ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম নদীপথ। বিশেষ করে যারা ভ্রমন ও এডভেঞ্চারপ্রেমী তাদের জন্য নদীপথ হবে সবথেকে উপযুক্ত যাতায়াত মাধ্যম। নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো লঞ্চ। ঢাকা টু বরিশাল রুটে সুবিশাল ও বিলাসবহুল বেশ কয়েকটি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে।
এসকল লঞ্চে শ্রেনি অনুযায়ী যাতায়াতের নানান রকমের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সবথেকে মজার বিষয় হলো ঢাকা টু বরিশাল রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ লঞ্চের টাইম শিডিউল রাতে। আর পুরোটা রাত নদীর বুকে ভেসে বেড়াবেন তাও আবার ঘুমিয়ে কিংবা শুয়ে। তাহলে কে চায় সারাদিন জ্যামে বসে গাড়ির ঝাঁকুনি সহ্য করে একটা লং জার্নি করতে। তবে সম্প্রতি ডে সার্ভিস এর কয়েকটি লঞ্চ ও ওয়াটারবাস চালু হয়েছে।
এক্ষেত্রেও কিন্তু আপনি স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবেন। যারা কুয়াকাটা বা ভাসমান পেয়ারা বাগান সহ বরিশালের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চান তারা কিন্তু লঞ্চে ভ্রমনের একটি দারুণ সুযোগ পাবেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত কাজের জন্য ঢাকা বরিশাল রুটে যাতায়াতের জন্য লঞ্চ তো অনেকেরই নিত্য দিনের বাহন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন ঢাকা টু বরিশাল রুটে চলাচলকারী লঞ্চের তালিকা, ভাড়া, কোথা থেকে লঞ্চে উঠবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত।
নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব
নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব মৌসুম অনুযায়ী কমবেশি হয়ে থাকে। বর্ষায় যখন নদীনালা ভরে টইটুম্বুর তখন প্রতিটি নদীর উপরিভাগের আয়তন বেড়ে যায়। ফলে নদীপথে দূরত্ব তুলনামূলক বেশি হয়।
আবার শীতের মৌসুমে নদীনালার পানি শুঁকিয়ে পানির স্তর নিচে নেমে যায় ফলে নদীর উপরিভাগের আয়তন কম হয়। ফলে তখন দূরত্ব তুলনামূলক কম হয়। সাধারণত ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে নদীপথে পুরোটা পথ অতিক্রম করতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে। তবে সম্প্রতি যে ওয়াটারবাস চালু করা হয়েছে তাতে যাতায়াতের সময় অনেক কম লাগে। ওয়াটারবাসে সাধারণ ৫ থেকে ৬ ঘন্টায় ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া যায়।
ঢাকা এবং বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল
ঢাকা থেকে বরিশাল লঞ্চে যাওয়ার জন্য প্রথমে অবশ্যই লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাতে হবে। ঢাকায় একটি এবং বরিশালে একটি লঞ্চ টার্মিনাল রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদিনই ঢাকার উদ্যেশ্যে এবং বরিশালের উদ্যেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে।
ঢাকা লঞ্চ টার্মিনাল সাধারণত ঢাকা সদরঘাট হিসেবেই পরিচিত। লঞ্চে বরিশাল যেতে চাইলে ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে চেপে ঢাকার সদরঘাট পৌঁছাতে হবে।
এটি মূলত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ টার্মিনাল। সদরঘাটের আসেপাশে অবস্থিত এলাকা সাধারণত পুরান ঢাকা নামে পরিচিত। এর কাছেই রয়েছে বিখ্যাত বাংলা বাজার, আহসান মঞ্জিল সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সদরঘাট থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের ৪৫ টি রুটে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করে। সদরঘাটের নদীবন্দর গেট থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে টার্মিনালে ঢুকে পড়তে হবে।
এরপর ঢাকা বরিশালের টার্মিনালে গেলেই দেখতে পাবেন সুবিশাল আলো ঝলমলে লঞ্চ সারিবদ্ধভাবে ঘাটে ভিড়ানো আছে। নিজের পছন্দমতো লঞ্চে উঠে কেবিন, ডেক বা সোফায় নিজের আসনটি নিশ্চিত করলেই হবে।
ঢাকা থেকে লঞ্চ যাত্রা শুরু করে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে বরিশাল নদীবন্দরে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবেন।
তাছাড়া বরিশাল থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রেও বরিশাল নদীবন্দর বা আঞ্চলিক ভাষায় ‘বরিশাল লঞ্চঘাট’ থেকে লঞ্চে চেপে ঢাকা আসতে পারবেন। বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে লঞ্চ টার্মিনালটি অবস্থিত। বরিশাল শহরের বান্ধ রোডে এই লঞ্চ টার্মিনাল অবস্থিত। বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট চক বাজার, মহসিন মার্কেট, সিটি মার্কেট, বরিশাল জাদুঘর, নগর ভবন, জেলা পরিষদ লঞ্চ ঘাটের আশেপাশেই অবস্থিত।
ঢাকা থেকে আগত কোনো যাত্রীকে টার্মিনালে থেকে বের হওয়ার সময় কোনো ঘাট ভাড়া দিতে হবে না। কিন্তু টার্মিনালে প্রবেশের জন্য এখানেও ১০ টাকা ঘাট ভাড়া দিয়ে টিকেট কেটে টার্মিনালে প্রবেশ করতে হবে।
ঢাকা টু বরিশাল লঞ্চের তালিকা:
ঢাকা টি বরিশাল রুটে বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন লঞ্চ চলাচল করে। কিছু লঞ্চ সম্প্রতি এই রুটে চালু করা হয়েছে এবং কিছু লঞ্চ এই রুট থেকে বর্তমানে অন্য রুটে পাঠানো হয়েছে। কিছু লঞ্চ বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত আছে। নিচে ঢাকা টু বরিশাল রুটে বর্তমানে চলাচলকারী লঞ্চের তালিকা, প্রতিটি লঞ্চের প্রয়োজনীয় তথ্য ও যোগাযোগের নাম্বার উল্লেখ করা হলো।
১. এম ভি কুয়াকাটা – ২

ঢাকা টু বরিশাল এবং বরিশাল টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন লঞ্চ এম. ভি. কুয়াকাটা – ২। এই লঞ্চে ডেক, ভিআইপি কেবিন, সেমি ভিআইপি কেবিন, সিঙ্গেল ডিলাক্স এসি, নন এসি কেবিন ও নরমাল কেবিনে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। তবে সোফায় যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই।
লঞ্চটি ঢাকা থেকে রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে ছাড়ে আবার বরিশাল থেকেও রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে ছাড়ে।
- ঢাকায় যোগাযোগের নাম্বার: ০১৭১১-৩২৫৯১৭
- বরিশালে যোগাযোগের নাম্বার: ০১৭৮৬-০৬১৫৮৫
এম. ভি. কুয়াকাটা – ২ এর কেবিন, ডেক সিটের ভাড়া
- ডেকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
- সিঙ্গেল ডিলাক্স এসি কেবিনের ভাড়া১৮০০ টাকা।
- সিঙ্গেল ডিলাক্স ননএসি কেবিনের ভাড়া ১৫০০ টাকা
- ডাবল বেড এসি কেবিনের ভাড়া ২২০০ টাকা
- ডাবল বেড ননএসি কেবিনের ভাড়া ২০০০ টাকা
- সিঙ্গেল বেড এসি কেবিনের ভাড়া ১৪০০ টাকা
- সিঙ্গেল বেড ননএসি কেবিনের ভাড়া ১২০০ টাকা
- সেমি ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৪০০০ টাকা
- নরমাল ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ২২০০ থেকে ৩০০০ টাকা
- ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
২. এম ভি মানামী
ঢাকা টু বরিশাল এবং বরিশাল টু ঢাকা রুটে এম ভি মানামী নিয়মিত চলাচল করে। এই বিলাসবহুল লঞ্চে ডেক, সোফা সিট, সিঙ্গেল কেবিন, ডবল কেবিন, ফ্যামিলি কেবিন, লাক্সারি কেবিনে যাতায়াতের সুব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিদিন রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে এবং বরিশাল থেকে নিয়মিত এই লঞ্চ ছাড়ে।
ঢাকায় যোগাযোগের নম্বর: ০১৭১৬-২১১৩৬৬ বা, ০১৮৩৬-৩৮৭০৭২
বরিশাল যোগাযোগের নম্বর: ০১৭১১-০০৬০৮২
- ডেকের ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা
- সোফা সিট ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা
- সিঙ্গেল এসি কেবিন ভাড়া ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা
- ডাবল কেবিন এসি ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা
- ফ্যামিলি কেবিনে ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৮০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা
৩. এম. ভি. এ্যাডভেঞ্চার-১
ঢাকা বরিশাল রুটে সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে চলমান এম. ভি. এ্যাডভেঞ্চার-১। ডেক, কেবিন, সোফা সিট সহ সব ধরনের যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন এই লঞ্চে। লঞ্চটি নিয়মিত ঢাকা থেকে রাত ৯ টায় ছাড়ে এবং বরিশাল থেকেও রাত ৯ টায় যাত্রা শুরু করে।
এ্যাডভেঞ্চার-১ এর অফিসিয়াল নাম্বার: ০১৩২৪-৪৪৪৭৫৫
সুপারভাইজার এর নাম্বার: ০১৩২৪-৪৪৪৭৫৮
- ডেক ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
- সোফা সিট ভাড়া ৮০০ টাকা।
- ডাবল বেড কেবিন ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- সিঙ্গেল বেড কেবিন ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
৪. এম. ভি. কীর্তনখোলা -২ এবং ১০
ঢাকা বরিশাল রুটে অনেক আগে থেকেই এম. ভি. কীর্তনখোলা -২ লঞ্চটি চলাচল করছে। তবে এম. ভি. কীর্তনখোলা -১০ লঞ্চটি ২০১৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। কীর্তনখোলা লঞ্চ রাত নয়টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার বরিশাল লঞ্চঘাট থেকেও রাত ৯ টায় ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। ডেক ও সব ধরনের কেবিনের সুব্যবস্থা রয়েছে উভয় লঞ্চে।
অফিসিয়াল ফোন নম্বর: ০১৭১৯-২৮৮৯৩৯ বা, ০১৭১১-৪৭৩৬৬১।
- ডেক ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
- সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা।
- ডবল বেড কেবিন ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
- ফ্যামিলি কেবিন ভাড়া ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
তবে এম. ভি. কীর্তনখোলা -২ এর খরচ এম. ভি. কীর্তনখোলা -১০ এর থেকে তুলনামূলক কম। কিন্তু সাজসজ্জা ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা এম. ভি. কীর্তনখোলা -১০ এ তুলনামূলক বেশি।
৫. এম. ভি. সুন্দরবন -১০ এবং ১১
‘এম. ভি. সুন্দরবন’ -১০ এবং ‘এম. ভি. সুন্দরবন -১১’ দুটো লঞ্চই ঢাকা টু বরিশাল এবং বরিশাল টু ঢাকা রুটে নিয়মিত চলাচল করে। উভয় লঞ্চেই রয়েছে নরমাল ডেক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল কেবিন ও সোফা সিট এর ব্যবস্থা।
ঢাকা থেকে রাত নয়টায় যাত্রা শুরু করে আবার বরিশাল থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রেও রাত নয়টায় যাত্রা শুরু করে।
এম. ভি. সুন্দরবন -১০ এর মোবাইল নম্বর : ০১৭৭৩-২২০০১১ বা, ০১৭৫৮-১১৩০১১
এম. ভি. সুন্দরবন -১১ এর মোবাইল নম্বর: ০১৭১৯-৭৮৪৯৮০ বা, ০১৭১১-৩৫৮৮৩৮
- ডেক ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
- সোফা সিট ভাড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
- সিঙ্গেল বেড কেবিনের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
- ডবল বেড কেবিনের ভাড়া ১৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- ফ্যামিলি কেবিন ভাড়া ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
- ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৫৫০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
৬. এম. ভি. সুরভী -৮
ঢাকা বরিশাল রুটে চলাচলকারী তুলনামূলক পুরোনো ও পরিচিত একটি লঞ্চ এম. ভি. সুরভী -৮। ডেক থেকে শুরু করে সোফা সিট ও সব ধরনের কেবিনের সুব্যবস্থা আছে এই লঞ্চে। লঞ্চটি ঢাকা থেকে নিয়মিত রাত ৮ টায় যাত্রা শুরু করে আবার বরিশাল থেকেও একই সময়ে যাত্রা করে।
ঢাকায় যোগাযোগের নম্বর: ০১৭১২-৭৭২৭৮৬,
বরিশালে যোগাযোগের নম্বর: ০১৭১১-৪৫৩৯৮৯
- ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।
- সোফা সিটে ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
- সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
- ডাবল কেবিন ভাড়া ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- সেমিভিআইপি কেবিন ভাড়া ২৬০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৮০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
৭. এম. ভি. পারাবত-১১
এই লঞ্চটি মোটামুটি এই রুটের পুরোনো একটি লঞ্চ। লঞ্চটি ঢাকা থেকে রাত ৯ টায় বরিশালের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায় আবার বরিশাল থেকেও রাত ৯ টায় ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। ডেক, এসি কেবিন, নন এসি কেবিন, ফ্যামিলি কেবিন ও ভিআইপি কেবিনে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে এই লঞ্চে।
আফিসে যোগাযোগ নম্বর: ০১৭১১-৩৩০৬৪২
- ডেক ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।
- সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা।
- ডবল কোবিন ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
- ফ্যামিলি কেবিন ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা।
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৬০০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা।
৮. এম. ভি. পারাবত-১২
পারাবত ১১ এর থেকে পারাবত ১২ তুলনামূলক নতুন এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন। সেই সাথে এই লঞ্চের কেবিন ও ডেক প্রতিটি সেক্টরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন বেশ নান্দনিক। তুলনামূলক ভাড়াও পারাবত ১১ এর থেকে একটু বেশি। এই লঞ্চটি ঢাকা থেকে রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। আবার বরিশাল থেকেও একই সময়ে যাত্রা শুরু করে।
অফিসে যোগাযোগের নাম্বার: ০১৭৮৯-৪৪৮০৮৮
- ডেকের ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
- সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
- ডবল কেবিনের ভাড়া ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা
- সেমিভিআইপি কেবিন ভাড়া ২৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা
- ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৭০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
৯. গ্রীন লাইন -৩
ঢাকা টু বরিশাল এবং বরিশাল টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি দ্রুতগামী ওয়াটারবাস গ্রীন লাইন -৩। অন্যান্য লঞ্চ এর টাইম শিডিউল রাতে হলেও গ্রীন লাইন -৩ এর টাইম শিডিউল দিনে। ঢাকা থেকে এটি সকাল ৮ টায় যাত্রা শুরু করে।আবার বরিশাল থেকে দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। যাতায়াতে গড় সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। অন্যদিকে রাতের শিডিউল এর লঞ্চে যাতায়াতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। তাই যারা দিনের শিডিউলে যাতায়াত করতে চান কিংবা দ্রুত যাতায়াত করতে চান তাদের জন্য ওয়াটারবাস হবে উপযুক্ত যাতায়াত মাধ্যম।
- ঢাকায় যোগাযোগ নাম্বার: ০১৭৩০-০৬০০৭১
- বা, ০১৭৩০-০৬০০৭২
- বরিশালে যোগাযোগ নাম্বার: ০১৭৩০-০৬০০৩৩
- বা, ০১৭৩০-৩৬০০৭৯
গ্রীন লাইন -৩ এ দুইটি শ্রেণিতে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। একটি হলো ইকোনমি ক্লাস আরেকটি বিজনেস ক্লাস। নিচতলায় ইকোনমিক ক্লাসের সিট রয়েছে এবং দোতলায় বিজনেস ক্লাসের সিট রয়েছে।
- ইকোনমি ক্লাস ভাড়া জনপ্রতি ৭০০ টাকা।
- বিজনেস ক্লাস ভাড়া জনপ্রতি ১০০০ টাকা।
এই ওয়াটারবাসে যাত্রাপথে যাত্রীদের হালকা নাশতার ব্যবস্থা করে থাকে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ এবং এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
বি. দ্র: লঞ্চের ভাড়া বিশেষ বিশেষ দিন উপলক্ষে কম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় ভাড়া পরিবর্তন করতে পারে
ঢাকা টু বরিশাল লঞ্চের সাধারণ কিছু বিষয়:
ঢাকা বরিশাল রুটে চলাচলকারী প্রতিটি লঞ্চেরই সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য ও সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে গ্রীন লাইন -৩ এর ক্ষেত্রে এসকল বৈশিষ্ট্য ও সুযোগ সুবিধা প্রযোজ্য নয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. গ্রীন লাইন বাদে প্রতিটি লঞ্চই রাত ৮ টা ৩০ মিনিট থেকে ৯ টার মধ্যে ঘাট ত্যাগ করে। তাই লঞ্চ ধরতে হলে সাধারণত ৮ টার মধ্যে ঘাটে থাকা উচিত।
২. প্রতিটি লঞ্চই রাতে যাত্রা শুরু করে এবং পরেরদিন ভোর ৫ টা থেকে ৭ টার মধ্যে অন্য ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়। তাই পুরো একটি রাত লঞ্চে কাটাতে হবে।
৩. প্রতিটি লঞ্চে রাতে ঘুমানোর সুব্যবস্থা রয়েছে। তবে ডেকে যেতে চাইলে বিছানাপত্র বা একটি পাতলা চাদর নিজেদের ক্যারি করতে হবে।
৪. প্রতিটি লঞ্চেই সাধারণ কেবিন থেকে শুরু করে লাক্সারি কেবিনের সুব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘুমানোর জন্য বিছানা, বালিশ, কম্বল, ও প্রয়োজনীয় আসবাব কেবিনে সজ্জিত থাকবে। আপনাকে আলাদা করে কিছু ক্যারি করতে হবে না।
৫. রাতে খাবারের জন্য লঞ্চের মধ্যেই হোটেল রয়েছে। সেখানে ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ভাজি থেকে শুরু করে সবকিছুই পাওয়া যাবে। সকালের খাবারটাও চাইলে লঞ্চ থেকে সেরে নিয়ে লঞ্চ ত্যাগ করতে পারবেন। তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিশেষ কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
৬. ডেকে একটি ও কেবিন সেক্টরে একটি ভ্যারাইটজ দোকান রয়েছে। যেখানে চা, কফি, সব ধরনের শুকনো খাবার, টিস্যু, কোমল পানীয় ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাবেন। এই দোকানগুলো সারা রাতই খোলা থাকবে।
৮. কেবিন ও ডেক প্রতিটি সেক্টরেই পর্যাপ্ত টয়লেট ও হাতমুখ ধোয়ার জন্য বেসিন রয়েছে। ভিআইপি কেবিন গুলোতে এটাস্ট টয়লেট এর ব্যবস্থা রয়েছে।
৯. সদ্য চালু হওয়া বেশিরভাগ লঞ্চে খাওয়ার পানির সুব্যবস্থা রয়েছে। লঞ্চের বেশ কয়েকটি জায়গায় ইলেকট্রনিক ওয়াটার ফিল্টার সেট করা আছে। যেখান থেকে শতভাগ পিওর খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারবেন।
১০. অনেকেই যাতায়াতের সময় পচনশীল দ্রব্য ক্যারি করে থাকে। যেমন কাঁচা মাছ, মাংস ইত্যাদি। ৮ থেকে ১০ ঘন্টার জার্নিতে এগুলো যাতে নষ্ট হয়ে না যায় এজন্য রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট চার্জ প্রদান করলে লঞ্চের রেফ্রিজারেটরে আপনার দ্রব্যটি রাখতে পারবেন।
এই ছিল ঢাকা টু বরিশাল রুটে চলাচলকারী লঞ্চ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সড়কপথ, রেলপথ কিংবা আকাশপথের থেকে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে অবশ্যই একবার নদীপথে ভ্রমণ করে দেখা উচিত। বিশেষ করে ঢাকা টু বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো তুলনামূলক একটু বেশিই লাক্সারিয়াস। যারা ভ্রমণ পিপাসু তাদের জন্য লঞ্চে ভ্রমন একটি বিশেষ অবিজ্ঞতা বলে বিবেচিত হবে। আশাকরি ঢাকা টু বরিশাল লঞ্চ ভ্রমনের যাবতীয় তথ্য ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন। ধন্যবাদ।