পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

দেশের বাইরে যেতে পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন? কিন্তু কোনো আপডেট পাচ্ছেন না! অথবা পাসপোর্ট রিনিউ করতে চাচ্ছেন? আপনি যদি এমন সমস্যায় পড়ে থাকেন, তাহলে প্রতিটা ক্ষেত্রেই সমাধান হচ্ছে পাসপোর্ট চেক করে দেখা পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা। 

পাসপোর্ট চেক করার পদ্ধতি গুলো সাধারণত একটু জটিল টাইপের হয়ে থাকে৷ তবে আমরা আপনাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজনে রেখেছি পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম। চলুন পাঠক দেরি না করে চলে যাই আমাদের মূল আলোচনায়!

পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার উপায় জানার আগে একটু বলে নেই পাসপোর্ট চেকিং এর গুরুত্ব সম্পর্কে। পাসপোর্ট চেকিং করতে হয় সাধারণত:

  • পুরাতন পাসপোর্ট থেকে নতুন পাসপোর্ট রিনিউ করার সময়।
  • আপনার কাছে থাকা পাসপোর্টটি হারিয়ে গেলে
  • নতুন পাসপোর্ট তৈরী করতে গেলে (এক্ষেত্রে পাসপোর্ট নম্বরের বদলে অবশ্য ডেলিভারি স্লিপে থাকা অ্যাপ্লিকেশন নম্বর ব্যবহার করতে হয়)। 

পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার উপায়

পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং এর জন্য একটি শর্ত মানতেই হবে। সেটা হলো আপনার পাসপোর্টটি বিএমইটি ( BMET) রেজিস্ট্রেশন করা আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে আপনি নিচে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুইটা পদ্ধতি রয়েছে। প্রথম পদ্ধতি অনুসারে :

  • এই লিংকটিতে প্রবেশ করুন প্রথমেই।
  • সামনে প্রদর্শিত পেইজে পাসপোর্ট নম্বর পূরণ করুন
  • একটি ক্যাপচা কোড থাকবে ; সতর্কতার সাথে সেটা পূরণ করুন।
  • এরপর সার্চ বাটনে ক্লিক করলেই আপনি পাসপোর্টের তথ্য পেয়ে যাবেন।

এবার বলছি পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং এর দ্বিতীয় পদ্ধতি। এক্ষেত্রেও শর্ত মোতাবেক আপনার পাসপোর্টটি বিএমইটি (BMET) রেজিষ্ট্রেশন করা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো: 

  • প্রথমেই লিংকটিতে প্রবেশ করুন। এটি বাংলাদেশ সরকারের মানবসম্পদ বিভাগের ওয়েবসাইট।
  • এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর ডাটাবেইজ সার্চিং এর নিচে অনেক গুলো ফাঁকা ঘর দেখানো হবে। সেখান থেকে পাসপোর্ট আইডির ঘর বের করে আপনার পাসপোর্ট নম্বরটি প্রবপশ করাতে হবে।
  • পাসপোর্ট আইডি ঘরের নিচের দিকে একটি ছোটো বক্স পাবেন, যেখানে ফাইন্ড (Find) লেখা আছে। এটায় ক্লিক করুন।

সাথে সাথেই আপনি আপনার যতগুলো তথ্য পাসপোর্ট করার সময় দিয়েছিলেন সবগুলো আপনার স্ক্রিনে দেখতে পাবেন।

air ticket booking

এই যে এতক্ষণ ধরে বারবার বললাম পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং এর জন্য বিএমইটি (BMET) রেজিষ্ট্রেশন দরকার। আপনাদের জানতে ইচ্ছে হচ্ছে না কি এই বিএমইটি রেজিষ্ট্রেশন?  আর কিভাবেই বা তা করতে হয়! আপনাদের জানার তৃষা মিটাতে জানিয়ে দিচ্ছি সে সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্যও। 

বিএমইটি রেজিষ্ট্রেশন কি / What is BMET Registration :

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ বিদেশে যেয়ে থাকে কাজ করার জন্য। সাধারণত বিদেশ যাওয়ার জন্য দালালদের চক্করে পড়ে সব খুইয়ে থাকে অনেক প্রবাসী শ্রমিক। তাই সরকার তার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে জনশক্তি কর্মসংস্থান নামে একটি পোর্টাল তৈরী করেছে। বিএমইটি মূলত এই পোর্টালটিই। এর পুরো নাম ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার ইমপ্লোয়মেন্ট এন্ড ট্রেনিং (Bureau of Manpower Employment And Training)। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো। 

বাংলাদেশ থেকে কোনো ব্যক্তি যদি বৈধ পন্থায় শ্রমিক হিসেবে প্রবাসে যেতে চান তবে এই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর এই অনুমতিপত্রই বিএমইটি কার্ড। এই কার্ড পেতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সরকার অনুমোদন স্বরুপ তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে প্রবাস যাত্রার সময় যখন পাসপোর্ট তৈরী করে তখন তার পাসপোর্টের বিপরীতে বিএমইটি অনুমোদন দিয়ে দেয়। 

তখন বিএমইটি অনুমোদনধারী ব্যক্তি খুব সহজেই পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং করতে পারেন। 

এখন একটু জানিয়ে রাখি বিএমইটি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। বিএমইটি কার্ডের ধারক ব্যক্তিরা সরকার থেকে নিম্নলিখিত সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।

কেন প্রয়োজন এই বিএমইটি কার্ড:

  1. বিভিন্ন দেশের ভিসা যেমন মালয়েশিয়া, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি অনলাইনে চেক করা যায়।
  2. প্রবাস ফেরত বা প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তি যদি কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয় তাহলে এই দপ্তরে অভিযোগ করতে পারে। 
  3. প্রবাসগামী কর্মীদের তথ্য ও সেবা প্রদান।
  4. শ্রমবাজারের তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রচার করে যাতে সাধারণ জনগনের আস্থা স্থাপন করতে পারে।
  5. প্রবাসী শ্রমিকদের সকল তথ্য কম্পিউটার ডেটাবেস নেটওয়ার্কে রক্ষণাবেক্ষণ করে।
  6. প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কোনো শ্রমিকের লাশ দেশে আনয়ন এবং যথাযথ সৎকারের ব্যবস্থা করে।
  7. উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে।
  8. স্থায়ীভাবে প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাতে এতদিনের কষ্টে উপার্জিত অর্থের কার্যকর ব্যবহার করতে পারে।
  9. নিরাপদ অভিবাসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এটার কাজ।
  10. অটোজেনারেটেড বিমানে আরোহণের অনুমতি প্রদান করে।
  11. প্রবাস গমনের সময় প্রবাসীরা সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পায়।
  12. এই কার্ড থাকলে প্রবাসী ইমিগ্রেশনে তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে।
  13. এই কার্ডধারী কোনো ব্যক্তি যদি প্রবাসে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ে তাহলে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস তার দায়িত্ব নিয়ে থাকে।

তাহলে এ কথা বলাই যাচ্ছে যে, এই কার্ডধারী বা রেজিষ্ট্রেশন ধারী কোনো ব্যাক্তির সকল দায়িত্ব সরকার নিয়ে নেয় নিজের দেশের একজন বৈধ নাগরিক হিসেবে। তবে, আপনি যদি এই কার্ডধারী না হন তবে এতসব সুযোগ সুবিধা তো পাবেনই না। সাথে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং করাটাও কঠিন বলা যায় একপ্রকার অসম্ভবই হয়ে যাবে।

কোথা থেকে করবেন পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেকিং?

আপনার মনে যদি এ প্রশ্ন থেকে থাকে কোথা থেকে চেক করবেন তাহলে সে উত্তরটিও দিয়ে দিচ্ছি এখনি। আপনার কাছে যদি একটি ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ থেকে থাকে তাহলে বাসায় বসেই উপরের নিয়ম অনুসরণ করে পাসপোর্ট চেক করে ফেলতে পারেন। 

বর্তমানে স্মার্টফোনেও খুব সহজেই কাজটি করে নেয়া যায়। এজন্য যেকোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে উপরের লিংকে যেতে হবে। তারপর স্টেপ বাই স্টেপ অনুসরণ করলেই পাসপোর্ট চেকিং করে ফেলতে পারবেন। তবে এতসব ঝামেলা মনে হলে চলে যেতে পারেন মোড়ের কোনো কম্পিউটারের দোকানে।

পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট যাচাই করা নিরাপদ নাকি অনিরাপদ?

অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসে যে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট যাচাই করা আদৌ নিরাপদ কিনা। অনেকের মনে একটা ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেক করলে অন্যান্য সকল তথ্যও ফাঁস হয়ে যেতে পারে, পাসপোর্ট হারানো বা চুরি হওয়ার সাথে সাথে। কথাটা আসলে সম্পূর্ণরুপেই ভুল। কেননা, এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এ থাকে একটি বার কোড এবং ই পাসপোর্ট এ থাকে একটি চিপস যাতে সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এই বার কোডে ব্যক্তির ফিংগারপ্রিন্ট অথবা ফেস রিকগনিশন সংরক্ষণ করা থাকে। যা অন্য কেউ চাইলেও জাল করতে পারবে না। তাই পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে আপনি নির্দ্বিধায় পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেক করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ পাসপোর্ট চেকিং সিস্টেম। 

শেষকথা

প্রিয় পাঠক! আপনি যদি আমাদের পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কিভাবে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পাসপোর্ট চেক করতে হয়। এটি নিরাপদ কি অনিরাপদ সে বিষয়েও আলোচনা করেছি আজকের প্রবন্ধে। আপনাদের আরো জানিয়েছি বিএমইটি সম্পর্কে। তাহলে এখন থেকে নিজেদের পাসপোর্ট নিজেই যাচাই করে নিতে পারবেন ঘরে বসে খুব সহজে। আশা করি, দালালদের খপ্পরে আর পড়তে হবে না।

Scroll to Top