সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবথেকে বড় ও সবথেকে বেশি জনবহুল শহর দুবাই। দুবাই আমিরাত এর রাজধানী এই দুবাই শহর। উচ্চ বিলাসি জীবনধারা ও বিষ্ময়কর স্থাপনার কারনে বিশ্বের প্রতিটি দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের নজড় কেড়েছে এই শহরটি। বিশ্বের জনপ্রিয় শপিং মল, সর্বোচ্চ ভবন, দুবাই শহরের মানুষের জীবনধারা সবকিছু মিলিয়ে নিজেকে বেশ সমৃদ্ধ করে তুলেছে এই শহরটি৷ শহরটির মোট আয়তন ৩৫ বর্গকিমি বা ১৪ বর্গমাইল।
এখানে আছে বিলাসবহুল সব রেস্তোরা ও হোটেল। এসব হোটেলে থাকাকালীন সময়ে মনে হবে পৃথিবীর সবথেকে বিলাসবহুল স্থানে বসে নিজের জীবনটা অতিবাহিত করছেন৷ আরও সুযোগ হবে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতার। বিষ্ময়কর এই শহরে ঘুরে দেখার জন্য আছে অসংখ্য আকর্ষণীয় জায়গা। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. বুর্জ খলিফা
আকাশচুম্বী বুর্জ খলিফা টাওয়ার পৃথিবীর সবথেকে উঁচু ভবন। দুবাই শহরের মূল আকর্ষণই হলো সুউচ্চ এই টাওয়ার। দুবাই শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে এই ভবনটি দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু এই ভবনটির উচ্চতা ৮২৮ মিটার বা ২৭১৬.৫ ফুট। ভবনটির ১২৪ এবং ১৪৮ তম তলায় দুটো পর্যবেক্ষণ ডেস্ক রয়েছে। এখান থেকে দাড়িয়ে এক নজরে পুরো শহরটি দেখতে পাওয়া যাবে।

মনে হবে আকাশের বুকে মেঘের রাজ্যে ভেসে ভেসে আলোর শহর দেখছেন। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু রেস্তোরাঁ এই টাওয়ারের ১২২ তম তলায় অবস্থিত, যার নাম অ্যাটমোস্ফিয়ার।রেস্তোরাঁটি ভূমি থেকে ১৪৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আকাশের কোলে ভেসে ভেসে মেঘেদের রাজ্যে বসে দুবাই এর শ্রেষ্ঠ খাবারগুলো খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে অবশ্যই চলে যেতে হবে পৃথিবী বিখ্যাত বুর্জ খলিফা টাওয়ারে।
২. বুর্জ আল আরব
বুর্জ আল আরব দুবাই এর আরও একটি আকর্ষণীয় টাওয়ার। এটি মূলত একটি সাত তারকা হোটেল যেখানে একই সাথে রেস্তোরাঁ, হোটেল রুম, বিভিন্ন পুল ও ওয়াটার পার্ক রয়েছে। টাওয়ারটির উচ্চতা ৩২১ মিটার এবং দেখতে অনেকটা নৌকার পালের মতো৷ একটি কৃত্রিম দ্বীপের মাঝখানে বুর্জ আল আরব টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটিতে পৌছানোর জন্য একটি ব্যক্তিগত সেতু রয়েছে যা মুল ভূমি ও দ্বীপের সাথে সরাসরি সংযুক্ত। আরবের রাজকীয় স্টাইলে জীবনের কিছু সময় কাটাতে চাইলে বুর্জ আল আরব হবে একদমই উপযুক্ত একটি পছন্দ।
৩. পাম জুমেইরাহ
দুবাই এর বুকে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মানবসৃষ্ট দ্বীপ যার নাম পাম জুমেইরাহ। দ্বীপটিকে উপর থেকে দেখতে অনেকটা পাম গাছের আকৃতির মতো লাগে। এটি একটি কমপ্লিট দ্বীপ যেখানে রিসোর্ট, পার্ক, শপিং মল, হোটেল, রেস্তোরা থেকে শুরু করে সব কিছুই আছে।
দেশী বিদেশী অসংখ্য ট্যুরিস্ট ছুটির সময়গুলো চমৎকার ভাবে কাটাতে পাম জুমেইরাহ দ্বীপে চলে যান। এখানকার হোটেল ও পার্কগুলোকে চমৎকার ডেকোরেশন করা হয়েছে যা একটি সুন্দর অবকাশ সময় কাটাতে সাহায্য করবে।
পুরো দ্বীপটি তৈরি করতে কোনো ধরনের মেটালিক পদার্থ বা কংক্রিট ব্যবহার করা হয়নি।সমুদ্রের তলদেশ থেকে উত্তোলন করা ১২০ মিলিয়ন ঘনমিটার বালি দিয়ে পুরো দ্বীপটি তৈরি করা হয়েছে।দর্শনার্থীরা ইয়ট বা স্পিডবোটে পাম জুমেইরাহ দ্বীপে পৌঁছাতে পারবে এবং দ্বীপটির চারপাশ ঘুরে দেখতে পারবে। অথবা আটলান্টিস রিসোর্টের পাশ দিয়ে যাওয়া পাম মনোরেলে চড়েও পাম জুমেইরাহ দ্বীপে পৌছানো যায়।
৪. দ্য মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার
বিশ্বের সব অত্যাশ্চর্য ভবনগুলো হয়তো দুবাই শহরেই নির্মাণ করা হয়েছে। অদ্ভুত এক ভাবন হলো দ্য মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার। সাত তলা বিশিষ্ট ভবনটি দেখতে উপবৃত্তাকার এবং মাঝখানের অংশ ডিম্বাকৃতির ফাপা।
এই ভবনটি নির্মাণ করতে কোনো রকম পিলার বা কাঠামো ব্যবহার করা হয়নি। পুরো ভবনটি স্টেইনলেস স্টীল দ্বারা নির্মাম করা হয়েছে এবং চারপাশে আরবি ক্যালিওগ্রাফি নকশায় সজ্জিত করা হয়েছে।
যা নিঃসন্দেহে একটি অত্যাশ্চর্য নির্মানশৈলীর পরিচয় বহন করে। সাততলা ডিম্বাকৃতির এই ভবনটির উচ্চতা ৭৭ মিটার।ডুবাই শহরের জায়েদ মহাসড়কের সাথেই মিউজিয়ামটি অবস্থিত।
দ্য মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে আপনাকে অবাস্তব ও ভবিষ্যৎ জগতে নিয়ে যাবে, তবে অনুভূতি হবে এমন যেন আপনি সেই পরাবাস্তব জগতেই অবস্থান করছেন।
ঘুরে আসতে পারবেন ২০৭০ সালের একটি দিন থেকে, মহাকাশ থেকে ও সমুদ্রের তলদেশ থেকে৷ আধুনিক বিজ্ঞানের গেজেট গুলো এমন ভাবে কৌশলে সেটআপ করা হয় যে পুরো ইন্দ্রিয় চলে যায় অজানা এক জগতে।
৫. মিরাকল গার্ডেন
পৃথিবীর সবথেকে বড় ফুলের বাগান মিরাকল গার্ডেন দুবাই শহরে অবস্থিত। এই বাগানের মূল আকর্ষণ হলো হাজার হাজার ফুলের সমারোহ।পুরো স্পটটি সাজানো হয়েছে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ফুলের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে। বাগানটিতে ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি ফুলের সমারোহ রয়েছে।
৭২০০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে স্ব গর্বে দাড়িয়ে থাকা এই বাগানটির চারপাশে মন মাতানো চমৎকার ফুলের সুঘ্রাণ যে কারো মন কেড়ে নেবে। একেক ঋতুতে আলাদা আলাদা ফুল দিয়ে বাগানটি নিজেকে সজ্জিত করে। তাই বেশ কয়েকবার যাওয়ার সুযোগ হলে মিরাকল গার্ডেনের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিরাকল গার্ডেন খোলা থাকে এবং লোকসমাগমে বাগানটি মুখরিত থাকে।
৬. দুবাই ফ্রেম
দুবাই ফ্রেম বিশ্বের সবথেকে বড় ও অত্যাশ্চর্য ছবির ফ্রেম হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। ডুবাই এর জাবিল পার্কে ডুবাই ফ্রেম অবস্থিত। এই ফ্রেম টির উপরিভাগে ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস দিয়ে সেতু তৈরি করা হয়েছে যেখানে হাটতে গেলে অসাধারণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি হয়।

পুরো ফ্রেমটির ভীত তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মেটালের সংমিশ্রণে এবং ভীত গুলো সংযুক্ত করা হয়েছে শক্তিশালী ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস দিয়ে। উপরিভাগের এই ট্রান্সপারেন্ট গ্লাসের সেতুতে দাড়িয়ে পুরো শহরটি ৩৬০° এঙ্গেলে পরিদর্শন করা যায়।
চমৎকার এই ভিউ উপভোগ করতে লিফটের সাহায্যে দুবাই ফ্রেম এর উপরিভাগের আকাশ সেতুতে চলে যেতে হবে। কাচের সেতুর উপর দাড়িয়ে বিলাসিতায় পরিপূর্ণ পুরো ডুবাই শহর দেখার সৌভাগ্য কেউই হাতছাড়া করতে চায় না।
৭. ডুবাই স্বর্ন মার্কেট
বিশ্বে সবথেকে স্বস্তায় স্বর্ন কিনতে পাওয়া যায় ডুবাইয়ে। তাইতো সারা বিশ্বের অসংখ্য স্বর্ন ব্যবসায়ী ও পর্যটক ডুবাই শহরে পাড়ি জমায় শুধুমাত্র স্বর্ন কিনতে। এই মার্কেটে স্বর্নের অসাধারণ সব ডিজাইনের গহনা, স্বর্নের বার ও অন্যান্য সরঞ্জাম খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্যও হবে৷ দুবাই শহরে ঘুরতে গেলে কেউ ডুবাই স্বর্ন মার্কেট থেকে ঘুরে আসতে ভুলে না।
এখানে স্বর্নের এতোটা চাহিদা হওয়ার কারণ হলো- তুলনামূলক কম দামে একদম খাটি স্বর্ন সংগ্রহ করা যায় ডুবাই স্বর্ন মার্কেট থেকে। কেউ কেউ আবার পুরাতন স্বর্ন বিক্রি করে নতুন স্বর্ন কিনতেও আসে এখানে। তবে শুধু ক্রয় বিক্রয়ের উদ্যেশ্যেই নয় প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী শুধুমাত্র স্বর্ন মার্কেটের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এই মার্কেটে আসে।
৮. নাচের সঙ্গীত ঝর্ণা
আকাশচুম্বী বুর্জ খলিফার ঠিক পাশেই নাচের সঙ্গীত ঝর্না অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক দর্শনার্থী এই কৃত্রিম ঝর্ণাটি দেখতে আসে৷ বুর্জ খলিফার পাশে ১২ হেক্টরের একটি কৃত্রিম হ্রদের মাঝখানে ঝর্নাটি নির্মান করা হয়েছে।
ঝর্নার পানির জেটগুলো ১৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে ওঠে এবং চমৎকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। সাথে থাকে রংধনুর সাতটি রঙের চমৎকার দৃশ্য যা সকল দর্শনার্থীদেরই মুগ্ধ করবে।
ডুবাই শহরের আরও কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান :
১. স্কি ডুবাই
২. ডুবাই মেরিনা
৩. ডলফিনারিয়াম
৪. দুবাই অ্যাকুরিয়াম
৫. ওয়াইল্ড ওয়াদি ওয়াটার পার্ক
৬. ডুবাই মল
৭. অটোড্রোম
৮. অ্যাকোভেঞ্চার ওয়াটার পার্ক (ইত্যাদি)