মনোরম পরিবেশে, একদম কম বাজেটে ঘুরতে যাওয়ার জন্য গাজীপুরের মধ্যে সুন্দর একটি প্লেস হলো নীলাম্বরী রিসোর্ট।অসাধারণ ডেকোরেশন আর গ্রামীণ পরিবেশের এক অনন্য ফিউশন এই রিসোর্ট। এটা ফটোগ্রাফি রিসোর্ট বললেও ভুল হবে না।ছবি তোলার জন্য এতো সুন্দর সুন্দর প্লেস এখানে ডেকোরেশন করা হয়েছে যে,আপনি না চাইলেও আপনার ছবি সুন্দর হবেই।
মন ভরে ছবি তোলার জন্য হলেও একবার ঘুরে আসা উচিত এই নীলাম্বরী রিসোর্ট থেকে।যারা গাজীপুরের আসেপাশে আছেন বা গাজীপুরে আসবেন কোনো প্রয়োজনে, তাদের এই রিসোর্টটি ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।
ছুটির দিন বিকেলে একটু সময় কাটাতে বা পরিবার নিয়ে হালকা একটু টুকটাক ঘোরাঘুরির জন্য পারফেক্ট একটি পার্ক।এন্ট্রি ফি সহ সকল রাইড ও ভেতরের রেস্টুরেন্টের খাবার একদমই নামমাত্র মূল্যে আপনি উপভোগ করতে পারবেন।
সব মিলিয়ে সুন্দর কিছু মুহূর্ত তৈরি হবে আপনার জীবনে, আর কিছু সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে নিয়ে আসতে পারবেন।পিকনিকের জন্যও বুকিং নিতে পারবেন চাইলে।ঢাকা থেকে বেশ কিছু সনামধন্য প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত এখানে পিকনিক বুকিং করেছে এবং তারা সন্তুষ্টিমূলক রিভিউ দিয়েছেন।কম বাজেটে সারাদিন পিকনিক করার জন্য চমৎকার একটি প্লেস।
নীলাম্বরী রিসোর্ট – লোকেশন
নীলাম্বরী রিসোর্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ২০ নং ওয়ার্ড, সালনা, বি আরটিসিতে অবস্থিত।নীলাম্বরী রিসোর্টে আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। চৌরাস্তা থেকে আপনি চাইলে অটো রিজার্ভ করে সরাসরি নীলাম্বরী পার্ক চলে আসতে পারবেন।যে কোনো লোকাল অটো ড্রাইভারকে বললেই তারা নিজ দায়িত্বে একদম গেইটের সামনে ড্রপ করে দিবে আপনাদের। সেক্ষেত্রে রিজার্ভ অটো ভাড়া ১০০ টাকার মতো লাগবে।
অথবা চৌরাস্তা থেকে বি আর টি সি মোড়ে এসে নামতে হবে।চৌরাস্তা থেকে বিআরটিসি পর্যন্ত মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ১০ টাকা(লোকাল অটোতে)।বিআরটিসি থেকে অটো নিয়ে বা পায়ে হেটেও চলে আসতে পারেন মায়ায় ঘেরা,স্বপ্নে মোড়ানো এই রিসোর্টে।পায়ে হেটে আসলে আপনার ১০ মিনিটের মতো লাগবে।
পিচের রাস্তার পরে কিছুটা রাস্তা মাটির আর সেই রাস্তার অবস্থা খুব বেশি ভালো নয় বললেই চলে।তাই এই পথটুকু গাড়িতে না এসে হেটে আসাটাই বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়।যারা পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে আসতে চান,তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,গাড়ি নিয়ে এই রাস্তাটা অতিক্রম করাটা একটু টাফ।তাই বিআরটিসির মোড়ে গাড়ি পার্কিং করে বাকি পথটুকু পায়ে হেটে বা অটো রিজার্ভ করে আসলে বেশি ভালো হবে।
চৌরাস্তা ভাওয়াল কলেজের পেছনের রাস্তা দিয়ে আসলে আপনাদের এই খারাপ রাস্তাটার সম্মুখীন হতে হবে না।যদিও এই পথটা দিয়ে আসলে সময় এবং গাড়ির তেল দুটোয় একটু বেশি ব্যায় হবে,কিন্তু নিজস্ব গাড়ি থাকলে এই পথ দিয়ে আসলেই বেশি সুবিধা।যে ভাবেই আসেন না কেন,রিসোর্টের সামনে এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য হবেই।
সম্ভব্য খরচ
কম খরচে সুন্দর একটি দিন মনোরম পরিবেশে কাটানোর জন্য নীলাম্বরী রিসোর্ট একদমই পারফেক্ট একটি জায়গা।তুলনামূলক অনেক কম বাজেটে আপনি এখানে সারাদিন উপভোগ করতে পারবেন এই অপূর্ব রিসোর্ট প্রাঙ্গণ।সাধারণত নীলাম্বরী রিসোর্টের প্রবেশ টিকেট মূল্য মাত্র ৩০ টাকা।
বিভিন্ন অকেশনে টুরিস্টদের চাপের সময় এই মূল্য বেড়ে হয় ৫০৳। তবুও বলবো ৫০ টাকার থেকেও বেশি মূল্যের উপভোগ্য বিষয়বস্তু রয়েছে এখানে।রিসোর্টে ঢোকার পর মনে হবে নামমাত্র টিকেট মূল্য দিয়ে প্রবেশ করলেও এখানে আসাটা বৃথা যায়নি।ভিতরে বাচ্চাদের খেলার জন্য ঘুরন্ত হাতি ঘোড়ার চড়কি আছে।যার টিকেট মূল্য মাত্র ৩০ টাকা।
এই বাজেটে যে কেউ তার সন্তানকে এক টুকরো খুশি কিনে দিতে পারবে এখানে এসে।আছে ইঞ্জিন চালিত নৌকার চড়কি।এখানে বড় ছোট সবাই উঠতে পারবে এটার টিকেট মূল্যও মাত্র ৩০ টাকা।নীলাম্বরী রিসোর্টে আসার সময় খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে একদম না ভাবলেও চলবে। কারন এখানে অন্যান্য পার্কের রেস্টুরেন্টের মতো খাবারের বিল আকাশছোঁয়া নয়।সাধ্যের মধ্যে সাধ রেখে এখানে যে কেউ রিসোর্ট রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারবে।
বাইরের নরমাল ফুডকোর্ট গুলোতে যেমন দাম রাখা হয়,রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে ঠিক এই রেঞ্জের মধ্যেই দাম নির্ধারণ করা হয়।এই রিসোর্টে ২ ক্যাটাগরির ২ টা রেস্টুরেন্ট আছে। একটি একটু বেশি বাজেটে খাবার পরিবেশন করে এবং দ্বিতীয়টি একদমই সাধারণ বাজেটের খাবারের আযোজন করে।স
ব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় একদম অল্প খরচে, সুন্দর, নজরকাড়া একটি রিসোর্টে পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে চাইলে আপনাদের অবশ্যই নীলাম্বরী রিসোর্টলর কথা মাথা্য রাখা উচিত । এটা অনেকটা কাকলি ফার্নিচারের সেই স্লোগানের মতোই “দামে কম মানে ভালো,কাকলি ফার্নিচার “
কেন যাবেন নীলাম্বরী রিসোর্টে?
বর্তমানে একটা ট্রেন্ড হলো, ঘুরতে গিয়ে স্পট পরিদর্শন করার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছবি তোলা।ঘুরতে গেলেন আর মোবাইলের এলব্যম ভরে ছবি তুলে এনে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন না, তা তো হওয়া এখন একপ্রকার অসম্ভবই।
আবার ছবি মন মতো না হলে তো পুরে ট্যুর টাই একদম মাটি হয়ে যায়।বর্তমান প্রজন্মের এই শো অফ ট্যুর প্লান করেই মূলত নীলাম্বরী রিসোর্টটির ডিজাইন করা হয়েছে।প্রবেশ গেইট থেকে শুরু করে, পার্কের আনাচে কানাচে যে দিকেই তাকান না কেন, মনে হবে প্রতিটি জায়গাই ছবি তোলার জন্য একদম পারফেক্ট।
ফুল,লতাপাতা দিয়ে বেশ কয়েকটা লাভ শেপ, স্কয়ার শেপ, রাউন্ড শেপ ফ্রেম ডেকোরেশন করা আছে।এই ফ্রেমের মধ্যে দাড়িয়ে ছবি তুললে, ছবি সুন্দর না হয়ে যাবে কোথায়।সাদা রংয়ের একটি রিকশার পুরোটাই কৃত্রিম ফুল, পাতা দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র আপনাদের ফটোশুট করার জন্য। পার্কের মাঝে মাঝে আছে ছোট ছোট গোল ছাউনি দেয় কুটির ও তার ভেতরে বসার জন্য সোফার সুব্যবস্থা।
আছে সুবিশাল বাগান,ছোট একটি লেক তার, উপরে একটি ছোট পুল আরও আছে ঝর্না। বচ্চাদের খেলার জন্য আছে দোলনা, স্লিপার, রাউন্ড শেপ হাতি ঘোড়ার চড়কি।আপনার সোনামনিকে এখানে এনে ছেড়ে দিলে,সারা দিনের জন্য তারা খাওয়া দাওয়া ভুলে শুধু আনন্দেই মেতে থাকবে।
এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোর ডেকোরেশন অত্যন্ত সুন্দর।খোলা পরিবেশে, প্রকৃতির মাঝে বসে খাওয়া দাওয়া করার দারুন এক অভিজ্ঞতা হবে এখান থেকে।কিছু দোলনা আছে অসম্ভব সুন্দর ডেকোরেশন করা।এগুলোতে উঠে ভুলেও দোল খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।এগুলো শুধু ছবি পাগল টুরিস্ট দের জন্যই প্ল্যান করে তৈরি করা।
তাই আপনি দোল খেতে চাইলেই এটাকে দোলাতেই পারবেন না।পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা সুন্দর সময় কাটাতে চাইলে আসতে পারেন এই নীলাম্বরী রিসোর্টে।সবমিলিয়ে অসাধারণ নকশায় সাজানো এই রিসোর্ট সবারই মন কেড়ে নিতে সক্ষম।
আমার অভিজ্ঞতা
নীলাম্বরী রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা আমার একদমই বাজে।না না,আপনি আবার এটা ভাববেন না যে এটা রিসোর্টের কারনে। আমার ট্যুরটা বাজে হওয়ার পেছনের মূল কারন ছিল সেদিনের ওয়েদার। বিকেলে আমরা রিসোর্টে পৌঁছোবার ৩০ মিনিট পরেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি । তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুকলাম একটা ছাউনি দেয়া কুটিরে।
বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই,থামার কোনো নাম নেই।দেখতে দেখতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল আমাদের ঘোরা আর হলো না,না পারলাম মন মতো দু একটা ছবি তুলতে আর না পারলাম কোনো রাইডে উঠতে।তো কি আর করার, সন্ধ্যাবেলা কোনোরকমে আধভেজা হয়ে বের হলাম রিসোর্ট থেকে তারপর গাড়িতে উঠে সোজা বাসায়।
আমার জীবনে এমন অসফল ট্যুর একমাত্র এটাই।তাই যে কোনো ধরনের ট্যুরে যাওয়ার আগে বা ঘুরতে বের হওয়ার আগে অবশ্যই পরিবেশ পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বের হবেন নয়তো আমার মতো পস্তাতে হবে।
ধন্যবাদ।