এই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেলে আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে দূরে বা কাছে কোনো পাহাড় বা সমুদ্রের ধারে ক্যাম্পিং করে আসুন। আশা করি আপনার মন ও আত্না একটু হলেও শান্তি পাবে। তবে পাহাড় হোক বা সমুদ্র বা কোনো জঙ্গলই হোক না কেন ক্যাম্পিং এর জন্য তাবু অপরিহার্য। তাবু ছাড়া ক্যাম্পিং এর কথা ভাবা যায় না।
কিন্তু কোন জায়গায় বা কোন আবহাওয়ায় ক্যাম্পিং করতে কি ধরনের তাবু প্রয়োজন তা জানা গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। আজকে এই আর্টিকেলে আমরা বিভিন্ন ধরনের তাবুর সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পিং এর জন্য বিভিন্ন তাবুর দাম সম্পর্কে জেনে নিবো ইন শা আল্লাহ।
বিভিন্ন ধরনের তাবুর পরিচিতি ও দাম
১. ক্যাম্পিং গম্বুজ তাবু বা ডোম তাবুর দাম
তাবু অনেক ধরনের আছে তবে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত তাবু হলো ডোম তাবু। এই ধরনের তাবু সুবিধামতো বিভিন্ন সাইজে পাওয়া যায়। ফলে প্রয়োজন মতো ডোম তাবু সিলেক্ট করাও সহজ। ১ জন থেকে শুরু করে ৮ জন পর্যন্ত সাইজের ডোম তাবু বাজারে পাওয়া যায়। তাই একা হোক বা গ্রুপ যেকোনো ক্যাম্পিং এর ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যায় এই ডোম তাবু।
ডোম তাবুর দুইটি ওয়াল থাকে। ভেতরের ওয়ালটি ওয়াটারপ্রুফ। তাবুর ভেতরে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এছাড়া এই ধরনের তাবুর রয়েছে দুইটি পোল যা মাঝখান বরাবর আড়াআড়িভাবে থাকে। ৪ কোণায় থাকা ৪ টি খুটি মাটিতে শক্তভাবে পুতে দিলের রেডি হয়ে গেল আপনার তাবু। অনান্য তাবুর চেয়ে এই ডোম তাবুর ওজন হালকা ফলে সহজেই বহন ও স্থানান্তর করা যায়।
ডিজাইন ও সাইজের ওপর নির্ভর করে এই ধরনের তাবুর দাম নির্ধারিত হয়। গম্বুজ তাবুর দাম ১৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২-৩ জন থাকা যায় এমন তাবু আপনি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা খরচ করলেই পেয়ে যাবেন।
২. এ ফ্রেম তাবুর দাম
এই ধরনের তাবু দেখতে অনেকটা সাধারন ও অনাকার্ষনীয় হলেও প্রফেশনাল ট্রাভেলারদের কাছে এ ফ্রেম তাবু বেশ পছন্দের। এই ধরনের টাবু টাঙ্গানোর পরে অনেকটা ইংরেজি “A” তাই এই ধরনের তাবুর নামকরণ করা হয়েছে এ ফ্রেম তাবু। তাবুর সামনে ও পিছনে দুইটি খুটি থাকে। এই দুইটি খুটি একে অপরের সাথে রিজলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
এ ফ্রেম তাবু অনেক হালকা উপাদান দিয়ে তৈরি। এর ফলে সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে প্যাক করা অবস্থায় এটি দেখতে ভারী ও মোটা মনে হয়।
ডিজাইন ও টেকসই ভেদে এই ধরনের তাবুর দাম বিভিন্ন হয়ে থাকে। আর বেশি মজবুত হওয়াতে এই তাবুর দাম ডোম বা গম্বুজ তাবুর চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করলে ভালো মানের এ ফ্রেম তাবু পাওয়া সম্ভব।
৩. পপ-আপ ক্যাম্পিং তাবুর দামন
ধরুন কোনো জঙ্গলে বা নদীর ধারে ক্যাম্পিং করতে চলে গেলেন। সাথে আছে এমন একটি তাবু যা ছাতার মতো হুট করে খোলা যায় এবং টাঙানো যায় আবার হুট করেই বন্ধ করে দেওয়া যায়। এরকম হলে কেমন হয় বলুন তো?
এরকম একটি তাবু বাস্তবেও আছে। এই ধরনের তাবুর নাম পপ-আপ তাবু। এই তাবু যেখানে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা বাটন টিপে হুট করেই খুলে ফেলা যায় আবার হুট করেও বন্ধ করা যায়। বহন করতেও তেমন একটা কষ্ট হয় না। তবে এই ধরনের তাবুর একটি অসুবিধা হলো শক্তিশালী বাতাস বা ঝড়ে টিকে থাকতে পারে না। তাই হালকা গ্রীষ্ম বা হালকা শীতকালে ক্যাম্পিং এর ক্ষেত্রে এই ধরনের তাবু বেছে নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করলেই ক্যাম্পিং এর জন্য পারফেক্ট পপ-আপ তাবু পেয়ে যেতে পারেন।
৪. টানেল ক্যাম্পিং তাবুর দাম
টানেল তাবু বানানো হয় দুই বা ততোধিক ফেব্রিকের তৈরি খুটি সংযুক্ত করার মাধ্যমে। এরকম অনেক খুটি একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে একটা বড় তাবুর তৈরি হয় যা দেখতে অনেকটা টানেল বা সুরুঙ্গের মতো তাই এই ধরনের তাবুর নাম টানেল তাবু। একটি টানেল তাবুতে কয়টি খুটি থাকবে তা তাত্ত্বিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে টানেল তাবু সাধারণত ৬ জনের জন্য বানানো হয়। গ্রুপ ক্যাম্পিং এর জন্য টানেল তাবু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
টানেল তাবু গুছিয়ে নেওয়া খুব সহজ। তবে বালু বা নরম মাটিতে টানেল তাবু স্থাপন করা উচিত নয়। এই তাবু স্থাপন করার সময় বাতাসের দিক মাথায় রাখতে হয়। যদি বাতাস সরাসরি তাবুতে আঘাত করে তাহলে সহজেই তাবুটি উড়ে যেতে পারে। টানেল তাবুর দাম অনান্য তাবুর চেয়ে বেশি। কারন এই তাবুতে একসাথে অনেকজন থাকা যায়।
৪-৬ জনের একটা টানেল তাবু কিনতে হলে গুনতে হতে পারে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
৫. জিওডেসিক ক্যাম্পিং তাবুর দাম
জিওডেসিক তাবু অনেক মজবুত হয়। কারন এই ধরনের তাবু এমন অনেক খুটির সমন্বয়ে গঠিত যারা একে অপরকে ওভারল্যাপ করে। জিওডেসিক তাবু সাধারনত লম্বা গোলাকার হয়। এর ফলে এই ধরনের তাবু সহজেই ঝড় ঝাপটা, তুষারপাত ও বৃষ্টি সহ্য করতে পারে।
জিওডেসিক তাবুর একমাত্র অসুবিধার দিক হলো এটি সেট আপ করা অনেক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। একে অপরের সাথে ক্রস হয়ে থাকা খুটিগুলো সেট আপ করা একটা ধাধা সমাধান করা্র সমান মনে হতে পারে। জিওডেসিক তাবুর দাম এত বেশি যে দাম শুনে অনেকে অবাক হয়ে যেতে পারে।
জিওডেসিক তাবুর দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে জিওডেসিক তাবু খুব একটা পাওয়া যায় না।
৬. রুফ তাবুর দাম
কল্পনা করুন আপনি হঠাৎ কোনো রোড ট্রিপে বের হয়ে পড়লেন। এমন এক জায়গায় গেলেন যেখানে মাইলের পর মেইল রোড দেখা যাচ্ছে। রাতও হয়ে গেল। কোথায় ক্যাম্পিং করবেন বুঝতে পারছেন না। এমন সময় আপনার কাজে আসবে রুফ টপ। রুফ টপের সাহায্য মাটি থেকে ওপরে ছাদের মতো করে থাকা যায়। এই ধরনের তাবুর খুটি ছোট বড় করে তাবুর উচ্চতা পরিবর্তন করা যায়। তাবুতে উঠার জন্য ছোট্ট একটি মই ব্যবহার করতে হয়।
যেখানে সেখানে আপনার গাড়ির ওপরেও রুফ টপ স্থাপন করা যায়। তবে রুফ টপ সবার জন্য নয়। কারন বাচ্চারা বা যারা ঘুমে বেশি নাড়াচাড়া করে তারা এই তাবু থেকে পড়ে যেতে পারে।
একটি রুফ টেন্টের দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৭. পিরামিড তাবুর দাম
টিপি তাবু দেখলেই চেনা যায়। কারন এই ধরনের তাবুর ছাদ অনেক উচু হয়ে থাকে। একটি মাত্র খুটি দিয়েই এই তাবু বানানো হয়।
তবে, পিরামিড তাবু ভ্রমণকারীদের কাছে খুব একটা পছন্দের নয়। কারন এই ধরেনের তাবুর মেঝেতে কোনো ফ্লোরিং ব্যবস্থা থাকে না আর মাঝখানে পোলটি ঘুমানোর জায়গায় অনেক ছোট করে দেয়। এই মাঝখানের পোলের জন্য ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
পিরামিড তাবুর দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৮. ব্যাকপ্যাকিং ক্যাম্পিং তাবুর দাম
নামের মতোই ব্যাকপ্যাকিং তাবু সাইজে অনেক ছোট ও হালকা হয়ে থাকে। ফলে সহজেই ঘাড়ে ব্যাগের মতো বহন করে নিয়ে বেড়ানো যায়। সাধারনত একা একা ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই ব্যাকপ্যাকিং তাবু একদম উপযুক্ত। কারন ঘাড়ে করে নিয়ে হাটতে থাকলেও খুব একটা অজন অনুভুত হয় না। আর খুব সহজেই স্থাপন করা যায়।
তবে ব্যাকপ্যাকিং তাবু সাইজে অনেক ছোট হওয়ায় ভেতরে স্পেস অনেক কম থাকে। ৩ হাজার টাকার মধ্যেই একটি ভালো মানের ব্যাকপ্যাকিং তাবু পাওয়া যেতে পারে।
আশা করি ক্যাম্পির তাবুর দাম নিয়ে আজকের আর্টিকেল আপনার পরবর্তী ট্যুরে কাজে লাগবে ইন শা আল্লাহ।
