এখন মিডিয়াম মানের মোবাইল দিয়েই ভালো মানের ছবি তোলা যায়। আরেকটা ব্যাপার কি জানেন? ছবি তুলতে ক্যামেরা বা লেন্স এর চেয়ে ছবি তোলার মানুষের ইচ্ছা, সৃজনশীলতা এগুলো বেশ জরুরী।
২০১২ সালের DSLR এর ক্যামেরার লেন্স আর বর্তমান মোবাইলের লেন্স একই। তাও কিন্তু এমন না সবাই যার যার মোবাইল দিয়ে খুব ভালো মানের ছবি তুলতে পারে বা তুলে।
একই মোডেলের মোবাইল দিয়ে ২জন ২রকম ছবি তুলতে পারে। একজনের ছবি হবে খুবই সুন্দর এবং প্রফেশনাল আরেকজনের টা হবে এমেচার ছবি – জাস্ট ক্যামেরা অন করো আর অবজেক্টের ছবি তুলো!!
কিন্তু ছবি তোলার অনেক নিয়ম আছে, অনেক কিছু জানার আছে। শাটার স্পিড, আইএসও, ফোকাস, লাইট ইত্যাদি এসব তো আছেই সাথে অব্জেক্টের সাথে ক্যামেরার কোণ, দূরত্ব এসব ও জানা থাকা দরকার।
আজকের পোস্টে ট্রাভেল ফটোগ্রাফি করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের জন্য দরকারি কিছু ইকুইপমেন্টের তালিকা এবং সেসবের কাজ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করবো।
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি করতে কি কি লাগবে?
- Camera
- Lens
- Tripod
- Gimble
- Waterproof bag
- SD card
- HDD disk
- power bank
- photoshop app
১. ক্যামেরা
প্রথমেই ক্যামেরা তো লাগবেই। ক্যামেরা ছাড়া কোন ফটগ্রাফিই হবে না। এখন আমি কিন্তু ক্যামেরা বলতে Nikon এর এক লাখ টাকা দামের ক্যামেরার কথা বলছি না। বর্তমান বাজার অনুযায়ী ১৫হাজারের বা ১২ হাজার দামের মোবাইল এর ক্যামেরা দিয়েও আপনি সুন্দর ছবি তুলতে পারবেন।
২. লেন্স
অনেকে বলতে পারেন মোবাইল ক্যামেরা হলে আবার এখন লেন্সের কথা কেন বলছি!?আসলে যাদের ক্যামেরা আছে তারা তো তাদের ক্যামেরা ইউজ করবেই। আর তাছাড়া মোবাইলের জন্যও কিন্তু বিভিন্ন রকমের লেন্স বর্তমানে বাজারে আছে। লেন্স একটা সাদামাটা ছবিকেও প্রফেশনাল ভাইন এনে দিতে পারে।
৩. ট্রাইপড
ঐ যেঁ শুরুতে বলেছিলাম একই মোডেলের মোবাইল দিয়ে ২জন ২ রকম ছবি তুলে? কারন একজন ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহী আর আরেকজন জাস্ট ক্যামেরা অন করে ক্লিক ক্লিক তুলে ফেলতে পারলেই হয়ে যায়।
আপনি যদি ছবির ব্যাপারে সিরিয়াস হোন, অন্য ১০টা এমেচার ছবির মাঝে আপনার ছবি ভিন্নতা পাক এটা চান তাহলে ট্রাইপড ইউজ করা উচিৎ। এটা আপনার ক্যামেরা কে স্থির রাখতে সাহায্য করবে, স্থির ভাবে অবজেক্টকে ফোকাস করতে পারবেন।
৪. গিম্বল
গিম্বল প্রয়োজন হয় মূলত ভিডিও করার জন্য। আপনি ট্রাভেল ভিডিও করতে চাইলে তখন গিম্বল বেশিই জরুরী হয়ে যাবে। কেননা ভ্রমনে আমরা চলমান থাকি, গাড়ি কিংবা পায়ে হেটে ঘুরে বেড়ায়, এসব ভিডিও করতে গেলে মূল ভিডিও ক্লিপ অনেক কাপাকাপি হবে যা দেখার জন্য মোটেও সুন্দর না। আপনি হাটবেন কিন্তু আপনার মোবাইল বা ক্যামেরা স্থির থাকবে এই কাজটাই করে দিবে গিম্বল।
বাজারে অনেক ধরনের গিম্বল আছে। আপনার মোবাইলের ধরন ওজন ইত্যাদি চেক করে গিম্বল কেনার দিকে আগাবেন।
৫ ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি করবেন মানে এখানে অখানে ঘুরে বেড়াবেন। কখনো নদী কখনো খাল কখনো হটাত করে বৃষ্টি। আপনি যদি আগে থেকে আপনার ইকুইপমেন্টের সুরক্ষার জন্য ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ সাথে না রাখেন তাহলে আপনার মোবাইল লেন্স ক্যামেরা ইত্যাদি সবই রিস্কে পড়ে যাবে! তখন ছবি তোলা বাদ দিয়ে কেম্নে এসব বাচাবেন সেদিকে থাকতে হবে। এজন্য ঘুরতে গেলে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ নিয়ে যাবেন বিশেষ করে আপনি যদি হাইকিং টাইপের ভ্রমনে যান।
৬. পোর্টেবল হার্ড ডিক্স / মেমোরি কার্ড
আপনি ঢাকা থেকে সাজেক আসছেন , ছবি তুলবেন ভিডিও করবেন। কিন্তু এসে একদিনের মধ্যেই আপনার ডিফল্ট মেমরি কার্ড ফুল হয়ে গেছে। এখন কি করবেন ? আবার ঢাকা ফিরে যাবেন? সাজেকে বসে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ৩দিন বসে থাকবেন?
এসব করতে না চাইলে এক্সট্রা মেমরি কার্ড কিংবা হার্ড ডিস্ক সাথে রাখতে পারেন।
৭. পাওয়ার ব্যাংক
এহেম এহেম! উপরের পোর্টেবল মেমোরি কার্ডের কথা গুলোই পাওয়ার ব্যাংকের সাথে খাটে। ঘুরতে ঘুরতে ধুম করে মোবাইল চার্জ শেষ এমন বিড়ম্বনা এড়িয়ে যেতে চাইলে আগে থেকেই ফুল চার্জ করে পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখবেন। মোবাইল চার্জ শেষ হলে কাজে দিবে।
৮. Editing Apps
আপনি ঘুরতে গিয়ে ছবি তুলছেন এর মানেই এই না যেঁ সেসব ছবি অনেক আহামরি হবে। অনলাইনে যত আহামরি “ওয়াও” টাইপ ছবি দেখেন তার মেজরিটি ছবিই কিন্তু এডিট করা।
অনেকে অবশ্য এডিটের বিপক্ষে বলে, কারন ধরুন আপনি ভাটিয়ারী লেকের খুব সুন্দর সবুজ লেকের উজ্জ্বল ছবি দেখে ভাটিয়ারী ঘুরতে গেলেন। গিয়ে দেখেন রুক্ষ আর নরমাল একটা এলাকা। লেক আর পাহাড়ের কারনে কিছুটা ভালো লাগা কাজ করে এইটুকুই। তাহলে কেমন লাগবে?
আসলে অনেকে আছে ছবি এমন ভাবে এডিট করে যেঁ মূল ছবির বাস্তবতা অনেকটা চেঞ্জ করে ফেলে।
আপনি আমি ছবি এডিটের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে হয় না কেন এটা স্বীকার করতে হবে এডিট করলে ছবি দেখতে সুন্দর হয়ে যায়।
এখন আপনি ছবি এডিট করার জন্য কোন এপ বা সফটওয়্যার ইউজ করবেন? ফ্রি নাকি পেইড এপ?নিচে কিছু এপের তালিকা দিচ্ছি সাথে কিভাবে কাজ করে তাও। জেনে রাখতে পারেন।
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এডিট এপ লিস্ট
১. লাইট্রুম
ফটোগ্রাফারদের পছন্দের একটি এপ। এক ক্লিকে ছবির আম জাম চেঞ্জ করে ফেলার জন্য এই এপ ইউজ করতে পারেন। রেডিমেড অনেক প্রিসেট পাওয়া যায় সেগুলো ইউজ করে আপনার ছবির লুক ই চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন।
২. ফটোশপ
আপনি এডভান্স লেভেলে যেতে চাইলে ফটোশপ ইউজ ক্রা উচিৎ। এখানে আপনি আপনার মত করে এডিট করতে পারবেন ( যদিও এটা করার জন্য আপনাকে দক্ষ হতে হবে )
৩. Picsart
এমেচার কিন্তু প্রফেশনাল এমন ছেলেমেয়েদের কাছে এই এপ জনপ্রিয়। অনেক ভালো মানের এডিট করতে পারবেন এই এপ দিয়ে।
৪. Pixlr
ধুর এত এডিট দিয়ে কি হবে শুধু একটি রঙটা গাড় করে দিতে পারলেই চলবে! আপনি যদি এমন এডিট চান তাহলে এই এপ ট্রাই করে দেখতে পারেন। ইউজ করা সহজ, ব্যাসিক লেভেলের এডিটের জন্য ভালোই। বিশেষ করে অনেক অনেক অপশনের মধ্যে হারিয়ে যেতে অপছন্দ করলে।
৫. PixelLab
এই এপ ছবি এডিটের এপের চাইতে ছবিতে লেখা এড করার এপ বলতে পারেন। যদিও কিছু এডিট করা যায় এবং নানা রকম গ্রাফিক্স এড করে ছবিকে চেঞ্জ করা যায় তবুও আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ইউজ করি ছবিতে নানা রকম লেখার জন্য।
৬. Kinemaster, Capcut. invideo
ছবি দিয়ে ভিডিও বানাতে চান? তাহলে Kinemaster, Capcut. invideo এই এপ গুলো ইউজ করতে পারেন। যদিও এই এপ গুলো ফ্রিতে ইউজ করলে ওয়াটার মার্ক থেকে যায় আর এটা ভিডিওর প্রিমিয়াম লুক নষ্ট করে দেয়। ( কিন্তু আছে যা বললাম না!)
৭. অনলাইন ক্লাউড
যারা রেগুলার ছবি তুলে তাদের জন্য এত এত ছবির জন্য মেমোরি কার্ড রাখা সম্ভব না হতে পারে। এই সমস্যা দূর করার জন্য অনলাইনের বিভিন্ন ক্লাউড স্টোরেজ ইউজ করা যেতে পারে।
সতর্কতাঃ ক্লাউড স্টোরেজে কি রাখছেন না রাখছেন ভেবে চিনতে রাখবেন। কারন একাউন্ট হ্যা-ক হওয়া, ডাটা লিক হওয়া সহ অন্যান্য বিপদে পড়তে পারেন তখন আপনার রাখা ছবি ভিডিও সব লিক হয়ে যাবে।
এজন্য আমি নিজের জন্য মনে করি মাঝে মধ্যেই রুটিন ক্লিন অপারেশন চালিয়ে বিভিন্ন ছবি ভিডিও রিমুভ করে দেওয়া উচিৎ। অনেক ছবিই যখন তোলা হয় তখন মনে হয় লাগবে বা দরকারি!কিন্তু এরপর মাস যায় বছর যায় ঐ ছবি ভিডিও আর লাগে না দেখাও হয় না। শুধু শুধু গ্যালারি ভরাট করে রাখে।
এই ছিলো ট্রাভেল ফটোগ্রাফির ব্যাসিক কিছু তথ্য। কিভাবে ছবি তুলবেন, কিভাবে এডিট করবেন এসব নিয়ে লিখতে গেলে নতুন একটি পোস্ট হয়ে যাবে। সেই নতুন পোস্ট না লেখা পর্যন্ত আপাতত এটুকুই।