নেপালের দর্শনীয় স্থানের তালিকা এবং ইতিহাস, ভাষা, জনসংখ্যা ও আয়তনের তথ্য

দক্ষিণ এশিয়ার একটি হিমালয় অধ্যুষিত রাষ্ট্র নেপাল। দেশটির রাষ্ট্রীয় নাম যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী নেপাল। নেপালের নাগরিকদের জাতীয়ভাবে নেপালী বলে অভিহিত করা হয়। নেপালের রাজধানীর নাম কাঠমান্ডু এবং এটিই নেপালের বৃহত্তম শহর।
দেশটির আয়তন কম হলেও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই৷ নেপালের আয়তন ১,৪৭,১৮১ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৬,৮২৭ বর্গ মাইল। আয়তনের দিক থেকে নেপাল বিশ্বের ৯৩ তম বৃহত্তম দেশ। ২০১৮ সালের আনুমানিক হিসেব মতে নেপালে বসবাসরত মোট জনসংখ্যা ২৮০৯৫৭১৪। জনসংখ্যার দিক থেকে নেপাল বিশ্বের ৪৯ তম বৃহত্তম দেশ। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট নেপালে অবস্থিত। এছাড়াও বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ টি পর্বত শৃঙ্গের মধ্যে ৮ টি পর্বতই নেপাল ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

নেপালের অধিকাংশ এলাকাই পাহাড়ি, আর এই পাহাড়ের খাদে খাদে বসবাস করে অনেক সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। এদের ভাষা জীবনধারণ পদ্ধতি, সংস্কৃতি সব কিছুই একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা। তাই নেপালে একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা যায়।

নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান

নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই বৈচিত্রময়। এর ভৌগোলিক গঠনের কোথাও রয়েছে উর্বর সমভূমি, কোথাও সাবলপাইন অরণ্যের পাহাড় সেই সাথে আছে সর্বোচ্চ পর্বতসৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এর চূড়া।

আরও আছে বিশ্বের সবথেকে উঁচু দশটি পর্বতমালার চূড়া। নেপাল হলো দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যার বেশিরভাগ অংশই হিমালয় পর্বতের অন্তর্ভুক্ত,তবে ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিরও বেশ কিছু অংশ রয়েছে। বাংলাদেশের মতো নেপালও তিনদিক থেকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত। নেপালের উত্তর দিকে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে ভারতের সীমানা রয়েছে।

নেপালের মানচিত্রে দেশটিকে একটি আয়তাকার চতুর্ভুজের মতো দেখতে লাগে। আয়তাকার এই দেশটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৮০ কিমি বা ৫৪৭ মাইল এবং প্রস্থ ২০০ কিমি বা ১২৫ মাইল। ভূ-প্রকৃতিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে নেপালকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।যথা- পর্বত, পাহাড়ী উঁচু ভূমি ও মাউন্ট এভারেস্ট। তবে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতেই জনবসতি সবথেকে বেশি।

নেপালের ইতিহাস

নেপালের ইতিহাস ১১ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। ঐতিহাসিক পটভূমির দিক থেকে বিবেচনা করলে নেপালের ইতিহাসকে প্রধান তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো : প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ এবং আধুনিক যুগ। নেপালের প্রাগৈতিহাসিক সময়ের কথা চিন্তা করলে সবার প্রথমেই চলে আসে নেভার সম্প্রদায়ের কথা। এরাই হয়তো সর্বপ্রথম এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

এর পরপরই চলে আসে কিরাতিদের যুগের কথা। যারা ৭ম বা ৮ম শতাব্দীতে পূর্বাঞ্চল থেকে নেপালে এসেছিল এবং এরাই নেপালের প্রথম পরিচিত শাসক। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর শুরুতে, লিচ্ছভিদরা কিরাতিদের উৎখাত করে এবং নিজেদের অধিপত্য বসায় নেপালের মাটিতে। এই সম্প্রদায় নেপালের অনেক পরিবর্তন সাধান করে। বড় বড় স্থাপনা, সমাজ সংস্করণ ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে লিচ্ছভিদদের অবদান রয়েছে এবং এই সম্প্রদায়ের স্থাপনা গুলোর নিদর্শন এখনও নেপালে বিদ্যমান আছে। এর পরেই শুরু হয় মল্লস এবং স্বর্ণযুগ। মল্লরা নেপালের মাটিতে ৫৫০ বছর শাসন করে এবং নেপালের মূল উন্নয়ন তাদের হাত ধরেই সাধিত হয়।

মল্লস যুগের সমাপ্তির সাথে সাথে গোর্খা শাসক এই অঞ্চলের অধিপত্য লাভের চেষ্টা করে। তিনি অবশেষে ১৭৬৯ সালে উপত্যকা জয় করেন এবং তার রাজধানী কাঠমান্ডুতে স্থানান্তর করেন। তার বিজয়ের মধ্য দিয়েই নেপালের মাটিতে শাহ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এই রাজত্ব ২০০৮ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

কিন্তু নেপালের আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও জীবনব্যবস্থার কারনে গোর্খা শাশকের একত্রীকরণ নীতি মেনে নিতে পারেনি দেশটির সাধারণ জনগণ। তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসারে বাঁচতে চেয়েছিল। ফলে অনেক সংগ্রাম ও আন্দোলনের পরে অবশেষে ২০০৮ সালে নেপালকে ফেডারেল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে।

নেপালের জাতীয় পতাকা

আধুনিক বিশ্বের একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী আকৃতির পতাকা নেপালের জাতীয় পতাকা। বিশ্বের প্রতিটি দেশের পতাকাই আয়তাকার শুধুমাত্র নেপালের জাতীয় পতাকা ত্রিভুজ আকৃতির। দুটি ত্রিভুজ আকৃতিকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে পতাকাটির ডিজাইন করা হয়েছে।নেপালের জাতীয় পতাকার পুরো জমিন টকটকে লাল বর্নের এবং চারপাশে নীল বর্ডার লাইন আছে।

দুটি ত্রিভুজ আকৃতির নিচেরটিতে সূর্য এবং উপরের ত্রিভুজটির মাঝখানে চন্দ্র অঙ্কিত আছে। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত, পতাকার চন্দ্র ও সূর্যের প্রতীকের মধ্যে মানুষের মুখ আঁকা থাকতো কিন্তু পরবর্তীতে পতাকার পূর্ব নকশা পরিবর্তন করে মানুষের মুখের প্রতিচ্ছবি বাদ দেয়া হয়েছে। নেপালের জাতীয় পতাকার বর্তমান ডিজাইন গ্রহণ করা হয়েছে ১৯৬২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর।

পৃথিবীর একমাত্র অ-আয়তাকার পতাকাটির টকটকে লাল বর্ন রক্তিম বর্ণ সাহসিকতা ও নেপালের জাতীয় ফুল রডোডেনড্রন ফুলের প্রতীক। চারপাশের বর্ডার লাইনের নীল বর্ন শান্তির প্রতীক।

নেপালের প্রচলিত ভাষা

নেপাল মূলত একটি বহুভাষিক দেশ। এখানে অসংখ্য আলাদা আলাদা জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এবং প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তবে প্রধান জাতীয় ভাষা হিসেবে ‘নেপালি’ ভাষাকেই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। নেপালের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন নেপালি ভাষাতেই কথা বলে। একটি বেশ সমৃদ্ধশীল এবং আভিজাত্যপূর্ণ একটি ভাষা যার নিজস্ব লিখন পদ্ধতি আছে। নেপালি ভাষার ১২ টি স্বরবর্ণ ও ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে।

নেপালি ভাষা প্রাচীন দেবনাগরী লিপিতে লেখা। নেপালি ভাষার ধরন অনেকটা ইন্দো-আর্য ভাষা এবং হিন্দি ও বাংলা ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে। নেপালি ভাষা ছাড়াও নেপালে সংবিধান স্বীকৃত কিছু ভাষা রয়েছে। এগুলো হলো: মৈথিলি, ভোজপুরি, থারু, তামাং এবং নেওয়ারি ইত্যাদি। তাছাড়াও আছে আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব কথ্য ভাষা, যা নেপালের সংস্কৃতিকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়। নেপালের জনপ্রিয় বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষা হলো- লিম্বু, রাই, শেরপা, মাগার, গুরুং ইত্যাদি। বর্তমানে তরুন প্রজন্মের কাছে নিজস্ব জাতিগত ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

নেপালের নাগরিকদের ধর্ম

নেপালের বাসিন্দাদের মধ্যে একটি মিশ্র ধর্ম বিশ্বাস লক্ষ করা যায়। নেপালি জনসংখ্যার সিংহভাগই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। তাছাড়াও মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ জাতিগত নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস এই দেশে প্রচলিত আছে। ২০১১ সালের জনসংখ্যার হিসাবের জরিপ অনুযায়ী নেপালে মোট জনসংখ্যার ৮১.৩% লোক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। এরপরে ৯.০% লোক বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী, ৪.৪% লোক মুসলমান ধর্মের অনুসারী, এরপরে মোট জনসংখ্যার ১.৪% লোক খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী।

নেপালের অর্থনীতি

নেপালের অর্থনীতির সিংহভাগই নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের ওপর। প্রতিবছর অসংখ্য বিদেশী পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করে এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

নেপাল বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে একটি।এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে দোশটির অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করার প্রচেষ্টা কেবল শুরু হয়েছে।তবে এখনও কোনো পরিকল্পনা পুরোপুরি ভাবে কার্যকর হয়নি। পর্যটন শিল্পের পর পরই নেপালের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান লক্ষ করা যায়।

তবে উন্নত প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত শেচ ব্যবস্থা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এই খাতেও খুব বেশি উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়নি।নেপালে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে আখ, বাজরা অন্যান্য প্রধান ফসল। নেপালের আমদানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, নির্মাণ সামগ্রী, সার, ধাতু এবং অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য। আবার চাল, পাট, কাঠ এবং বস্ত্রের মতো বিভিন্ন পণ্য অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে।

শিল্প খাতের মধ্যে কুটির শিল্পে নেপালের জনগণ বেশ এগিয়ে আছে। এছাড়াও বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পেও দিন দিন উন্নটি ঘটছে দেশটির। তাছাড়া সেবা খাত, শিক্ষা খাত, প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহের দিক থেকেও অর্থনীতিতে কিছুটা অবদান লক্ষ করা যায়।

নেপালের আবহাওয়া ও জলবায়ু

নেপালের জলবায়ুকে প্রধানত দুইটে বিভাগে বিভাক্ত করা যায়। একটি আদ্র মৌসুম আরেকটি শুষ্ক মৌসুম। আদ্র মৌসুমে তুলনামূলক তাপমাত্রা অনেক কম থাকে এবং বৃষ্টিপাত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সাধারণের থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি লক্ষ করা যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেপালে আদ্র মৌসুম লক্ষ করা যায়। এসময় খুব ভালোই বৃষ্টিপাতের হতে দেখা যায়।

এই আবহাওয়ায় নিম্নভূমির তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে এবং পার্বত্য অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা থাকে থাকে সর্বোচ্চ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত নেপালে শুষ্ক জলবায়ুর আবহাওয়া লক্ষ করা যায়। এসময় বিস্তীর্ণ অভ্যন্তরের ঠান্ডা তাপমাত্রা শুষ্ক বায়ু বাইরের দিকে প্রবাহিত করে। শুষ্ক ঋতু পার্বত্য অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা থাকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নিম্নভূমিতে গড় তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কাছাকাছি।

নেপালের সংস্কৃতি

নেপালের সংস্কৃতি মূলত একটি মিশ্র সংস্কৃতি। বহু জাতিগত বৈচিত্র্য থাকায় এই দেশের সংস্কৃতিতেও নানান বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে নেপালী সংস্কৃতির এক গভীর মেলবন্ধন রয়েছে। সারাবছরই বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান লেগে থাকে এই দেশে। নেপালীদের সবথেকে বড় অনুষ্ঠান হলো দশইন।

সাধারণত বর্ষা ঋতু শেষ হওয়ার ঠিক পরে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দশইন উৎসব উদযাপন করা হয়। এছাড়াও সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উপজাতিদের নিজস্ব অনুষ্ঠান তো আছেই। সব ধরনের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করাটা নেপালীদের একটি ঐতিহ্য। নেপালীদের সবথেকে জনপ্রিয় নৃত্য হলো দিশকা যা সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
নেপালীরা বেশ সামাজিক একটি জাতি। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে এরা খুব ভালোবাসে এবং তাদের ভেতর অতিথিপরায়ণ মনোভাব লক্ষ করা যায়।

নেপালীদের খাদ্যাভ্যাস

নেপালীদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে তাদের খাদ্যাভ্যাসেও বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। একই উপকরণ ব্যবহার করে একেক অঞ্চলের মানুষ একেক রকম খাবার তৈরি করে। নেপালীদের রন্ধনপ্রণালী হিমালয়ের রন্ধনপ্রণালী নামেও পরিচিত। নেপালের প্রধান খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে আছে চাল, গম, ভুট্টা, মসুর ডাল, তাজা শাকসবজি এবং মাংস। পাহাড়ি মুরগি, ভেড়ার মাংস নেপালীদের খুবই প্রিয় খাবার।

নেপালী রান্না মূলত দুইটি ধারায় বিভক্ত। একটি হলো ভারতীয় পদ্ধতিতে অন্যটি তিব্বতি পদ্ধতির রন্ধন শৈলী। নেপালীরা রান্নায় বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করে খাবারকে সুস্বাদু করার চেষ্টা করে। নেপালীদের রান্নায় ব্যবহৃত মসলা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রসুন, আদা, জিরা, ধনে, হলুদ, জায়ফল, তেজপাতা, কালো মরিচ, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনেপাতা এবং স্ক্যালিয়ন। শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় নেপালীরা উষ্ণ পানীয় খেতে খুব ভালোবাসে। চা এবং কফি নেপালীদের খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাছাড়া বর্তমানে এই দেশে স্ট্রিট ফুড খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া এবং মহল্লার ছোট খাটো বাজারেও কমবেশি স্ট্রিট ফুডের দোকান খুঁজে পাওয়া যায়।

নেপালের দর্শনীয় স্থান :

নেপাল একটি অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্যমন্ডিত দেশ যা বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ পর্যটকদেরই আকর্ষণ করে। কেউ কেউ চলে যায় হিমালয় পর্বত পাড়ি দিতে আবার কেউ উপভোগ করে রাজধানী শহর কাঠমুন্ডুর ঐতিহাসিক পর্যটন এলাকা গুলো। কেউবা আবার প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা সৌন্দর্যে ধরা দিতে চলে যায় শহরের বাইরে। চলুন জেনে নেয়া যাক নেপালের উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

Pokhara

১. পোখরা

পোখরা হলো নেপালের অন্যতম উঁচু শহর যা সমতল থেকে ৯০০ মিটারেরও বেশি উপরে অবস্থিত। এটি জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ হলো শহরের মধ্যে অবস্থিত লেক সাইড। ট্রেকিং এর জন্য পোখরা শহর উপযুক্ত একটি পর্যটন এলাকা।

২. কাঠমান্ডু

নেপালের সর্ব বৃহৎ শহর কাঠমান্ডু পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রস্থল।নেপালে ঘুরতে আসলে সকল পর্যটকই বেশ কিছুদিন কাঠমান্ডুতে অবস্থান করে তারপর আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে ঘুরে যান। পুরোনো স্থাপত্য শৈলীর অসংখ্য নিদর্শন আছে বিখ্যাত এই শহরে। কাঠমান্ডু ভ্রমণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।

৩. নাগরকোট

হিমালয় পর্বতের সবথেকে চমৎকার ভিউ উপভোগ করা যায় নাগরকোট থেকে। রাজধানী শহর কাঠমান্ডু থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৮ কিলোমিটার। এই স্পটটি এতো বেশি জনপ্রিয় হওয়ার কারন এর উচ্চতা। সমতল থেকে নাগরকোট এর উচ্চতা ৭০০ ফুট বা ২০০০ মিটার। নাগরকোট ভ্রমনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

৪. ভক্তপুর

কাঠমান্ডু উপত্যকার তিনটি মধ্যযুগীয় শহরের একটি হলো ভক্তপুর। কাঠমান্ডু শহর থেক এর দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। নেপালী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে ও পাহাড়ি গ্রামগুলি ঘুরে দেখতে চাইলে চলে যেতে হবে ভক্তপুরে। পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং করে পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে, তাদের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

৫. পাটান

কাঠমান্ডু এবং পোখারার পরেই পাটান নেপালের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। তনে বর্তমানে শহরটি ললিতপুর নামে পরিচিত। নেপালী ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন ও স্থাপত্যশৈলীর অনেক নিদর্শন দেখতে পাবেন পাটান শহরে। কাঠমান্ডু থেকে বাগমতি নদী পাড়ি দিয়ে পাটান শহরে যেতে হয়।

৬. সাগরমাথা ন্যাশনাল পার্ক

সাগরমাথা ন্যাশনাল পার্ক হিমালয়ের অন্যতম একটি বন্যপ্রানীর অভয়ারণ্য। আপনি যদি পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতার সাথে সাথে হিমালয়ের প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখতে চান তাহলে সাগরমাথা ন্যাশনাল পার্ক উপযুক্ত একটি স্পষ্ট। এটি নেপালের সোলুখুম্বু জেলায় অবস্থিত।১১০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই পার্কটিতে রেড পান্ডা এবং তুষার চিতাবাঘের মতো বিরল প্রজাতির প্রাণী এবং নানা প্রজাতি পাখির দেখা মিলবে।

৭. ধরন

ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি শহর ধরন যা কিনা নেপালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা। বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন পরিদর্শন করার পাশাপাশি এখানে নেপালীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড উপভোগ করতে পারবেন। পিকনিক আয়োজন করার জন্য আছে চমৎকার কিছু পার্ক ও রিসোর্ট।এই নিচু পাহাড়ি অঞ্চলটি অত্যন্ত পরিষ্কার, রঙিন এবং সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময়।

৮. চিটলাং

চন্দ্রগিরি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত নেপালের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক তাৎপর্য মন্ডিত প্রাচীন গ্রাম চিটলাং। হাইকিংয়ের জন্য কাঠমান্ডু থেকে চিটলাং সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি দেখতে পাবেন এখানে।

৯. মুস্তাং

সমতল ভূমি থেকে ৩৮৪০ কিলোমিটার উচ্চতায় মুস্তাং গ্রাম ট্রেকিং এর জন্য খুবই জনপ্রিয়। এটির দুটি পার্ট রয়েছে একটি আপার পার্ট এবং লোআর পার্ট। লোয়ার পার্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয় ও আপার পার্ট ট্রেকিং আর আদিবাসীদের গ্রাম পরিদর্শনের জন্য জনপ্রিয়।

১০. চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক উপযুক্ত একটি পর্যটন স্পট। এখানে হিমালয়ের বিভিন্ন প্রানী ও গাছপালার জীবনাচরণ খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। পার্কটির মোট আয়তন ৯৫২.৬৩ বর্গ কিলোমিটার।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর রাষ্ট্র নেপাল। অসংখ্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনধারা মিলে মিশে চমৎকার একটি জাতীয় পরিচয়ে আবদ্ধ পুরো দেশবাসী।

Scroll to Top