ঘুরে আসুন বাঞ্ছারামপুরের স্বপ্নদ্বীপ থেকে

চারদিকে মেঘনা নদীর অথৈ পানির প্রবাহ আর তারই মাঝে স্বপ্নের রাজ্যাের মতো আপন সাজে সজ্জিত হয়ে হয়ে আছে স্বপ্নদ্বীপ। প্রকৃতি যেন তার সকল রূপ ও সৌন্দর্য এই দ্বীপে এসে মেলে ধরেছে। প্রকৃতিপ্রেমী মাত্রই স্বপ্নে ঘেরা এই দ্বীপের প্রেমে পড়ে যাবে। মেঘনা নদীর বুকে জোগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য একে একটি রিসোর্টে পরিনত করা হয়ে।

সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা “স্বপ্নদ্বীপ পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট” এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ। ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশে যারা আছেন তারা চাইলেই খুব সহজে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন স্বপ্নদ্বীপ থেকে৷ তাছাড়া যে কোনো পিকনিক, কর্পোরেট অনুষ্ঠান, বিয়ে কিংবা পার্টির জন্য পুরো দ্বীপটি বুকিং করে রাখতে পারবেন।

সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কৃত্রিম ডেকোরেশন এই দুই এর কম্বিনেশনে এক উপভোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে এক পলকে ঘুরে আসতে পারবেন মেঝনার বুকে জোগে ওঠা সপ্নদীপ থেকে। জনাতে পারবোন স্বপ্নদ্বীপ যাওয়ার উপায়, সেখানকার উপভোগ্য বিষয়বস্তু ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

স্বপ্নদ্বীপ এর অবস্থান

মেঘনা নদীর প্রবাহ পথের মধ্যে জেগে ওঠা স্বপ্নদ্বীপ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে এই দ্বীপের মোট দূরত্ব মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা হয়ে খুব সহজেই স্বপ্নদ্বীপে পৌঁছানো যায়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবং ঢাকা থেকে কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে এই স্পট টি খুবই জনপ্রিয়।

ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই এখানে ছুটে আসে প্রকৃতির মাঝে একটু প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলতে। তাছাড়া ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাৎসরিক বনভোজন করতে স্বপ্নদীপকে আদর্শ পিকনিক স্পট হিসেবে বাছাই করে। অনেকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্টির আয়োজন একটু ব্যতিক্রমী ধারায় করার জন্য স্বপ্নদ্বীপে চলে আসে। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হলেও মূলত এই স্পটের বেশিরভাগ পর্যটক রাজধানী কেন্দ্রিক।

স্বপ্নদ্বীপের উপভোগ বিষয়বস্তু

প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য স্বপ্নদ্বীপ একটি উপযুক্ত জায়গা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক বাস্তব চিত্র স্বচক্ষে দেখতে পারবেন এই দ্বীপে ঘুরে আসার মাধ্যমে। তাছাড়া দ্বীপে নির্মিত রিসোর্ট বিনোদনের মাত্রায় এক ভিন্ন ধারা নিয়ে এসেছে। ফলে ছোট থেকে বড় সবার কাছেই স্বপ্নদ্বীপ সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। স্বপ্নদ্বীপে গিয়ে যে সকল বিষয় উপভোগ করতে পারবেন তার একটি ধারণা দিয়ে রাখছি।

১. মেঘনার বুকে নৌকা ভ্রমণ

আড়াইহাজারের বিশনন্দী ফেরিঘাট থেকে স্বপ্নদ্বীপ পর্যন্ত যাওয়ার পথে ২০ মিনিটের একটি নৌকা ভ্রমনের সুযোগ পাবেন। মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউয়ে দুলে দুলে নৌকায় ভেসে স্বপ্নদীপ যাওয়ার সময় থেকেই ভ্রমনের মুগ্ধতা উপভোগ করতে পারবেন৷

তাছাড়া দ্বীপের নিজস্ব স্পিডবোট, কায়াক বোট ও প্যাডেল বোটে দ্বীপের চারদিকে সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন৷ দ্বীপে প্রবেশের জন্য নদীর পাড়ে পাকা ঘাট বাঁধানো আছে। তাই যাত্রীদের ওঠানামা করতে কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয় না। নদীর সাথে জীবনের একাত্মতা তৈরি করতে হলেও একবার ঘুরে আসা উচিত স্বপ্নদ্বীপ থেকে।

২. কিডস জোন

পরিবারের ছোটদের জন্যও স্বপ্নদ্বীপ একটি উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র। বাচ্চাদের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের রাইডস। যেমন: দোলনা, স্লিপার, নাগরদোলা, যান্ত্রিক নৌকা, মিনি ট্রেন সহ ছোট ছোট কার্টুন ভাষ্কর্য ও সুবিশাল খেলার মাঠ। এখানে শিশুদের সারা দিনের জন্য ছেড়ে দিলেও তাদের আনন্দ উদযাপন শেষ হতে চাইবে না।

৩. কটেজ ও টেন্ট

পুরো দ্বীপে হাঁটাহাঁটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু বিশ্রাম নিতে পারবেন পথের ধারে তৈরি করে রাখা কটেজ এবং টেন্ট এর মধ্যে। কোনোটির মধ্যে বসার জন্য চেয়ার টেবিল রয়েছে আবার কোনোটির মধ্যে সবুজ ঘাসের চাঁদোয়া বিছানো। কটেজগুলো তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা আঙ্গিকে। কিছু কটেজ তৈরি করা হয়েছে ফেলনা প্লাস্টিক বোতল দিয়ে আবার কিছু কটেজ তৈরি করা হয়েছে বাঁশ, বেত কিংবা কাঠ দিয়ে।

৪. বাগানের নিরবতা

দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় বৈচিত্র্যময় সব গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করা হয়েছে। ঘাট বাঁধানো পুকুরের পাশ দিয়ে সুপারি গাছের লম্বা সারি ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারবেন নারকেল, পেয়ারা সহ বিভিন্ন গাছের ঘন বনের মধ্যে। নদীর বুকে চিরসবুজ প্রকৃতির এক অনন্য সংমিশ্রণ যে কাউকে মুগ্ধ করতে সক্ষম।

৫. কৃত্রিম পাহাড় বা উঁচু টিলা

দ্বীপের বুকে কৃত্রিম পাহাড় তৈরির এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়েছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফল স্বরূপ মাটির একটি উঁচু টিলা তৈরি হয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে পুরো দ্বীপের ভিউ খুব ভালোভাবে পরিদর্শন করা যায়। পাশাপাশি এখান মেঘনা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ধরা দেবে আপনার চোখে।

৬. মেঘনার পানিতে গোসল

দ্বীপের কূলে আছড়ে পড়া নদীর পানিতে চাইলে গা ভিজিয়ে নিতে পারেন। পরবর্তীতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই যারা নদীর বুকে সাতার কাটতে ও গোসল করতে চান তারা অবশ্যই প্রয়োজনীয় পোশাক সাথে করে নিয়ে যেতে ভুলবেন না। নদীতে ভাসতে ভাসতে পুরো যাত্রা পথের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।

৭. ক্যাম্পিং

নদীর তীরে ক্যাম্পিং করার সকল ধরনের ব্যবস্থা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ করে দিতে পারবে। যাবতীয় সকল সরজ্ঞাম তাদের সংগ্রহে রয়েছে। তাই হাতে সময় থাকলে একরাত থেকে যেতে পারেন স্বপ্নদ্বীপের বুকে। তারাভরা আকাশের নিচে তাবুর সামনে বসে জ্যোৎস্না বিলাশ করার অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না।

৮. বারবিকিউ পার্টি

ক্যাম্পিং করবেন আর বারবিকিউ পার্টি হবে না এটা আবার হয় নাকি। বারবিকিউ করার জন্য সবকিছুই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করবে। চাইলে ক্যাম্প ফায়ার করে তার পাশে বসে দলবল নিয়ে বারবিকিউ করতে পারেন। জীবনে এমন একটা আনন্দঘন মুহূর্ত কোনো ভাবেই মিস করা উচিত নয়।

এছাড়াও কর্পোরেট পার্টি কিংবা যে কোনো অনুষ্ঠানের যাবতীয় সকল আয়োজন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে করে থাকে। রিসোর্টের আনাচে কানাচে প্রায় সব জায়গাতেই আছে নজরকাড়া ডেকোরেশন৷ আরও আছে শাপলা চত্বর, ঘাট বাধানো পুকুর, হাটার জন্য চমৎকার লেন, ব্যাডমিন্টন ও টেনিস কোট, কাশবন, সাদা বকের দল ইত্যাদি। তাই ব্যক্তিগত ভ্রমণ থেকে শুরু করে সব ধরনের আয়োজনের জন্য বেছে নিতে পারেন অপার সৌন্দর্যে ভরপুর স্বপ্নদ্বীপকে।

স্বপ্নদ্বীপ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে আপনি স্বপ্নদ্বীপ পৌঁছাতে পারবেন। তবে প্রথমে আপনাকে পৌঁছাতে হবে বিশনন্দি ফেরীঘাট।

ঢাকা টু বিশনন্দি ফেরীঘাট
গুলিস্তান থেকে বিআরটিসি বাস সরাসরি নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার পর্যন্ত যাবে। চেয়ার কোচ এই বাসটি গুলিস্তানের ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ছাড়ে। আড়াইহাজার পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আড়াইহাজার বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন বিশনন্দি ফেরীঘাট। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০ টাকা।

ঢাকার সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে অভিলাস পরিবহনে যেতে পারবেন ভুলতা পর্যন্ত। ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তাছাড়া কলাবাগান থেকেও মেঘলা পরিবহন ভুলতা পর্যন্ত যায়। ভুলতা থেকে সিএনজি করে চলে যেতে হবে আড়াইহাজার। জনপ্রতি সিএনজি ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা। সেখান থেকে আবার সিএনজি করে যেতে হবে বিশনন্দি ফেরীঘাট।

গুলিস্তান থেকে দোয়েল পরিবহন ও স্বদেশ পরিবহনে যেতে পারবেন মদনপুর পর্যন্ত। মদনপুর থেকে সিএনজি করে আড়াইহাজার যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সিএনজি ভাড়া পড়বে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সবশেষে আড়াইহাজার থেকে সিএনজি করে বিশনন্দি ফেরীঘাট পৌঁছাবেন।

বিশনন্দি ফেরিঘাট থেকে স্বপ্নদ্বীপ

মূলত বিশনন্দী ফেরিঘাট থেকেই স্বপ্নদ্বীপ ভ্রমনের এডভেঞ্চার শুরু। এখান থেকে স্বপ্নদ্বীপের নিজস্ব নৌকা পাবেন। অথবা লোকাল নৌকায় করেও স্বপ্নদ্বীপ যেতে পারবেন। ইঞ্জিন নৌকায় বিশনন্দী ফেরিঘাট থেকে স্বপ্নদ্বীপ পৌছাতে সময় লাগবে ২০ মিনিটের মতো। যাওয়ার পথে নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য ও কাশ বনের সৌন্দর্যে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। অবশেষে পৌঁছে যাবেল বহু আকাঙ্খিত জায়গা স্বপ্নদ্বীপে। সবমিলিয়ে যাতায়াতে মোট সময় লাগবে ২ থেকে ৩ ঘন্টার মতো।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

স্বপ্নদীপে থাকা খাওয়ার জন্য কোনো ধরনের বাড়তি চিন্তা নেই। কেননা রিসোর্টের ভেতরে দুইটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে্ সেখানে ফুচটা, চটপটি, ড্রিংকস, চাইনিজ খাবার সহ বাঙালি খাবার খেতে পারবেন। নাশতার জন্য আগে থেকে অর্ডার না করলেও চলবে।

কিন্তু দুপুর কিংবা রাতের খাবারের জন্য আগে থেকেই অর্ডার করে রাখতে হবে। নদীর তাজা মাছ সহ দ্বীপের ক্ষেতে আবাদ করা সবজি দিয়ে ভূরিভোজন জমবে বেশ। তাছাড়া বিয়ে, পিকনিক কিংবা যে কোনো ছোট থেকে বড় অনুষ্ঠানে সব ধরনের খাবারের অর্ডার করতে পারবেন। তাদের নিজস্ব ক্যাটারিং ব্যবস্থা ও খাওয়ার জন্য প্লেস রয়েছে।

থাকার জন্য রিসোর্টের ভেতর তিনটি কটেজ রয়েছে। কটেজ গুলো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে চমৎকার ডেকোরেশন করা। ভেতরে ডবল খাটের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া তাবুতে ক্যাম্পিং করে রাতে থাকতে পারবেন।

যে কোনো তথ্য জানতে অথবা অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং করতে যোগাযোগ করুন নিচে দেয়া নম্বরে।
০১৭০৭-০০২৭৫৪ বা, ০১৭০৭-০০২৭৫১

  • রিসোর্টে প্রবেশের টিকেট মূল্য: ৫০ টাকা
  • বিভিন্ন রাইডের টিকেট মূল্য: ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা

এই ছিলো স্বপ্নদ্বীপ ভ্রমণের যাবতীয় সকল তথ্য। আশাকরি আপনার স্বপ্নদ্বীপ ট্যুর প্লান করার জন্য আজকের আর্টিকেলটি সহায়ক হবে। আপনার ভ্রমণ সুপরিকল্পিত ও সুন্দর হোক। ধন্যবাদ।

ছবির ক্রেডিটঃ পোস্টের সকল ছবি বাঞ্ছারামপুর স্বপ্নদ্বীপ এর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

Scroll to Top