ১৭০০ টাকা
৬. রবি এক্সপ্রেস
ভাড়াঃ ১৮০০ টাকা
এভাবে বাসে যেতে না চাইলে বিভিন্ন ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস এজেন্সির ট্যুর প্যাকেজেও চাইলে ঘুরে আসতে পারবেন বান্দরবান। সেক্ষেত্রে খরচও তুলনামূলক কম হয়।
কেন যাবেন বান্দরবান?
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বান্দরবান,যেখানে একবার গেলে বার বার যেতে ইচ্ছে করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই জেলায় রয়েছে দেখার মতো রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। এসব দর্শনীয় স্থানগুলোর বেশিরভাগই বান্দরবানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহক।এখানে এতো এতো পর্যটন এলাকা রয়েছে যে, আপনি একবার গিয়ে সবগুলো এলাকা ঘুরে আসতে পারবেন না। চলুন বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি পর্যটন এলাকা সম্পর্কে জেনে আসি।
১. নীলাচল
বান্দরবান এর সবথেকে আকর্ষণীয় স্থান হলো নীলাচল।বান্দরবান ঘুরতে এসে সাধারণত নীলাচল না দেখে কেউ ফেরত যায় না।বান্দরবান জেলার টাইগার পাড়ার পাহাড়ের চূড়ায় এই পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২০০ ফুট।এই পাহাড়ের চূড়া থেকে পুরো বান্দরবান শহরটি দেখা যায় বলে এটি খুব বেশি জনপ্রিয়।
ভাগ্য ভালো থাকলে আর কুয়াশা কম থাকলে এই পাহাড় চূড়া থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখার সৌভাগ্যও হয়।
এই পাহাড়ের খাদে খাদে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পর্যটন কেন্দ্র। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো একটি আরেকটির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।আর পাহাড়ের এক এক দিক থেকে চারপাশের সৌন্দর্যও একেক রকম।
পাহাড়ের একদম শেষ চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে “নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স “। এখানে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ৩০ টাকা প্রবেশমূল্য পরিশোধ করতে হবে।
এখানকার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো নীল রং-এর রিসোর্ট।এই রিসোর্টে আপনি সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করার অনুমতি পাবেন।
নীলাচলকে কিন্তু বাংলার দার্জিলিং বলা হয়। তাহলে বুঝতেই তো পারছেন এর সৌন্দর্য কতোটা বেশি। বান্দরবান থেকে আপনি অটো রিক্সা,চান্দের গাড়ি অথবা জীপ ভাড়া করে নীলাচল পৌছুতে পারবেন।দলের লোক ও সময়ের ভিত্তিতে রিক্সা ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পাড়ে।জীপ অথবা চান্দের গাড়িতে যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা। চান্দের গাড়ি হলো এক ধরনের খোলা জীপ।
নীলাচলে রাত কাটাতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে স্কেপ রিসোর্টে।এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি কটেজ ও কক্ষ রয়েছে।এক রাতের জন্য ভাড়া নেবে ৩০০০ টাকা।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নাম্বারঃ ০১৭৭৭-৭৬৫৭৮৯
বান্দরবান গিয়ে যদি নীলাচল না দেখে আসেন তাহলে আপনি এক নজরে বান্দরবান দেখার বড় একটি সুযোগ মিস করে ফিরবেন।
আরো পড়ুনঃ
- রাঙামাটি জেলার দর্শনীয় স্থান
- খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান
- চট্টগ্রামের জনপ্রিয় খাবার সমূহ
২. আমিয়াখুম জলপ্রপাত
বান্দরবানের পাহাড়ি নদী সাঙ্গু।এই নদী চলার পথে তৈরি করেছে ছোট বড় অসংখ্য জলপ্রপাত। এসব জলপ্রপাতের মধ্যেই খুবই জনপ্রিয় একটি জলপ্রপাত হলো আমিয়াখুম জলপ্রপাত।
আগেই বলে রাখি আপনি যদি খুব বেশি এডভেঞ্চার প্রেমি না হয়ে থাকেন এবং শারিরীক ভাবে স্ট্রং না হয়ে থাকেন তাহলে এই জলপ্রপাত দেখার স্বপ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
এই জলপ্রপাত দেখতে যেমন অসম্ভব রকম সুন্দর ঠিক একই ভাবে এই জলপ্রপাতে যাওয়ার পথও তেমনই দুর্গম।
কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আটকে রাখতে পারেনি এই দুর্গম পথও।কারন এই পাহাড়ি ঝর্ণার আছে এক বিশেষ মায়া, এখানে চলে আসলে প্রকৃতির কোলাহলও আপনাকে বিরক্ত করতে পারবে না।আপনি অনুভব করতে পারবেন এক মায়ায় ভরা প্রকৃতি,যেখানে শুধু আপনি, প্রকৃতি ও এক পাহাড়ি ঝর্ণার বসবাস।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার নাক্ষিয়ং নামক দুর্গম স্থানে এই জলপ্রপাত অবস্থিত।
দুটো পথ দিয়ে আমিয়াখুম জলপ্রপাতে যাওয়া যায়। নাফখুম হয়ে অন্যদিকে পদ্মামুখ / পদ্মঝিড়ি দিয়ে।
নাফখুম হয়ে যেতে চাইলে আপনাকে বান্দরবান থেকে বাস বা জীপে করে থানচি পৌছুতে হবে।থানচি যেতে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। এখান থেকে অবশ্যই আপনাকে একজন গাইড নিতে হবে।গাইড চার্জ সাধারণত ৫০০ টাকা হয়ে থাকে।
থানচি থেকে নৌকাযোগে আপনাকে চলে যেতে হবে রোমাক্সি বাজার।এখানে জনপ্রতি নৌকা ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা।নৌকা রিজার্ভ করে যেতে চাইলে গুনতে হবে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।রোমাক্সি থেকে তিন চার ঘন্টা পায়ে হেটে গেলে দেখতে পাবেন নাফখুম ঝর্না।এই ঝর্নাটিও খুবই চমৎকার।
নাফখুম থেকে আবার তিন চার ঘন্টা হাটলে পৌছে যাবেন সাজিয়াপারা।সাজিয়াপাড়া থেকে আবার গাইড ভাড়া নিয়ে তিন চার ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলবে বহু প্রতীক্ষিত মনোমুগ্ধকর আমিয়াখুম জলপ্রপাতের।যদি বিশ্রাম নেয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে একরাত থাকতে পারবেন সাজিয়াপাড়া গ্রামে।
পদ্মমুখ বা পদ্মঝিড়ি হয়ে আমিয়াখুম জলপ্রপাত যেতে চাইলে আপনার সময় লাগবে দুই থেকে তিনদিন। অবশ্য এই পথে শুধু আমিয়াখুম জলপ্রপাতই নয় দেখতে পাবেন আরও বেশ কিছু পাহাড়ি ঝর্ণা ও পাহাড়ি নদী ও পাহাড়ি রাস্তার মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এই পথে যেতে হলেও আপনাকে বান্দরবান থেকে প্রথমে থানচি চলে আসতে হবে।
থানচি থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে আসবেন পদ্মমুখ। পদ্মমুখ থেকে সরাসরি থুইসাপাড়া।সেদিন রাতটা আপনাকে থুইসাপাড়াতেই কাটাতে হবে।সকালে থুইসাপাড়া থেকে রওয়ানা হয়ে দেবতা পাহাড় পাড়ি দিয়ে দেখতে চলে যাবেন ভেলামুখ,আমিয়াখুম জলপ্রপাত ও সাতভাইখুম।সারাদিন ঘোরাফেরার পর রাত্রিযাপনের জন্য আবারও চলে আসতে হবে থুইসাপাড়া।
পড়ের দিন চাইলে ফিরে আসতে পারেন অথবা থুইসাপাড়া থেকে ঝিরিপথ দিয়ে পায়ে হেটে দেখে আসতে পারেন নাফখুম ও রোমাক্সিখুম।রোমাক্সিখুম থেকে ট্রলারে করে চলে আসবেন সরাসরি থানচি।আসার সময় পথে পড়বে বড়পাথর ও তিন্দু নামক দর্শনীয় স্থান।
আমিয়াখুম জলপ্রপাত যাওয়াটা যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমন এখানকার প্রত্যেকটা স্থানই দেখতে অনন্য। এই পাহাড়ি এলাকার সৌন্দর্য দেখে আপনি যাত্রাপথের সকল কষ্ট ভুলে যেতে বাধ্য হবেনই
এখানে থাকার জন্য সবথেকে নির্ভরযোগ্য স্থান হলো সাজিয়াপাড়া ও জিন্নাহ পাড়া।এই গ্রামের গৃহস্থ ঘরে আপনি রাত্রি যাপনের সুযোগ পাবেন।সেক্ষেত্রে প্রতি রাতের জন্য আপনাকে ১৫০ টাকা গুনতে হবে।থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থার যাবতীয় দায়িত্ব সব গাইডই বহন করে।
৩. চিম্বুক পাহাড়
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলোর মধ্যে চিম্বুক পাহাড় তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে।এই পাহাড়ে পর্যটকদের ভ্রমনের মূল উদ্দেশ্য হলো খুব কাছ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা।এই পাহাড়ে আপনি দেখতে পারবেন বাংলাদেশের আদিবাসীদের সহয সরল জীবন যাপন।আছে পাহাড়ি নদী “সাঙ্গু”।
সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
যতো পাহাড়ের উপরের দিকে উঠতে থাকবেন ততোই মনে হবে আপনি মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন।নিচের দিকে তাকালে মেঘ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারবেন না।মনে হবে আপনি মেঘের ওপর ভেসে আছেন।সে যেন এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি। চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে ” চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র”।
বান্দরবান সদর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ ফুট। চিম্বুক পাহাড় ভ্রমন করতে হলে আপনাকে প্রথমে চলে আসতে হবে বান্দরবানের রুমা বাসস্ট্যান্ডে। এখান থেকে চান্দের গাড়ি,পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের জন্য বিশেষ বাস,ল্যান্ড রোভার বা পাজেরো ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন চিম্বুক পাহাড়ের মায়ায় ঘেড়া পাহাড়ি রাস্তায়।
৪ টার পরে এখানে কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না।তাই ৪ টার আগেই চিম্বুক পাহাড়ের ভ্রমন শেষ করে ফিরে আসবেন।
পাহাড়ি এলাকা বিধায় এখানে থাকার জন্য কোনো হোটেল বা কটেজ নেই।তাই আপনাকে দিনে দিনেই ফিরে আসতে হবে। খাওয়া দাওয়ার জন্য চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটন কেন্দ্রের সামনে পাবেন পাহাড়ি আদিবাসীদের খাবার হোটেল।আগে থেকে বলে রাখলে এখানে তারা দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে দেবে।তাছাড়া পাহাড়ের পাশে আছে একটি ক্যান্টিন। এই ক্যান্টিনটি সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে পরিচালিত।এখান থেকে আপনি সকালের ও দুপুরের খাবারের ঝামেলা সেরে নিতে পারবেন ।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চ এই চিম্বুক পাহাড়। বান্দরবান ঘুরতে আসলে অবশ্যই একবার চিম্বুক পাহাড়ের বুকে ভ্রমন করে আসবেন।
৪. ডিম পাহাড়
ডিম পাহারের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের সবথেকে উঁচু সড়ক।ডিম পাহাড়ে মূলত পাহাড়ি এই উঁচু সড়কে গাড়ি নিয়ে ঘোরার অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই সকল পর্যটকের ভীড় জমে।বান্দরবানের অন্য সব পাহাড়ের মতোই খুব জনপ্রিয় একটি পাহাড় হলো এই ” ডিম পাহাড় “।
পাহাড়টি দেখতে অনেকটা ডিমের মতো বলে এর নাম রাখা হয়েছে ডিম পাহাড়। মেঘের রাজ্যে পাহাড়ি রাস্তার, দিগন্ত, কুয়াশা সব একই সাথে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে ডিম পাহাড়ে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৬০০ ফিট।ডিম পাহাড়ের বিখ্যাত এই রাস্তার উচ্চতা ২৫০০ ফিটেরও বেশি।
ডিম পাহাড় যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে করে চলে যেতে হবে থানচি বাজার।থানচি বাজার থেকে আপনি ডিম পাহাড় যাওয়ার জন্য পেয়ে যাবেন চান্দের গাড়ি বা মোটরবাইক। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারবেন ডিম পাহাড়ের সেই বিখ্যাত সড়ক যার উচ্চতা পুরো বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম।
ডিম পাহাড়ে ঘুরতে গেলে খাওয়া দাওয়া করার মতো কোনো হোটেল পাবেন না।খাওয়া দাওয়া করতে চাইলে আপনাকে থানচি চলে আসতে হবে।
পাহাড়ের উপরে থাকার জন্যও কোনো সুব্যবস্থা নেই।রাত্রিযাপনের জন্য থাকচিতে হোটেল পাবেন।থানচির একটি নামকরা হোটেল- “দি হোটেল ডিসকভারি থানচি”।
মোবাইলঃ ০১৭৪৮-৯১২১২৭
ই-মেইলঃ [email protected]
” দি হোটেল ডিসকভারি থানচি” তে থাকতে গেলে আপনার খরচ পড়বে ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
৫. তাজিংডং
তাজিংডং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ক্রোমাক্রী থানার সাইচল পর্বতসারীতে অবস্থিত।পাহার ট্রেকিংই এখানে ঘুরতে আসার মূল উদ্যেশ্য। আপনি যদি চান পাহাড় ক্লাইম্বিং করে বাংলাদেশের সবথেকে উঁচু পর্বতের চূড়ায় যাওয়ার মতো অসাধারন অনুভূতি উপভোগ করতে তাহলে চলে আসুন তাজিংডং।এখানে আপনি দেখতে পাবেব পাহাড়ি উপজাতি গ্রাম ও তাদের জীবনধারা।
চাইলে একরাত কাটিয়ে যেতে পারবেন এই পাহাড়ি গ্রামে।মোটকথা চলমান যান্ত্রিক জীবন থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে একটু মানসিক প্রশান্তির অনুভূতি। তাজিংডং ভ্রমন করে আপনি সবথেকে বেশি মজা পাবেন শীতকালে।তাজিংডং এর রাস্তা খুবই দুর্গম এবং পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার কারনে বর্ষার সময় এই পাহাড়ে ভ্রমণ খুবই ঝুকিপূর্ণ।
তাজিংডং রুমায় অবস্থিত হলেও রুমা থেকে আপনি শুধু কেওক্রাডং পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি পাবেন । তাই তাজিংডং যেতে চাইলে আপনাকে থানচি হয়েই যেতে হবে।বান্দরবান থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে আপনি থানচি যাওয়ার জন্য পেয়ে যাবেন লোকাল বাস এবং চান্দের গাড়ি।বাসে যেতে চাইলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা এবং যেতে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা।
চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে খরচ পড়বে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা এবং যেতে সময় লাগবে সারে তিন ঘন্টা তেকে পাঁচ ঘন্টা। থানচি নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হবে শপরকর পাড়া।এবং এই পথটুকুতে অবশ্যই গাইড নিয়ে যেতে হবে।ঐ দিন রাতটা আপনাকে শেরকর পাড়াতেই কাটাতে হবে।পরদিন সকালে বের হয়ে গেলে চূড়ায় উঠে আবার দিনে দিনেই থানচি পৌছুতে পারবেন।
আবার চাইলে চাইলে আপনি শেরকর পাড়া থেকে তিন্দু হয়েও থানচি পৌছুতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র পথে পাবেন।
তাজিংডং এ থাকার মতো সুবিধাজনক স্থান নেই বললেই চলে।থাকতে চাইলে আপনাকে বিজিবি কটেজ অথবা থানচি কটেজে থাকতে হবে। এই দুটি কটেজ থানচিতে অবস্থিত।
৬. চিংড়ি ঝর্ণা
বান্দরবান মানেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়ি ঝর্ণা। এসব পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোক রূপের মোহ যে কতোটা বেশি তা শুধুমাত্র ঝর্নার পাশে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকতে পারলেই বোঝা যায়।
বান্দরবান এর ঝর্নাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঝর্না হলো চিংড়ি ঝর্ণা।
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় চিংড়ি ঝর্ণা অবস্থিত।
বগা লেক যেতে হলে আপনাকে বান্দরবান থেকে রুমা বাজার চলে আসতে হবে।বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার আসতে পারবেন। রুমা বাজার নেমে গাড়ি বদল করে আপনাকে রওয়ানা দিতে হবে বগা লেক এর উদ্যেশ্যে।সময়ের দিকে আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।কেননা চারটার পর রুমা বাজার থেকে বগা লেকের উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি ছাড়ার অনুমতি নেই।তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে।
রুমা বাজার থেকে বগা লেক পৌছুতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টার মতো।আসতে আসতে প্রায়ই রাত হয়ে যায় তাই ঐ দিন রাতটা বগা লেকে কাটানোই ভালো।বগা লেকে রাত্রি যাপনের জন্য পাবেন বিভিন্ন রেস্ট হাউজ বা কটেজ।এই কটেজেই আপনি খেতে পারবেন।তাছাড়া নিজেরাও রান্না করে খেতে পারেন।
পরদিন সকালে বেরিয়ে পরবেন চিংড়ি ঝর্ণা দেখতে। বগা লেক থেকে কোনো পর্যটক ঘুরতে বের হলে গাইড ভাড়া নেয়া বাধ্যতামূলক। একদিনের জন্য গাইজ চার্জ নিবে ৫০০ টাকা।চিংড়ি ঝর্ণা দেখতে যেতে হলে আর্মি ক্যাম্পে আপনার নাম,ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে পাহাড়ে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে।
সব ফর্মালিটিস শেষ, এবার গাইড সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার পালা।বগা লেক থেকে চিংড়ি ঝর্ণা পর্যন্ত ট্রেকিং করাটা কিছুটা কষ্টকর।পাহাড়ি খাড়া ঢাল দিয়ে পথ চলতে চলতে চলে যাবেন প্রকৃতির অপার বিষ্ময়কর মায়াবি ঝর্ণার জলধারায়।সারাদিন ভ্রমন শেষ করে আপনাকে রাত্রি যাপনের জন্য আবার চলে আসতে হবে বগা লেক।
ভ্রমণ পিপাসুদের খুবই আকর্ষণের জায়গা পাহাড় ও ঝর্ণা।শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে চলে আসুন পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানে।এখানকার প্রতিটা স্পষ্ট ভ্রমনই আপনাকে দেবে এক একটস রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা। এই জেলার প্রতিটা পর্যটন কেন্দ্রের প্রকৃতিই আপনাকে হাতছানি দিতে থাকবে।তাই বান্দরবান আসতে চাইলে মোটামুটি একটা লং ট্যুর এর প্লান করে আসবেন,যাতে বিশেষ বিশেষ পর্যটন গুলো সব ঘুরে দেখে যেতে পারেন।