বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসার হাসপাতাল ও ডাক্তার লিস্ট এবং কিডনি ভালো রাখার উপায়

বাংলাদেশে কিডনি চিকিৎসা

গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ প্রায় ৩ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও সম্পুর্ন কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া মানুষের পরিমাণও প্রায় ৫০ হাজারের উপরে। তাইতো কিডনি জনিত রোগের চিকিৎসার জন্যে দেশেই গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কিডনি হাসপাতাল। 

কিডনি জনিত রোগের ক্ষেত্রে ২টি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় ১। ডায়ালাইসিস ও ২। কিডনি প্রতিস্থাপন। 

বর্তমানে বাংলাদেশের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার বললেই চলে। মানুষের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হচ্ছে কিডনি হাসপাতাল। যেখানে তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। 

বাংলাদেশের কিডনি হাসপাতালের তথ্য সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন বা কোন কোন বিশেষজ্ঞ কিডনি জনিত রোগ নিয়ে কাজ করে বা কিডনি রোগের চিকিৎসায় কি পরিমান খরচ হতে পারে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে। তবে আপনার এসকল তথ্যের উত্তর পাবেন আজকের লেখায়। 

আসুন আর দেরি না করে জেনে আসি বাংলাদেশের কিডনি হাসপাতালের তথ্যসহ এসম্পর্কিত আর নানা বিষয় সম্পর্কে। 

বাংলাদেশে কিডনি হাসপাতালের তালিকা

বর্তমানে বাংলাদেশে কিডনিজনিত রোগীদের চিকিৎসার সেবা দেয়ার জন্যে যেসব হাসপাতাল প্রসিদ্ধ, সেগুলো হলো-

  • কিডনি ফেডারেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনিস্টিউট বাংলাদেশ 
  • ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী
  • ইনসাফ বারাকাহ কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতাল 
  • এডভান্সড সেন্টার অফ কিডনি এন্ড ইউরোলজী
  • আসগার আলী হাসপাতাল 
  • এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা
  • ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল 

বাংলাদেশের কিডনি হাসপাতালের ঠিকানা ও বিশেষজ্ঞদের তালিকা

বাংলাদেশের কিছু কিডনি হাসপাতালের ঠিকানা ও বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কে চলুন জেনে আসি –

কিডনি ফেডারেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনিস্টিউট বাংলাদেশ 

ঠিকানা -প্লট নং ৫/২, রোড নং-১, সেকশন-২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬।

বিশেষজ্ঞগণ:

  •  অধ্যাপক ডাঃ. হারুন-উর-রশিদ পিএইচডি, এফসিপিএস, এফআরসিপি
  • অধ্যাপক ডাঃ. জিয়াউদ্দীন আহমদ

এমআরসিপি, এফসিপিএস, এফআরসিপিআই

  • অধ্যাপক ডাঃ. শামীম আহমেদ এফসিপিএস, এফআরসিপি 
  • সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সাকিব উজ্জামান অরেফিন 

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস

  • সহকারী প্রফেসর ডাঃ তাসনুভা সারা কাসেম

এমবিবিএস , এমআরসিপি 

  • অধ্যাপক ড. জামানুল ইসলাম ভূয়ান

এমবিবিএস, এমএস (ইউরোলজি),সিনিয়র কনসালটেন্ট 

  • এসোসিয়েট প্রফেসর, ডাঃ. রুহল আমিন রুবেল

এমবিবিএস, এমএস৷   আরও অনেকে।

ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজি (National Research Institute of Kidney Disease and Urology) 

ঠিকানা: শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭

বিশেষজ্ঞগণ:

  • ডাঃ মো. আব্দুস সালাম
  • প্রফেসর ডাঃ নুরুল হুদা
  • ডাঃ মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান
  • ডাঃ. ইশতিয়াক মোশাররফ
  • ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন
  • ডাঃ. হাসান মাহমুদ আরও অনেকে। 

ইনসাফ বারাকাহ কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতাল 

ঠিকানা- ১১, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ শোরনী, মগবাজার, ঢাকা- ১২১৭

বিশেষজ্ঞগ্ণ:

  • প্রফেসর ডাঃ এহতেশামুল হক
  • অধ্যাপক ডাঃ. মো. ফিরোজ খান
  • ডাঃ. মো. কবির হোসেন
  • অধ্যাপক ডাঃ. এম ফখরুল ইসলাম আরও অনেকে।

এডভান্সড সেন্টার অফ কিডনি এন্ড ইউরোলজী

ঠিকানা: ৪/কেএ জহরি মহল্লা,রিং রোড ঢাকা ১২০৭।

বিশেষজ্ঞগণ:

  • প্রফেসর ডাঃ সোহরাব হোসেন সৌরভ
  • ডাঃ. মো. ফজল নাসের আরও অনেকে।

আসগার আলী হাসপাতাল 

ঠিকানা: ১১১/১/এ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া (ধুপখোলা খেলার মাঠের পাশে), ঢাকা-১২০৪

বিশেষজ্ঞগণ:

  • ডাঃ. ফেরদৌস কামাল ভূঁইয়া
  • ডাঃ. মো. হাসানুজ্জামান আরও অনেকে।

এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা

ঠিকানা: প্লট-৮১ ব্লক- ই, বসুন্ধরা আর/এ, ঢাকা ১২২৯

বিশেষজ্ঞ

  • ডাঃ. ফাহমিদা বেগম
  • অধ্যাপক ডাঃ. মো. মাসুম কামাল খান
  • ডাঃ. এবাদুর রহমান
  • সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ. কেবিএম হাদিউজ্জামান আরও অনেকে।

ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

ঠিকানা: হাউজ-১ এবং ৬, রোড নং ৪, ঢাকা ১২০৫

বিশেষজ্ঞগণ:

  • ডাঃ. মো. জাহাঙ্গীর কবির
  • ডাঃ. তৌহিদ মো. সাইফুল হোসেন (দীপু)
  • প্রফেসর এ.জেড.এম. জাহিদ হোসেন
  • অধ্যাপক ডাঃ. কাজী রফিকুল আবেদিন

আরও অনেকে।

বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা খরচ কেমন?

ডায়ালাইসিস করানোর ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি ২টি প্রতিষ্ঠান থেকেই করা সম্ভব। সরকারি হাসপাতালে সেশনপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে সেশন প্রতি ২০০০- ৩০০০ টাকা। সবকিছু মিলিয়ে প্রতি রোগীর মাসে প্রায় ৬০০০০ টাকা লাগতে পারে।

তবে কিডনি প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে আপনাকে একবারে যে টাকা দিতে হবে তা বছরে ডায়ালাইসিসের খরচের তুলনায় কম। এছাড়াও ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগী বেঁচে থাকার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে কিডনি প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে আপনার দরকার হবে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার মতো। যা কিনা বাইরের দেশগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন করার খরচের তুলনায় অনেকাংশে কম। এছাড়াও কিডনিতে পাথর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন পড়ে। 

কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি ভালো রাখার ১০ টি উপায়

আপনি কি জানেন আপনি কোন কোন উপায়ে কিডনি ভালো রাখবেন বা কিডনি ভালো রাখার জন্যে আপনাকে কোন দিক গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন জেনে আসি এমনই ১০টি উপায় সম্পর্কে যা কিনা আপনার কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করবে।

১। বেশি বেশি পানি পান করা

আপনি যদি কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত না হতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করেন তাহলে আপনি কিডনিতে পাথর সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কিডনি জনিত রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। 

২। পরিমাণমত লবন খাওয়া 

খাবারের অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস কিডনির ক্ষতি হওয়ার অন্যতম কারণ। মানবদেহে লবনের চাহিদা প্রতিদিনে মাত্র ১ চা চামচ। এর থেকে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদেরকে পরিমাণমতো লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৩। সীমিত পরিমাণ প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া 

কিডনির জন্য ক্ষতিকর কিছু প্রাণিজ প্রোটিন দেহে অতিরিক্ত হলে কিডনিতে চাপ ফেলে যার কারণে দূর্বল সেলগুলো অকেজো হয়ে পরে। আর এর ফলেই দেখা দেয় কিডনি ফেইলর। এজন্যেই আপনাকে অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে সীমিত পরিসরে প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া এবং যতটা সম্ভব ডালজাতীয় প্রোটিন বা মাছ আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।  

৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা 

মানবদেহের স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা হচ্ছে ১২০/৮০। এ মাত্রার উপরের রক্তচাপ পৌছালে তা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া, প্রাণিজ প্রোটিন পরিমিত খাওয়া, লবন কম খাওয়া সহ বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে রক্তচাপ ১২০/৮০ এর কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা।

৫। পরিমিত খাবার খাওয়া 

তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার, সবজি কম খাওয়া, লবন বেশি পরিমানে খাওয়া ইত্যাদি সব কিছুই কিডনির জন্যে ক্ষতিকর। তাই অবশ্যই আপনাকে বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সবসময়ের জন্যেই পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা। এটি কিডনি ভালো রাখার অন্যতম একটি উপায়।

৬। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা 

রক্তে সুগারের পরিমান বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ডায়াবেটিস রোগ এর কারনে কিডনিজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও দিনদিন বাড়ে। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে খেয়াল রাখবেন যেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন এবং নিয়মিত রক্তের সুগার লেভেল পরীক্ষা করবেন যাতে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। 

৭। অতিরিক্ত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার  খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা

মানবদেহে ভিটামিন সি এর প্রয়োজনীয়তা  প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম। যদি প্রয়োজনীয়তার মাত্রা অতিরিক্ত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া হয় সেটি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এজন্যে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা তার কম পরিমানে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৮। ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা 

ঔষধ রোগ নিরাময়ের উপায় হলেও সব ধরনের ঔষধই কিডনির জন্য ঝুকিপূর্ণ। ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন এধরনের ঔষধগুলো কিডনিকে অকেজো করে তোলে। তাই ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

৯। অতিরিক্ত কোমল পানীয় না খাওয়া 

আপনি হয়ত প্রায়শই তৃষ্ণা মেটাতে পানির পরিবর্তে কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এটি আপনার কিডনির জন্যে কতটা ঝুকিপূর্ণ। অতিরিক্ত কোমল পানীয় খেলে কিডনি ফেইলর হওয়ার সম্ভাবনাকে দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে তোলে। এজন্যে অতিরিক্ত কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

১০। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন ধূমপান বা মদ্যপান ত্যাগ করা 

ধূমপান বা মদ্যপান যেমন ফুসফুসের জন্যে ক্ষতিকর তেমনি কিডনি জনিত রোগ বাড়ার অন্যতম কারন এটি। এসব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারনে কিডনিতে স্বাভাবিকের তুলনায় রক্ত চলাচল অনেকাংশে কমে যায়। ফলে কিডনি দিনদিন অকেজো হয়ে পড়ে। তাই আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান তবে এসব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আজই ত্যাগ করুন।

Scroll to Top