গন্তব্য যদি হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম তাহলে ট্রেন ভ্রমনই হয় সব থেকে গ্রহনযোগ্য যাতায়াত মাধ্যম। যেহেতু ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এর দূরত্ব অনেক বেশি তাই অল্প সময়ে, কম খরচে একটু স্বস্তিতে জার্নি করার জন্য ট্রেনই উপযুক্ত মাধ্যম। তবে সমস্যা হয় সঠিক তথ্য জানা না থাকলে। আজকের আয়োজনে জানতে পারবেন ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত কয়টি ট্রেন যাতায়াত করে, তাদের সঠিক সময়সূচি, বন্ধের দিন এবং টিকেট কাটার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর ট্রেন ও মেইল ট্রেন মিলিয়ে মোট ৮ টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ট্রেন চট্রগ্রামের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। সঠিক সময়সূচি জানা থাকলে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যে কোনো সময়ের ট্রেনের টিকেট বুকিং করে রাখতে পারবেন।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো কি কি।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেন:
- সুবর্ণা এক্সপ্রেস (৭০২)
- তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২)
- মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২)
- মহানগর প্রভাতী (৭০৪)
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৮)
মেইল ট্রেন
- চট্টগ্রাম মেইল
- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
- চট্টলা এক্সপ্রেস
বাংলাদেশ রেলের সকল ট্রেনের সময়সূচী, স্টেশন ও বিরতির তালিকার PDF: বাংলাদেশ রেল সময়সূচী
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচি, বন্ধের দিন এবং বিরতিস্থল
১. সুবর্ণা এক্সপ্রেস
সুবর্ণা এক্সপ্রেস ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটের নিয়মিত চলাচলকারী বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন। যাত্রাপতে এটি কোনো স্টপেজেই থামে না।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি বিকাল ৪:৩০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭:০০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে এবং দুপুর ১২:০০ মিনিটে এসে পৌঁছায়।
প্রতি সোমবার সুবর্ণা এক্সপ্রেস এর সাপ্তাহিক বন্ধ।

২. তূর্ণা এক্সপ্রেস
রাতে ভ্রমনের জন্য ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটের সবথেকে বিলাসবহুল ট্রেন তূর্ণা এক্সপ্রেস।
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি প্রতিদিন রাত ১১:১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে এবং সকাল ৬:২০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকেও রাত ১১:০০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সকাল ৫:০০ মিনিটে পৌছায়।
এই ট্রেনটির কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
বিরতি স্থল : ফেনী জংশন, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব বাজার জংশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন।
৩. মহানগর এক্সপ্রেস
মহানগর এক্সপ্রেস নিয়মিত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাত ৯:২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে এবং ভোর ৪:৫০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে দুপুর ১২:০০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে এবং সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিটে এসে পৌঁছায়।
প্রতি রবিবার মহানগর এক্সপ্রেস এর সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
বিরতি স্থল : ফেনী জংশন, লাঙ্গলকোট, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা, কসবা, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব বাজার জংশন, নরসিংদী এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন।
- আরো দেখুনঃ চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়
৪. মহানগর প্রভাতী : ঢাকা টু চট্টগ্রাম
মহানগর প্রভাতী প্রতিদিন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৭:৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় এবং দুপুর ২:৫০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় মহানগর গোধূলী নামে বিকাল ২ টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে রাত ৯:১৫ মিনিটে এসে পৌঁছায়।
মহানগর প্রভাতীর কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
বিরতিস্থল : ফেনী জংশন, গুণবতী, লাকসাম জংশন, ভৈরব বাজার জংশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন।
৫. সোনার বাংলা এক্সপ্রেস
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটের আরও একটি বিরতিহীন ট্রেন।
এই ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭:০০ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্যেশ্যে রওয়ানা করে এবং দুপুর ১২:০০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ০৪:৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা করে রাত ১০:১০ মিনিটে এসে পৌঁছায়।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস এর কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
৬. চট্টগ্রাম মেইল
ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত চলাচলকারী মেইল ট্রেন হলো চট্রগ্রাম মেইল যার কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
চট্রগ্রাম মেইল ট্রেনটি ঢাকা থেকে প্রতিদিন রাত ১০:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে এবং সকাল ৭:২৫ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার রাত ১০:৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা করে সকাল ৭:২০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছায়।
৭. কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন
সকাল ৮:৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় এবং ৬:৩০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে সকাল ১০:০০ মিনিটে রওয়ানা করে রাত ১০:৪৫ মিনিটে পৌছায়।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এর কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
৮. চট্টলা এক্সপ্রেস : ঢাকা টু চিটাগাং ট্রেনের সময়সূচী
চট্টলা এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি নিয়মিত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দুপুর ১:০০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে রাত ৮:৩০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছায়।
আবার চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৮:৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা করে বিকাল ৩:৫০ মিনিটে এসে পৌঁছায়।
চট্টলা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বন্ধ থাকে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের শ্রেণি ও সিট অনুযায়ী টিকেট মূল্য :
১. দ্বিতীয় শ্রেণি সাধারণ – ৯০ টাকা
২. ২য় শ্রেণি মেইল – ১১৫ টাকা
৩. কমিউটার – ১৪৫ টাকা
৪. সুলভ – ১৭৫ টাকা
৫. শোভন – ২৮৫ টাকা
৬. শোভন চেয়ার – ৩৪৫ টাকা
৭. প্রথম শ্রেনির চেয়ার – ৪৬০ টাকা
৮. স্নিগ্ধা – ৬৫৬ টাকা
৯. প্রথম শ্রেনির কেবিন – ৬৮৫ টাকা
১০. এসি আসন – ৭৮৮ টাকা
১১. এসি কেবিন – ১১৭৯ টাকা
টিকেট সংগ্রহের নিয়ম:
ট্রেনে যাতায়াতকারীদের জন্য সুখবর হলো এখন বাড়িতে বসেই প্রয়োজনীয় টিকেট সংগ্রহ করা যাবে অনলাইনে। তাছাড়া লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করার জন্যও মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে আগে রেজিস্ট্রার করতে হবে।
যে কেউ ট্রেনে যাতায়াত করতে চাইলে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র সনদ অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ। বিদেশি টুরিস্টগন তাদের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। ছোটদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তারা জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ব্যবহার করে রেজিস্টার করতে পারবে। অথবা বাবা মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র দ্বারা রেজিস্টারকৃত আইডিতে লগইন করে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবে।
বর্তমানে ট্রেনের টিকেট কাটার ক্ষেত্রে ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী যাত্রীদের অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। অনলাইনে সরাসরি টিকেট কাটতে প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। ওয়েবসাইট: eticket.railway.gov.bd। ওয়েবসাইটে ঢুকে রেজিস্টার অপশনে গিয়ে মোবাইল নম্বর, এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
আগে থেকেই নিবন্ধন করা থাকলে শুধু লগ ইন অপশনে গিয়ে ক্লিক করলেই হবে। তারপর নিজের পছন্দমতো সময়, কোন শ্রেনিতে যেতে ইচ্ছুক, কোনো ট্রেনে যাবেন এই সবকিছু সিলেক্ট করতে হবে। তারপরই সিট বাছাই করা যাবে। খালি থাকা যে কোনো পছন্দের সিট সিলেক্ট করে অনলাইন পেমেন্ট করলেই টিকেট কাটা হয়ে যাবে। ই-মেইল এর মাধ্যমে টিকেট কনফার্ম করা হবে। একই প্রসেসে আরও সহজ ভাবে কাজটি করতে চাইলে rail sheba app ডাউনলোড করে নিলেই হবে।
কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে চাইলেও আগে রেজিস্ট্রার করতে হবে। এক্ষেত্রে মুঠোফোন এর এসএমএস সিস্টেম ব্যবহার করেই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। মোবাইল এর এসএমএস অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে BR<space<NID নম্বর<space<জন্ম তারিখ (সাল/মাস/দিন)। টাইপ করা লেখাটি পাঠিয়ে দিতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে। ফিরতি এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে রেজিস্ট্রেশন সফল হয়েছে কিনা। রেজিস্ট্রেশন সফল হলে কাউন্টারে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি দেখিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
ট্রেনে ভ্রমনের সময়ও সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট এর ফটোকপি রাখতে হবে। যদি অনলাইন ইনফরমেশন ও ছবির সাথে ফটোকপির মিল না পাওয়া যায় তাহলে বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমনের দায়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
টিকেট কাটতে কোনো ধরনের সমস্যা হলে বা টাকা পেমেন্ট করার পরেও টিকেট কনফার্ম না হলে যোগাযোগ করতে পারেন বিকাশ এর এই নম্বরে: ১৬২৪৭।
অথবা ই-মেইল এর মাধ্যমেও সহায়তা নিতে পারেন। ই-মেইল এড্রেস: [email protected]
( ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম এখন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হচ্ছে তাই সর্বশেষ কোন নিয়মে কতদিন আগে টিকেট বুক করা যায় তা জেনে নিবেন)