বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরী।সব অঞ্চলের লোকজনের মধ্যই একটা আলাদা আকর্ষণ কাজ করে রাজধানীর প্রতি।ঢাকায় বেড়াতে আসলে কম বেশি সবাই ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এবং ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান সমূহ ঘুরে দেখতে চায়।
কেননা ঢাকার প্রত্যেকটি দর্শনীয় স্থানই বাংলাদেশ সহ বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজকের এই আয়োজনে থাকছে ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত । সেই সাথে জানতে পারবেন পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘুরে দেখতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে ঢাকার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম।চলুন ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান ও বিখ্যাত পার্কগুলো কি কি তা জেনে নেই।
ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থান
- চিড়িয়াখানা
- শিশু পার্ক
- বিজ্ঞান যাদুঘর
- বলধা গার্ডেন
- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর
- বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নভোথিয়েটার
- শিশু মেলা
- রমনা পার্ক
- দিয়া বাড়ি
ঢাকা মহানগরীর পুরোনো অঞ্চলটুকু পুরাহ ঢাকা হিসেবে বহুল পরিচিত। পুরান ঢাকা বলে আলাদাভাবে পরিচিত হলেও এই অঞ্চলটি কিন্তু রাজধানীরই অন্তর্ভুক্ত।ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান সমূহ এই পুরান ঢাকাতেই অবস্থিত।
পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান
১. লালবাগ কেল্লা
২. তারা মসজিদ
৩. হোসেনি দালান
৪. আহসান মঞ্জিল
৫. শাঁখারিবাজার
৬. বড় কাটরা
৭. ছোট কাটরা
৮. বাহাদুর শাহ পার্ক
৯. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
১০. কার্জন হল
১১. শায়েস্তা খাঁর মসজিদ
চলুন ঢাকার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে আসি।আরও জানতে পারবেন ঢাকার দর্শনীয় স্থান এর খোলা বন্ধের সময়সূচি।

১. বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বড় চিড়িয়াখানা ” বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা “।দেশি বিদেশি অসংখ্য পশু পাখির সাথে পরিচিত হতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে জাতীয় চিড়িয়াখানায়।এই চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির দুই হাজার একশত পঞ্চাশটি প্রাণী রয়েছে।
ঢাকায় বেড়াতে এলে পর্যটকদের সর্ব প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ।
ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পিকনিক স্পষ্ট হিসেবে চিড়িয়াখানাকে বাছাই করে নেয় স্বাচ্ছন্দে।কেননা এখানে আছে সুবিশাল এক পিকনিক স্পষ্ট।
চিড়িয়াখানার এরিয়া এতো বড় যে একদিনে পুরোটা ঘুরে দেখা খুবই কষ্টকর। তাই চিড়িয়াখানা আসলে অবশ্যই সকাল সকাল চলে আসতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে রবিবার একদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে।তবে কোনো রবিবার যদি সরকারি ছুটির দিন পড়ে তাহলে ঐ দিন চিড়িয়াখানা খোলা থাকে।যে কোনো সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় হয় এই চিড়িয়াখানায়।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।চিড়িয়াখানার ভেতরে আছে ” প্রাণী যাদুঘর ও ফিসিং একুরিয়াম “। এই যাদুঘরের প্রবেশ মূল ১০ টাকা।দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।
পিকনিকের জন্য বুকিং করলে লোকসংখ্যার ভিত্তিতে চার্জ নির্ধারণ করা হয়। তবে এর মূল্য সাধারণত ছয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যেই হয়ে থাকে।
ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে মিরপুরের লোকাল বাসে চিড়িয়াখানার একদম প্রবেশ গেট পর্যন্ত আসা যায়।তবে ডাইরেক্ট বাস না পাওয়া গেলে প্রথমে মিরপুর ১ এ নামতে হবে।তারপর সনি সিনেমা হলের কাছ থেকে রিক্সা করে সরাসরি চলে আসবেন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার সামনে।
২. শিশু পার্ক
বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিশুদের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র “ঢাকা শিশু পার্ক “। এই পার্কটি শহীদ জিয়া পার্ক হিসেবেও পরিচিত। প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার দর্শনার্থী এই পার্কে ব্যস্তময় জীবনকে পাশ কাটিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে একটু সময় কাটাতে আসে।শিশু পার্ক নাম হলেও বয়স্কদেরও বিনোদন এর যায়গা এই শিশু পার্ক। শিশু পার্কে সব মিলিয়ে ১২ টি রাইড আছে।রাইডগুলো হলোঃ উড়ন্ত বিমান,উড়ন্ত নভোযান,রোমাঞ্চ চক্র,বিষ্ময় চক্র,এফ-৬ জঙ্গি বিমান,ফুলদানি আমেজ,ঝুলন্ত চেয়ার,লম্ফ ঝম্প,চাকা পায়ে চলা,ছোটমনিদের রেলগাড়ি,এসো গাড়ি চড়ি।
সরকারি মালিকানাধীন হওয়ায় এর প্রবেশ মূল্য ও রাইডের টিকিট মূল্য একদমই নামমাত্র। শিশু পার্ক এর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা এবং প্রতিটি রাইড এর টিকেট মূল্য ১০ টাকা।
ঢাকা শিশু পার্ক ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। বাংলাদেশের যে কোনো প্রন্ত থেকে প্রথমে ঢাকা তারপর শাহবাগ মোড়ে চলে আসতে হবে।শাহবাগ মোড় থেকে পূর্বদিকে ২ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন শিশু পার্ক এর প্রবেশ গেট।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া বাকি পাঁচ দিন দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত শিশু পার্ক খোলা থাকে।
বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র অসহায় পথশিশুদের জন্য খোলা রাখা হয় পার্কটি।
রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
৩. জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর, বাংলাদেশ।
ছুটির দিনটাতে বিজ্ঞানের এর বিষ্ময়কর জগৎ থেকে ঘুরে আসতে চাইলে চলে আসুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরে।বিজ্ঞানের সব বিষ্ময়কর বিষয় সম্পর্কে চাক্ষুষ প্রমান নিজ চোখে দেখতে পাবেন এখানে।
বিজ্ঞান যাদুঘরের প্রবেশ গেটেই আছে সুউচ্চ টি-রেক্স ডাইনোসর এর ভাষ্কর্য। একটু ভেতরে গেলেই দেখতে পাবেন সৌর বাগান, সূর্যঘরি।আছে বেশ কয়েকটি সুসজ্জিত গ্যালারি।যেমনঃ পদার্থ বিজ্ঞান গ্যালারি,জীববিজ্ঞান গ্যালারি,পরমাণু কর্নার, শিল্প প্রযুক্তি গ্যালারি,মহাকাশ বিজ্ঞান গ্যালারি।আরও আছে বিখ্যাত সব বিজ্ঞানিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট, মহাকাশের সন্ধানে -২ নামক বিষ্ময়কর বাস।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। এই যাদুঘরের প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০ টাকা।
গুলিস্তান থেকে আগারগাঁও গামী যে কোনো বাসে প্রথমে আগারগাঁও মোড় বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা করে খুব সহজেই চলে আসতে পারবেন বিজ্ঞান যাদুঘরে।
রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত যাদুঘর পরিদর্শন করার অনুমতি পাবেন।শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
৪. বলধা গার্ডেন
বৃক্ষপ্রেমীদের সবথেকে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান ঢাকার বলধা গার্ডেন।এটা মূলত একটি সুসজ্জিত বাগান যেখানে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ধরনের দুর্লভ সব গাছের সমারোহ। বলধা গার্ডেনে প্রায় ৮০০ প্রজাতির ১৮ হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে।প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী বলধা গার্ডেনে ভিড় জমায় বিচিত্র সব গাছের সংগ্রহ দেখতে।
বলধা গার্ডেন মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হলো সাইকি আরেকটি সিবলী।
সাইকি অংশের প্রধান আকর্ষণ হলো লাল,সাদা ও হলুদ শাপলায় ঘেরা শাপলা হাউজ।আরও আছে ক্যাকটাস,অর্কিড,এনথুরিয়াম,ভূজ্জ পত্র, আমাজন লিলি ইত্যাদি।
সিবলী অংশের মধ্যে উলেখযোগ্য হলো শংখ নদ পুকুর,ক্যামেলিয়া,আশোক,আফ্রিকান টিউলিপ ইত্যাদি।
আরও আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ।
বলধা গার্ডেন ঢাকার ওয়ারিতে অবস্থিত।যাত্রাবাড়ী থেকে যে কোনো লেকাল বাসে উঠে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে নামতে হবে। সেখান থেকে হাটখোলা রোড ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই পৌঁছে যাবেন বলধা গার্ডেনে।
তাছাড়া গুলিস্তান থেকে রিকশা নিয়েও সরাসরি চলে যেতে পারবেন বলধা গার্ডেনের সামনে।রিকশা ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
বলধা গার্ডেনের প্রবেশমূল্য মাত্র ১০ টাকা।
সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করার সুযোগ পাবেন।
৬. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর “। এটি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে খুবই অন্যতম। এই জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত বস্তু, অস্ত্র, দলিল সহ প্রায় ১৭ হাজারেরও বেশি নিদর্শন সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের রয়েছে ছয়টি গ্যালারি,যেখানে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন প্রদর্শিত আছে।এই গ্যালারি গুলো ভাবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অবস্থিত।
এছাড়া প্রথম তলায় আছে ইতিহাস বিখ্যাত মনিষীদের ভাষ্কর্য, ক্যাণ্টিন, স্মারক বিক্রয় কেন্দ্র ও টিকেট কাউন্টার। ২য় তলায় গবেষণা কেন্দ্র ও পাঠাগার।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রবেশমূল্য মাত্র ২০ টাকা
বাংলাদেশের বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে আগারগাঁও এর বাসে করে একদম মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের সামনে এসে নামতে পারবেন। তাছাড়া আগারগাঁও এর আশেপাশের এলাকা থেকে সিএনজি বা রিকশায় করে আসা যায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে।
সপ্তাহে একদিন (রবিবার) মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দর্শনীদের ভ্রমনের অনুমতি আছে।
প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
মোবাইল__ ০২-৯১৪২৭৮১
ই-মেইল__ [email protected]
ওয়েবসাইট___ liberationwarmuseumbd.org
৬. বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর
আপনি যদি একনজরে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে আসতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে যাওয়া উচিত । বাংলাদেশের ইতিহাস, ইতিহ্য,সংস্কৃতি, সভ্যতা সবকিছুরই নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে জাতীয় জাদুঘরে।নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে রাজকীয় ভাবে সুসজ্জিত হয়ে আছে আমাদের জাতীয় জাদুঘর।
শুধু এদেশের লোকজনই নয় প্রতিনিয়ত অসংখ্য বিদেশি ট্যুরিস্ট পরিদর্শন করতে আসে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত জাতীয় এই জাদুঘরটি।
প্রতিটি ফ্লোরে দেয়া আছে গ্যালারি নির্দেশক। এই নির্দেশনা দেখে আপনি সহযেই বুঝে নিতে পারবেন জাদুঘরের কোথায় কি আছে।
শাহবাগ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত।ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে শাহবাগের লোকাল বাসে উঠে আপনি সরাসরি চলে আসতে পারবেন জাদুঘরের সামনে।
জাতীয় জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।তবে বিদেশি ট্যুরিস্টদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় জাদুঘরে বৃহস্পতিবার এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত জাদুঘর প্রদর্শন করতে পারবেন।শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে জাতীয় জাদুঘর।
মনে রাখবেন
- জাদুঘরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- মোবাইল অবশ্যই সাইলেন্ট মুডে রাখতে হবে।
- উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না।
- গ্যালারির কোনো প্রদর্শনীতে হাত দেয়া যাবে না।
- বিদেশি ট্যুরিস্টদের সাথে অবশ্যই মার্জিত আচরণ করতে হবে।
৭. বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার
আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় দেশের একমাত্র শিক্ষামূলক বিনোদনকেন্দ্র “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার “। এখানে আপনি দেখতে পাবেন কৃত্রিম মহাকাশ,বিভিন্ন প্রদর্শনী ও ঘুরে আসতে পারবেন পুরো মহাকাশ এক নিমিষেই। অবশ্যই এটা বাস্তব মহাকাশ নয়, কিন্তু আপনি অনুভব করতে পারবেন যেন আপনি মহাকাশের প্রতিটি বিষয় সামনাসামনি দাড়িয়ে দেখছেন।থিয়েটারে একটি ইন্টারেস্টিং রাইড ও রয়েছে যার নাম ” সিমুলেটর”।
নভোথিয়েটারের রয়েছে পাঁচটি লেভেল। তার মধ্যে তিনটি লেভেলই ভূগর্ভস্থ। ভূগর্ভস্থ এই ফ্লোর গুলোতে বিখ্যাত বিজ্ঞানি ও গবেষকদের ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত সুসজ্জিত করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনষ্ক করে তুলতে বিনোদনের মাধ্যমে বাস্তব শিক্ষার প্রয়াস নিয়ে ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এর।
থিয়েটারের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা।রাইড সিমুলেটর এ উঠতে চাইলে প্রতি পাঁচ মিনিটের জন্য ২০ টাকা প্রদান করতে হবে।
রাজধানীর তেজগাঁও বিজয় স্মরনীর মোড়ে ” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার ” অবস্থিত।
ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে বাস বা সিএনজি করে তেজগাঁও পৌছুতে পারবেন। তাছাড়া ফার্মগেট বা জিয়া উদ্যান থেকে পায়ে হেটেই চলে আসা যায় নভোথিয়েটারে।
প্রতি বুধবার সাপ্তাহিক ছুটির থাকে থিয়েটার।
শুক্রবার বাদে বাকি ৫ দিন সকাল ১১ টায়,দুপুর ১ টায়, ৩ টায়,বিকেল ৫ টায় ও সন্ধ্যা ৭ টায় প্রদর্শনীর আয়োজন থাকে।
শুক্রবার সকাল ১ টা ৩০ মিনিট, দুপুর ৩ টা বিকাল ৫ টা ও সন্ধ্যা ৭ টায় নভোথিয়েটার প্রদর্শন করতে পারবেন।
প্রয়োজনে যোগাযোগ——-
মোবাইলঃ ৯১৩৯৫৭৭
অথবা,৯১৩৮৮৭৮
ওয়েবসাইটঃ www.novotheatre.gov.bd
৮. শিশু মেলা
ঢাকার উল্লেখযোগ্য পার্ক সমূহের মধ্যে শিশু মেলা একটি।বাচ্চাদের চমৎকার একটি দিন উপহার দিতে চাইলে অবশ্যই নিয়ে যেতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় পার্ক “শিশু মেলায়”।
এখানে ছেট বড় সব মিলিয়ে ২০ রাইড রয়েছে এবং প্রতিটি রাইডই বাচ্চাদের জন্য খুবই উপভোগ্য। উল্লেখযোগ্য কিছু রাইড হলোঃ চুকচুক ট্রেন,ড্রাগন রোলার,মিনি ট্রেন,কিডিরাইডস গেম,নাগরদোলা, ব্লাক হোল,হেলিকপ্টার রাইডস,বাম্পার কার প্রভৃতি।
শিশু মেলার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ” DNCC Wonderland “।
খাওয়াদাওয়ার জন্য পার্কটির ভেতরে আছে সুব্যবস্থা। এখানে ১২ টিরও বেশি খাবারের দোকান রয়েছে তবে এসব দোকানে বাইরের থেকে তুলনামূলক দম অনেকটাই বেশি।অবশ্যই দাম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে খাবার কেনার সিদ্ধান্ত নিবেন।
শিশু মেলার প্রবেশ মূল্য বর্তমানে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে কোনো রাইডে উঠতে চাইলে টিকেট মূল্য পড়বে ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা।
সপ্তাহে ৭ দিনই শিশু মেলা খোলা থাকে।যে কোনো দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসতে পারেন অসম্ভব সুন্দর এই পার্কটিতে।
শিশু মেলা ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত।( ঢাকা শিশু হাসপাতালের ঠিক পশ্চিম পাশে)।
ঢাকার সব জায়গা থেকেই সরাসরি শ্যামলীর গাড়ি পাবেন।বাসে উঠে সরাসরি চলে আসতে পারবেন শিশু মেলার প্রবেশ গেইটে।
৯. রমনাপার্ক
ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান সমূহের মধ্যে রমনাপার্ক অন্যতম।সেই মোঘল আমল থেকে এখনও পর্যন্ত নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে মিশে আছে রমনাপার্ক নামটি।
প্রতিবছর নববর্ষের রমনার বটমূলে আয়োজিত হয় বর্নাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্তমানে রমনার বটমূলের এই আয়োজনই রমনাপার্ককে এতো বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
রমনা পার্ক মূলত ছায়ায় ঘেরা, নিরিবিলি পরিবেশের সুবিশাল একটি মাঠ।
প্রতিদিনই কম বেশি অনেক লোকজনের আনাগোনা হয় এই উদ্যানে। কেউ আসে হাঁটতে, কেউ আসে একটু সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে একটু প্রশান্তির নিশ্বাস নিতে, কেউবা আসে ঐতিহাসিক স্থানটির সাথে পরিচিত হতে।তবে রমনাপার্কে আসলে যে কারোরই মন ভালো হতে বাধ্য হবে।
সুবিশাল এই পার্কটি ৬৮.৫০ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।এই পার্কে আছে ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ যা দেখে আপনি অবাক হবেনই।আরও আছে সুবিশাল একটি লেক যার দৈর্ঘ্য ৮১২ মিটার।সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর একটি পরিবেশ বিদ্যমান এই রমনা পার্কে।
রমনা পার্ক বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরীর বিখ্যাত রমনা এলাকায় অবস্থিত।রমনা পার্ক আসতে চাইলে ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে শাহবাগের গাড়িতে উঠে প্রথমে চলে আসবেন শাহবাগ।শাহবাগ নেমে শিশু পার্ক অতিক্রম করে কিছুটা সমনে এগিয়ে যেতে অবে।কিছুটা পথ অতিক্রম করলেই চোখে পড়বে ইতিহাস খ্যাত রমনা পার্ক।
ঢাকায় বেড়াতে আসলে অবশ্যই একবার রমনা পার্কের সুবিশাল উদ্যান থেকে ঘুরে যাওয়া উচিত।
১০. দিয়া বাড়ি
প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপে সজ্জিত ঢাকার খুবই জনপ্রিয় শুটিং স্পট দিয়াবাড়ি।নদী,গাছপালা, মাঠ সবকিছু মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর মন ভোলানো জায়গা এই দিয়াবাড়ি।দিয়াবাড়ি বটতলা এখণ ঢাকার ভ্রমনপ্রিয় ইয়াং জেনারেশন এর পছন্দের স্পট।সুবিশাল বট গাছের ছায়াময় পরিবেশ নিশ্চিন্তে পরম প্রশান্তিতে বসে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা।
শরৎকালে ঢাকাবাসীর কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগের একমাত্র পছন্দের জায়গা দিয়াবাড়ি। শরতের সময় দিয়া বাড়ির পুরো রূপটাই যেন বদলে যায়।দলে দলে লোকজন ভির জমায় সাদার সমারোহে ভরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
তুরাগ নদীর মৃত প্রায় শাখা নদীকে সংস্কার করে এখানে তৈরি করা হয়েছে চমৎকার একটি লেক।লেকের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু।সব মিলিয়ে কাল্পনিক এক পরিবেশ।
বর্তমানে ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ঢাকার মধ্যে সবথেকে পছন্দের জায়গা এই দিয়াবাড়ি।
প্রতিদিনই একয়েকটি শুটিং গ্রুপ তাদের দলবল নিয়ে চলে আসে দিয়াবাড়িতে।
শুটিং এর বড় বড় প্রজেক্ট থেকে শুরু করে ছোট ছোট কনটেন্ট ক্রিয়েটর গ্রুপ সবাই দিয়াবাড়িকে শুটিং স্পট হিসেবে দেয় আলাদা প্রায়োরিটি।
ঘুরতে ঘুরতে হয়তো আপনারও দেখা হয়ে যেতে পারে পছন্দের কোনো তারকার সাথে।
ঢাকার উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি অবস্থিত।দিয়া বাড়ি যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে উত্তরা অথবা গাজীপুর গামী বাসে উঠে পড়বেন।উত্তরা হাউজ বিল্ডিং নামতে হবে।উত্তরা হাউজবিল্ডিং নর্থ টাওয়ার বা মাসকট প্লাজার সামনে থেকে দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য রিকশা অথবা লেগুনা পাবেন।এখান থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যেতে পারবেন দিয়াবাড়ি বটতলায়।
কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক ঢাকা নগরবাসীকে একটু মানসিক প্রশান্তি দিতে ঢাকার প্রত্যেক অঞ্চলেই কম বেশি গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের।
আসুন আমরা সবাই মিলে এসকল জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করি এবং দেশের সম্পদ রক্ষায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করি।