ঝিনাইদহ এর দর্শনীয় স্থান জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক এন্ড রিসোর্টের ভ্রমন গাইড

জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক এন্ড রিসোর্ট আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ ঝিনাইদহের একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। সুনিবিড় ছাড়া ঘেরা মনোরোম এ পার্কটিতে শিশুদের বিনোদনের জন্য জেট কোষ্টার, কেইভ ট্রেন, প্যাডেল বোট/ওয়াটার রিক্সা, মেরি গো রাউন্ড, ফানি এ্যাডভেঞ্চার, নাগর দোলা, সুইং চেয়ার, কিডস জোন সহ নানন আয়োজন। জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক এন্ড রিসোর্ট এর প্রধান আকর্ষন হল এর সকল রাইড গুলোর ফি রাখা হয়েছে হাতের নাগালে ।

১০০ বিঘার উপর নির্মিত এ জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্কে বিভিন্ন আউটডোর একটিভিটি/ খোলাধুলার জন্য সুবিশাল খোলার মাঠ।বিভিন্ন প্রকারের পিকনিক স্পট সম্বলিত ড্রীম ভ্যালী পার্ক এন্ড রিসোর্টে থাকার জন্যও রয়েছে বিভিন্ন মানেরও খরচের রিসোর্ট/ আবাসন ব্যবস্থা। যেখানে প্রতিদিন ২০০০ টাকার বিনিময়ে শহরের কোলাহল থেকে নির্মল পরিবেশে রাত্রি যাপন করা যায়।

জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্কের টিকিট মূল্য 

আমরা চার বন্ধু চিন্তা করলাম এবার এই “Dream Valley” পার্কেই যাবো ভ্রমণের জন্য।সকাল ৬ টায় আমরা খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে “রূপসা” গাড়িতে রওনা দিলাম ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে।খুলনা থেকে ঝিনাইদহের ভাড়া নিয়েছিল ২৩০ টাকা।আমরা ৯ টার দিকে পার্কে পৌঁছালাম। ভিতরে ঢোকার আগে একটু খাওয়াদাওয়া করে নিলাম। ১৫০ টাকার মধ্যে খাওয়া দাওয়া হয়ে গেল। খাবারের মানও ভালোই ছিল।তারপর আমরা পার্কের ভিতরে ঢুকলাম। টিকিটের মূল্য ছিল ১০০ টাকা প্রতি জন।

ভিতরে বেশ অনেকটা জায়গা রয়েছে। আমরা কিছুক্ষন ঘুরলাম। খুবই সুন্দর পরিবেশ।অনেক নীরবতা।দিনটা ছুটির দিন ছিল।তাই লোকসমাগম ও ছিল প্রচুর। কিছুক্ষণ সেলফি তোলার পর আমরা ভাবলাম কোনো রাইডে ওঠা যায় কিনা। আমার বন্ধু বললো এখনই না উঠে আরেকটু পরে উঠি। যেই কথা সেই কাজ। ওখানে একটি কৃত্রিম ঝর্ণা ছিল। আমরা ছবি তুললাম কিছুক্ষন। 

একটা ছোট বাচ্চা আসলো টাকা চাইতে। ছেলেটাকে দেখে আমার মায়া হল। সে ছিল খুবই ছোট এবং এই ছোট বয়সে কেন সে টাকা চেয়ে বেড়াচ্ছে সেই প্রশ্ন তাকে করলাম। সে জবাব দিল তার আব্বু মারা গেছে এবং তার আম্মু মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। আর এভাবেই তাদের সংসার চলে। যাইহোক সবকিছু শুনে ছেলেটাকে আমি 500 টাকার একটি নোট দিলাম।

আমার বন্ধু জিহাদ বলল রোলার কোস্টারে চড়ার কথা। তো আমরা ৮০ টাকা দিয়ে রোলার কোস্টারের টিকিট কিনে রোলার কোস্টারে উঠলাম। আমি একবার ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে রোলার কোস্টারে উঠেছিলাম। কিন্তু এই ড্রিম ভ্যালি পার্কের রোলার কোস্টারটিতে সেই রকম মজা পাইনি। এটি ছিল তুলনামূলকভাবে একটু ছোট। 

আমার মনে হয় বয়সে ছোট বড় সবার জন্য যাতে উপভোগযোগ্য হয় এজন্যই তাদের এই ব্যবস্থা। সেখান থেকে নেমে আমরা একটু হাটাহাটি করলাম। আর একটা ঘোরে দেখলাম। অনেক বয়সের মানুষ এবং অনেক পেশার মানুষ এখানে এসে তাদের সময় কাটাচ্ছে। এখানে মূলত ঝিনাইদহ এর মানুষের সংখ্যায় বেশি। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এখানে আসা শুরু করেছে। একজনের সাথে কথা বললাম তিনি এসেছেন ভারত থেকে।


খুবই ভালো লাগলো ঝিনাইদহের ড্রিম ভ্যালি পার্কের নাম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ছড়িয়ে পড়ছে। পার্কের ভিতর একটা ফুচকার দোকান ছিল। আমরা ফুচকা খাওয়ার জন্য ঢুকলাম কিন্তু সেখানে দাম ছিল অনেক বেশি। কিন্তু যেহেতু ঘুরতে এসেছি তাই ভাবলাম ফুচকা খেয়েই যায়। ৪০ টাকা প্লেট ছিল কিন্তু প্রতি প্লেটে ফুচকার সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচটি। 

যাইহোক খাওয়া শেষে আমরা একটা স্পিডবোটে উঠলাম এই রাইড এর মূল্য ছিল 50 টাকা। ১০ মিনিট আমাদের লেকে ঘোরালো। আসলে পার্কের ভিতরে ২০ থেকে ৩০ টি রাইড রয়েছে। কিন্তু আমরা আর কোন রাইডে উঠলাম না।

দুপুর হয়ে গেল। পার্কের ভিতর একটি হোটেল দেখতে পেলাম। মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো অনেক টাকা খরচ হবে এখান থেকে খেলে। কিন্তু বাইরে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না কারণ একবার বাইরে গেলে নতুন করে আবার টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতে হবে। এটাই ওখানকার নিয়ম। তাই দুপুরের খাবার আমরা হোটেলে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। 

যেমন ভেবেছিলাম দামটা তার থেকেও অনেক বেশি ছিল। তারপরও আমরা ৩০০ টাকার প্লাটার অর্ডার করেছিলাম প্রতিজন। তবে দাম বেশি হলেও খাবারের মানটা ছিল খুবই ভালো। আমাদের খুবই ভালো লেগেছিল। খাওয়া শেষে বিল পরিশোধ করে আমরা বের হয়ে পড়লাম হোটেল থেকে। 

পার্কের ভেতরে একটা অংশ ঘোরা তখনো বাকি ছিল। তাই এবার সেই দিকটা ঘোরার উদ্দেশ্যে চললাম। কিন্তু গিয়ে দেখি এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই আবার ফিরে এলাম। এদিকে দেখলাম একটা গ্রুপ পিকনিক করতে এসেছে এখানে। তারা সংখ্যায় ছিল মোট ১০০ জন।

আমাদের জন্য একটি ছোট্ট খেলার আয়োজন করেছিল তারা। একটি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছিল। তবে কারা খেলবে এটা ঠিক করা হয়েছিল লটারির মাধ্যমে। ভাগ্যক্রমে খেলোয়াড় 22 জনের মধ্যে আমার নামটাও এসেছিল। তবে বাকি তিন বন্ধুর নাম আসেনি। আমি খেললাম। প্রথমে আমাদের দল ব্যাট করেছিল। আমাকে ওপেনিং এ নামানো হয়েছিল। আমি ভালো ব্যাট করতে পারি। আমি ব্যাটে নে মে ৬২ রান করেছিলাম। 

আমাদের দল প্রতিপক্ষকে ১০ ওভারের খেলায় ১০২ রান টার্গেট দিয়েছিল। জবাবে তারা প্রথমে কিছু উইকেট হারিয়ে ফেললেও পরে তারা ভালোভাবে কামব্যাক করেছিল। খুব সুন্দর ভাবে খেলে মাত্র আট ওভারে তারা তাদের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। 

আমরা হেরে গেল ম্যাচটা অনেক উপভোগযোগ্য ছিল। খেলা শেষ হয়ে গেলে মেয়েদের জন্য বালিশ খেলার আয়োজন করানো ছিল।

রিসোর্ট এর সুবিধা সমূহঃ

  • এয়ার কন্ডিশনিং
  • ২৪ ঘন্টা চা/কফি সেট আপ
  •  স্মার্ট টিভি
  • টেলিফোন
  • গরম এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা
  • চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার
  • ব্যালকনি থেকে সি ভিউ
  • গাড়ী পার্কিং
  • ফ্রি হাই-স্পিড ইন্টারনেট
  • এসি সহ ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ ব্যাকআপ

সতর্কতাঃ 

১। র‍্যাফেল ড্র বা লটারিতে অংশগ্রহন করবেন না। মনে রাখবেন লটারি মানেই লস। লটারি কে এমন ভাবে সিস্টেম করা হয় যাতে অংশগ্রহনকারিরা জিততে না পারে। আপনার মনে হতে পারে ২০ টাকা দিয়ে লটারি কিনে ২০০ টাকার গিফট পেলে লস কিভাবে?

২০ টাকার লটারি ২০০ জন কিনলে মোট টাকা হয় ২হাজার টাকা।

এই টাকা থেকে একজন কে ৩০০ টাকার গিফট আরেকজন কে ২০০টাকা এবং ৩য় জন কে ১০০ টাকার গিফট দেওয়া হলে মোট খরচ হয় ৬০০ টাকা।  লটারি ওয়ালাদের লাভ ১২০০ টাকা!২০০ জনের মধ্যে মাত্র ৩জন কিছু পেলো বাকিরা শুধু শুধু ২০ টাকা নষ্ট করলো। এর চেয়ে ২০ টাকা দিয়ে ৫০০ মিলি পানি কিনে খাওয়া অনেক ভালো। 

২। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে কিংবা পার্ক কে কেন্দ্র করে অনেক ধান্দাবাজ লোক ঘুরে বেড়ায় যাদের কাজই হলো সহজ সরল মানুষদের সাথে প্রতারনা করা। এদের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।

৩। যদি রিসোর্টে রাত্রি যাপন করতে চান তাহলে সেখানে যাওয়ার আগেই কনফার্ম হয়ে নিবেন রুম খালি আছে কিনা।

৪। হোটেল / রিসোর্টে অবস্থান করলে হিডেন ক্যামেরার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

( পোস্টে ব্যবহার করা ছবি জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক এর পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে )

Scroll to Top