ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কি? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু বর্তমান সময়ের এক আতঙ্কের নাম। ‘এডিস’ নামের সামান্য মশার কামড়ে হওয়া এই রোগে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। বছরের এই সময়টা অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত এই ডেঙ্গুর প্রকোপ ভালোই লক্ষ্য করা যায়। তাই সচেতন থাকতে অনেকেই এখন ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি ও খরচ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আপনার সুবিধার্থে আজকের আয়োজনে নিয়ে এসেছি ডেঙ্গু জ্বর সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য। এই প্রবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন:

  • ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
  • ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
  • ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে
  • ডেঙ্গু জ্বর টেস্ট করার পদ্ধতি
  • ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
  • ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ
  • ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা এবং খরচ

ডেঙ্গু কেনো হয় | ডেঙ্গু জ্বরের কারণ

ডেঙ্গু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার রোগ। স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। এডিস মশার কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে স্ত্রী এডিস ইজিপ্টির কামড়েই বেশিরভাগ সময় ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি হয়ে থাকে। 

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাস একটি আরএনএ ভিত্তিক ভাইরাস। ভাইরাসটির পাঁচ ধরণের সেরোটাইপ রয়েছে। যেকোনো এক ধরনের সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে শরীর সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে আজীবনের জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। 

কিন্তু সমস্যাটা হয় যখন রোগী ভিন্ন ভিন্ন সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়। তখন এই ভাইরাস জনিত জটিলতা মারাত্মক পর্যায় ধারণ করতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কি?

স্ত্রী এডিস মশা কামড়ানোর ৭ থেকে ১০ দিনের ভেতর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি ভাইরাসের সিম্পটম বা লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই জ্বরে সাধারণত যেসব উপসর্গ গুলো দেখা যায় তা হলো:

  • জ্বর: এই জ্বরকে ব্যাকবোন জ্বরও বলা হয়। কারণ এই জ্বরটা সাধারণত সংশ্লিষ্ট মাংসপেশি এবং হাড়ের জোড়ার ব্যথা থেকে আসে। এসময় জ্বর প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • রক্তপাত: ভাইরাস আক্রমণের তীব্রতার সাথে সাথে নাক ও মুখের অভ্যন্তরে রক্তপাত হতে পারে। কখনোও কখনোও শরীরের অভ্যন্তরেও রক্তপাত হয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রোগীর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এলাকা থেকে তীব্র রক্তপাত হতে পারে। রোগীর মুত্রের সাথে রক্ত যেতে পারে।
  • ফুসকুড়ি: সুক্ষ্ম রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়ার দরুণ ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সারা গায়ে র‌্যাশের মতো উঠতে পারে।
  • নিম্ন রক্তচাপ: রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে। রক্তের প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার হঠাৎ কমে যাওয়ার দরুণ এমনটা ঘটতে পারে।
  • অবাঞ্চিত তরল জমা: ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে।
  • যকৃত বা লিভার ক্ষতিগ্রস্ত: ভাইরাসের আক্রমণে যকৃত ফুলে যেতে পারে। ফলে এর সাইজ বড় হয়ে যেতে পারে।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: রক্তপাতের দরুণ মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। যার ফলে রোগী সংজ্ঞা হারাতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা হতে পারে।
  • রোগী বেশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই দুর্বলতা বেশ কিছুদিন যাবত থাকতে পারে।
  • পাকস্থলির সংক্রমণে বমি ও পাতলা পায়খানা হতে পারে।

ডেঙ্গু জর কতদিন থাকে?

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ২-১০ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ভাইরাসের তৎপরতা কম থাকলে রোগী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসের তৎপরতা যখন মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা ডেঙ্গু হেমোরিজিক ফিভারে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তখন রোগীর সুস্থ হতে ১০ দিন বা কখনো তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। 

এই রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম দিকে জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এমনটা চলে প্রায় ২ থেকে ৩ দিন। তারপর জ্বর ক্রমশ কমে আসতে থাকলেও অন্যান্য উপসর্গ যেমন রক্তপাত, মুত্রের সাথে রক্ত যাওয়া, লিভার সংক্রমণ, ফুসফুসে পানি জমা, বমি, পাতলা পায়খানা, সারা গায়ে র‌্যাশ উঠা ইত্যাদি বিষয় গুলো হয়ে থাকে। 

এসব সেরে যাওয়ার পরেও একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক প্রায় এক সপ্তাহের মতো শারীরিক দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। ছোটোদের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা কিছু কম বা বেশিও হতে পারে৷ 

ডেঙ্গু জ্বর টেস্ট করার পদ্ধতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে মোটাদাগে তিনটি উপায়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়। এগুলো হলো:

  • ক্লিনিকাল উপসর্গ বিবেচনায়: এটা সাধারণত তখন করা হয় যখন ল্যাব টেস্ট করার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না। মূলত এই পদ্ধতির নাম পজিটিভ টুর্নিকোয়েট টেস্ট। এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে পাঁচ মিনিট যাবত ব্লাড প্রেশার পরিমাপ করা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উঠা ফুসকুড়ি থেকে হেমারেজের পরিমাণ যাচাই করা। নিম্ন রক্তচাপ এবং হেমারেজের আধিক্য ডেঙ্গুর উপস্থিতি জানান দেয়। এভাবেও ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়।
  • ল্যাবরেটরি টেস্ট: সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায় ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল থেকে রক্তের প্লাটিলেট এবং শ্বেতরক্তকণিকার পরিমাণ কাউন্ট করা হয়। এই রোগে রক্তের এই দুইটি উপাদান খুব দ্রুত কমতে থাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমা লিকেজ হয়ে থাকে। ল্যাবে এই পরীক্ষাটি মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্টিং এর মাধ্যমে করা হয়। এই পদ্ধতিতে পিসিআর, ভাইরাল এন্টিজেন শনাক্তকরণ, নির্দিষ্ট এন্টিবডি দ্বারা সেল কালচারের মাধ্যমে এটা শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির নাম সেরোলজি।
  • বর্গীকরণ: এই পদ্ধতিতে সাধারণত জানা যায় ডেঙ্গু ভাইরাস রোগীর দেহে কোন পর্যায়ের আক্রমণ করেছে, তার পরিমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু রোগের পর্যায় নির্ধারণ করতে ২০০৯ সালে ডেঙ্গুকে দুইটি পর্যায় ভুক্ত করে। এগুলো হলো : জটিলতাবিহীন এবং প্রবল। জটিলতাবিহীন জ্বরে সাধারণত জ্বরের পাশাপাশি গা-ব্যথা, ফুসকুড়ি উঠা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এ ভাইরাসটির প্রবল আক্রমণে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে। কখনো কখনো নিম্ন রক্তচাপের জন্য রোগীর পালস একদমই শনাক্ত করা যায় না। প্রবল আক্রমণের এই পর্যায়টিই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নামে পরিচিত। 

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার

ডেঙ্গু হলে মৃত্যুঝু্ঁকি থাকে কথাটা যেমন সত্য তেমনি এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠার নজিরও কম নয়। বরং, মৃত্যুহারই সুস্থ হয়ে উঠার হারের থেকে কম। ডেঙ্গু হলে ভয় পাওয়ার দরকার নাই। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলে সহজেই। এজন্য যা করতে হবে:

  • জ্বর কমাতে হবে: জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খেতে হবে। তবে রোগীর যদি হার্ট, কিডনি বা লিভারের সমস্যা আগে থেকেই থেকে থাকে তবে প্যারাসিটামল গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • তরল খাবার খেতে হবে: প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন: স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর রস, ফলের রস। এছাড়া খাবার ও সহজপাচ্য খেতে হবে।
  • সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা নিতে হবে: যদি পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণের দরুণ রোগীর পাতলা পায়খানা এবং বমি থাকে তাহলে এটা সারানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষুধ নিতে হবে।
  • ব্যথানাশক নেয়া যাবে না : গা ব্যথা, মাথা ব্যথা কিংবা অস্থিজোড়ের ব্যথার জন্য ব্যাথানাশক খাওয়া যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ব্যথা যত বেশিই হোক প্যারাসিটামলই খেতে হবে। ব্যথানাশক ঔষুধ গুলো ভাইরাসের জটিলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণও হতে পারে। 
  • প্লাটিলেট নিয়ে নেই কোনো দুশ্চিন্তা: এসময় প্লাটিলেট কমে যাওয়া রোগী এবং তার স্বজনদের জন্য একটা বাড়তি টেনশনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এটা নিয়ে ভাবনার তেমন কারণ নেই। কেননা, বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্লাটিলেট কমে গেলে প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এজন্য আলাদা পথ্যের চিন্তাও নেই। শরীরের আভ্যন্তরীণ অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে প্লাটিলেট নিজেই বাড়তে থাকে।
  • হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে: নিম্ন রক্তচাপ, নাক ও মাড়ির রক্তপাতের জন্য রোগী কিছু খেতে না পারলে তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হবে।
  • বিশ্রাম: সর্বোপরি, সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও খরচ

ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণত যেমন কোনো স্পেসিফিক চিকিৎসা নেই, তেমনি নেই কোনো বিশেষ ঔষুধও। এই রোগের সব ধরনের উপসর্গ ও সব রোগীর মধ্যে দেখা যায় না। যার যে ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, তাকে সে ধরনের চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়। 

তবে ডেঙ্গুর আক্রমণ প্রবল হলে তখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কখনো প্লাটিলেটের অনেক বেশি অবনমন ঘটলে, প্লাটিলেট নিতে হয়। কখনোবা আইসিইউর প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচটা একটু বেড়ে যেতে পারে।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে বেড কিংবা কেবিন ভাড়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে আইসিইউ প্রয়োজন হলে সবই সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কারণ, সরকারী হাসপাতাল গুলোতে নাৃ মাত্র কেবিন অথবা বেড ভাড়া লাগলেও আইসিইউ চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি। যেটা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে ৯০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে প্রতিদিনের জন্য।

ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্ধারিত প্রতিষেধক নেই। ‘ডেঙ্গভ্যাক্স’ নামে একটি ভ্যাক্সিন যদিও আছে তবে সেটা শুধুমাত্র তাদেরকে নিতে বলা হয় যাদের অন্তত একবার ডেঙ্গু হয়েছিলো এবং ট্রপিক বা সাবট্রপিক অঞ্চল যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি এমন স্থানে বসবাস করে। কারণ, দুইবার ডেঙ্গু আক্রমণ হলে প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তবে এই ভ্যাক্সিনটি তেমন সহজলভ্য নয়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়

একটা প্রবাদ খুব প্রচলিত বাংলায়, সেটা হলো প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। অর্থাৎ রোগে ভুগে সেটা সারানোর চেয়ে রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রিয় পাঠক, আমরা শুরুতেই বলেছি, ডেঙ্গু জ্বর হয় স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে। তো, ডেঙ্গু প্রতিরোধের সহজ উপায় হলো এই এডিস মশার বংশ ধ্বংস করা। এটা বলা যত সহজ করাটা ততই কঠিন। কারণ, এই মশা গুলো যে পরিবেশে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে সে পরিবেশ বাংলাদেশে অহরহ সৃষ্টি হয়ে আছে। এডিস মশা গুলো সাধারণত ঘিঞ্জি এলাকা, পরিত্যক্ত টিনের কৌটা, ভাঙ্গা টব, জমে থাকা পানি ইত্যাদিতে জন্ম নেয় এবং বংশ বিস্তার করে। এই মশার বংশ ধ্বংস করার জন্য অর্থাৎ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা হলো:

  • ঘনবসতি এড়িয়ে চলতে হবে: ঘিঞ্জি, জনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • মশারি ব্যবহার করতে হবে:মশারি ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব হলে মশারি দিনের বেলায়ও ব্যবহার করতে হবে। 
  • মশা নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে: মশা তাড়ানোর ঔষধ যেমন এরোসল কিংবা গুড নাইট ব্যবহার করতে হবে। মশা মারার জন্য ইলেকট্রনিক ব্যাট, ব্যান্ড,প্যাচ, কয়েল ব্যবহার করতে হবে। মশানাশক বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • প্রতিরক্ষা মূলক পোষাক: যেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাধারণত বাইরে বের হয়ে থাকে যেমন হাত, পা, মুখ এসব ঢেকে চলতে হবে। এজন্য ফুল হাতার জামা, পায়ে মোজা এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  • দরজা জানলায় সুরক্ষা নেট ব্যবহার করতে হবে: বাসার জানালা এবং দরজায় নেট ব্যবহার করতে হবে। নেট লাগানো সম্ভব না হলে দরজা, জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
  • মশা প্রবেশের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ: খুব ভোরে এবং সন্ধ্যা নামার সময় মশা প্রবেশ করে। এ সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে। সকালে রোদ উঠার সাথে সাথে এবং সন্ধ্যার সময় পেরিয়ে রাত নামলে দরজা জানালা খুলে দেয়া যেতে পারে। 
  • এসি ব্যবহার: সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই এর পানি পরিস্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পানি জমতে দেয়া যাবে না: বাসার বারান্দায়, জানালায় গৃহসজ্জার জন্য ব্যবহৃত মানিপ্লান্ট কিংবা টব কোনোটাতেই পানি জমা রাখা যাবে না। খেয়াল করতে হবে বাসার আশে পাশে কোথাও যেমন মজা ডোবা, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের ঢাকনা, পোষা প্রাণির খাবারের বক্স কিংবা লিটার বক্স কোথাও পানি জমে আছে কিনা। এসব প্রতিদিন পরিস্কার করতে হবে।
  • সংরক্ষিত পানির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে : বাসার পানির ট্যাংক সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়া নিজেদের খাওয়ার পানি কিংবা বাথরুমের সংরক্ষিত পানিও নিয়মিত ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে রাখতে হবে। এই সময়টাতে পানি সংরক্ষণ না করার চেষ্টা করাই শ্রেয়। 
  • বসবাসের স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে: বাসা-বাড়ি সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।স্যাতস্যাতে পরিবেশে মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটে, তাই বাসা বাড়িতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর:

ডেঙ্গু নিয়ে যেসব বিষয় সাধারণত মানুষ জানতে চেয়ে থাকে সেসবের বিস্তারিত উত্তর ইতিমধ্যেই আমরা দিয়েছি। তারপরও মানুষের কৌতূহলের তো আর শেষ নেই! সেজন্য ডেঙ্গু সংক্রান্ত আরো যেসব প্রশ্ন গুগলে সার্চ করা হয় তার কিছু উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?

না। ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। তবে বিষয়টি মোটেও এমন নয় যে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে যে মশা কামড়ায়, সে যদি কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে তারও ডেঙ্গু হবে। 

কিভাবে ডেঙ্গু হয়?

শুধু মাত্র স্ত্রী এডিস মশার কামড়েই এই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। তারপর রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সরাসরি লিভারে আক্রমণ করে। আর লিভার বা যকৃত যেহেতু মানুষের দেহের যাবতীয় বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত বেশি সময় তার কাজ অব্যাহত রাখতে পারে না ফলাফলে মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। 

ডেঙ্গু হলে কি কি খাওয়া যাবে?

ডেঙ্গু এমন কোনো রোগ নয় যাতে বেছে বেছে নির্দিষ্ট কিছু আইটেম ছাড়া আর কিছুই খাওয়া যায় না। এই রোগে সব কিছুই খাওয়া যায়। তবে এ সময় বেশি করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন: লেবু, কমলা, বিভিন্ন টক ফল, মৌসুমি ফল ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, পানি, শরবত, জুস এসব তে আছেই।

ডেঙ্গু হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

এসময় যেহেতু যক্ত দুর্বল থাকে, তাই শরীরের বিপাক ক্রিয়া স্থবির বা দুর্বল হয়ে পড়ে কিছু সময়ের জন্য। এই সময়টাতে তাই ভারি খাবার যেমন: জাঙ্ক ফুড,  অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার,  বাসি ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার, রেডমিট, ঘি, বাটার ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এসব খেলে বদহজম,পাকস্থলীর প্রদাহ, পাতলা পায়খানা, বমি ইত্যাদি হতে পারে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়। তবে, বর্তমানে একদল গবেষক দাবি করেছেন, মশাটি তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে অভিযোজনের চেষ্টা করছে। অর্থাৎ স্ত্রী এডিস মশা এখন রাতেও কামড়ায়।

এডিস মশা চেনার উপায় কি?

ডেঙ্গু বা এডিস মশা চেনার উপায়

এডিস মশা চিনে শনাক্ত করা খুবই সহজ। এই মশার নিচের অংশটা সাদা কালো ডোরা কাটা। এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে স্ত্রী এডিস মশা এবং পুরুষ এডিস মশা কিভাবে শনাক্ত করে! জানিয়ে দিচ্ছি সে বিষয়েও। পুরুষ এডিস মশা মানুষের রক্তপায়ী না। এই মশাটি খাদ্য হিসেবে গাছের পাতা গ্রহণ করে থাকে এবং থাকেও বনে জঙ্গলে। তাহলে যে ডোরাকাটা মশাটি আপনাকে কামড়াতে আসবে সেটি নিঃসন্দেহে স্ত্রী এডিস মশা। সুতরাং সাবধান!

ডেঙ্গু বর্তমানে যে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে সেজন্য আপনি আমিই দায়ী। আমাদের সম্মিলিত সচেতনতাই পারে ডেঙ্গুর প্রকোপকে কমিয়ে দিতে। এমনকি ডেঙ্গুর পুরোপুরি বিলোপ সাধনও সম্ভব। তাই, আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই, সবাইকে সচেতন করি। এটাই ডেঙ্গু নির্মূলের একমাত্র পন্থা।

Scroll to Top