বাংলাদেশের সেরা ২০টি দর্শনীয় স্থান এবং ট্রাভেল গাইড টিপস।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই মাতৃভূমি। বাংলাদেশের যেমন সুন্দর গ্রাম বাংলা রয়েছে ঠিক তেমনি পাহাড়, সমুদ্র, অরণ্য রয়েছে।
এত এত সৌন্দর্যের মাঝে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান নির্বাচন করে ছোট্ট একটি তালিকা করা খুবই কঠিন। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই সব জায়গায় ঘুরতে যেয়ে বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো মিস করতে চাইবেন না। তাই, আপনার জন্য আমরা এখানে বাংলাদেশের সেরা ২০ টি দর্শনীয় স্থান নির্বাচন করেছি যেখানে আপনার একবার হলেও যাওয়া উচিত।

১. বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান –  কক্সবাজার

কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। এর ১২০ কিলোমিটার বা ৭৫ মাইল দৈর্ঘের এই সৈকত বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান গুলোর একটি। কক্সবাজার এমন বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান যেখানে সারা বছরই ঘুরতে যেতে পারেন।
কক্সবাজারের পূর্ব নাম পালংকি। এর পূর্বে কক্সবাজার প্যানোয়া নামে পরিচিত ছিল। প্যানোয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। একসময় কক্সবাজার হলুদ ফুলে অধ্যুষিত ছিল।
কক্সবাজার নামটি এসেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স স্থানীয় রাখাইন ও আরাকান শরণার্থীদের মধ্যকার সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক কাজ করেন। তার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য পালঙ্কিতে একটি বাজারের নাম তার নাম অনুসারে করা হয় সেটি কক্স সাহেবের বাজার নামে পরিচিত লাভ করে। পরবর্তীতে কক্স সাহেবের বাজার থেকেই কক্সবাজার নামটি উৎপত্তি লাভ করে।

মূল আকর্ষণ

কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ সমুদ্র সৈকত। জনপ্রিয় সৈকতের মাঝে রয়েছে সুগন্ধা বীচ, লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী বীচ, ইনানী বীচ। এছাড়াও কক্সবাজারে দেখার মত রয়েছে: হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালি দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক।
এছাড়াও রয়েছে বার্মিজ মার্কেট যেখানে মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জিনিস কম মূল্যে পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র ফিস একুরিয়াম।

কক্স বাজার কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে আপনি খুব সহজেই কক্সবাজার যাওয়া যায়। সড়ক পথ এবং বিমান পথ দুই উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার এর বাস পাবেন। আর বিমান পথে ঢাকা হতে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন। তবে ট্রেনে গেলে চট্রগ্রাম নেমে সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের উপর হোটেল- মোটেল রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী ৮০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা কিংবা তার উপরে পর্যন্ত হোটেল ঠিক করতে পারবেন। আর হোটেলের আশেপাশে পুরো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত জুড়েই ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

২. সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। এটা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ সমুদ্র প্রেমীদের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর দর্শনীয় স্থান।
যতটুকু জানা যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রথমে রাখাইন জেলেরা এসে বসতি শুরু করে। তখন তাদের মাত্র ১৩ টি পরিবার এখানে আসে। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত হয়ে যায়।
এখানকার মানুষ এই দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ রোপন করে এবং এজন্য পরবর্তীতে নারকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর একজন খ্রিস্টান সাধুর নামানুসারে এই দ্বীপের নামকরণ সেন্টমার্টিন করা হয়। কিন্তু এখানে কোন খ্রিস্টান বসতি এবং গির্জা না থাকায় ধারণা করা হয় যে এই দ্বীপটি তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

মূল আকর্ষণ

এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটির এখানকার মূল আকর্ষণ। রয়েছে নীল চকচকে পানি আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ। তাছাড়া এই দ্বীপ থেকে সাম্পান কিংবা সাইকেল নিয়ে ছেড়াদিয়া দ্বীপ যেতে পারবেন। যেটা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ প্রান্ত।

train ticket book

কিভাবে যাবেন সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রথমে টেকনাফ যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে লঞ্চে করে কিংবা ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে প্রচুর বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য কিছু এজেন্সি রয়েছে, চাইলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। এখানে আপনারা ১০০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মাঝে হোটেল পেয়ে যাবেন। এখানে খাওয়ার জন্য অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বাঙালি খাবারের সুব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি রেস্টুরেন্টেই বারবিকিউ এর সুব্যবস্থা রয়েছে।

৩. সাজেক ভ্যালি

আপনি যদি পাহাড় পছন্দ করেন তাহলে সাজেক হবে আপনার ট্যুর দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান। আপনি একই সাথে মেঘ এবং পাহাড় দেখতে পারবেন এই সাজেকে। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন।

সাজেক রুইলুই পাড়া, হামারি পাড়া এবং কংলাক পাড়া এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। সাজেক প্রায় ১৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত। এখানকার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে কংলাক পাহাড় যা ১৮০০ ফুট উপর অবস্থিত। এখান থেকে আপনি সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
আর সাজেক থেকে রাঙ্গামাটির প্রায় সবটাই দেখা যায়। এজন্য সাজেককে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়। এখানে একটি ঝর্ণাও রয়েছে।

কিভাবে যাবেন সাজেক?

ঢাকা থেকে সাজেক যেতে প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি কিংবা দীঘিনালায় যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে সাজেক যেতে হবে চাঁদের গাড়িতে করে।
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি/দীঘিনালা যাওয়ার অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। তারপর সেখান থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা সিএনজি অথবা প্রাইভেট গাড়িতে করে সাজেকে যেতে পারবেন

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

সাজেকে প্রায় শতাধিক রিসোর্ট এবং কটেজ রয়েছে। এক রাতের জন্য ১৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেবে।

৪. সুন্দরবন

সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট যা বাংলাদেশের আরেকটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত দর্শনীয় স্থান। দক্ষিণ অঞ্চলে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চল সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের এবং ৩২ শতাংশ ভারতের অন্তর্গত।
সুন্দরবন মূলত সুন্দরী বৃক্ষের নাম অনুসারে করা হয়েছে। সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, কুমির, নানা ধরনের পাখি ও অসংখ্য নদ নদী রয়েছে। তাছাড়া এখানে প্রচুর উদ্ভিদ রয়েছে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
এই সুন্দরবনের খুব কম অংশ মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত। তার মধ্যে করমজল, হারবাড়িয়া, কচিখালি, কটকা, জামতলা, হিরন পয়েন্ট ও দুবলার চর উল্লেখযোগ্য।

সুন্দরবন যাবেন কিভাবে

সুন্দরবন যেতে হলে আপনাকে ঢাকা থেকে প্রথমে খুলনা অথবা মংলায় যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে আপনি সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনার বাস এবং ট্রেন রয়েছে। আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি মংলায় ও যেতে পারবেন। এরপর সেখানে লঞ্চে কিংবা ট্রলারে করে আপনি সুন্দরবন ঘুরতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

সুন্দরবনের ঘুরার জন্য আপনাকে বন অধিদপ্তরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আপনি গাইড ছাড়া সুন্দরবনে ঘুরতে পারবেন না
সুন্দরবনে আপনি চাইলেই দুই তিনজন মিলে ঘুরতে পারবেন না। সবচেয়ে ভালো হবে কোন ভ্রমণ প্যাকেজ নেওয়া। এই প্যাকেজগুলো সাধারণত ২ রাত ৩ দিন অথবা ৩ রাত ৪ দিন হয়ে থাকে। আপনি এখানে ৬০০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন।

৫. বান্দরবান

ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা একটি বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান বান্দরবান। এখানে আপনি পাহাড়ের সাথে মেঘ মিলে অপরূপ সব দৃশ্য দেখতে পারবেন। এখান থেকেও ভেসে থাকা মেঘ দেখতে পারবেন।
বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা। এটি পুরোটাই পাহাড়ী এলাকা। এখানে ঘুরার মত অসংখ্য টুরিস্ট স্পট রয়েছে। এর মধ্যে নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণমন্দির, নাফাখুম জলপ্রপাত, দেবতাখুম জলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, বগা লেক, জাদিপাই ঝর্ণা, ঋজুক ঝর্ণা ইত্যাদি।

বান্দরবান যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান বাসে যেতে পারেন। চাইলে ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রাম, তারপর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বান্দরবান বাসে যেতে পারবেন। বান্দরবান ভ্রমণ করার জন্য আপনি সেখানে স্থানীয় চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ বা ভাড়ায় পাবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

পুরো বান্দরবান জুড়েই রয়েছে অসংখ্য হোটেল এবং রিসোর্ট। এখানে দিন প্রতি ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা মানের হোটেল পাবেন। পাশাপাশি অসংখ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে আপনারা পাহাড়ি খাবারের সাথে বাঙালি খাবার ও পাবেন।

৬. পতেঙ্গা সি বিচ

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা সী বিচ অবস্থিত, এটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত।
পতেঙ্গায় মেঘনা নদী ও সমুদ্রের মোহনা রয়েছে। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। তাছাড়া চট্টগ্রাম পোর্টের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বড় জাহাজ অনেক সুন্দর দৃশ্যের অবতরণ করে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে পতেঙ্গা যেতে হলে প্রথমে বাস/ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে হবে। তারপর চট্টগ্রাম থেকে বাস কিংবা সিএনজি করে সহজেই যেতে পারবেন। চাইলে ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম গিয়ে তারপর পতেঙ্গায় যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

পতেঙ্গা সী বিচে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। আপনি চাইলে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে পারবেন অথবা ঘুরে আবার চলে আসতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরে ৮০০ থেকে ৫০০০ বা তার বেশি টাকার হোটেল রয়েছে।
পতেঙ্গায় অনেক স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে যেখানে আপনারা সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, ভাজা-পোড়া ইত্যাদি পাবেন।

৭. কুয়াকাটা সি বীচ

পটুয়াখালীতে অবস্থিত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সি বিচ বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখান থেকে একই সাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যোদয় দেখার জন্য গঙ্গামতির পশ্চিম বাক এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য পশ্চিম সৈকত সর্বোত্তম। এছাড়াও দেখার মত শুঁটকি পল্লী, ক্রাব আইল্যান্ড, গঙ্গামতির জঙ্গ, ফাতরার বন, সীমা বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য আপনি সরাসরি বাস পাবেন। ট্রেনে যেতে চাইলে খুলনা গামী ট্রেনে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাসে সরাসরি কুয়াকাটা যেতে পারবেন। লঞ্চে যেতে চাইলে বরিশাল, পটুয়াখালী কিংবা আমতলীগামী লঞ্চে উঠে পড়ুন। এরপর সকালে পৌঁছে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

আপনি মান ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার হোটেল পেয়ে পারবেন। এখানে খাওয়ার জন্য অনেক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

৮. লালাখাল

ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় এর ঠিক নিচেই লালাখাল অবস্থিত। পাহাড়ে উৎপন্ন নদী এই এলাকা দিয়ে নিচে নেমে গেছে। এই লালা খালের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর বিভিন্ন অংশের পানির রং বিভিন্ন। আর এখানে নদীর বাকগুলো অনেক সুন্দর দেখায়।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে লালাখাল যেতে হলে প্রথমে সিলেট যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাস, সিএনজি বা লেগুনাযুগে যেতে হবে সারিঘাট। তারপর এখান থেকে নৌযান ভাড়া নিতে হবে। তারপর ই লালাখাল। ঢাকা থেকে সিলেট বিমানে গিয়েও লালাখাল ভ্রমণ করতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

এখানে থাকার জন্য রিসোর্ট রয়েছে তবে একটু দামী।
একদিনে সাত থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। তবে এর মাঝে খাবার অ্যাড করা আছে। আপনি চাইলে লালাখালে না থেকে ব্যাক করতে পারেন।

৯. বিরিশিরি

বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার চীনা মাটির পাহাড় এবং নীল পানির হ্রদ। এছাড়াও সোমেশ্বরী নদী, রানীখং গির্জা এবং কমলা রানীর দীঘি আকর্ষণীয় স্থান।

কিভাবে যাবেন বিরিশিরি

আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি বিরিশিরি যাওয়ার বাস পাবেন। তবে এ বাসগুলি সুখনগরীতে নামিয়ে দেবে। তারপর সেখান থেকে একটি নদী পার হয়ে রিকশা এবং মোটরসাইকেলযোগে বিরিশিরিতে যেতে পারবেন।
এছাড়া ট্রেনে বিরিশিরি যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে আসলে শ্যামগঞ্জ, চল্লিশা কিংবা জারিয়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে মোটরসাইকেল কিংবা রিক্সাযোগে বিরিশিরি যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

সুসং দুর্গাপুর জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, কিছু গেস্ট হাউস এবং হোটেল রয়েছে। ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মাঝেই থাকতে পারবেন। খাওয়ার জন্য কিছু হোটেল রয়েছে যেখানে ভাত, মাছ, ডাল, মাংস পাবেন।

১০. রাতারগুল

রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। এখানে ৫০৪ একর জুড়ে রয়েছে বন আর ছোট বড় জলাশয়। বছরে চার পাঁচ মাস পুরো এলাকাটি পানির নিচে থাকে। এটি “বাংলাদেশের আমাজন”, “সিলেটের সুন্দরবন” নামেও খ্যাত। এখানে অনেক ছোট বড় উদ্ভিদ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এসে ভিড় জমায়।

কিভাবে যাবেন

আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন/বাস অথবা বিমানযোগে সিলেট যাবেন। তারপর সেখান থেকে সিএনজি করে রাতারগুল যেতে পারবেন। একদিনে ঘুরে আবার চলে আসতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

লালাবাজার এলাকায় গেস্ট হাউজ এবং ভালো মানের রিসোর্ট রয়েছে। আপনি চাইলে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা মানের রুম নিতে পারবেন। আর এর আশেপাশে খাবারের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

১১. মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় অবস্থিত। এটি প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু জলপ্রপাত। এছাড়াও পরিকুণ্ড ঝর্ণা ইকোপার্ক চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, কমলা, লেবু, সুপারী ও পানের বাগান এখানকার আকর্ষণীয় স্থান।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য বিয়ানীবাজার গামী বাসে উঠে কাঠালতলী বাজারে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে সিএনজি দিয়ে যেতে পারবেন।

ট্রেনে যেতে হলে মৌলভীবাজার গামী ট্রেনে উঠে কুলাউড়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সিএনজিতে মাধবকুন্ড যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

মাধবকুন্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদের দুটি বাংলো এবং দুটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আর এখানে খাওয়ার জন্য মোটামুটি ভালো মানের হোটেল রয়েছে তবে দাম একটু বেশি।

১২. পাঁচগাঁও সীমান্ত

পাঁচগাঁও সীমান্ত কমলাকান্দা থেকে আরো ১২ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। এখানে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ বিভক্তকারী নীলাভ পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের এই সৌন্দর্য আপনার সারাদিনের পরিশ্রান্ত দেহকে নিমিষে সতেজ করে তুলবে। সারাদিন ইচ্ছা মতো এখানে ঘুরতে পারবেন। এখানে উপজাতি হাজং ও গারো পল্লী রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি নেত্রকোনা কিংবা কলমাকান্দা বাসে উঠবেন। তারপর সেখান থেকে সিএনজিতে যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

এখানে থাকার কোন থাকার ব্যবস্থা নেই। আপনাকে কমলাকান্দা কিংবা নেত্রকোনা শহরে আসতে হবে। সেখানে ভালো ব্যবস্থা আছে।

১৩. জাফলং

বাংলাদেশের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান জাফলং প্রকৃতি কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘ দেখার মত। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন অথবা বিমানে সিলেট যাবেন। তারপর সেখান থেকে লোকাল বাস, সিএনজি অথবা লেগুনার মাধ্যমে জাফলং যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

জাফলং এ কিছু রেস্ট হাউস এবং কিছু রিসোর্ট রয়েছে। এর আশেপাশে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। আর আপনি চাইলে সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন।

১৪. নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী হাতিয়ায় অবস্থিত। বল্লারচর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুড়ি এই চারটি প্রধান দ্বীপ এবং ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপ মিলে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান নিঝুম দ্বীপ। এখানে অসংখ্য অতিথি পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী যেমন হরিণ, শূকর, মহিষ, শেয়াল, সাপ, বানর ইত্যাদি রয়েছে। তবে এই দ্বীপে কোন বিদ্যুৎ নেই। চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর, কমলার দ্বীপ, চোয়াখালি ও চোয়াখালি সী বিচ, নামা বাজার সি বীচ ও ঘুরে আসতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে ট্রলার, বাস এবং মোটরসাইকেল করে আপনি নিঝুম দ্বীপে যেতে পারবেন। এছাড়া চাইলে ট্রলার রিজার্ভ করেও সোনাপুর থেকে সরাসরি যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

আপনি চাইলে সেখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন। তবে সেখানে কিছু হোটেল রয়েছে। আর আশেপাশে ভালো খাবার পাবেন।

১৫. বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর অবস্থিত। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে অনেকগুলো খাসিয়া পাহাড় দুই দিক থেকে এসে বিছানাকান্দিতে মিলিত হয়েছে। পারের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির ধারা আপনাকে অন্য মাত্রার কিছু দর্শন করাবে। এখানে একটি সুউচ্চ ঝর্ণাও রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে আপনি বাস, ট্রেন বা বিমানে সিলেট যেতে পারবেন। তারপর আম্বরখানা স্টেশন থেকে সিএনজিতে করে এবং পরে নৌকায় করে বিছানাকান্দি যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

বিছানাকান্দি সিলেট শহরের কাছে হওয়ায় আপনি সিলেট শহরে থাকতে পারবেন। আর বিছানাকান্দির আশপাশের কিছু অস্থায়ী হোটেল আছে যেখানে ভালো খাবার পাওয়া যায়। লালার বাজার, দরগা রোডে কিছু গেস্ট হাউস রয়েছে যেখানে কম খরচে থাকতে পারবেন।

১৬. হাকালুকি হাওর

বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান সমূহের একটি হাকালুকি হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজারের পাঁচটি উপজেলা নিয়ে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি এবং ২৩৮টি বিল ও দশটি নদীর সমন্বয়ে গঠিত। বর্ষাকাল এই হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এখানে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিলেটগামী ট্রেন, বাসে উঠে কুলাউড়া স্টেশনে নামবেন। এরপর সেখান থেকে রিকশা নিয়েই হাঁকালুকি হাওরে যেতে পারবেন।

থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এবং খরচ

এখানে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। তবে কিছু কুঠিও রয়েছে সেখানেও থাকতে পারবেন। খাবারের জন্য আপনাদেরকে মাঝির সাথে যোগাযোগ করতে হবে তারাই আপনাকে ব্যবস্থা করে দিবে।

১৭. জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি করা এক স্মৃতিস্তম্ভ। এটি ঢাকার সাভারে অবস্থিত। এটি প্রায় ১৫০ ফুট উচু। এখানে ৭ টি স্তম্ভ রয়েছে। এই সাত স্তম্ভ স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি পর্যায় নির্দেশ করে।

কিভাবে যাবেন, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

ঢাকা থেকে অসংখ্য বাস আছে যেগুলো সাভার যায়। আপনি যে কোন একটি বাসে উঠে পড়বেন এবং স্পট ঘুরে আবার চলে আসতে পারবেন। থাকার জন্য আপনার জন্য ঢাকায় সবচেয়ে ভালো হবে।

১৮. সাফারি পার্ক, গাজীপুর

সাফারি পার্ক চিড়িয়াখানার একদম বিপরীত। এখানে পশু-পাখি মুক্ত থাকবে আর মানুষ বদ্ধ অবস্থায় থেকে দর্শন করবে। এখানকার মূল আকর্ষণ হচ্ছে বাঘ, সিংহ, জেব্রা, হরিণ, জিরাফ সকল প্রাণী মুক্তবস্থায় বিচরণ করবে এবং মানুষ মিনি বাসে করে এদেরকে দেখবে। এছাড়া এখানে অনেক পাখি এবং ছোট মিউজিয়াম রয়েছে যা আপনাকে একদম মুগ্ধ করে দেবে।

কিভাবে যাবেন, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোন বাসে উঠে গাজীপুর বাঘের বাজারে নেমে পড়বেন। সেখান থেকে অটো রিক্সা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে যেতে পারবেন। এটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং মঙ্গলবার বন্ধ থাকে।
আশেপাশে খাবার ব্যবস্থা আছে তবে দাম একটু বেশি। থাকার জন্য আপনাকে ময়মনসিংহ অথবা ঢাকায় আসতে হবে। একদিনে আপনি এটা ঘুরে দেখতে পারবেন।

১৯. সীতাকুণ্ড

সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম জেলার অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত একটি উপজেলা। এখানকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে চন্দ্রনাথ পাহাড়, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল, কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল এবং সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক।

কিভাবে যাবেন, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে উঠে সরাসরি সীতাকুন্ডে নামতে পারবেন। বিমানে গেলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে নেমে তারপর সীতাকুণ্ডে আসতে হবে। আর কিছু মেইল ট্রেন রয়েছে যেগুলো দিয়ে সরাসরি সীতাকুন্ড যাওয়া যায়। এরপর অটো বা সিএনজি নিয়ে আশেপাশের স্পট গুলো খুব সহজেই দেখতে পারবেন।
থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে চট্টগ্রাম শহর। আর স্পটগুলোর আশেপাশে ভালো খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

২০. মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এখানে ৪ হাজার বছর পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এখানকার দর্শনীয় উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হচ্ছে বৈরাগীর ভিটায় দুটি মন্দিরের অবশিষ্টাংশ, খোদারপাথর ভিটা, কালীদহ সাগর ও পদ্মাদেবীর বাসভবন, শীলাদেবীর ঘাট, জিউৎকুন্ড কুপ, মানকালির দ্বীপে ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অবশিষ্টাংশ, গোবিন্দ ভিটা, তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ।
এছাড়া আরও যা যা দেখতে পারেন ইস্কান্দারের ধাপ, খুল্লানার ধাপ, মাহী সওয়ার মাজার শরীফ, ভীমের জঙ্গল, জগির ভবন, অররা, তেঘর, রোজাকপুর, মাথুরা, মহাস্থানগড় জাদুঘর এবং পরশুরামের প্রাসাদ।
যদিও মহাস্থানগড় পরিবার নিয়ে ভ্রমনের জন্য তেমন সুবিধার জায়গা না। অসুস্থ পরিবেশ করে ফেলেছে। তাই যাওয়ার আগে ভেবে দেখবেন একই খরচে এর চেয়ে ভালো অন্য কোন জায়গায় ঘুরে আসবেন কিনা । নিরাপদে পরিবার নিয়ে ভ্রমন করতে পারবেন এমন জায়গা গুলোতেই ঘুরতে যাওয়া উচিৎ।

কিভাবে যাবেন, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ

ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে করে সরাসরি বগুড়া যাবেন। তারপর বগুড়া শহর থেকে রিক্সা বা সিএনজি করে মহাস্থানগড় যেতে হবে। থাকার জন্য শহরে অনেক ফাইভ স্টার হোটেল (নাজ গার্ডেন, মমোইন) থেকে শুরু করে পর্যটন মোটেল এবং আরো অনেক হোটেল রয়েছে। খাবারের ব্যবস্থা নিয়েও চিন্তা নেই। হোটেলগুলোতে খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাছাড়া পুরো শহর জুড়েই খাবার হোটেল দেকগতে পারবেন।

Scroll to Top