“পূবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার দিকে….”গানের কথা কাজী নজরুল ইসলামের হলেও চাওয়াটা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর। আমরাও তারই অন্তর্ভূক্ত। তাই, আপনাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে হজ্জ, হজ্জে যাওয়ার নিয়ম এবং এ সংক্রান্ত সব ধরনের আলোচনা। তো চলুন! প্রথমেই জেনে নিই হজ্জ কি এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে।
হজ্জ এবং হজ্জ এর ইতিহাস
ইসলামের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ অন্যতম।
হজ্জের সময়টায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত সৌন্দর্য্য পরিলক্ষিত হয়। “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ বাতাসে যেনো উম্মাহর একতারই জয়গান প্রতিধ্বনিত হয়। সাদা দু’টুকরো ইহরামের কাপড়ে প্রতিটি মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব যেনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য আল্লাহ হজ্জকে ফরজ করেছেন। হজ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে উম্মাহকে সচেতন করার জন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআনে হজ্জ নামে একটি সুরাও নাযিল করেছেন।
হজ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। হযরত ইবরাহীম (আ.), তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) এবং তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরাকে আল্লাহর আদেশে এক জনমানবহীন মরু প্রান্তরে সামান্য খাদ্য পানি সহ রেখে আসেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ও হুকুমে সেখানেই পরবর্তী তাঁরা দুইজন অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ) মিলে কাবাঘর নির্মাণ করেন। সেসময় থেকেই তাঁর অনুসারীরা হজ্জব্রত পালন করে আসছিলেন।
তবে আইয়ামে জাহিলিয়া যুগে আরবরা হজ্জের মূল নিয়ম কানুনের সাথে তাদের আবিষ্কৃত কিছু নিয়ম কানুন ও স্বেচ্ছাচারিতার সম্মিলন ঘটিয়েছিলো। পরবর্তীতে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য হজ্জের বিধান পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে দেন। সে থেকে আজ অবধি একই নিয়মে প্রতিবছর হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যাওয়ার নিয়ম
হজ্জ পালন করতে আপনাকে যেতে হবে সৌদি আরব। তো পাঠক! বুঝতেই পারছেন আপনাকে ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা হজ্জে যেতে চান, তাদের বিষয়াদি গুলো তত্ত্বাবধান করে বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আপনি সরকারি কিংবা বেসরকারি যে-ধরনের সংস্থার সাথেই যেতে চান না কেন, আপনাকে সর্বপ্রথম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এখন বলছি, মন্ত্রণালয় একজন ব্যাক্তির হজ্জ যাত্রা নিশ্চিত করতে কি কি কাজ করে থাকে সে বিষয় গুলো।

বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই প্রাক নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথমে সরকার অনুমোদিত যেকোনো বৈধ সংস্থা থেকে প্রাক নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করতে হবে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমাদানের মাধ্যমে প্রাক নিবন্ধন ধাপ সম্পন্ন হবে। সরকারীভাবে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ব্যক্তির প্রায় ৩০০০০ টাকা লাগবে। আর বেসরকারি সংস্থা থেকে করলে আপনাকে অতিরিক্ত ৭৫২ টাকা খসাতে হবে অর্থাৎ প্রায় ৩০৭৫২ টাকা লাগবে।
প্রাক নিবন্ধন কিন্তু আপনি চাইলেই করতে পারবেন না। এজন্য আপনার কিছু কাগজপত্র লাগবে। হজ্জ্ব করার উদ্দেশ্যে প্রাক নিবন্ধনের জন্য আপনার যা লাগবে তা হলো-
.jpg)
১। জাতীয় পরিচয় পত্র
এটি সম্পূর্ণ সঠিক হতে হবে। বাবা, মা কিংবা নিজের নামে ভুল থাকলে তা পূর্বে সংশোধন করে নিতে হবে। অন্যথায় নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে। তবে ১৮ বছরের নিচে যারা, তারা হজ্জের প্রাক নিবন্ধন করতে চাইলে নিজের জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করেও আবেদনটি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এটিকেও সম্পূর্ণ শুদ্ধ হতে হবে।
২। ব্যবহৃত, সঠিক মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
এই নম্বরেই আপনার কনফার্মেশন মেসেজ আসবে। ব্যবহৃত নম্বর দেয়ার পর কোনো কারণে সেটা ব্যবহার না করা হলে নির্দিষ্ট প্রসিডিউর মেনে দ্রুতই তা সমাধান করে ফেলতে হবে।
৩। সর্বশেষ আপনার যা লাগবে তা হলো টাকা। সরকারিভাবে ৩০০০০ টাকা, বেসরকারি সংস্থায় ৩০৭৫২ টাকা লাগবে।
পাঠক! এতটুকু যদি আপনি মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন আপনার মাথায় ঘুরঘুর করছে যে প্রাক নিবন্ধন করা যাবে কোথা থেকে! জি, এখন বলছি সে কথাই। একজন হজ্জ ব্যক্তি প্রাক নিবন্ধন করতে পারবেন –
১. ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র।
২. জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
৩. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়।
৪. সরকার অনুমোদিত হজ্জ এজেন্সি।
৫. ঢাকার আশকোনা হজ্জ অফিসের পরিচালক।
যিনি হজ্জ করবেন প্রাক নিবন্ধনের জন্য যে তাকেই আসতে হবে বিষয়টা এমন না। তিনি তার কোনো প্রতিনিধি পাঠিয়েও কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক! আপনাদের সুবিধার্তে এখন আমরা প্রাক নিবন্ধনের পদ্ধতিগুলো ধাপে ধাপে উপস্থাপন করবো।
প্রাক নিবন্ধনের জন্য প্রথমেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের সব তথ্য যাচাই করা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
অতঃপর যাচাই করা হবে আপনি কোন মাধ্যমে যেতে চাচ্ছেন সে বিষয়টা অর্থাৎ সরকারি নাকি বেসরকারি। যে ভাবে যেতে চান, সে অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হবে।
টাকা জমা দেয়ার জন্য ট্র্যাকিং নাম্বার সম্বলিত প্রিন্টেড ভাউচার কপি সহ সরকার নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিলে পরবর্তীতে পুনরায় প্রাক নিবন্ধন করতে হবে।
টাকা পরিশোধ করার পর ব্যাংক থেকে একটি সনদ দেয়া হবে যাতে এই ধাপ পর্যন্ত আসতে যতগুলো তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে তার সম্মিলন থাকবে। এই সনদের পাশাপাশি মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
এভাবে সম্পন্ন হবে হজ্জের প্রাক নিবন্ধন। তবে এর মাধ্যমে এই নিশ্চয়তা পাবেন না যে আপনি সেই বছরের জন্যই নির্বাচিত। জাতীয় হজ্জ নীতির আলোকে, সব শর্ত মেনে যদি নির্বাচিত হন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে জানানো হবে।
হজ্জে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হলে তারপর শুরু হবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। নির্বাচিত হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজ্জ অফিস অথবা যে এজেন্সি থেকে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন সে অফিসে যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ টাকা জমা দিতে হবে।
এই সাপেক্ষে হজ্জযাত্রীকে পিলগ্রিম আইডি প্রদান করা হবে। পিলগ্রিম আইডি হজ্জযাত্রীর জন্য অত্যাবশ্যক। এর মাধ্যমেই একজন যাত্রী হজ্জে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
তবে কোনো কারণে প্রাক নিবন্ধনকারী কোনো ব্যক্তি হজ্জে যেতে না চাইলে সে নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। সেক্ষেত্রে পূর্বে প্রদত্ত ৩০০০০ টাকা থেকে সার্ভিস চার্জ ও প্রসেসিং ফি বাবদ মোট ৫০০০ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত পাবেন।
এ কথা ভেবে বসে থাকলে হবে না যে এতক্ষণ ধরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো তা সবই আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে। এইসব প্রসিডিউর আপনার জন্য তখনই প্রযোজ্য হবে যখন আপনার পাসপোর্ট করা থাকবে এবং ভিসা জটিলতা থাকবে না। এখন হজ্জে যাওয়ার জন্য কিভাবে পাসপোর্ট পাবেন এবং ভিসার বৈধতা কতদিনের থাকা বাধ্যতামূলক সে আলোচনা করবো।
কতদিন মেয়াদী পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক :
হজ্জে যেতে চাইলে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী হতে হবে। অর্থাৎ, হজ্জের দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকতে হবে। কারো যদি ছয় মাস মেয়াদ না থাকে তবে হজ্জে যাওয়ার পূর্বেই পাসপোর্ট নবায়ন করে নিতে হবে।
এসময়ে পাসপোর্টে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সঠিকভাবে আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। কেননা, সামান্য ভুলে বাতিল হয়ে যেতে পারে পুরো নিবন্ধন প্রক্রিয়া; সেই সাথে ধূলিসাৎ হবে হজ্জ পালনের ইচ্ছাটাও।
মক্কা ও মদিনায় থাকার জন্য আপনি যে বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করেছেন তার স্টিকার পাসপোর্টে সংযুক্ত আছে কি না সেটাও খেয়াল করতে হবে।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
১৮ বছরের নিম্নের এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ০৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।
জিও/এনওসি/প্রত্যয়নপত্র/PRL Order/পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
বিবাহ সনদ বা তালাকনাম। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
নাগরিক সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
বর্তমানে epaasport.gov.bd সাইট ভিজিট করে অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করা যায়।
সৌদি ভিসা পাওয়ার শর্ত সমূহ:
হজ্জের জন্য সৌদি ভিসা পেতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে-
প্রথমত, পাসপোর্ট অরিজিনাল হতে হবে এবং এর মেয়াদ থাকতে হবে ছয় মাস পর্যন্ত।
দ্বিতীয়ত, ভিসা আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পূর্ণ ভাবে মিলতে হবে। অন্যথায় সে ভিসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে।
তৃতীয়ত, দুই কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে যার ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে সাদা।
চতুর্থত, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। তবে, বয়স অনূর্ধ্ব ১৮ হলে সেক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকলেও হবে।
পঞ্চমত, আবেদনকারী দম্পতি হলে তাদের বিবাহের সরকারী সনদপত্র লাগবে।
ষষ্ঠত, আবেদনকারী মহিলা হলে তার আইনত মাহরামের অনুমতি পত্র লাগবে।
শেষত, আবেদনকারীকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে এবং গ্রহণের সনদ সাথে থাকতে হবে।
এসব শর্ত মেনেই হজ্জের জন্য সৌদি ভিসা পাওয়া যেতে পারে। ভিসার আবেদন ও প্রাপ্তিতে পূর্বে দীর্ঘ সময় লাগলেও বর্তমানে হজ্জ অফিসে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই সমস্যার নিরসন ঘটেছে।

এয়ারপোর্টের নিয়মকানুন ও বিমান ভ্রমন
প্রসঙ্গ যখন দেশের বাইরে যাওয়ার তখন বিমানের বিকল্প আর কি হতে পারে! আর বিমান তো ছোট খাটো লোকাল যানবাহন না যে আপনি আপনার ইচ্ছে মতো সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। বিমানে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে এয়ারপোর্টে।
এয়ারপোর্টের কিছু নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে। এসব নিয়ম পালনে ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিক তিরস্কারের পাশাপাশি পেয়ে যেতে পারেন ‘আনস্মার্ট’ তকমাও। তাই আপনাদের শতভাগ সতর্ক করার জন্য এখন বলছি এয়ারপোর্টের সেইসব বিশেষ নিয়মাবলী:
১. ব্যাগ স্ক্যানিং
এয়ারপোর্টে ঢুকতেই প্রথম ধাপে আপনার ব্যাগ ও শরীর স্ক্যানিং করা হবে। এর মাধ্যমে কতৃর্পক্ষ দেখে নেয় যে আপনি কোনো ক্ষতিকর জিনিস বহন করছেন কি না। প্রশ্ন আসতেই হবে, হজ্জযাত্রী আবার এসব করবে নাকি? উত্তর হলো এই নিয়ম সবার জন্য, সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য। তাই অন্য সবার মতো, হজ্জযাত্রী হিসেবে আপনাকে এই নিয়ম মানতে হবে।
২. কোভিড – ১৯ রিপোর্ট জমাদান
এই নিয়ম কোভিডের পরবর্তী সময় থেকে চালু করা হয়েছে৷ হজ্জযাত্রী হিসেবে এই নিয়ম মানতে হবে। তবে সাধারণ যাত্রীদের তুলনায় হজ্জযাত্রীরা একটু সুবিধা পেয়ে থাকেন। কেননা, তারা যে এজেন্সির সাথে যাত্রা করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই এই কাজটি করিয়ে দেন।
৩. বোর্ডিং পাস
এটি একটি কাগজ যা আপনার পূর্বের সকল কাজ সঠিকভাবে হয়েছে তার সাক্ষ্য দেয়। এই কাগজটি লাইন ধরে সংগ্রহ করতে হয়। কখনো কখনো হজ্জ এজেন্সি থেকে করে দেয়া হয়, তবে নিজেদেরই করে নিতে হয় বেশিরভাগ সময়ে। এরপরই একজন হজ্জযাত্রী ইমিগ্রেশনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারেন।
৪. ইমিগ্রেশন
বিমানে ওঠার আগে সর্বশেষ চেকিং ই হলো ইমিগ্রেশন। এখানে আপনার শরীর ও ব্যাগ প্রথম ধাপের ব্যাগ স্ক্যানিং মতো করে আরো একবার চেক করা হবে। এ বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। এখান থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া মানে এয়ারপোর্টের কাজ একপ্রকার শেষ। আর এখানে ঝামেলা হওয়া মানে ফ্লাইট মিস হওয়ার পাশাপাশি হজ্জযাত্রাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই বিমানবন্দরে ঢোকা থেকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটা কাজ স্বচ্ছতা ও সাবধানতার সাথে করতে হবে।
৫. বিমানে আরোহণ
এবার পালা বিমানে আরোহণের। বিমান যখন উড়াল দেয় এবং আকাশে অবস্থান করে সেসময়টা সাধারণভাবে মোবাইল ফ্লাইট মুডে রাখতে হয়। কথা বলা সহ যাবতীয় মোবাইল সম্পর্কিত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। এই নিয়মটিও মানতে হবে।
৬. বিমান যাত্রা
বিমানে উঠেই হজ্জযাত্রীদের একটি কমন প্রশ্ন থাকে যে সৌদি আরব যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে। উত্তর হলো সৌদি যেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। এই ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় আপনি বিমানে বসে নানা ধরনের বই বিশেষ করে হজ্জের নিয়মকানুন সম্বলিত বইগুলো পড়তে পারেন।
বিমানে আপনাকে নানাধরনের খাবার সরবরাহ করা হবে, আপনি চাইলে তা খেতে পারবেন। এছাড়া আপনি চাইলে বিমানের টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বিমানে বসে কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। যেকোনো প্রয়োজনে বিমানবালাদের ডাকবেন এবং তাদের সাথেও ভালো ব্যবহার করবেন।
৭. বিমান ল্যান্ডিং
বিমান ল্যান্ডিং এর পর একটি বিশেষ গাড়িতে করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় হজ্জযাত্রীদের। এরপর আবার ইমিগ্রেশন, চেকিং, স্ক্যানিং এর ধাপগুলো অতিক্রম করতে হবে। হজ্জযাত্রীদের জন্য বর্তমানে এসব ধাপ অতিক্রম করতে আগের মতো জটিলতায় পড়তে হয় না। এজেন্সির যিনি গাইড থাকেন তিনিই এইসব বিষয়ে সাহায্য করে থাকেন। এই সব কাজ শেষ করতে প্রায় কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এরপরই এয়ারপোর্টের কাজ শেষ। হজ্জযাত্রীরা এবার যার যার ভাড়া করা নির্ধারিত বাড়ি বা হোটেলে চলে যেতে পারেন।
সৌদি গিয়ে থাকবেন কোথায়
হজ্জযাত্রীরা সাধারণত এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জে যান। এজন্য তাদের থাকার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সৌদী আরবে নানা ধরনের আবাসিক হোটেল ও বাড়ি আছে। এসব হোটেল ও বাড়ি গুলোর ভাড়ার পরিমাণ ও সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী কম বেশি হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে এলিট শ্রেণী থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সবাই মোটামুটি অ্যাফোর্ড করতে পারেন।
সরকারী এজেন্সি গুলো তুলনামূলক কম খরচে মোটামুটি ভালো মানের হোটেলের ব্যবস্থা করে থাকে। বেসরকারি সংস্থা গুলো তুলনামূলক বেশি খরচে হোটেলের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে সে হোটেল গুলো নিয়ে হাজীদের অনেক অভিযোগ থাকে। তাই বেসরকারি সংস্থার সাথে যেতে চাইলে ভালোমতো খোঁজ নিয়ে নিবেন তাদের সম্পর্কে। জেনে নিবেন তারা কতটা বিশ্বস্ততার সাথে হজ্জ প্যাকেজের পরিপূর্ণ সার্ভিস দিতে পারবেন। আর যদি নিজেদের পরিচিত কেউ থেকে থাকে তাহলে তাদের মাধ্যমে খোঁজ নিতে পারেন। তবে, সরকারী এজেন্সির সাথে যাওয়াটা সবচেয়ে সুবিধাজনক।
সৌদির নিরাপত্তা
হজ্জযাত্রীরা প্রায়শই হজ্জে গিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকেন। তার প্রধান কারণ মূলতই দলছুট হয়ে পড়া। হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা মূলতই মক্কা আর মদিনাতেই হয়ে থাকে। মদিনার চাইতে মক্কা শহরটাতে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা একটু বেশিই দেখা যায়। আর মক্কাতেই হজ্জের মূল আনুষ্ঠানিকতা তথা মিনা, মুজদালিফা, সাফা, মারওয়া ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় যাওয়া হয় বলে অনেক সময় হাজীরা একাকি হয়ে পড়েন আর তখনই সুযোগের অপেক্ষায় থাকা একদল সুযোগ সন্ধানী তাদের জিম্মি করে ফেলে।
সৌদির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। হজ্জ উপলক্ষে তা আরও জোরদার করা হয়। তারপরও একদল দুষ্টু প্রকৃতির লোক হাজীদের মধ্যে একেবারে মিশে গিয়ে ধান্দাবাজির চেষ্টা করে। তাই আপনি যদি হজ্জে যেতে চান তাহলে কিছুতেই দলছুট হবেন না। সবসময় গাইডের নির্দেশনা মেনে চলবেন। অন্যথায় বিদেশ বিভূঁইয়ে বিপদের আশঙ্কা পদে পদে।
সতর্কতা
হজ্জযাত্রী হিসেবে আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলবেন তার একটি তালিকা আমরা উপস্থাপন করছি:
১. নিজের প্রয়োজনীয় কাগজ যেমন ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি সাবধানে রাখতে হবে।
২. প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল ক্যামেরা এসবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. সাফা – মারওয়া সাই করার সময়, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জায়গায় নিজের কাছে টাকা পয়সা বেশি রাখবেন না।
৪. কাফেলার সাথে অবশ্যই থাকবেন।
শেষকথা:
প্রিয় পাঠক! আপনি এতক্ষণ যদি মন দিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যাওয়ার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জেনে গেছেন। আপনি যদি সামর্থ্যবান হয়ে থাকেন তাহলে প্রস্তুতি শুরু করে দিন হজ্জে যাওয়ার জন্য। আর যদি হজ্জে যাওয়ার ইচ্ছে মনে পোষণ করে থাকেন তাহলে জীবনের কোনো এক পর্যায়ে হজ্জে যাওয়ার জন্য অগ্রীম প্রস্তুতিও শুরু করতে পারেন এখন থেকেই।
শেষ করার আগে আবারও দুটো কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি প্রথমত, সরকারী এজেন্সির হজ্জ প্যাকেজই হজ্জে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী। আর দ্বিতীয়ত, হজ্জে যেয়ে কখনোই দলছুট হয়ে যাবেন না।