পাকিস্তানের ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম, এবং দর্শনীয় স্থানের তালিকা

দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পাকিস্তান। সরকারি ভাবে দেশটির নাম ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম এই দেশটি একটি মুসলমান প্রধান দেশ।দেশের আইন কানুন, শিল্প সংস্কৃতি সবকিছুতেই ইসলামি রীতিনীতির ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। মুসলমান ছাড়াও পাকিস্তানে খুবই অল্প সংখ্যক হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে।পাকিস্তানের মোট আয়তন ৩,৫০,৩৭৪ বর্গ মাইল বা ৯,০৭,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে পাকিস্তান বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। এই দেশটিতে ২১,২৭,৪২,৬৩১ এরও বেশি জনসংখ্যা বসবাস করে। জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তান বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

পাকিস্তানের রাজধানীর নাম ইসলামাবাদ, যা এই দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। আর পাকিস্তানের বৃহত্তম নগরী করাচি এবং এটিও দেশটির গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। রাষ্ট্রীয় ভাবে এই দেশে দুইটি ভাষা প্রচলিত আছে একটি হলো উর্দু এবং আরেকটি ইংরেজি। তবে এর পাশাপাশি আরও অনেক ভাষাভাষীর লোকজন এই দেশটিতে বসবাস করে।

বৃহৎ ভূ-খন্ডের এই দেশটিতে আছে শিল্প ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য। তবে ধর্মীয় রীতিনীতি এই দেশের সংস্কৃতিতে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবস্থান

এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ ভাগে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবস্থান। পাকিস্তানের পশ্চিম দিকে রয়েছে আফগানিস্তান ও ইরান। পূর্বে দিকে ভারতের অবস্থান এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীনের তিব্বত ও শিঞ্চিয়াং অঞ্চল অবস্তিত। পাকিস্তানের দক্ষিণদিকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগর অবস্থিত। পাকিস্তানের সাথে চারটি প্রতিবেশী দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। দেশগুলো হলো: গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, আফগানিস্তান, ভারত, এবং ইরান।

পাকিস্তানের ইতিহাস :

১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট বিশ্ব মানচিত্রে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একটি উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এই উপমহাদেশের নাম ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ। ভারতীয় উপমহাদেশের পাকিস্তানের ভূ-খন্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজনের ধর্ম ছিল ইসলাম এবং তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারণ পদ্ধতি ছিল একদমই আলাদা। হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে মিলে মিশে একই শাসনের অধীনে দুই সম্প্রদায়ের জীবনযাপন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি মেনে চলা এক প্রকার দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। একের পর এক আন্দোলন ও সংগ্রামের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের আলাদা আলাদা ভূ-খন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহ তৈরি করা হবে।

 এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট মুসলিম প্রধান ভূখন্ডকে আলাদা করে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় আর এই রাষ্ট্রের নাম হয় পাকিস্তান। আর এরই মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের অবসান ঘটে। দুইটি আলাদা আলাদা ভূখন্ড নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় – একটি পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং আরেকটি পশ্চিম পাকিস্তান যা এখন পাকিস্তান নামে পরিচিত।

 তবে পুর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের জনসাধারণের মুখের ভাষা, জীবনযাপনের পদ্ধতি ও সংস্কৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে ব্যপক অমিল ছিল। তাই পাকিস্তানের আলাদা ভূখন্ড দুইটি ১৯৭১ সালে নতুন করে আবার দুটো নতুন দেশের সৃষ্টি করে। একটি হয় বাংলাদেশ এবং আরেকটি পাকিস্তান। সেই থেকে পাকিস্তান একটি মূল ভূখন্ড নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতীক হিসেবে বিদ্যমান।

পাকিস্তানের পতাকা

পাকিস্তানের পতাকায় সাদা ও গাড় নীল রঙে তাৎপর্যপূর্ণ নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গাড় সবুজ রঙের মাঝখানে একটি সাদা তারা ও নতুন চাঁদ রয়েছে। এবং পতাকার দণ্ডের দিকে তুলনামূলক কম অংশে সাদা রং রয়েছে। পাকিস্তানের ভাষায় তাদেরবজাতীয় পতাকাকে বলা হয় ‘সাব্‌জ হিলালি পারচাম’ যার বাংলা অর্থ ‘নতুন চাঁদ বিশিষ্ট সবুজ পতাকা’।

পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার নকশা করেছেন সৈয়দ আমিরুদ্দিন কেদোয়াই। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির তিনদিন আগে অর্থাৎ ১০৪৭ সালের ১১ই আগস্ট এই পতাকায় নকশাটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
পাতাকার এই নকশার আছে চমৎকার তাৎপর্য। পতাকার সিংহভাগে অবস্থিত গাড় সবুজ রং ইসলাম ধর্মের প্রতীক। পতাকা দন্ডের দিকে অবস্থিত সাদা অংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতীক বহন করে। মাঝখান বরাবর যে সাদা নতুন চাঁদ তা হলো প্রগতির প্রতীক। এবং পাঁচ কোনা তারকাটি হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক।

পাকিস্তানের অর্থনীতি

স্বাধীনতার প্রথম দিকে পাকিস্তানের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষি নির্ভর ছিল এবং কৃষি ক্ষেত্রে কোনো আধুনিকায়ন ব্যবস্থাও ছিল না। তবে বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন এর পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফসল উৎপাদন, পশুপালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চাকা এখনও সচল রয়েছে। পাকিস্তানে উৎপাদিত প্রধান ফসল গুলোর মধ্যে রয়েছে- ধান, তুলা, ভুট্টা, তেলবীজ সহ আরও অনেক উন্নত জাতের ফসল।

পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মালিকানা ভিত্তিক ব্যবসায়। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ স্বনামধন্য মালিকানা ভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোকে সরকারি আওতাভুক্ত করে ফেলা হয়েছে। এই দেশে পুরোপুরি ইসলামি আইন অনুসরণ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

বৃহৎ শিল্প থেকে শুরু করে স্থানীয় ও ছোটখাটো শিল্প ক্ষেত্রেও পাকিস্তান অনেকটা এগিয়ে আছে। তাছাড়া ব্যাংক, বীমা ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দিক থেকেও পাকিস্তান এগিয়ে আছে।
পাকিস্তানের ভূখন্ডে সামান্য পরিমাণ পেট্রোলিয়াম এবং কিছু বড় প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ পাকিস্তানের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের প্রাচীন শিল্প গুলোর মধ্যে কয়লার খনি উল্লেখযোগ্য।

মানবসম্পদ, শিল্প, কৃষি ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সব মিলিয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে করেছে বেশ সমৃদ্ধশীল। তাইতো পাকিস্তানের জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেলেও এর ডিজিপি একটু হ্রাস পায়নি বরং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

পাকিস্তানের সংস্কৃতি

পাকিস্তানের বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে যেমন রয়েছে নানা বৈচিত্র্য, ঠিক তেমনই এই বৈচিত্র্যতা ফুটে উঠেছে তাদের সংস্কৃতিতেও। পাকিস্তানের আলাদা আলাদা প্রদেশের জনগণের জীবনধারার পদ্ধতিতে রয়েছে ব্যপক পার্থক্য। চলাফেরা, কথা বার্তা, পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুতেই বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে।

তবে সাধারণত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চাভিলাষী পরিবারের সদস্যরা সবাই ইসলামি সংস্কৃতিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েরা কখনোই বাড়ির বাইরে কাজ করে না। যদিও কখনও বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে ইসলামিক নিয়মানুসারে আপাদমস্তক ঢেকে পোশাক পরিধান করেন। সাধারণ ঘরের মহিলাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন বাইরের কাজে পুরুষের সাথে হাত লাগায়, তবে তাদের মধ্যেও শালিনতাবিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব পায়।

বাইরের লোকজনের জন্য বসার ঘর পর্যন্তই সীমানা থাকে, অতিথী এলে অন্দরমহলে যাওয়ার অনুমতি পায় না বললেই চলে। তবে বর্তমান প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা ওয়েস্টার্ন কালচার পাকিস্তানি সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে। তবে প্রশাসনিক ভাবে এই সংস্কৃতিকে সমর্থন করা হয় না। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করে।

একই দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জীবনব্যবস্থার লোকজন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে।
পাকিস্তানের সবগুলো প্রদেশ মিলিয়ে ১৫ টিরও বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সন্ধান পাওয়া গেছে।এদের মধ্যে পাঠান, পাঞ্জাব, বেলুচ, মুহাজির, পশতু, সারাকিস উল্লেখযোগ্য। এই সব নৃগোষ্ঠীর লোকজনের পরিধেয় পোশাকের মধ্যে যেমন বৈচিত্র্যতা আছে ঠিক তেমনই তাদের আচার অনুষ্ঠানের আছে নানাবিধ বেচিত্রতা।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সব ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই দেশে খুব উৎসবমুখর ভাবে পালন করা হয়। তার পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব, জাতীয় অনুষ্ঠান, বসন্ত উৎসব, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব উৎসবে সারাবছরই দেশটিতে থাকে রমরমা পরিবেশ।
সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্ম ও খেলাধুলায়ও পাকিস্তান বিশ্ব মঞ্চে নিজের অবস্থান বেশ মজবুত করতে পেরেছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে সারা বিশ্বে পাকিস্তান জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য কালচারাল কর্মকাণ্ডে দেশটির আছে অসামান্য অবদান।
ভাষা, পোশাক পরিচ্ছদ, বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সব মিলিয়ে পাকিস্তানের সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধশীল ও বৈচিত্র্যময়।

পাকিস্তানের আবহাওয়া ও জলবায়ু

অঞ্চলভেদে পাকিস্তানের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে ব্যপক বৈচিত্র্যতা লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো অঞ্চলে সারাবছরই বৃষ্টিপাত হয় এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে কখনও কখনও বন্যাও হয়। আবার কোনো কোনো অঞ্চল এতোটাই শুষ্ক যে সেখানে সারাবছরে কোনো বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টিপাত হলেও একদমই কম। তবে সাধারণত এই দেশে চারটি ঋতুর আনাগোনা লক্ষ করা যায়। য

থা: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ও বসন্ত। ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাকিস্তানে শীতকাল থাকে। মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত থাকে বসন্ত ঋতু। জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, তবে এরই মাঝখানে কম বেশি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত বর্ষাকাল। গরমের সময় তাপমাত্রা কখনও কখনও অনেক বেশি থাকে আবার শীত ঋতুতে অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায় এখানকার তাপমাত্রা। তবে পাকিস্তানের বসন্ত ঋতুতে চমৎকার আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।

পাকিস্তান এর দর্শনীয় স্থান সমূহ

পাকিস্তানে দেখার মতো অত্যাশ্চর্য বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা একজন পর্যটককে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। পাহাড়ি এবরো থেবরো রাস্তা, পর্বত সৃঙ্গ, নকশাখচিত চমৎকার মসজিদ ও স্থাপনা, কৃত্রিম সুরঙ্গ, প্রাচীন জনপদ এর ধ্বংসাবশেষ এই সব কিছুই পর্যটকদের বার বার টেনে নিয়ে যায় এখানে। আরও আছে আধুনিকতার ছোয়ায় গড়ে তোলা অসংখ্য পার্ক ও রিসোর্ট যা ছোট বড় সবার কাছেই উপভোগ্য। তবে পাকিস্তানের দর্শনীয় স্থানের তালিকা করতে গেলে হয়তো লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই পাকিস্তানের সবথকে জনপ্রিয় বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান সন্পর্কে তুলে ধরা হলো৷

১. সোয়াট ভ্যালি

পাকিস্তানের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে সোয়াট ভ্যালি সবথেকে বেশি উল্লেখযোগ্য। ছোট একটি সবুজে ঘেরা গ্রামের সাথে একটি চমৎকার পাহাড়ি উপত্যকার মায়াবী সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এখানে।

২. বয়ুন গ্রাম

পাকিস্তানের গ্রামগুলো একদমই ছবির মতো, তার একটি বড় উদাহরণ হলো বয়ুন গ্রাম। এই গ্রামটিও একটি পাহাড়ি উপত্যকায় অবস্থিত। কালাম শহর থেকে কিছুটা শর্ট ড্রাইভ করে পাহাড়ি রাস্তায় কিছুটা ট্রেকিং করলেই বয়ুন গ্রামের দেখা মিলবে।

৩. কান্দোল হ্রদ ও স্পিন্ধর হ্রদ

পাকিস্তানের অসম্ভব সুন্দর দুটি হ্রদ হলো কান্দোল হ্রদ ও স্পিন্ধর হ্রদ। হ্রদ দুটি একই রুটে অবস্তিত বলে একই ট্যুর প্লানে দুটো স্পট ঘুরে আসা যায়। কালাম থেকে জীপে চেপে কান্দোল হ্রদ পোঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা। সেখান থেকে আবার ২ ঘন্টা ট্রেকিং করে স্পিন্দোর হ্রদে পৌছানো যায়।

৪. উশু বন

দেবদারু গাছে আচ্ছাদিত চমৎকার একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলো উশু বন। বনের মধ্যে দিয়ে চমৎকার একটি রাস্তা চলে গেছে। আর এই পথ ধরে হেটে গেলে হারিয়ে যেতে পারবেন বনের মায়াবী সৌন্দর্যে। এই পথটি কালাম নদীর ধার পর্যন্ত চলে গেছে এবং পথিমধ্যে দেখা মিলবে চমৎকার কিছু গ্রামের।

৫. হুনজা উপত্যকা

হুনজা মূলত বেশ কয়েকটি পাহাড়ি উপত্যকা ও ছোট ছোট গ্রাম নিয়ে গঠিত একটি জেলা। একের পর এক পাহাড়ি উপত্যকা ও পাহাড়ের খাদে খাদে গড়ে ওঠা ছোট ছেট গ্রামের মধ্যে কাটিয়ে দেয়া যায় চমৎকার একটি ছুটির দিন।

৬. পাসু ক্যাথেড্রাল

পাসু ক্যাথেড্রাল হলো পাকিস্তানের জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক শিল্পকর্ম। প্রাকৃতিক উপাদানকে ব্যবহার করে চমৎকার দর্শনীয় স্থানে রূপান্তর করা হয়েছে এবং সেই সাথে এখানে গরে উঠেছে ছোট বড় অনেক গ্রাম। তবে পাসু গ্রামে থাকার জন্য পূর্ব অনুমতি জোগাড় করতে হয়।

৭. আত্তাবাদ লেক

লেকটি এতোটাই সুন্দর যে সামনে থেকে দেখলেও মনে হবে অবাস্তব কিছু দেখছেন। হ্রদের উজ্জ্বল-নীল ফিরোজা পানি যে কারো মন ভুলিয়ে দেবে৷ ২০১০ সালে অস্বাভাবিক একটি ভূমিধস এর ফলে এই লেকটির জন্ম হয়।

৮. ঈগলস নেস্ট

হুনজা উপত্যকার সবথেকে সুন্দর জায়গা ঈগলস নেস্ট। এখান থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। কাছাকাছি অবস্থিত কোনো এক রেস্টুরেন্ট এর নাম থেকে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে ঈগলস নেস্ট

৯. শাহ জাহান মসজিদ

পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম শাহ জাহান মসজিদ যা জামিয়া মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের থাট্টায় অবস্থিত। নসজিদটির অসাধারন নির্মানশেলী এটিকে পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানে পরিনত করেছে।

১০. রোহতাস ফোর্ট

পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে রোহতাস ফোর্ট সবথেকে বেশি জনপ্রিয় । এটি ১৬ শতকের একটি নিদর্শন। এতো পুরোনো হওয়া সত্বেও এখনও দুর্গটি নিজের জৌলুশ ধরে রাখতে পেরেছে। রোহতাস ফোর্ট পাঞ্জাবের ঝিলামের কাছে অবস্থিত যা ইসলামাবাদ থেকে মাত্র দুই ঘন্টার পথ। বিদেশী পর্যটক দের জন্য এই দুর্গের প্রবেশ মূল্য ৫০০ রুপি।

১১. বাদশাহী মসজিদ

পাকিস্তানের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান বাদশাহী মসজিদ। এটি মোঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার নিদর্শন যা ১৬৭০ এর দশকে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি উইনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছেন। পাকিস্তানের লাহোরে বাদশাহী মসজিদ অবস্থিত।

১২. দেওসাই ন্যাশনাল পার্ক

তুষারে ঢাকা একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র হলো দেওসাই ন্যাশনাল পার্ক। যারা জীববৈচিত্র্য ভালোবাসে তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত পর্যটন এলাকা। হিমালয়ের নেকড়ে, সাইবেরিয়ান আইবেক্স, লাল শেয়াল এবং হলুদ-পেটযুক্ত মারমোট সহ আরও অসংখ্য মেরু অঞ্চলীয় প্রাণীর দেখা মিলবে এই পার্কে। দেওসাই ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।

পাকিস্তানিদের খাদ্যাভ্যাস :

পাকিস্তানিদের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বাঙালিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ন। পাকিস্তানিরা সাধারণ তিন বেলা খাবার খায়- সকালে, দুপুরে এবং রাতে। তবে বাঙালিরা যেমন দুপুরের খাবারকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয়, তেমনই পাকিস্তানিরা রাতের খাবারকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এর পেছনের আসল কারণ হলো- রাতে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়। ফলে দারুণ একটি পারিবারিক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা যায়। যে খাবারগুলো তৈরি করতে সময় বেশি লাগে এবং তুলনামূলক সুস্বাদু সেসব খাবারকে রাখা হয় ডিনারের তালিকায়। 
তাছাড়া বিকেলের দিকে হালকা চা নাশতা খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে।

পাকিস্তানিরা যে কোনো খাবার সাধারণত বাঙালিদের মতো হাত দিয়ে খেতে অভ্যস্ত। পরিবারের সবাই মিলে মেঝেতে বসে দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়ার আয়োজন করে। মুসলিম কালচার অনুসারে সবাই ডানহাত দিয়ে খাবার খায় এবং পাকিস্তানের খাদ্য তালিকায় সব ধরনের হালাল খাবার প্রাধান্য পায়।
সকালের খাবার হিসেবে সাধারণত রুটি, পরোটা, ডিমের বিভিন্ন রেসিপি, স্থানীয় ফলমূল খেতেই পছন্দ করে পাকিস্তানিরা। 

আরও একটি স্পেশাল খাবার হলো লাচ্ছি যা টক দই,চিনি ও দুধের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন বেকড আইটেমও সকালের নাশতায় প্রাধান্য পায়। পাকিস্তানের সকালের নাশতায় নিহারি খুবই স্পেশাল একটি খাবার, যা সারারাত ধরে রান্না করে সকালে গরম গরম রুটি পরোটার সাথে পরিবেশন করা হয়। 
দুপুরের খাবার হিসেবে সাধারণত মুরগির মাংস, রুটি বা ভাত সবথেকে বেশি প্রাধান্য পায়। তাছাড়া সবজি, ডাল এবং মাছও তাদের প্রিয় খাবার। 

রাতের খাবারটি হয় একটু বেশিই স্পেশাল। পোলাও, কাবাব, মাংস, পনির, বিরিয়ানি, ভাতের সাথে নানাবিধ তরকারি ডিনার পাকিস্তানিদের প্রিয় খাবার। তাছাড়া বিভিন্ন ফলমূল ও মিষ্টান্ন আইটেমও দেকা যায় তাদের খাদ্য তালিকায়।

পুরোপুরি মুসলমান সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা দেশ পাকিস্তান। সাধারণত পরিবারিক আইনকানুন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের যে কোনো আইনকানুনের ক্ষেত্রে ইসলামিক বিধানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি যথাযথভাবে পালন করতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই দেশটি যে কোনো পর্যটককেই আকর্ষণ করে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বিশ্ব দরবারে বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজের পরিচিতি তুলে ধরতে পেরেছে।

Scroll to Top