দক্ষিন কোরিয়ার ইতিহাস, দর্শনীয় স্থানের তালিকা এবং অন্যান্য তথ্য

কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ নিয়ে গঠিত একটি সমৃদ্ধশালী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি এশিয়া মহাদেশের উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। একদম শূন্য থেকে উঠে আসা দেশটির অর্থনীতির চাকা এতোটাই সচল হয়েছে যে দক্ষিণ কোরিয়াকে এখন টাইগার অর্থনীতির দেশ বলা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম কোরীয় প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভাষা হলো কোরীয় ভাষা। দেশটির রাজধানীর নাম সিউল এবং এটি এই দেশের বৃহত্তম নগরী বা বসতি। আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর ১০৭তম বৃহত্তম দেশ।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির আনুমানিক জনসংখ্যা ৫১,৭০৯,৯০৩। জনসংখ্যার দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম দেশ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, নিজস্ব শৃঙ্খলা, বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ও নিজস্ব স্বকীয়তার কারনে দেশটি সারা বিশ্বে ইতিবাচক ভাবে নিজেদের পরিচয় স্বগর্বে তুলে ধরতে পেরেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান

কোরিয়ার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ এলাকা নিম্নভূমি এবং বাকী অংশ উচ্চভূমি বা পর্বতমালা। নিম্নভূমির অঞ্চলের বেশিরভাগই সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। বিশেষ করে পশ্চিম উপকূলে প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকা রয়েছে। পরিসংখ্যানিক হিসেব মতে দক্ষিণ কোরিয়ার স্থলভাগ প্রায় ১,০০,০৩২ বর্গকিলোমিটার এবং দেশটির ২৯০ বর্গ কিলোমিটার বা ১১০ বর্গ মাইল অঞ্চল জলপূর্ণ।

সেদিক থেকে বলা যায় দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া মহাদেশের একটি স্থলাবিশিষ্ট রাষ্ট্র। গঠনগত দিক থেকে দেশটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত। উত্তর দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের পাশ ধরে একটি সরু সমভূমির উপস্থিতও লক্ষ করা যায়।

দক্ষিণ কেরিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কোরিয়া প্রণালী রয়েছে।কোরিয়া প্রনালী জাপান থেকে দেশটিকে পৃথক করে রেখেছে। দেশটির উত্তর দিকে উত্তর কোরিয়া অবস্থিত। পশ্চিম দিকে পীত সাগর, পূর্ব দিকে জাপান সাগর এবং দক্ষিণ দিকে পূর্ব চীন সাগর অবস্থিত। তার মানে দেশটির সীমানা বা বর্ডার লাইনের বেশিরভাগই জলস্থল দ্বারা আবৃত।

south korean map

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অবিভক্ত কোরিয়া জাপানের শাসনাধীনে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যায় এবং দেশটি সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় জাপানের আয়ত্তাধীন সংযুক্ত কোরিয়া দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

এক অংশের নাম হয় উত্তর কোরিয়া এবং অন্যটি দক্ষিণ কোরিয়া। এরই মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদশে সমাজতান্রিক ব্লকে চলে যায় আর এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদি আমেরিকার মতাদশে এর পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দান করে। এর পর থেকে কোরিয়া দুইটি আলাদা অর্থনৈতিক ভূখন্ডের মধ্যে ২টি ভিন্ন সমাজব্যবস্থা চলতে থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়াতে চালু হয় পুঁজিবাদ আর উত্তর কোরিয়ায় সমাজতন্ত্র। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পরে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থা ছিল ধ্বংসস্তুপের মতো। সেই দক্ষিণ কোরিয়াই ১৯৯৩ সালে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। দেশ বিভাজনের সময় উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার রাজধানী নির্বাচিত হয় পিয়ং ইয়াং আর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হয় সিউল। দেশটি জাপানিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল স্বাধীনতা ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। প্রথম প্রজাতন্ত্র গঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ১৫ আগস্ট। দেশটির সংবিধান গঠন করা হয় ১৯৮৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। দেশটি জাতিসংঘের দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয় ১৯৯২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পতাকা

দক্ষিন কোরিয়ার জাতীয় পতাকা সাদা জমিনের ওপর দ্বীবর্ন বিশিষ্ট একটি বৃত্ত এবং চারকোনায় চারটি কালো রঙের টাইগ্রাম বসিয়ে নকশা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকার নকশা প্রণয়ন করেন জাপানে নিযুক্ত কোরীয় রাষ্ট্রদূত বাক ইয়ুং-হুও।স্থানীয়ভাবে কোরিয়ার জাতীয় পতাকাকে তারা তায়েগুকগি বলে অভিহিত করে। এই পতাকাটিকে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পতাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয় ১৮৮৩ সালের ৬ই মার্চ।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রচলিত ভাষা

কোরিয়ান ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রচলিত একমাত্র ভাষা এবং দেশটির সরকারি ভাষা। শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই নয় বরং উত্তর কোরিয়া, চীন ও জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরিয়ান ভাষাভাষীর লোকজন রয়েছে। বৈদেশিক ভিসা পেতে এখন বিভিন্ন দেশের নাগরিক কোরিয়ান ভাষা শিখছে।

ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিচার করলে পৃথিবীতে কোরিয়ান ভাষার অবস্থান ১২তম। কোরিয়ায় ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি লোকের কথ্য ভাষা হলো কোরিয়ান যার মধ্যে ৪৮ মিলিয়ন দক্ষিণ কোরিয়ার এবং ২৪ মিলিয়ন উত্তর কোরিয়ার অধিবাসী। এছাড়াও চীনে দুই মিলিয়নেরও বেশি কোরিয়ান ভাষাভাষী লোকজন রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ মিলিয়ন এবং জাপানে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোক কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে।

আগে কোরীয় ভাাষা হাঞ্জা নামক চীনা ছবি-অক্ষরের লিপি মালা ব্যবহার করে লেখা হতো। পরবর্তীতে সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে হাঙ্গুল্ নামের খুব সহজবোধ্য একটি বর্ণমালা প্রনয়ন করা হয় এবং এই বর্ণমালার ব্যবহার এখনও অব্যাহত আছে। অনেকেই ভাষাবীদ মনে করেন পৃথিবীর সবথেকে সহজবোধ্য ও নিখুঁত বর্ণমালা হলো হাঙ্গুল বর্ণমালা।

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি একটি উচ্চ উন্নত অর্থনীতি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারনেই মূলত দেশটি সারাবিশ্বে নিজেদের সুনাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই দেশে অসংখ্য প্রবাসী জনসংখ্যার জীবীকার সংস্থান রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া একটি অনুন্নত দেশ থেকে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে একটি উন্নত, উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার মহাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির কর্ণধার এবং বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম অর্থনীতির মালিক। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং অষ্টম বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্ত করতে সবথেকে বড় কৌশল হিসেবে নিজেদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছে।নিজ জাতিকে একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে শিল্পক্ষেত্রে ব্যপক উন্নতি লাভ করতে পেরেছে দেশটি।

দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক উন্নয়নের আরও একটি বৃহৎ কারণ হলো রপ্তানিমুখী অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা। আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটির অন্যান্য দেশের সাথে বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে।বর্তমানে দেশটির নিম্ন রাষ্ট্রীয় ঋণ, এবং উচ্চ রাজস্ব রিজার্ভ রয়েছে যা যে কোনও প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত আর্থিক জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত সহায়তা প্রদান করবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া ও জলবায়ু

দক্ষিণ কোরিয়া একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশ। এখানে অঞ্চলভেদে আবহাওয়ার খুব বেশি একটা পার্থক্য দেখা যায় না। ঋতুভেদে পুরো দেশে একই আবহাওয়া বিরাজ করে। তবে ঋতুভেদে দক্ষিণ কোরিয়ার বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।

কখনও কখনও কাঠফাটা গরমে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ আবার কখনও দেখা যায় তুষারে ঢাকা শীত। সারাবছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় চারটি স্বতন্ত্র ঋতুর আনাগোনা লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ এবং শীত ঋতু। বসন্ত আসে একদমই কম সময়ের জন্য,তবে এই অপ মুহুর্তের মধ্যেই সুন্দর কিছু অনুভূতির শিহরণ জুগিয়ে চলে যায়।

এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বসন্ত ঋতু স্থায়ী হয়। বসন্তের পর পরই একটি মৃদু এবং আর্দ্র গ্রীষ্ম কালের আগমন ঘটে। জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত থাকে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্ম চলে যেতে যেতেই শরৎ ঋতুর আগমন ঘটে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত একটি সতেজ শরৎ ঋতুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

এর পরেই আসে হিমায়িত ঠান্ডা নিয়ে শীত ঋতু। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শীত ঋতু স্থায়ী হয়। ঋতু বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশটির প্রতিটি ঋতুই আসে আলাদা আলাদা রূপ নিয়ে এবং নিজেদের আগমন তীব্রভাবে জানান দিয়ে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি

দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সংস্কৃতি। তবে এর মূল ধারা এসেছে প্রাচীন সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা থেকেই। কোরিয়ান সংস্কৃতি কনফুসীয় নীতি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। বিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কোরিয়া ছিল প্রাথমিকভাবে একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ এবং এর সংস্কৃতিও পুরোপুরি কৃষি নির্ভর ছিল। আর তখন এই দেশের সাংস্কৃতিক উৎসগুলো চন্দ্র ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে সংগঠিত হতো।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি হচ্ছে একদম অত্যাধুনিক।দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কারণে পোশাক-পরিচ্ছেদ, রন্ধনপ্রনালী, বাসস্থান ইত্যাদিতে জীবনযাত্রার মানের ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। কেরিয়ান পরিবারে কোনো নতুন সদস্য জন্মগ্রহণ করলে বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কোরিয়ানদের সাধারণত তিনটি নাম থাকে- একটি হলো তার উপাধি, একটি বংশগত নাম এবং একটি তার ব্যক্তিগত নাম যা সে পরিবারের কাছ থেকে পেয়ে থাকে।

উৎসব অনুষ্ঠান যেন পুরো বছর জুড়েই লেগে থাকে এদেশে। কখনও ঐতিহ্যবাহী উৎসব, কখনও আধুনিক কালচারাল অনুষ্ঠান আবার কখনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আনন্দমুখর পরিবেশ বিদ্যমান থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাস

দক্ষিণ কোরিয়ার রন্ধনপ্রণালীতে প্রধানত শস্যদানা, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। প্রথাগত ভাবে কোরিয়ান খাবারে দুগ্ধ জাত উপাদান অনুপস্থিত থাকে। কেরিয়ানরা প্লেইন ভাতের বদলে অন্যান্য শস্য দানার সাথে মিক্স করে সেদ্ধ ভাত পরিবেশন করে৷

কোরিয়ার রান্নায় ব্যবহৃত মসলা গুলোর মধ্যে তিলের তেল, দোয়েনজাং (এক ধরনের সিমের পেস্ট), সয়া সস, লবণ, রসুন, আদা, গোচুগারু (মরিচের পাউডার), গোচুজাং ( লাল মরিচের পেস্ট) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কোরিয়া একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ বলে এখানে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলের উৎপাদন হয়। খাওয়ার শেষে মৌসুমি ফল খাওয়ার প্রচলন আছে এখানে। এশিয়ান নাশপাতি, আপেল, তরমুজ এবং বেরি সহ আরও বিভিন্ন জাতের ফলের উৎপাদন হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়।

কোরিয়ায় স্ট্রিট ফুড ও স্ন্যাকস জাতীয় খাবার অনেক জনপ্রিয়। নুডলস, বিভিন্ন ফ্লেভারের স্যুপ, মোমো সহ পশ্চিমা ধাচের বিভিন্ন খাবার কেরিয়ানরা স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পছন্দ করে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শনীয় স্থান

দেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া হতে পারে একটি উপযুক্ত পছন্দ। এই দেশের অসংখ্য আকাশচুম্বী স্থাপত্যকর্ম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মন গলানো আতিথেয়তা ও সুস্বাদু সব খাবার নিঃসন্দেহে যে কোনো পর্যটকের কাছে দারুণ লাগবে। দক্ষিণ কোরিয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে তুলে ধরা হলো –

১. চাংদেওকগুং প্রাসাদ

দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম চাংদেওকগুং প্রাসাদ। ১৫ শতকে জোসেন রাজবংশের দ্বারা পাঁচটি বিশাল প্রাসাদ নির্মান করা হয়েছিল যার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো চাংদেওকগুং প্রাসাদ।এটি মূলত একটি প্রাসাদ নয় বরং বেশ কিছু ভবনের সমন্বয়। মূল বাড়ির পেছনের ৭৮ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত হুওন বা প্রাসাদ বাগানে কাটাতে পারবেন বেশ চমৎকার একটি বিকেল।

২. বুসানের সমুদ্র সৈকত ও গেমচেওনের পাহাড়ি গ্রাম

বুসান হলো দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরের পাশেই আছে চমৎকার সমুদ্র সৈকত ও সারিবদ্ধ বেশ কিছু রিসোর্ট৷ সেই সাথে উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের মধ্যে পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত সুন্দর ও শান্ত গ্রাম। সি-ফুড প্রেমীদের অবশ্যই চলে যেতে হবে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন জগালচি মার্কেটে।

৩. জিওঞ্জু

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রাচীন শহর জিওঞ্জু। রাজধানী শহর সিউল থেকে ট্রেনে প্রায় ৯০ মিনিট সময় লাগে জিওঞ্জু শহরে পৌছুতে। এই শহর পরিদর্শনের মাধ্যমে বুঝা যাবে প্রাচীন কোরিয়ান সভ্যতা কেমন ছিল। এখানকার বেশিরভাগ বাড়িই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং কিছু বাড়িকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। আরও আছে থাকার হোটেল এবং বিভিন্ন রেস্তোরাঁ।

৪. সিউল টাওয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার সবথেকে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র সিউল টাওয়ার, যার ওপর থেকে পুরো রাজধানী শহরটি দেখার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এই টাওয়ারটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটারেরও বেশি। টাওয়ারের চূড়ায় বসে কোরিয়ান খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।

৫. হ্যানোক গ্রাম

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় দুটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ গেয়ংবকগুং প্রাসাদ এবং চাংদেওকগুং প্রাসাদের মধ্যবর্তী অঞ্চলে হ্যানোক গ্রাম অবস্থিত। এই গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর সময় অনুভব করতে পারবেন ৬০০ বছর আগে কোরিয়ার বাসিন্দারা কেমন জীবনযাপন করতো। আছে অসংখ্য জীবন্ত জাদুঘর ও প্রাচীন বাড়িঘর।

৬. সেওরাকসান ন্যাশনাল পার্ক

কেরিয়ার প্রথম জাতীয় উদ্যান সেওরাকসান ন্যাশনাল পার্ক যা এর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। একটি পার্কে একই সাথে পাহাড়, হ্রদ, জলপ্রপাত, গাছপালা ও বন্য প্রানী দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। এই পার্কে ১৫০০ টিরও বেশি বিভিন্ন প্রাণীর প্রজাতি এবং ১০০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের গাছপালা রয়েছে।

৭. DMZ এ উত্তর কোরিয়া পরিদর্শন

DMZ এর অর্থ হল demilitarized zone। এটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নো-ম্যানস ল্যান্ড বর্ডার। অফিসিয়াল ট্রিপ এর মাধ্যমে এখানে ট্যুরিস্টরা ভ্রমন করতে পারে এবং একই সাথে দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া ভ্রমনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে

৮. লোটে ওয়ার্ল্ড

রাজধানী সিউলের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত বিনোদন পার্ক লোটে ওয়ার্ল্ড। পার্কটিতে আছে একটি হোটেল, লোক জাদুঘর, আইস স্কেটিং সিস্টেম সহ আরও অনেক উপভোগ্য বিষয়বস্তু।

৯. হ্যালিও মেরিটাইম ন্যাশনাল পার্ক

৩০০ টিরও বেশি উপকূলীয় দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি পর্যটন এলাকায় হ্যালিও মেরিটাইম ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত। উপকূলীয় গ্রামগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ক্যাবল কার রাইডিং এর সুব্যবস্থা রয়েছে এই পার্কে।

অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশ দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এখন আইডল হিসেবে কাজ করে।দক্ষিন কোরিয়ার সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে এমন দেশ পৃথিবীতে এখন বেশ কিছু সংখ্যক পাওয়া যায়।

Scroll to Top