সাপ্তাহিক ছুটিতে ভ্রমণ কিংবা বাৎসরিক বনভোজন যাই হোক না কেন এসকল আয়োজনে ঢাকার বাসিন্দা ছুটে যায় গাজীপুরের ছায়াঘেরা পরিবেশে। তাই গাজীপুরের প্রতিটি এলাকাতেই দুক একটা রিসোর্ট বা পিকনিক স্পট গড়ে উঠেছে। তেমনই গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি উল্লেখযোগ্য রিসোর্ট হলো ‘ঢাকা রিসোর্ট ‘।
নাম ঢাকা রিসোর্ট হলেও এটি কিন্তু ঢাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বান্দাবাড়ী গ্রামে অবস্থিত। বিনোদনের জন্য সব ধরনের উপকরণ আপনি এই রিসোর্টে পেয়ে যাবেন৷ আছে সুসজ্জিত কটেজ ও ভিলা যেখানে ২৪ ঘন্টা সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
নান্দনিক ডেকোরেশনের সুইমিং পুল, কনফারেন্স হল, ইকো পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, কিডস জোন, প্লে গ্রাউন্ড, শুটিং জোন, পিকনিক স্পট ঢাকা রিসোর্ট এর উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ। বাড়তি সুবিধা হিসেবে আছে পার্কিং সুবিধা ও সারাক্ষণ রুম সার্ভিস এর ব্যবস্থা।
তাছাড়াও আছে একটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট। এখানে ইন্ডিয়ান, থাই, চাইনিজ, বাংলা খাবার সহ বারবিকিউ করার সুবিধা রয়েছে। যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য রিসোর্ট বুকিং করলে এখানেই খাবারের অর্ডার করতে পারবেন৷ তাছাড়া প্যাকেজ অফারের সাথে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সুযোগ থাকে।
তাই ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে হৈ হুল্লোড় করতে কিংবা বাৎসরিক বনভোজন করতে অথবা যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চলে যেতে পারেন ঢাকা রিসোর্টে।
ঢাকা রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ
ঢাকা রিসোর্টে ভ্রমণের জন্য সাধারণত রেগুলার প্রাইজে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম ভাড়া নিতে পারেন৷ এছাড়া রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বিভিন্ন উপলক্ষে অফার প্যাকেজ এর আয়োজন করে থাকে। এবং সারা বছর জুড়েই পিকনিক প্যাকেজ চলমান থাকে। এখানে রেগুলার রুম ভাড়া ও বর্তমানে চলমান বিভিন্ন প্যাকেজ অফার সম্পর্কে তথ্য দেয়া হলো। ফলে সহজেই আপনি ঢাকা রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে।
রেগুলার রুম ভাড়া
- প্রিমিয়াম রুম – ১০,০০০ টাকা (২ জন থাকতে পারবে)
- রয়্যাল কটেজ – ২৫,০০০ টাকা (৪ জন থাকতে পারবে)
- এক্সিকিউটিভ কটেজ – ২০,০০০ টাকা (৪ জন থাকতে পারবে)
- ফ্যামিলি কটেজ – ২০, ০০০ টাকা (৬ জন থাকতে পারবে)
রুম ভাড়া নিলে তার সাথে সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এছাড়া পাবেন পার্কিং সুবিধা, রুম সার্ভিস ও শর্তসাপেক্ষে খাওয়ার সুযোগ।
পিকনিক প্যাকেজ
পিকনিক প্যাকেজ অফারে বুকিং দিতে চাইলে কমপক্ষে পাঁচ জনের জন্য বুকিং দিতে হবে। এটি একটি ডে আউট প্যাকেজ বলা চলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকার অনুমতি পাবেন এই প্যাকেজের মাধ্যমে। এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকালের নাশতা৷
এর সাথে থাকবে সুইমিং পুল, হরিনের খামার দেখার সুযোগ, পার্ক ভ্রমণের সুযোগ ও পার্কিং সুবিধা। যদি সংখ্যায় বেশি থাকেন তাহলে প্রতি ১০ জনের জন্য একটি এসি রুম বরাদ্দ থাকবে।
রবি থেকে বুধ এই চারদিন কর্মদিবসে পিকনিক প্যাকেজের মূল্য ২০০০ টাকা আর ছুটির দিনে ২৫০০ টাকা। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হিসেবে বিবেচিত। এটা একটি জনপ্রতি ভাড়ার হিসেব।
কাপল ডে আউট প্যাকেজ
এই প্যাকেজটি দুই জনের জন্য প্রযোজ্য। এই প্যাকেজেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিসোর্টে অবস্থানের সুযোগ পাবেন। প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং বিকালে নাশতা। আরও থাকবে একটি এসি রুম, সুইমিং পুল, পার্কিং সুবিধা সহ রিসোর্টের যাবতীয় সকল সুবিধা।
কর্মদিবসে কাপল ডে আউট প্যাকেজের মূল্য ৫,০০০ টাকা এবং ছুটির দিনে প্যাকেজ মূল্য ৬,০০০ টাকা।
কাপল নাইট স্টে প্যাকেজ
এই প্যাকেজটিও দুই জনের জন্য প্রযোজ্য। এই প্যাকেজে একদিন ও একরাত রিসোর্টে অবস্থানের সুযোগ পাবেন৷ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে দুপুরের খাবার, বিকালের নাশতা, রাতে বারবিকিউ করার সুযোগ এবং সকালের নাশতা।
আরও থাকবে সুইমিং পুল, রুম সার্ভিস, পার্কিং সুবিধা ও রিসোর্টের যাবতীয় সকল সুবিধা।
কর্মদিবসে কাপল নাইট স্টে প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০০ টাকা এবং ছুটির দিনে ১০,০০০ টাকা।
বি. দ্র: প্যাকেজ মূল্য ও প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সুযোগ সুবিধা সব সময় এক রকম থাকে না। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে খরচের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো।
যোগাযোগ:
- ঠিকানা- বান্দাবাড়ী গ্রাম, কালিয়াকৈর-মাওনা হাইওয়ে, কালিয়াকৈর উপজেলা, গাজীপুর।
- মোবাইল – ০১৭৬২-৫৫৪৪২২ বা, ০১৭৬২-৫৫৪৪৪৪
- ওয়েবসাইট – www.dhakaresortltd.com
- ইমেইল – [email protected]
ঢাকা রিসোর্ট যাওয়ার উপায়
এর আগেও উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা রিসোর্ট গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত। তাই প্রথমেই ঢাকা কিংবা গাজীপুরের আসেপাশের যে কোনো জায়গা থেকে প্রথমে আপনাকে গাজীপুর পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে গাজীপুরে যাওয়ার জন্য অনেক বাস পাবেন।
আজমেরি গ্লোরি, গাজীপুর পরিবহন, রাজধানী পরিবহন, মৌমিতা পরিবহন, বলাকা পরিবহন সহ অনেক বাস ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাজীপুরের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে কোনোটা সরাসরি কালিয়াকৈর পর্যন্ত যায়, কোনো বাস গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যায় আবার কোনোটা গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যাবে। তাই বাসে ওঠার আগে অবশ্যই জেনে নেবেন বাস কোন পর্যন্ত যাবে। সরাসরি কালিয়াকৈর এর বাস পেয়ে গেলে তো ভালো।
না পেলে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে পারবেন। গাজীপর চৌরাস্তা থেকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে কালিয়াকৈর চলে যেতে হবে। চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর এর উদ্যেশ্যে প্রতিনিয়ত লোকাল বাস ছেড়ে যায়। চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
কালিয়াকৈর বাজারে পৌঁছে আপনাকে কালিয়াকৈর টু মাওনা মহাসড়ক ধরে ১০ কিলোমিটার এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কালিয়াকৈর বাজার থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারবেন। ‘কালিয়াকৈর পরিবহন’ নামে লোকাল বাস প্রতি ১৫ মিনিট পর পর এই রুটে ছেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা। চাইলে লোকাল সিএনজি করেও যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। বাস বা সিএনজি ড্রাইভারকে বললেই হবে আপনি ঢাকা রিসোর্ট যাবেন।
তারাই আপনাকে হাইওয়ের নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দেবে। এরপর লোকাল অটোতে বা রিকশায় কিছুটা ভেতরের দিকে গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন ঢাকা রিসোর্ট এর প্রবেশ গেইটে।
ঢাকা রিসোর্ট এর সৌন্দর্য:
ঢাকা রিসোর্ট এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কতোটা মনোমুগ্ধকর তা আপনি নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না৷ শালবনের ভেতরে তৈরি করা এই রিসোর্টে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে কৃত্রিম ডেকোরেশন এর মাধুর্যতা৷ আরও আছে মিনি চিড়িয়াখানা এবং একটি হরিনের খামার।
যেখানে আপনি খুব কাছ থেকে হরিণ দেখতে পারবেন এবং নিজ হাতে হরিণকে খাওয়াতে পারবেন৷ এছাড়া পুরো রিসোর্টের আশেপাশে আছে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। সুইমিং পুল এর এরিয়ায় গেলে মনে হবে আপনি অন্য কোনো একটি লাক্সারিয়াস জগতে চলে এসেছেন।
সুইমিং পুলের পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে দেখলেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়াতে মন চাইবে। এছাড়া কিডস জোন ও প্লে গ্রাউন্ড এর সৌন্দর্যও আপনার মন কেড়ে নেবে। সব মিলিয়ে চারদিকে সৌন্দর্য ও বিনোদনের ছড়াছড়ি।
প্রতিটি কটেজ ও রুম খুচ চমৎকার ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
তাই রাতের পরিবেশে ঢাকা রিসোর্টকে আরও অন্যরকম মুগ্ধতা নিয়ে পরিদর্শন করতে চাইলে কটেজে একরাত কাটতে আসতে পারেন। এছাড়া কনফারেন্স হলের ডেকোরেশন-ও বেশ নান্দনিক। আগত অতিথিদের সাদর অভ্যর্থনা জানাতে গেইটের শুরু থেকে রিসোর্টের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পুরোটাই দারুন ভাবে ডেকোরেট করা হয়েছে।
শেষকথা:
আশাকরি ঢাকা রিসোর্টের ভ্রমণ সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য আপনি ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন৷ তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন রিসোর্টের কটেজ ভাড়া করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট এর ফটোকপি জমা দিতে হবে। আশাকরি ঢাকা রিসোর্টে আপনার একটি চমৎকার দিন কাটবে।
নোটঃ ছবি তাদের পেজ থেকে নেওয়া। ক্রেডিট তাদের