দুবাই শহরের ১০ টি সেরা লাভজনক বিজনেস আইডিয়া

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং ভূবণ বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের জন্য দুবাই শহরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীব্যাপি। তাইতো প্রতিনিয়ত কাজের সন্ধানে কিংবা ব্যবসায়িক উদ্যেশ্যে অথবা ভ্রমণের উদ্যেশ্যে এখানে পাড়ি জমাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের লোকজন।

সঠিক খাতে এবং সঠিক উপায়ে বিনিয়োগ করতে পারলে এই শহরে লাভজনক মুনাফায় ব্যবসায় পরিচালনা করা অসম্ভব কিছু না। তাতে আপনি স্থানীয় বিনিয়োগকারী হোন কিংবা প্রবাসী এটা কোনো সমস্যার কারণ হবে না বললেই চলে৷

দুবাই শহরের জন্য বিজনেস আইডিয়া

দুবাই শহরে গিয়ে শুরু করতে পারেন এমন ১০ টি টপ বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে এখানে তুলে ধরা হলো । মনে রাখবেন দুবাই হোক কিংবা কাতার আপনি যেখানেই বিজনেস শুরু করতে চান না কেনো আপনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা সফল হওয়ার অন্যতম মাফকাঠি।

১. ই-কমার্স বিজনেস

দুবাই এর স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্চ ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা রয়েছে। সরাসরি শপিং মলে কিংবা বাজারে গিয়ে কেনাকাটার ট্রেন্ড তাদের মধ্যে খুব কম লক্ষ করা যায়। আপনি যদি আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর একটি পপুলার ইমেজ তৈরি করতে পারেন তবে এই শহরে আয়ের জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। অনলাইনে কাস্টমইজড পন্য ও সেবা বিক্রি করে আপনি বেশ ভালো মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

কি ধরনের ই কমার্স বিজনেস করবেন এটার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন চাইনিজ ইলেকট্রনিক পণ্য নিয়ে সারাবছর কাজ করা সম্ভব, মেয়েদের ড্রেস নিয়েও আপনি একটি ভালো ই কমার্স সাইট দাড় করাতে পারবেন কিন্তু বাংলাদেশের মত মধু তেল এসবের বিজনেস দুবাইয়ে অনলাইনে শক্ত অবস্থানে নেওয়া কঠিন হবে হইতো।

এজন্য আগে হুট করে সাইট বানিয়ে কিংবা পেজ বুস্ট করে বিজনেস করে ফেলার ইচ্ছা দমিয়ে রেখে কিছুদিন ভালো করে দুবাই এর অন্য ই কমার্স গুলো সম্পর্কে লেখাপড়া করুন। তারা কিভাবে পেমেন্ট নিচ্ছে কিভাবে ডেলিভারি দিচ্ছে এগুলো জানুন। কোথায় থেকে পণ্য সোর্সিং করছে এগুলো জানার পর নামুন।

২. রিয়েল এস্টেট বিজনেস

দুবাই শহরে প্রোপার্টি ক্রয় বিক্রয়ের বাজার বেশ জমজমাট। আপনার যদি রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিস্তর জ্ঞান থাকে তাহলে সঠিক মার্কেটপ্লেসে আপনি প্রবেশ করতে পারবেন৷ এই সেক্টর থেকে তুলনামূলক বেশি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবার রিয়েল এস্টেট কনসালটেন্সি ফার্ম থেকেও ভালো আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটা ডেভেলপ দেশেই রিয়েল এস্টেট একটি বিশাল লাভ জনক ব্যবসা। হ্যা এই বিজনেসে রিস্ক অনেক, ঝামেলাও কম না কিন্তু একবার ধরে ফেলতে পারলে তখন শুধু কোটি টাকার হিসাব।

শুরুতেই আপনি দুবাই এর রিয়েল এস্টেট বিজনেসে ডিরেক্ট নামতে নাও পারেন। কিন্তু ওদের আগে থেকেই পরিচিত রিয়েল এস্টেট বিজনেস গুলোর সাথে কাজ করে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়াতে পারেন। দুবাইয়ে বাংলাদেশ ভারত থেকেও অনেকে প্রপারটি কিনে থাকে, এরা একটা ভালো টার্গেট হতে পারে।

৩. ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি সার্ভিস

দর্শনীয় স্থানে ঠাসা দুবাই শহরে পর্যটকদের আনাগোনা একটি সাধারণ বিষয়। তাই ট্যুরিস্ট দের নিয়ে কাজ করলে আপনার ভোক্তার অভাব হবে না। ফাইভ স্টার হোটেল, রিসোর্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর গাইড সার্ভিস এক্ষেত্রে বেশ লাভবান কয়েকটি বিজনেস প্লান হতে পারে। ট্রাভেল বিজনেস দ্রুত বড় হচ্ছে। শুধু দুবাই না এটা অনেক দেশেই জনপ্রিয় বিজনেসের একটিতে পরিনত হচ্ছে।

তবে যারা নিজেরাও ঘুরতে পছন্দ করে, ডজন ডজন নতুন মানুষের সাথে প্রতিদিন আলাপ আলোচনা করতে সমস্যা বোধ করে না এমন ব্যক্তিদের জন্য ট্রাভেল বিজনেস।

দুবাইয়ে ইতিমধ্যে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি বিজনেস আছে তাই এই সেক্টরে নামতে গেলে কিছুটা প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ট্রাভেল বিজনেস অনেক বড়, আপনি চাইলে শুধু টুরিস্টদের কার রেন্ট দিয়েও ভালো বিজনেস করতে পারবেন।

৪. খাদ্য ও পানীয়

দুবাইয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার বাজার খুবই রমরমা। চাইলে আপনি বাঙালি ট্যুরিস্ট দের জন্য বিশেষ বাংলা রেস্টুরেন্ট চালু করতে পারেন। এছাড়া দুবাই এর ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং পানীয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। আবার বেকারি আইটেম গুলোও বেশ ভালোই মার্কেট দখল করে নিয়েছে।

আপনি আপনার সুবিধামতো যে কোনো একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হোটেক বা রেস্টুরেন্ট বিজনেসের একটি প্রধান সমস্যা হলো আগে থেকে অনেক অভিজ্ঞতা না থাকলে এই বিজনেসে ভালো করতে পারার চান্স কম আসলে।

যেহেতু খাবারের বিজনেস সেহেতু অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় নাহলে প্রতিদিন শুধুমাত্র নষ্ট খাবারের খরচেই বিজনেসের বাতি জ্বলে যেতে পারে।

সুখব্র হলো আরব দেশ গুলোতে বাংলাদেশের অনেক হোটেল বিজনেস আছে। লন্ডনেও অনেক হোটেল আছে যেগুলো আমাদের বাংলাদেশি ভায়েরা পরিচালনা করে।

৫. আইটি সার্ভিস

দুবাই এর প্রতিটি মানুষ প্রায় সব কাজেই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাই আইটি সেক্টরে তাদের সমস্যা গুলোও তুলনামূলক বেশি। স্মার্ট হোম, স্মার্ট গাড়ি ও শপিংমল এর প্রতিটি স্মার্ট প্রযুক্তির যে কোনো জটিল সমস্যা সমাধানে আপনি আপনার টিম সহ কাজ করতে পারেন। তাছাড়া আইটি সেক্টরে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স বিক্রি করেও বেশ ভালো পরিমান প্রফিট লাভ করতে পারবেন৷

আইটি সেক্টর অনেক বড়। গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে ভিডিও এডিটিং, ভিডিও ক্রিয়েশন, ওয়েব সাইট ডিজাইন, এপ তৈরি, সিকিউরিটি, ব্যাক এন্ডের কাজ সহ অনেক কাজ আছে। শুধু মাত্র একটি বিষয়ে ভালো মত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়াতে পারলে দুবাইয়ে সত্যিই ভালো কিছু করতে পারার সুযোগ পেতে পারেন।

দুবাইয়ে লাখ লাখ বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করার জন্য আসছে, তাদের এসব বিজনেসের জন্য ডিজিটাল বিভিন্ন সার্ভিস প্রয়োজন হচ্ছে। এদের অল্প কিছু বিজনেসকে আপনার ক্লায়েন্ট বানাতে পারলেও এনাফ। অনেক বিজনেস আছে যারা শুধু ডিজিটাল এডের পিছনেই মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিভিন্ন এড এজেন্সির মাধ্যমে।

প্রধান প্রধান কিছু আইটি সেবার তালিকা

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ওয়েবসাইট ডিজাইন
  • ওয়েবসাইট ডেভেলপ
  • ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট
  • ভিডিও এডিটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি
  • ক্লাউড স্টোরেজ
  • মোবাইল এপ
  • ডাটা এন্ট্রি
  • ডাটা এনালাইসিস
  • কাস্টমার কেয়ার

৬. প্রোডাক্ট ডেলিভারি এজেন্সি

যেহেতু দুবাইয়ে ই-কমার্স বিজনেস এর রমরমা পরিবেশ রয়েছে তাই প্রোডাক্ট ডেলিভারি এজেন্সির চাহিদা তো থাকবেই। আপনি যদি ডোর টু ডোর সার্ভিস প্রদান করতে পারেন তবে এই সেক্টরে সফল হতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। এই কাজের জন্য দক্ষতা কম কিন্তু শ্রম দিতে হবে বেশি। আপনি যদি শারীরিক ভাবে ফিট হোন, প্রতিদিন কঠোর শ্রম দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে প্রোডাক্ট ডেলিভারি হতে পারে ভালো একটি কর্মসংস্থান।

৭. কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট

দুবাই শহরে কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কাজের অভাব নেই বললেই চলে। আপনি চাইলে কনস্ট্রাকশন সেক্টরের কাজগুলো নিজেই চুক্তি ভিত্তিতে নিয়ে নিজস্ব লোকবল খাটিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন। এভাবে বিজের ব্যবসায় পরিচালনার পাশাপাশি আপনি হাজারো কর্মীর কর্মসংস্থান এর সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।

৮. স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বিষয়ক সেবা

ক্লিনিক, বিউটি স্যালুন, ফিটনেস সেন্টার এর চাহিদা দুবাইয়ে বেশ ভালোই রয়েছে। কাস্টমার সার্ভিস ভালো দিতে পারলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনার প্রতিষ্ঠান জনপ্রিয়তা কুড়াবে।

৯. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট

ওয়েডিং পার্টি থেকে শুরু করে যে কোনো কর্পোরেট অনুষ্টানের দায়িত্ব নিতে পারেন আপনার টিম মেম্বার দের সাথে৷ দুবাই শহরের ব্যস্ত মানুষের পক্ষে নিজ দায়িত্বে পুরো একটা ইভেন্ট এর আয়োজন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই খাবার থেকে শুরু করে, ডেকোরেশন এবং পুরো ইভেন্ট এর প্লানিং এর দায়িত্ব দেয়া হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির কাছে।

১০. ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস

দুবাইয়ে আপনি দেখতে পাবেন নগদ ক্যাশ খুব কম মানুষই ব্যবহার করে। প্রত্যেকেই লেনদেন এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্ট এর ওপর নির্ভরশীল। তাই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থপনায় যারা থাকে তাদের প্রফিট এর পরিমাণ বেশ ভালো। আপনি চাইলে ক্ষুদ্র পরিসরে ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে পারেন৷

এছাড়াও লজিস্টিক সার্ভিস, কনসালটেন্সি ফার্ম, ক্লনিং সার্ভিস, রেন্টাল কার, স্বর্নালংকার তৈরি, ফ্যাশন এবং পোশাক, শিক্ষা সহায়তা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সেক্টরে আপনি একটি সফল বিজনেস প্লান করতে পারেন।

Scroll to Top