বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার জন্য আপনার স্বপ্নের দেশ যদি জার্মানি হয়ে থাকে তবে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সব দিক থেকে ইউরোপের দেশ গুলোর মধ্যে জার্মানি সমৃদ্ধ একটা দেশ। জার্মানিকে বলা হয় ল্যান্ড অব আইডিয়াস। গবেষণা, চিকিৎসা, নামীদামী প্রযুক্তির উদ্ভাবন বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ জন্মস্থান জার্মানিতে।
দ্য টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিই জার্মানিতে অবস্থিত। শুধু যে জার্মান ভাষায় আপনি পড়তে পারবেন তা নয় জার্মান ভাষা ছাড়াও ইংরেজি, বিজ্ঞান, গবেষণা, থিসিস, গণিত,কম্পিউটার ইত্যাদি উচ্চশিক্ষার সব শাখায় পড়তে পারবেন।
জার্মানিতে পড়ার জন্য ৪৫০ টির বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে । স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার সুবিধা হচ্ছে খরচ ৫০% কমে যাওয়া কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় তো ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
জার্মানিতে পড়াশোনার ক্যারিয়ার শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে বিষয় নির্বাচনে নজর দিতে হবে।
মাস্টার্স ডিগ্রি করতে চাইলে স্নাতক পাস থাকতে হবে। একাডেমিক পিরিয়ড সর্বোচ্চ ৬ বছর গ্রহণ করা হয়। ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস কোর্স এর ব্যান্ড স্কোর থাকতে হবে কমপক্ষে ৬.০। জার্মান ভাষার জন্য কমপক্ষে বি-১ লেভেল অর্জন করতে হবে। ইংরেজি বা জার্মান ভাষা যে কোন একটা ক্ষেত্রে দক্ষ হলেই যথেষ্ট।
তবে আপনি যদি পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিতে যুক্ত থাকতে চান তবে জার্মান ভাষা আয়ত্তে থাকা জরুরি। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে স্নাতকের ফলাফল ক্লাস সিস্টেম থাকলে ফার্স্ট ক্লাস থাকতে হবে, গ্রেডিং পদ্ধতি হলে সিজিপিএ ৩.০-৪.০ থাকতে হবে।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স স্কলারশিপ আবেদনের জন্য একাডেমিক সনদপত্রের পাশাপাশি দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখাতে হয়।
জার্মানিতে স্কলারশিপ এর জন্য আবেদনের উপায়
জার্মানির স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করার সহজ মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। অনলাইনে পুরো আবেদন পত্র পূরণ করার পর ইউরোপাস স্পেসিমেন ফর্ম ডাউনলোড করে আবেদনকারী শিক্ষার্থী স্ব-হস্তে স্বাক্ষরসহ সিভি তৈরি করে নিবেন।
পরের ধাপে মোটিভেশন লেটার থাকবে সাথে আবেদনকারির কাজের অভিজ্ঞতা ও রেফারেন্সসমূহ উল্লেখ থাকবে।
যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সেখান থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার আবেদন পত্রে যুক্ত করবেন।
আবেদনকারী কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যুক্ত থাকলে বা পূর্বে চাকরি করে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট থেকে স্বাক্ষরসহ একটি রেফারাল লেটার সংযুক্ত করতে হবে।
তারপর যে স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করবেন সেখানে কোন ভাষায় দক্ষতা চেয়েছে তা অনুযায়ী জার্মান / আইইএলটিএস ভাষা শিক্ষা কোর্সের ফলাফল সনদপত্র গুলো সংযুক্ত করে দিবেন।
সর্বশেষ খুব ভালো ভাবে চেক করে নিবেন আর কোন তথ্য যুক্ত করা বাকী আছে কিনা আবেদনের সময় খুব সতর্কতার সাথে এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।
সফট কপি সাবমিট করার আগে দেখে নিবেন হার্ড কপি চেয়েছে কিনা সাধারণত অনলাইনে সফট কপি চেয়ে থাকে তারপরেও কোন বিশ্ববিদ্যালয় হার্ড কপি চাইলে সরকারি ডাক বা ডিএইচএল এর মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কিছু স্কলারশিপ তালিকা
১. ডাড (DAAD) স্কলারশিপ:
জার্মানির স্কলারশিপ এর নাম আসলে প্রথমেই আসবে German Academic Exchange Service অথবা ডাড (DAAD) স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপ সবার কাছে বেশ পরিচিত কারণ এটা একটা বৃহত্তম সরকারি স্বনামধন্য স্কলারশিপ। যার সুযোগ সুবিধা খুবই উন্নতমানের।
এই স্কলারশিপ প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য অর্থায়ন দিয়ে থাকে। যারা জার্মানিতে স্কলারশিপ নিয়ে
সংক্ষিপ্ত কোর্স গুলো করতে আগ্রহী তাদের জন্য ডাড স্কলারশিপ হবে বেস্ট অপশন। সাধারণত স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএসডি, পোস্ট ডক্টোরাল কোর্স গুলোর জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয়। এই স্কলারশিপ টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি, স্বাস্থ্যবীমা, মাসিক ভাতা ইত্যাদি বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।
২. ইরাসমাস মুন্ডাস (Erasmus Mundus) স্কলারশিপ:
জার্মানির জনপ্রিয় একটা স্কলারশিপ হচ্ছে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। এটি কোন একক সত্ত্বার অধীনে নয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি ভিন্ন দেশের সমন্বয়ে এই স্কলারশিপ গঠিত। জার্মানির সব থেকে বড় ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ এর শিক্ষাব্যবস্থা কার্যক্রম খুবই উন্নতমানের।
অনার্স পাস করেই এই স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রতি মাসে রয়েছে উপবৃত্তির সুযোগ, দেয়া হয় যাতায়াত ভাতা, তাছাড়া সেমিস্টার শেষে অন্য দেশে ট্যুরের জন্য ফ্রি বিমান টিকিট দেয়া হয়। এই স্কলারশিপে আপনি প্রায় শতভাগ ফ্রি টিউশন ফি সুবিধা পাবেন।
ওয়েবসাইট: https://ec.europa.eu/programmes
৩. ডয়েচল্যান্ড স্টাইপেনডিয়াম (Deutschland stipendium) স্কলারশিপ:
যারা উচ্চশিক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কখন কোন সময় কোন স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করব তারা ডয়েচল্যান্ড স্কলারশিপ বেছে নিতে পারেন। পড়াশোনার মাঝপথে এসে যদি মনে হয় জার্মানি গিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়বেন তখনই আবেদন করতে পারেন। এই স্কলারশিপ এর সুবিধাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যে কোন সেমিস্টারে যোগ দেয়া যায়। প্রতি মাসে তারা আপনাকে ৩০০ ইউরো উপবৃত্তি দিবে।
ওয়েবসাইট: https://www.deutschlandstipendium.de
৪. Konrad-Adenauer-Stiftung (KAS) International Scholarships:
জার্মানিতে যদি আপনি সব থেকে সেরা মানের স্কলারশিপ খুঁজে থাকেন তাহলে এই স্কলারশিপটি আপনার জন্য। অনেকে জানেই না এই স্কলারশিপটির কথা কিংবা এর যে বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যারা আইইএলটিএস ছাড়া স্কলারশিপ খুঁজে থাকেন তাদের জন্য এটি একটি বিশেষ সুযোগ কারণ এই স্কলারশিপ এর জন্য IELTS দরকার হয় না। স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত যে কেউ আবেদন করতে পারে। তবে অবশ্যই আপনার গ্রেড এর মান ভালো হতে হবে। এর জন্য জার্মান ভাষায় পারদর্শী হলে খুবই ভালো সুযোগ পাবেন। আর তেমন কোন ঝামেলা নেই। বাংলাদেশে এই স্কলারশিপ এর জন্য প্রতিযোগি খুবই কম তাই খুব সহজে আপনি এই স্কলারশিপ পেতে পারেন ঝামেলা ছাড়া।
ওয়েবসাইটঃ https://www.kas.de/de/home
৫. আলেক্সান্ডার ভন হামবোল্ট ফাউন্ডেশন ( Alexander von Humboldt-Foundation ) স্কলারশিপ:
জার্মানির প্রথম সারির স্কলারশিপ গুলোর মধ্যে Humboldt-Foundation স্কলারশিপকে রাজকীয় স্কলারশিপ বলা হয়। এই স্কলারশিপ এর মাধ্যমেই জার্মানিতে প্রতিবছর বিশ্বসেরা মেধাবী বিজ্ঞানী তৈরি হয়। কারণ এটি শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য। বিজ্ঞান ছাড়া আর কোন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আপনি যদি বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগে দক্ষ গবেষক হতে চান এই স্কলারশিপটি আপনার জন্য সেরা সুযোগ দিবে।
এই স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করতে শুধুমাত্র সব শিক্ষাগত লেভেলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো গ্রেড নিয়ে মাস্টার্স পাস থাকতে হবে। যারা গনিত, বা পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি বা পোস্টডক কিংবা গবেষক হিসেবে যুক্ত আছে তারা এই স্কলারশিপ পেতে মনোনীত হয়। গবেষণা সংস্থা থেকে পোস্টডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন ফি গুণতে হবে না। পোস্টডক্টরাল ডিগ্রির জন্য প্রতি মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা উপবৃত্তি দেয়া হয়।
গবেষণা কার্যক্রম এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা প্রদান করে থাকে।
তাছাড়া ব্যক্তিগত, পারিবারিক সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
ওয়েবসাইট: https://www.humboldt-foundation.de
উপসংহার:
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রচুর মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা বিপুল অর্থের জন্য নিজেদের জ্ঞান সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে পারছে না। স্বল্প খরচে আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপনের জন্য জার্মানির স্কলারশিপ হতে পারে আপনার জন্য অনন্য সুযোগ। জার্মানে গবেষণার জন্য বিশাল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তাই নিজের যোগ্যতা তৈরি করে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন জার্মানিতে। জার্মান স্কলারশিপ এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেয়ে যাবেন ডাড এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইট:- https://www.daad.de/en/
সময়কে সঠিক জায়গায় কাজে লাগানোর জন্য এখনই নিজেকে তৈরি করুন সেরা প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য।