প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নৈসর্গিকতা ও অধুনিকতার এক অনবদ্য সমন্বয়ে অতিথিদের সাদর অভ্যর্থনা জানাতে বিদ্যমান গাজীপুরের ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্ট। গাজীপুর জেলার মাওনার চকপাড়া এলাকায় ১২০ বিঘা জমির ওপরে চমৎকার এই রিসোর্ট-টি তৈরি করা হয়েছে।
পরিবার পরিজন কিংবা সদ্য বিবাহিত কাপল বা বন্ধু বান্ধব মিলে অবকাশ যাপনের জন্য অনেকেই ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্ট-কে পছন্দ করে। পছন্দ করার পেছতে কারণ আছে বৈকি। রিসোর্টের আনাচে কানাচে সব জায়গায়ই সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে বসেই আপনি বিশ্বের আধুনিক দেশগুলো ভ্রমনের মতো অনুভূতি পাবেন এখানে। তার সাথে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে আছে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশের প্রাকৃতিক ছোঁয়া।
বিয়ে কিংবা যে কোনো পার্টি অথবা কর্পোরেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলেও এ টু জেড সব সার্ভিস পাবেন ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্টে। তাই অবকাশ ভ্রমনের প্লান করুন কিংবা কোনো অনুষ্ঠান, আগে এই রিসোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট এর সুযোগ সুবিধা, খরচ ও যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত।
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট এর সুযোগ সুবিধা
আপনার অবকাশ যাপনের জন্য সব ধরনের সার্ভিস-ই ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে রয়েছে। রিসোর্টে ঢোকার সাথে সাথে চোখ পড়বে এর নান্দনিক সব ডেকোরেশনে। আউটডোরের আনাচে কানাচে রয়েছে বিভিন্ন পশুপাখির ভাষ্কর্য। রিসোর্টের নিজস্ব ওয়াচটাওয়ার রয়েছে যেখান থেকে পুরো রিসোর্ট এর ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। আছে পরিষ্কার স্বচ্ছ পানির সুইমিং পুল, মিনি পার্ক, কৃত্রিম লেক, শান বাধানো ঘাট, নারকেল গাছের লম্বা সারি, বাগান, খেলার মাঠ, গেস্ট হাউজ ইত্যাদি।
গ্রাম্য পরিবেশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কফিশপ। চাইলে ফিশিং, বোটিং, কায়াকিং এর অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য আছে কিডস জোন ও ছোট বড় সবার জন্যই বিভিন্ন রাইড রয়েছে। বাগানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সুন্দর রাস্তায় সাইকেলিং করতে পারবেন।

এছাড়াও থাকার জন্য আছে বিলাসবহুল সব ভিলা, কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স হল, সামাজিক অনুষ্ঠান ও পার্টির আয়োজন করতে চাইলে আছে পার্টি প্লেস। এছাড়াও আছে আধুনিক মানের রেস্টুরেন্টে যেখানে বাংলা, চাইনিজ সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির খাবারের সুব্যবস্থা আছে।
রাত্রি যাপনের জন্য যে ভিলাগুলো রয়েচে তার প্রতিটি-ই বেশ লাক্সারিয়াস। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে – ওয়াটার ভিলা, এক্সিকিউটিভ ভিলা, কটেজ ইত্যাদি। আছে লেকের ওপর নির্মিত ওয়াটার ভিলা।
এক্সট্রা সুবিধা হিসেবে আরও থাকছে জিম ফ্যাসিলিটি, ওয়াইফাই সার্ভিস, পার্কিং সুবিধা ও বারবিকিউ পার্টির ব্যবস্থা। ওহ আরেকটা বিষয় তো বলা-ই হয়নি, রিসোর্ট এর মধ্যে একটি মুভি থিয়েটা-ও রয়েছে। মোটকথা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রিপের জন্য আপনার কী চাই- তার সব কিছুই পাবেন ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে।
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ
মূলত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্যাকেজ অফারের মাধ্যমে আপনি ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন। সারা বছরই কোনো না কোনো অফার চলমান থাকে। এসকল প্যাকেজের মূল্য সময় ও সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী ৬০০০ টাকা থেকে ৫৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বর্তমানে ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে চলমান প্যাকেজ মূল্য ও প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সার্ভিস সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো। এই অফার গুলোতে মূলত থাকার রুম বা ভিলা-র ওপরে নির্ভর করে প্যাকেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
১. সুপারিয়র টুইন-
এই প্যাকেজটি দুই জনের জন্য। এখানে একটি সুপারিয়র মানের ডবল কেবিন সহ অন্যান্য সুবিধা যুক্ত হবে। প্যাকেজ মূল্য সাধারণ দিনে ১২,৫০০ টাকা। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি যে কোনো ছুটির দিনে ১৩,৫০০ টাকা।
২. প্রিমিয়াম টুইন-
একটি প্রিমিয়াম কেবিন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। প্যাকেজ মূল্য সাধারণ দিনে ১৪,৫০০ টাকা এবং ছুটির দিনে ১৫,৫০০ টাকা।

৩. এক্সিকিউটিভ ভিলা
এই প্যাকেজে এক্সিকিউটিভ ভিলায় থাকার সুযোগ পাবেন এবং সেই সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকবে। প্যাকেজ মূল্য সাধারণ দিনে ১৬৫০০ টাকা এবং ছুটির দিনে ১৭,৫০০ টাকা।
৪. ওয়াটার ভিলা
ওয়াটার ভিলার এই প্যাকেজে লেকের ওপরে নির্মিত লাক্সারিয়াস ওয়াটার ভিলায় থাকার সুযোগ থাকবে এবং সেই সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো আছেই। রেগুলার প্যাকেজ মূল্য ১৮,৫০০ টাকা এবং ছুটির দিনে ১৯৫০০ টাকা।
উপরোক্ত প্যাকেজ গুলোর সাথে যেসকল সার্ভিস ও সুযোগ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে- সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার (বুফে), রাতের খাবার। জিম, সুইমিং পুল, টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ, প্যাডেল বোট, কিডস জোন, পার্ক, খেলার মাঠ, ফ্রী ওয়াইফাই।

এছাড়া ১৫ থেকে ৫০ জনের জন্য পিকনিক প্যাকেজেও রিসোর্ট বুকিং দিতে পারেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি চার্জ ধরা হবে ৩০০০ টাকা। এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সিঙ্গেল রুম, সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার (বুফে), সুইমিং পুল, কিডস জোন, পার্ক, প্যাডেল বোট।
বি. দ্র: প্যাকেজ মূল্য ও প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত সার্ভিস যে কোনো সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। তাই ট্রিপ প্লান করার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নেয়া ভালো।
৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের কমপ্লিমেন্টারি বিবেচনা করা হয়। ৫ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের জন্য যে কোনো প্যাকেজের হাফ চার্জ প্রযোজ্য। ১০ বছরের ওপরে সবার জন্য সম্পূর্ণ চার্জ প্রযোজ্য।
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট যোগাযোগ
ঠিকানা- চকপাড়া, মেডিকেল মোড়, মাওনা, শ্রীপুর, গাজীপুর।
মোবাইল- ০১৪০১-০২০২০২ বা, ০১৪০১-১২০১০০
হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৪০১-১২০১০১
ওয়েবসাইট- www.dreamsquareresort.comhttp://www.dreamsquareresort.com
ইমেইল- [email protected]
ফেসবুক- https://m.facebook.com/profile.php/?id=100080290942785
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট যাওয়ার উপায়
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে গাজীপুরের মাওনায় চলে যেতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোড ধরে সরাসরি মাওনা চলে যেতে পারবেন। মাওনা চৌরাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে মাওনা বাজার রোড ধরে এগিয়ে যেতে হবে।
এখান থেকে লোকাল কোনো অটো কিংবা সিএনজি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেই ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট যাওয়ার পথ নির্দেশনা দিতে পারবে।
বাসে যেতে চাইলে আপনাকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসা বাসে চেপে মাওনা পৌঁছাতে হবে। মহাখালী থেকে রাজিব, শ্যামলী, সোনার বাংলা সহ বেশ কয়েকটি বাস ময়মনসিংহের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এসকল বাসে মাওনা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।
তাছাড়া গুলিস্তান থেকে ‘প্রভাতি বনশ্রী’ নামক বাস সরাসরি মাওনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে এই বাস ধরতে পারেন।
তাছাড়া ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্যেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বলাকা, আজমেরি গ্লোরি, গাজীপুর পরিবহন ইত্যাদি বাসে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছাবেন।
সেখান থেকে তাকওয়া মিনি বাস পাবেন যা গাজীপুর চৌরাস্তা টু মাওনা রুটে চলাচল করে। অথবা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে মাওনা মেনে পড়লেও হবে৷ জনপ্রতি বাস ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা।
মাওনা চৌরাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে মাওনা বাজার রোডে চলে যাবেন।
রাস্তার মোড়ে অনেক ব্যাটারিচালিত অটো ও সিএনজি পাবেন। সেখান থেকে অটো বা সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি চলে যেতে পারবেন ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট। গাড়ি রিজার্ভ করার সময় দরদাম করে নেবেন।
শেষকথা:
সব সময় প্যাকেজ অফারে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে তুলনামূলক খরচ কম পড়বে। যাওয়ার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে খরচের ও প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে নেয়া উচিত। সংখ্যায় বেশি হলেও খরচ কিছুটা কমানো যেতে পারে।
ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে ইতোমধ্যে ঘুরে আসা গেস্ট দের রিসোর্টের সার্ভিস সম্পর্কে রিভিউ ভালো। তাই এখানে ট্যুর প্লান করলে আশাহত হবেন না বললেই চলে।
শীতের সময়ে ট্যুর প্লান করলে সবথেকে ভালো সময় কাটাতে পারবেন। কেননা এ সময় রিসোর্সের লেকের চারপাশে অনেক অতিথি পাখির দেখা মিলবে।
পাখির কলকাকলি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আধুনিক সাজসজ্জায় আপনার ছুটি কাটবে এজটি স্বপ্নের ভূবনে। আপনার জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময়, সফল অবকাশ ভ্রমণের শুভেচ্ছা রইল। ধন্যবাদ।
( ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট এর ফেসবুক পেজ )