নন্দন পার্ক, গাজীপুরঢাকা সংলগ্ন গাজীপুরে আছে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য অসংখ্য পার্ক,রিসোর্ট ও রাজকীয় সব রেস্তোরাঁ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ভ্রমন উপযোগী পার্ক হলো নন্দন পার্ক। যেমন মন মাতানো মনোরম পরিবেশ ঠিক তেমনই সুসজ্জিত বিভিন্ন রাইড।আরও আছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, যেটা কিনা এই নন্দন পার্কের সবথেকে বড় আকর্ষনের বিষয়ে।
নন্দন পার্কের প্রবেশ গেটটা দেখলেই তো মন ভরে যায়।প্রবেশ গেটের আগে যে রাস্তা তার উপরে অসংখ্য ছাতা দিয়ে সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা।ছবি পাগলদের জন্য একদম পারফেক্ট ডেকোরেশন, বিশেষ করে এখানটাতে সেলফি খুব ভালো ওঠে।গেটের ডেকোরেশন তো আরও বেশি সুন্দর। টিকেট কেটে ভিতরে ঢোকার আগেই হয়তো মনে হবে,এখানে আসাটা সার্থক হয়েছে।
নন্দন পার্কের অবস্থান
যদিও বেশিরভাগ জায়গায় বলতে শোনা যায় যে নন্দন পার্ক সাভারের নবীনগরে অবস্থিত, কিন্তু মূলত এটি গাজীপুর জেলারই অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে আসতে হলে প্রথকে আপনাকে ঢাকায় আসতে হবে।
সেখান থেকে আবার দুটো ওয়ে আছে।প্রথম ওয়ে হলো, আগে আপনি ঢাকা থেকে সাভার আসবেন।সেখান থেকে আসতে হবে নবীনগর।নবীনগর থেকে খুব কাছেই এই নন্দন পার্ক অবস্থিত,তাই অনেকেই মনে করেন এটির অবস্থান সাভার, নবীনগরে।নবীনগর থেকে যে কোনো বাসে গাজীপুর চন্দ্রা লেনের গাড়িতে উঠে বসলেই হাইওয়ের পাশে দেখতে পাবেন নন্দন পার্কের সুন্দর প্রবেশ পথ।অথবা বাসের কন্ট্রাক্টর কে বললেই আপনাকে নামিয়ে দেবে নন্দন পার্কের গেটের ঠিক সামনে।
দ্বিতীয় ওয়ে হলো,আপনাকে ঢাকা থেকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। সেখান থেকে ডাইরেক্ট নবীনগরের বাস পাওয়া যাবে।গাজীপুর চৌরাস্তার পশ্চিম দিক থেকে মানে টাঙ্গাইল রোডের দিক দিয়ে নবীনগরের বাস পাওয়া যাবে।নবীনগর পৌঁছাবার ঠিক আগেই দেখা যাবে নন্দন পার্কের নন্দিত গেট।আর বাসে বসে যদি ঘুমিয়ে যান তাহলেও কিন্তু সমস্যা নেই।কন্ট্রাক্টরকে বলে রাখলে ঠিকই আপনাকে নামিয়ে দেবে পার্কের সামনে।
টিকেট মূল্য, রাইড ও আনুমানিক খরচ
নন্দন পার্কের টিকেট মূল্য সাধারণত ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মধ্যেই থাকে।তবে সময় ও দর্শনার্থীদের চাপ অনুযায়ী এটা কখনও বাড়তে বা কমতে পারে।তাছাড়া এখানকার একটি বড় সুবিধা হলো, তারা প্রায়ই বিভিন্ন প্যাকেজ রেট ছাড়ে ভ্রমন পিপাসুদের সুবিধার্থে। এদের ওয়েবসাইটে নজর রাখলেই বিভিন্ন প্যাকেজ রেট সম্পর্কে জানা যায়।
তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পিকনিক বা বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য রাইড সহ এন্ট্রি ফি এর প্যাকেজ বুক করেন।সেক্ষেত্রে থাকে এক বিশাল মূল্যছাড়। কর্তৃপক্ষ যে ফ্যামিলি প্যাকেজ বা বিশেষ দিনের প্যাকেট অফার করেন সেখানেও মিনিমাম ১০ থেকে ১৫ টা রাইড সহ এন্ট্রি ফি এর মূল্য একত্রে নির্ধারণ করে।আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে মনে করি সাধারণ মূল্য চলাকালীন সময়ে না গিয়ে প্যাকেজ রেট বা পিকনিক বুকিং এর মাধ্যমে গেলে সবথেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।কারন খরচ অনেক কম হয় এক্ষেত্রে।
এখানে একেক রাইড এর জন্য এক এক রকম ফি নির্ধারণ করা আছে।মিনিমাম ৩০৳ থেকে শুরু করে ২০০ বা তার অধিক মূল্যের রাইড রয়েছে।তাছাড়া ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের জন্য আলাদা এন্ট্রি ফি বরাদ্দ করা হয়।২৫০ থেকে ৩০০৳ এর মধ্যে ওয়াটা ওয়ার্ল্ড এর এন্ট্রি টিকেট কেনা যায়।
যেহেতু প্রত্যেকেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকার প্লান করে যায়, তাই নিজেদের খাবার নিজেরা ক্যারি করে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।যদিও ভিতরে রেস্টুরেন্ট আছে, কিন্তু তাদের খাবার মূল্যের কথা আর না বললেও সবাই বুঝতেই পারছেন।আবার যাদের কাছে খাবার ক্যারি করা ঝামেলার বিষয় তারা রেস্টুরেন্টে মনোরম পরিবেশে, সুন্দর পরিবেশনায়, সুস্বাদু খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।
কেন যাবেন নন্দন পার্ক?
আসলে নন্দন পার্ক যে কেন যাবেন তা লিখে আর কতোটুকুই বা প্রকাশ করা যায়।নন্দন পার্কের ভেতরে ঢুকলে সারাদিন পার করে ফেললেও আর ফিরতে মন চাইবে না।যেমন মনোরম তার পরিবেশ, তেমন আকর্ষণীয় সব রাইড।একটা রাইডও মিস করতে ইচ্ছে করে না।ছবি তোলার জন্য এত সুন্দর সুন্দর স্পট রয়েছে, ছবি পাগল টুরিস্ট দের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। যারা ট্রাভেল ব্লগার তাদের একবার ঘুরে আসতে পারেন।
পিকনিক গ্রুপের জন্য রয়েছে রান্না করার সু ব্যবস্থা ও সুসজ্জিত ডাইনিং প্লেস।অনেক বড় পরিসরে জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই পার্কটি।আছে অনেক অনেক আকর্ষণীয় ও হৃদয় কাঁপানো রাইড।আর এখানকার সবথেকে বড় আকর্ষন হলো ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।
সবথেকে আকর্ষণীয় ওয়াটার ওয়ার্ল্ড
আপনি নন্দন পার্ক গেলেন আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঢুকলেন না এ আবার কখনও হয় নাকি।ওয়াটার ওয়ার্ল্ড হলো একটি মোহ,একটা সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করার কেন্দ্রস্থল।ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে হলে আপনার অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। যেমনঃপ্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, টাওয়েল,শাওয়ার ক্যাপ আর ব্যক্তিগত প্রসাধনী সামগ্রী। কেননা ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে যাবেন, আর আপনার সুইমিং পুলে নেমে গোসল করতে ইচ্ছে হবে না এটা একদমই অসম্ভব।
ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের ভেতরে আছে সুবিশাল দুটো সুইমিং পুল। আছে স্লিপার ও ঝর্ণা। গোসল করবেন, তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোথায় রাখবেন?কোনো চিন্তা নেই।ওয়াটার ওয়ার্ডের ভেতরে আছে লকারের সু ব্যবস্থা। আপনি চাইলে চার ঘন্টার জন্য লকার ভাড়া নিতে পারেন। সেখানে আপনার মোবাইল, ওয়ালেট, ঘরি, কাপড়, ব্যাগ সবকিছু নিশ্চিন্তে রেখে উপভোগ করতে পারবেন এখানকার আনন্দঘন পরিবেশ।
চেঞ্জ করার জন্যও মহিলা বা পুরুষদের কোনো চিন্তা নেই।পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আছে আলাদা আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। ওয়াশরুম ইউজ করতে পারবেন একদমই বিনামূল্যে। হ্যাঁ, এর জন্য কোনো আলাদা চার্জ দিতে হবে না।আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে অবস্থান করার জন্য কোনো ধরাবাঁধা সময় নির্ধারিত নেই।তাদের পার্কের সার্ভিস যতক্ষণ খোলা থাকবে ততক্ষণই ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে অবস্থান করা যাবে।
নন্দন পার্কে আমার একদিন
আমি আনন্দ পার্কে গিয়েছিলাম পিকনিক গ্রুপের সাথে।গাজীপুরে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ফোরাম এর সকল শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল এক উপভোগ্য মিলন মেলার।সেখানে আমরা প্রায় ৪০০০ শিক্ষক উপস্থিত ছিলাম।আমাদের এন্ট্রি ফি সহ ১৬ টা রাইডের প্যাকেজ চার্জ নিয়েছিল মাত্র ৭৫০৳
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়ি বুক করে নন্দন পার্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছিলাম।মাত্র ১ ঘন্টা সময় লেগেছিল আমাদের পার্কে পৌছুতে। গেটের সামনে এসেই তো আমার চোখ ছানাবড়া। কতো সুন্দর ডেকোরেশন গেটের বাইরেই,না জানি ভেতরে কতোটা চমক অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
গেটের বাইরে ছাতার ডেকোরেশনের নিচে দাড়িয়ে কিছু ফটোশুট করে চলে গেলাম ভেতরে।এতো বড় এড়িয়া কোন দিক থেকে যে কোনদিকে যাব তাই কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।এক সাইড ধরে আমরা হাটা শুরু করলাম।হাটতে হাটতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন রাইডে উঠলাম।ইচ্ছে ছিল ১৬ টা রাইডেই উঠবো,কিন্তু কিছু কিছু রাইড দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ১৬ টা রাইডে আর ওঠা হয়ে উঠলো না।
তারপর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঢুকে তো আরও বেশি অবাক।অনেক আনন্দ করলাম,সুইমিং পুলে গোসল করলাম।যদিও এখান থেকে বের হতে ইচ্ছে করছিল না,তবুও লাঞ্চের সময় হয়ে যাওয়াতে বাধ্য হয়ে আমাদের বের হতে হলো। অন্য দিকে অবশ্য যে যার মতো রাইড উপভোগ করছিল।
ধন্যবাদ
নন্দন পার্ক নিয়ে কিছু কথাঃ
১। যারা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম তাদের জন্য এখানে কিছু সমস্যা আছে। যেমন কনসার্ট, ছেলে মেয়ে এক সাথে গোসল নাচা নাচি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই নন্দন পার্ক এভোয়েড করে গাজীপুরের অন্য দর্শনীয় স্থান ঘুরতে পারেন।
২। গোসল এবং ড্রেস চেঞ্জে নারীদের অবশ্যয় বেশি সচেতন থাকা জরুরী। নেটে অনেক ভিডিও আছে যেখানে দেখতে পাবেন কক্সবাজারে কিংবা ওয়াটার পার্ক এ গোসল করা নারীদের ভিডিও গোপনে ধারন করা হয়েছে। ভেজা শরির তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো বিব্রতকর এবং এগুলো এখন শর্ট ভিডিও হিসাবে অনেক গুলো ইতিমধ্যে ভাইরাল ও হয়েছে।
অথচ ঐ নারী জানেই না কেও তাকে ভিডিও করছে!
একই কথা ড্রেস চেঞ্জ নিয়েও। আপনি হইতো ভাবছেন নিরাপদ অথচ দেখা যাবে সেই স্থানের নিরাপত্তা দেওয়া যার দায়িত্ব সে নিজেই নিরাপত্তা ভঙ্গ করে ভিডিও রেকর্ড এর সাথে জড়িত। একদিন মজা করতে গিয়ে আজীবন এর জন্য বিরাট নেগেটিভ কোন কিছু তৈরি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ না।
৩। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আগে দাম ভালো ভাবে বুঝে নিবেন। এসব পার্কে রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম অনেক বেশি থাকে। অনেক মানে অনেক!
৪। হার্ট দুর্বল হলে ঝুঁকিপূর্ণ রাইডে না উঠা ভালো।