নোয়াখালি জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকা

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল নোয়াখালী যার পূর্বনাম ছিল ভুলুয়া।চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে পড়েছে বিধায় প্রাকৃতিক ভাবেই এই জেলায় রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপ, বজরাশাহী মসজিদ,কল্যানদি জমিদার বাড়ি, কমলার দিঘি,গ্রীন পার্ক, নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

১. নিঝুম দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপ সবথেকে বেশি আকর্ষণীয়। এই দ্বীপকে ইছামতীর দ্বীপও বলা হয়।

নিঝুম দ্বীপ কোথায়?

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের বুকে ভেসে থাকা ছোট বড় বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে নিঝুম দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপ কখন যাবেন?

অক্টোবর থেকে এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

নিঝুম দ্বীপের কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখব?

১.চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর
২.কমলার দ্বীপ
৩.ম্যানগ্রোভ বন
৪.নামাবাজার সি বীচ
৫.দমার চর ও কুমারী সি বীচ
৬.চোয়াখালী সি বীচ

নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়ঃ

নদীপথে সব থেকে সহযে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যায়।ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় দুটো লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
আবার দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে হাতিয়ার তমরুদি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরে আসে।
১. এম ভি পানামা ( ০১৯২৪-০০৪৬৩৮)
২. এমভি টিপু ৫ (০১৭১১-৩৪৮৮১৩)

হাতিয়ার তমরুদি থেকে স্কুটারে করে বন্দরটিলা এবং সেখান থেকে ট্রলারে করে সরাসরি নিঝুম দ্বীপ পৌছানো যাবে।

নিঝুম দ্বীপে কোথায় থাকবেন?

নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট ও হোটেল।

  • ১.অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্ট (০১৭২৪-১৪৫৮৬৪)
  • ২.বন বিভাগের রেস্ট হাউজ ( ০১৭১১-১৭৩৪৩৪)
  • ৩.মসজিদ বোর্ডিং, নামার বাজার (০১৭২৭-৯৫৮৮৭৯)
  • ৪.হোটেল দ্বীপ সম্পদ (০১৭২০-৬০১০২৬)

২. বজরা শাহী মসজিদ

নোয়াখালীর ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম “বজরা শাহী মসজিদ “।
বজরা শাহী মসজিদ কোথায়?
নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদ অবস্থিত।

বজরা শাহী মসজিদের নির্মাতা _
জমিদার আমানুল্লাহ ১৭৪১ থেকে১৭৪২ সালের দিকে ৩০ একর ভূমিতে একটি দিঘি নির্মাণ করেন।এই দিঘির পশ্চিম দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল বিখ্যাত এই বজরা শাহী মসজিদটি।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি মারবেল পাথরের তৈরি।দিল্লির শাহী জামে মসজিদ এর আদলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।মসজিদটি নির্মানের দীর্ঘদিন পর ১৯০৯ সালে প্রথমবারের মতো এর সংস্কার কাজ করা হয়ছিল।১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব গ্রহন করেন।

বজরা শাহী মসজিদ কিভাবে যাব?

ঢাকা থেকে নোয়াখালীর মাইজদী গামী বাসে উঠে সরাসরি মাইজদী চলে আসতে হবে। সেখান থেকে বাস,সিএনজি বা অটোরিকশা করে সোনাইমুড়ীর বজরা হাসপাতালের সামনে নেমে ২০০ গজ সামনে আগালেই দেখা মিলবে বজরা শাহী মসজিদ এর।

কোথায় থাকবেন?
বজরা শাহী মসজিদ দেখতে এসে থাকার জন্য নোয়াখালীতে পাবেন কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাসম্পন্ন বেশ কয়েকটি হোটেল।
১. পুবালি হোটেল (০৩২১-৬১২৫৭)
২.রয়েল হোটেল(০৩২১-৬২১৭৩)
৩.হোটেল রাফসান(০৩২১-৬১৩৯৫)

৩. নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ

স্থানীয়ভাবে মাইজদি বড় মসজিদ নামে পরিচিত “নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ ” নোয়াখালী শহরের অন্যতম প্রধান মসজিদ।ইমাম উদ্দিন নামে এক সওদাগর ১৮৪১ সালে পুরাতন নোয়াখালী শহরে নিজের জমিতে মসজিদটি নির্মাণ করেন।পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে বর্তমান নোয়াখালী জেলার মূল শহর মাইজদিতে মসজিদটি স্থানান্তর করা হয়।৩.৮ একর জমিতে অবস্থিত মাইজদী বড় মসজিদে মুসলমান সংস্কৃতির লোকজ শিল্পের নির্মাণশৈলী লক্ষ করা যায়।মসজিদে আগত মুসল্লিদের জন্য আধুনিক সৌচাগার,অজুখানা ও গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ কীভাবে যাবেন?

ঢাকা মিরপুর ও জিগাতলা থেকে সরাসরি নোয়াখালী মাইজদীর উদ্দেশ্যে নিয়মিত গাড়ি ছাড়ে।শাহী এক্সপ্রেস,হিমাচল,বিশাল, একুশে ভিআইপি,সাথী এক্সপ্রেস ঢাকা টু নোয়াখালী রুটের নিয়মিত বাস সার্ভিস।

কোথায় থাকবেন?

নোয়াখালীর মাইজদী শহর ও চৌমুহনীতে আছে বেশ কিছু ট্যুরিস্ট হোটেল।উল্লেখযোগ্য হলোঃ
১. পূবালি হোটেল।
২. হোটেল আল ফারহান।
৩. হোটেল রয়্যাল।
৪. হোটেল সুগন্ধা ইন্টারন্যাশনাল।
৫. হোটেল আল মোর্শেদ।
৬. হোটেল মৌচাক।

৪. নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক

প্রায় ২৫ একর জায়গা নিয়ে নোয়াখালীর ধর্মপুরে অবস্থিত ” নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক ” সকল বয়সী দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত ভ্রমণ কেন্দ্র। নোয়াখালী জেলার পার্ক গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় এই পার্কটি পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। পার্কের পাশেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।

“নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক” এর উল্লেখযোগ্য রাইডগুলো হলো

  • ১.সোয়ান বোট
  • ২. মেরি গো রাউন্ড
  • ৩. সুইং চেয়ার
  • ৪. প্যাডেল বোট
  • ৫.হেলিকপ্টার
  • ৬.কিডস ট্রেন
  • ৭.ফ্যামিলি ট্রেন
  • ৮. ফেরিস হুইল
  • ৯. বাম্পার কার
  • ১০.নাগরদোলা

এছাড়াও আছে ঝর্না, পাহাড়, পিকনিক স্পষ্ট, লেক, সুইমিং পুল ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা।

প্রতিদিন সকাল ৯ঃ৩০ থেকে ৬ঃ৩০ পর্যন্ত পার্কটি সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

প্রবেশ মূল্যঃ ১৫০৳
তাছাড়া আছে ৩ টি পিকনিক প্যাকেজ ও ১ টি ফ্যামিলি প্যাকেজ

যোগাযোগঃ ০১৮৪৯-৬৫৩৬৬০
অথবা, ০১৮২৫-২৯৫৮২৯

কীভাবে যাবেন?
যে কোনো জায়গা থেকে নোয়াখালী শহরে পৌছে রিক্সা, অটো বা সিএনজি করে সরাসরি পার্কের প্রবেশ গেটে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন?
উপরে উল্লিখিত নোয়াখালীর যে কোনো হোটেল বুক করে থাকতে পারবেন।

৫. মুছাপুর ক্লোজার

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় বিদ্যমান ” মুছাপুর ক্লোজার “।এখানে উপভোগ করার জন্য পাবেন অসংখ্য বন্য প্রাণী, ফরেস্ট বাগান,ফেনী নদীর মাঝে ক্লোজার, ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর, সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি, সমুদ্রের বীচ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য।

কীভাবে যাবেন মুছাপুর ক্লোজারে?

নোয়াখালী শহর থেকে প্রথমে কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাটে আসতে হবে।সেখান থেকে বাংলাবাজার হয়ে চলে আসতে হবে চৌধুরীবাজার।চৌধুরীবাজার থেকে ২ কিলোমিটার পার হলে চার রাস্তার মোড় পাবেন।চার রাস্তার মোড় থেকে পূর্বদিকে জনতা বাজার পার হয়ে ১.৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই চলে যাবেন মুছাপুর ক্লোজার।

থাকা ও খাওয়ার জন্য সুব্যবস্থা চাইলে চলে আসতে হবে নোয়াখালী জেলা সদরে।সেখানকার উল্লেখযোগ্য হোটেল সম্পর্কে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে।

৬. নলুয়া মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ

নোয়াখালী জেলায় নবনির্মিত খুবই জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য মসজিদ ” নলুয়া মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ “।অসম্ভব সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর কারনে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ভীড় জমায় এই মসজিদে।
নলুয়া মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার ডমরুয়া ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামে অবস্থিত। নলুয়া মিয়াবাড়ির বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী ” নুর-ই আলম চৌধুরী প্রকাশ পাপ্পু” সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ৪৭ শতাংশ জমির ওপরে নির্মিত ৮ তলা ফাউন্ডেশনের এই মসজিদটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এই মসজিদে একসাথে এক হাজার মুসুল্লি জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারবে।মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মহিলাদের নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা আছে।

মসজিদির পাশেই ৮ একর জমির ওপরে নির্মাণ করা হয়য়েছে সাজ ইকো পার্ক নামে সুন্দর একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন।এই পার্কটি দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দেয়।

৭. হাক্কানি জামে মসজিদ

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মসজিদ গুলোর মধ্যে নোয়াখালীর হাক্কানি মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৩ তলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের হাসেম সওদাগরের বাড়িতে অবস্থিত।স্থানীয়দের কাছে এটি হাসেম সওদাগরের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।
আশির দশকের শুরুর দিকে হাসেম সওদাগরের বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এখানে ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।২০০৭ সালে আবুল খায়ের গ্রুপ কোম্পানির অর্থায়নে হাক্কানি মসজিদের পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ২০১০ সালে তা শেষ হয়।অসাধারণ নকশায় তৈরি এই মসজিদটি দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটকদের আকর্ষনের বিষয়।
মসজিদের চারটি বড় মিনার ও তিনটি ছোট বড় গম্বুজ রয়েছে।মসজিদ টির উত্তরে নুরানি ও হেফজ খানা, পূর্ব পাশে ঈদগাহ ও দক্ষিণে একটি মাজার রয়েছে।

এছাড়াও নোয়াখালী জেলার আরও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো—
১. কমলার দিঘি, হাতিয়া
২.গ্রীন পার্ক
৩. কল্যান্দি জমিদার বাড়ি
৪. স্বর্ন দ্বীপ
৫.গোয়ালখালি বীচ
৬.মাইজদী কোর্ট বিল্ডিং দিঘি
৭.ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চর বাটা
৮.শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম
৯. দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা পার্ক (ইত্যাদি)

Scroll to Top