বরিশালের দর্শনীয় স্থান – নিসর্গ পার্ক ভ্রমন

 নিসর্গ পার্ক, বরিশাল।নৈসর্গিক রূপে সজ্জিত গ্রামীন পরিবেশের মাঝে এক অনন্য সৌন্দর্যের সমাহার বরিশাল নিসর্গ পার্ক। এটা বরিশালের অন্যতম সুন্দর পিকনিক স্পট।বিশাল বড় এলাকা জুড়ে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।


এটাকে অনেকে শুটিং স্পট হিসেবেও হিসেবেও গুরুত্ব দিয়ে থাকে।বর্তমানে অসংখ্য ডিজিটাল ক্রিয়েটর এবং ব্লগার এখানে আসেন অসাধারণ ভিডিও ক্লিপ কালেক্ট করার জন্য। পরিবার নিয়ে সাচ্ছন্দে একটা সুন্দর ভ্রমনের পরিকল্পনা করলে চলে আসতে পারেন বরিশাল নিসর্গ পার্কে।প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপে হারিয়ে যেতে পারবেন একটা দিনের জন্য। 


চাইলে ২/৩ দিনের ছুটিতেও আসতে পারেন এখানে।কেননা ট্যুরিস্টদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ট্যুরিস্ট লজ।সুন্দর মনোরম ও আধুনিক পিকনিক স্পষ্ট হিসেবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পার্কটি অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছে বরশাল সহ এর আশেপাশের অঞ্চলের ভ্রমন পিপাসু লেকজনের কাছে।

সঠিক লোকেশন ও যোগাযোগ মাধ্যম

নিসর্গ পার্কের সঠিক লোকেশন হলোঃ ডাক্তারবাড়ি,ফকির হাট,রায়পাসা,কড়াপুর,বরিশাল সদর, বরিশাল।
পিকনিক বুকিং এর জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নেয়া ভালো।যোগাযোগের সুবিধার্থে –
মোবাইলঃ ০১৭৮৩-৬১৩৯৪৫
অথবা,০১৭০৮-৪৩৬৫০৩
নিসর্গ পার্কের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঢুকলে রিসোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তারের ওয়েব এড্রেসঃ www.nisorgobsl.com

কীভাবে যাবেন নিসর্গ পার্ক?

নিসর্গ পার্ক আসতে হলে প্রথমে বরিশাল চৌমাথা আসতে হবে। এই যায়গাটা বরিশাল হাতেম আলি কলেজ চৌমাথা নামে বহুল পরিচিত। চৌমাথা থেকে পশ্চিম দিকে নবগ্রাম রোডের দিকে অসংখ্য অটো,সিএনজি বা মাহিন্দ্রা পাওয়া যায়। এসব অটোতে লোকাল ভাবে সরাসরি যাওয়া যায় নিসর্গ পার্ক এর সামনে।


লোকাল ভাবে গেলে জন প্রতি ভাড়া পড়বে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তাছারা অটো,সিএনজি বা মাহিন্দ্রা রিজার্ভ নিয়েও যেতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মতো।তাছাড়া পিকনিক টিম হিসেবে গেলে নিজস্ব গাড়ি ভাড়া করে চৌমাথা দিয়ে নবগ্রাম রোড হয়ে কড়াপুরের ভেতর দিয়ে সোজা চলে যেতে পারবেন নিসর্গ পার্ক।


 চৌমাথা দিয়ে নিসর্গ পার্ক পর্যন্ত পুরো রাস্তাটাই সুন্দর এবং গ্রামের ভেতর দিয়ে কোলাহল মুক্ত সুন্দর একটি রাস্তা। তাই দূরত্ব বেশি হলেও রাস্তা ভালো হওয়ার কারনে অটোতে মাত্র ৩০/৪০ মিনিটের চৌমাথা থেকে নিসর্গ পার্কে আাসা যায়।

বরিশালের নিসর্গ পার্কের টিকিট মূল্য

নিসর্গ পার্কের সৌন্দর্য ও ডেকোরেশন এর তুলনায় এর প্রবেশ মূল্য কম বললেই চলে।এই পার্কটির প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।কিন্তু সময় ভেদে এই মূল্য বেড়ে যায়।বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে যখন দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকে তখন এর প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকাও হয়ে যায়।৫ বছরের উপরে বাচ্চাদের টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়।


এছাড়া টিকেট কেটে উপভোগ করার মতো কোনো রাইডের ব্যবস্থা এখানে নেই,তাই রাইডে ওঠার জন্য কেনো এক্সট্রা খরচও নেই।বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট রাইডের ব্যবস্থা আছে কিন্তু এগুলোর জন্য কোনো এক্সট্রা টিকেট মূল্য দিতে হয় না।পিকনিক গ্রুপে অনেক মানুষ একসাথে আসলে অবশ্যই উপরে দেয়া যোগাযোগ মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সাথে সবকিছু আলোচনা করে আসবেন।


এক্ষেত্রে প্রবেশ মূল্য সহ আনুষঙ্গিক খরচাদি তুলনামূলক কম পরবে এবং ভালো সার্ভিস পাওয়া যাবে। এখানকার রেস্টুরেন্টের খাবার মূল্য বাইরের রেস্টুরেন্টের থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়।তাই এখানে খাবার অর্ডার করতে চাইলে অবশ্যই আগে খাবার মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।অতিরিক্ত খরচ এড়াতে চাইলে পার্কের ভেতরের রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার প্লান বাদ দেয়াই শ্রেয়।


পিকনিকের জন্য এখানে খাওয়াদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে সুন্দর ডাইনিং প্লেস, তাদের আছে নিজস্ব বাবুর্চি ও রান্নার সরঞ্জাম। আগে থেকে কনটাক্ট করে নিলে এখানে পিকনিকের জন্য খাবার বুকিং এ খরচ খুব একটা বেশি পড়বে না।তাই চাইলে পিকনিকের খাবারের অর্ডার এখানে করতে পারেন।তারা নিজ দায়িত্বে আপনাদের অর্ডারকৃত সব ধরনের আইটেম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবেশন করবে। 


আবার চাইলে আপনারা নিজ দায়িত্বে খাবার রান্না করে নিয়ে আসতে পারেন, এতে খরচ অনেকটা কম হবে।এই পার্কের ভেলাগুলোতে রাত্রি যাপন করতে চাইলে রুম ভাড়া হিসেবে মোটামুটি বড় একটা বাজেট মাথায় রাখুন।

কি আছে নিসর্গ পার্কে?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কৃত্রিম ডেকোরেশন এর এক অনন্য ফিউশন বরিশালের বিখ্যাত এই নিসর্গ পার্ক । মনে হবে সৌন্দর্যের এক নৈসর্গিক জগতে হারিয়ে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। ছবি প্রেমিকের কাছে সব থেকে বেশি পছন্দ হবে এই স্পটটি। আর বর্তমানে ঘুরতে গেলেই সবার প্রথম ইনটেনশন হলো কার থেকে কে কতো বেশি সুন্দর ছবি তুলতে পারে। 


ছবি তোলার জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অসাধারণ ডেকোরেশন করা ফ্রেম।লাভ শেইপ,স্কয়ার শেইপ,রাউন্ড শেইপ এই ফ্রেম গুলোর সাথে দাড়িয়ে ছবি তুললে আপনার ছবি সুন্দর হতে বাধ্য। পার্কের মাঝখানে আছে একটি লেক।লেকের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি সুন্দর কুটির,আর কুটিরে যাওয়ার জন্য আছে পুল।এখানকার সবথেকে বেশি সুন্দর হলো সিটিং প্লেসগুলো । 


একেকটা আনকমন থিম মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে একেকটি সিটিং প্লেস। হাতের থিম,মোড়াড় থিম,ফুলের থিম নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিটিং প্লেস গুলো।চারপাশে চারটি হাত সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চেয়ারের আকৃতিতে। এখানে বসলে মনে হয় তাহের ওপর বসে আছি।এমনই আরেকটি আছে মোড়াড় থিমের সিটিং প্লেস। চারপাশে ছোট ছোট চারটি সিমেন্টের মোড়া মাঝখানের টেবিলটিও বড় মোড়াড় ডিজাইনে করা।


এরকম আছে আরও কয়েকটি ফুলের সিটিং প্লেস।এখানকার গাছ, লতাপা,চেয়ার,টেবিল,ছবি তোলার ফ্রেম ভাষ্কর্য সব কিছুই সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করে অসাধারণ রঙের কম্বিনেশনে রঙিন করা হয়েছে।কিন্তু দেখলে মনে হয় সবগুলোই বাস্তব। বাচ্চাদের খেলার জন্য রয়েছে ছোট ছোট অনেক ধরনের রাইড।যেমনঃ দোলনা,স্লিপার,স্প্রিং ঘোড়া,ব্যালেন্সড চরকি ইত্যাদি।


 বাচ্চাদের এখানে ঘুরতে নিয়ে গেলে ওরা সারাদিন অনেক এনজয় করতে পারবে।আছে বপশ কয়েকটি ফুল ও বাচ্চাদের খেলনার দোকান।খাওয়া দাওয়া করতে চাইলে আছে সুন্দর ডেকোরেটেড রেস্টুরেন্ট ও ছোট চোট আইসক্রিমের দোকান।পিকনিক দলের জন্য আছে সাউন্ড সিস্টেম, তাই পিকনিকে আসলে সাথে করে নিজেদের সাউন্ড সিস্টেম না নিয়ে আসলেও চলবে।আছে সুবিশাল ও সুসজ্জিত ডাইনিং প্লেস ও কিচেন। 


রাতে থাকার জন্যও এখানে আছে আধুনিক ভিলা।কেউ এখানকার রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ভিলায় রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবেন। অথবা ২/৩ দিনের জন্য ছুটি কাটাতে চাইলেও এই আধুনিক ভিলায় স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারবেন আপনার ছুটির দিনগুলো।সব কিছু মিলিয়ে ভালো কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য বরিশালের মধ্যে অসাধারণ একটি স্পষ্ট “বরিশাল নিসর্গ পার্ক “।

নিসর্গ পার্কে আমার গল্প

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম ঈদ করতে।সবাই মিলে ঠিক করলাম ঈদের দ্বিতীয় দিন যাবো বরিশালের বিখ্যাত নিসর্গ পার্কে ঘুরতে।তো যেমন ভাবনা তেমন কাজ। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা রওয়ানা দিলাম নিসর্গ পার্কের উদ্দেশ্যে।বরিশাল চৌমাথা থেকে একটি অটো রিজার্ভ করে আমরা চলে আসলাম নিসর্গ পার্ক । 


রিজার্ভ অটোতে ভাড়া নিয়েছিল ২০০ টাকা(যেহেতু ঈদের সময়)।আমার চোট ভাইয়ের বয়স ছিল সাত আর আমরা চাচ্ছিলাম ওকে টিকেট ছাড়াই ঢোকাবো।কিন্তু ৫ বছরের উপরে সবার টিকেট লাগবে তাই ওর জন্যও ৮০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট কিনতে হলো।ভিতরে গিয়ে দেখি কোনো একটা ইউটিউব চ্যানেলের জন্য স্পাইডার ম্যানের ড্রেস পড়ে বেশ কয়েকজন শুটিং করছেন।


তারা আবার ফ্রিতে একটা করে ম্যাজিক লাইট বলও দিল সব বাচ্চাদের। ব্যাপারটা আমরা খুব এনজয় করলাম।এতো এতো সুন্দর সুন্দর প্লেস যে কোনটা রেখে কোনটার কাছে গিয়ে ছবি তুলবো তা ভেবেই পাচ্ছিলাম না।আমার ভাইতো খুশিতে আত্মহারা।


 সে একটার পর একটা রাইডে উঠেই যাচ্ছে। প্রথমে আমরা মন প্রান ভরে ছবি তুলে নিয়ে পুরো পার্কটি ঘুরে দেখলাম।তারপর রেস্টুরেন্টে ঢুকে হালকা কিছু খাওয়া দাওয়া করে সন্ধ্যার দিকে বাসার উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম।এখানকার রেস্টুরেন্টের খাবার খুব টেস্টি হলেও দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি রেখেছিল।


আমাদের ঈদের আনন্দকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল নিসর্গ পার্কের ভ্রমনের এই সময়টুকু।স্মৃতির পাতায় এক সুন্দর জায়গা দখল করে থাকবে এই দিনটি।

পোস্টের সকল ছবি নিসর্গ পার্কের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। ছবির ক্রেডিটঃ নিসর্গ পার্ক / মূল ফটোগ্রাফারের

Scroll to Top