চিকিৎসার জন্য কিভাবে ভারতের চেন্নাই যাবেন? কোন কোন হাসপাতাল বেষ্ট?

চেন্নাই ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ একটি শহর। এটি তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। চেন্নাই শহর ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যেমন বিখ্যাত ঠিক তেমনি চিকিৎসার জন্যও এখন প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। এখানে অনেকগুলো বিশ্বমানের হাসপাতাল রয়েছে যার কারণে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো মানুষ চেন্নাই আসেন৷ চেন্নাইয়ের সেরা হাসপাতালগুলোতে জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা সহ গুরুতর অপারেশনও করা হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ের নাম দিন দিন প্রসারিতই হচ্ছে।বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতিদিনই অনেক মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যান। আপনি চাইলে একাই চেন্নাই থেকে চিকিৎসা করে চলে আসতে পারবেন।


পূর্বে ভারত যাওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে চিকিৎসার জন্য কিভাবে ভারতের চেন্নাই যাবেন সেবিষয় নিয়েই রোগী ও তার আশেপাশের লোকেরা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তাছাড়া চেন্নাইয়ের কোন কোন হাসপাতাল বেষ্ট, কোন রোগের জন্য কোথায় গেলে ভাল হবে সেটাও জানা জরুরী।


তাই, আজ আমরা চিকিৎসার জন্য কিভাবে ভারতের চেন্নাই যাবেন, চিকিৎসা খরচ কেমন, চেন্নাই যেতে কি কি কাগজপত্র লাগবে, থাকা খাওয়ার সুবিধা সহ চেন্নাইয়ের বেস্ট হাসপাতাল কোনগুলো সেসম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করব।
চলুন প্রথমে জেনে নিই আপনি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য কিভাবে চেন্নাই যাবেন।

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য কিভাবে চেন্নাই যাবেন

অন্য দেশ ভ্রমণের জন্য প্রথমে একটি পাসপোর্ট করতে হয়। আপনি যদি পাসপোর্ট না করে থাকেন তাহলে নিজেই অনলাইনে পাসপোর্ট এর আবেদন করতে পারবেন। পাসপোর্ট এর পর আপনাকে ভিসা করতে হবে। আপনি ট্যুরিস্ট ভিসাতে গিয়েও ডাক্তার দেখাতে পারবেন। তবে কোন অপারেশন করাতে হলে আপনাকে মেডিকেল ভিসাই করতে হবে। এরপর আপনাকে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে হবে।

এক নজরে দেখে নিন আপনাকে ভারতে যাওয়ার জন্য প্রথমে কি কি কাজগুলো করতে হবে।

পাসপোর্ট

দেশের বাইরে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই পাসপোর্টধারী হতে হবে। এখন ঘরে বসে নিজেই অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন করে ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন। পাসপোর্ট আবেদন করার পর পাসপোর্ট ফি (সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এ) জমা দিতে হবে।

hotel booking

টাকা জমা দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে স্বশরীরে যোগাযোগ করবেন। সেখানে আপনার কাগজপত্র ভেরিফাই করে বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট করতে হবে। এরপর মোটামুটি ৭ দিনের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে ২৮ দিনের মাঝে আশা করি পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।

পাসপোর্ট ফি (টাকা):

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদী
রেগুলার ডেলিভারিঃ ৪০২৫
এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ৬৩২৫
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ৮৬২৫

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদী
রেগুলার ডেলিভারিঃ ৫৭৫০
এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ৮০৫০
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ১০৩৫০

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদী
রেগুলার ডেলিভারিঃ ৬৩২৫
এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ৮৬২৫
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ১২০৭৫

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদী
রেগুলার ডেলিভারিঃ ৮০৫০
এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ১০৩৫০
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিঃ ১৩৮০০

উল্লেখ্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র জমা দেয়া ও ছবি তোলার পর রেগুলার ডেলিভারিতে ১৫ কার্যদিবস, এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ৭ কার্যদিবস, এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে দুই কার্য দিবসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন।

পাসপোর্ট করার জন্য কি কাগজপত্র লাগবে একটু দেখে নিন:

  1. অনলাইন এপ্লিকেশন কপি
  2. টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ
  3. এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
  4. মেয়র অথবা চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ
  5. আপনার আইডি কার্ডের ফটোকপি (ছাত্র কিংবা চাকরিজীবী হলে)
  6. আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে তার অনুমতি পত্র
  7. বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন বার্থ সার্টিফিকেট এবং বাবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি

ভিসা

পাসপোর্ট পাওয়ার পর আপনাকে ভারতের ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে। আপনি যেহেতু ডাক্তার দেখানোর জন্য যাবেন তাই মেডিকেল ভিসাই করাবেন। চাইলে আপনার সাথে একজন অথবা দুইজন অ্যাটেনডেন্ট নিয়ে যেতে পারবেন। ভিসার জন্য অ্যাপ্লিকেশন করার সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন।


ভিসার জন্য অনলাইনে এপ্লিকেশন করে এপ্লিকেশন কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আপনাকে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে যেতে হবে। কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই আশা করি ভিসা পেয়ে যাবেন। ভারতের ভিসা ফি ৮৫০ টাকা।

ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে তা এক নজরে দেখে নিন;

  1. আপনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে চান এই মর্মে ডাক্তার কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র
  2. যেখানে ডাক্তার দেখাতে যাবেন সেখানকার ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট লেটার
  3. আপনার সমস্ত ট্রিটমেন্টের কাগজপত্রের ফটোকপি
  4. ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  5. ব্যবসায়ী হলে তার বৈধ কাগজপত্র
  6. সরকারি চাকরিজীবী হলে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ছুটির কাগজ
  7. বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি

উল্লেখ্য, ভিসা করার সময় আপনাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে আপনি কিভাবে ভারতে যাবেন তা যেন স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। মনে করুন, আপনি বিমানে ভারতে যাবেন কিন্তু আপনার ভিসায় উল্লেখ রয়েছে বাই রোড। তাহলে আপনি কিন্তু বিমানে ভারতে যেতে পারবেন না।

টিকেট কাটা ও বর্ডার ক্রস

এরপর ভারতের চেন্নাই যাওয়ার জন্য শুধু টিকেট কেটে বাস/ট্রেন/বিমানে উঠে বসবেন। বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে বর্ডার এ পৌঁছানোর পর বর্ডার ক্রসের জন্য কিছু ফর্মালিটিজ রয়েছে। এখানে দুটি ধাপ পার করতে হবে। একটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরে, আরেকটি হচ্ছে ভারতের অধিদপ্তরে।


প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন এর জন্য ইমিগ্রেশন ফর্ম ফিলাপ করে, ট্যাক্স দিয়ে জমা দিতে হবে। এরপর আপনাকে বর্ডার পুলিশ চেক করবে। চেকিং এর পর আপনি বাংলাদেশ অংশ পার হতে পারবেন।


তারপর ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের ফর্মালিটিস পূরণ করে ভারতে যেতে হবে। সেখানে আবার ভারতীয় পুলিশ আপনাকে চেক করবে এবং চেকিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর আপনি ভারতে যেতে পারবেন।
ট্রেন বা বিমানে গেলে রেলওয়ে স্টেশন এবং এয়ারপোর্টেই চেকিং সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে টিকিট কাটার সময় পাসপোর্ট ও ভিসা দেখিয়ে টিকেট কাটতে হয়।

চেন্নাইয়ের বেস্ট হাসপাতাল তালিকা

নামকরা চেন্নাইয়ের বেস্ট হাসপাতালগুলো হলো:

  • অ্যাপোলো হাসপাতাল
  • সিএমসি হাসপাতাল
  • রামাচন্দ্র মেডিকেল সেন্টার
  • নারায়নী মেডিকেল সেন্টার

১. অ্যাপোলো হাসপাতাল

অ্যাপোলো হাসপাতাল চেন্নাইয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অন্যতম বেস্ট একটি হাসপাতাল। এখানকার মেশিন, প্রযুক্তি উন্নত ও সর্বাধুনিক। এখানে ভারতের অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় সেবা পেতে কম সময় লাগে। আপনার হাতে যদি সময় অনেক কম থাকে তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় অ্যাপোলো হাসপাতালে যেতে পারেন। 


তবে এখানকার খরচ চেন্নাইয়ের অন্যান্য বেস্ট হাসপাতাল এর তুলনায় যে বেশি তা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
এই অ্যাপোলো হাসপাতালে আপনি সব ধরনের রোগের জন্যই ডাক্তার পাবেন এবং চিকিৎসা করাতে পারবেন। এখানে ছোট বড় সব ধরনের অপারেশনও করা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে সাধারণ চেকআপের জন্যও এই হাসপাতালে যেতে পারেন।

অবস্থান
Apollo Hospitals, Greams Road
21, Greams Lane, Off Greams Road
Chennai – 600006
phone: +91-44-40401066
email: [email protected]

কিভাবে যাবেন

অ্যাপোলো হাসপাতালটি চেন্নাই সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার এবং চেন্নাই এগমোর রেলস্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর চেন্নাই এয়ারপোর্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আপনি ঢাকা থেকে খুব সহজেই চেন্নাই যেতে পারবেন। সরাসরি ঢাকা থেকে চেন্নাই বিমানে যেতে পারেন অথবা ঢাকা থেকে কলকাতায় বাস, ট্রেন বা বিমানে গিয়ে তারপর কলকাতা থেকে ট্রেনে অথবা বিমানে চেন্নাই যেতে পারেন।

কলকাতার শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন থেকে অনেক ট্রেন চেন্নাই যাতায়াত করে।

আপনি যদি বিমানে যাওয়ার প্ল্যান করেন তাহলে এক মাস বা তার পূর্বে টিকেট কেটে রাখবেন তাহলে ভাড়া অনেক কম পড়বে। আর যদি সাথে সাথে দুই একদিনের মাঝে টিকিট কেটে যেতে চান তাহলে ভাড়া অনেক গুন বেড়ে যাবে।

থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়া দাওয়া

আপনি যদি মনে করেন যে চেন্নাইয়ে থাকা খাওয়া নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ে যাবেন তাহলে আপনি খুবই ভুল ধারণায় আছেন। এই হাসপাতালের আশেপাশে অনেক লজ এবং বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি চাইলে দিনপ্রতি ৫০০ টাকার মধ্যেই লজ বা বাসা পেয়ে যাবেন। তবে অনেক উন্নত হোটেলেও থাকতে পারেন যদিও টাকা একটু বেশি খরচ করতে হবে।
প্রায় বাসা বা লজ আপনাকে রান্নার বাসনপত্র, গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। আপনি শুধু বাজার আর রান্না করে খেতে পারবেন।
আবার এর আশেপাশে অনেক বাঙালি হোটেলও রয়েছে। চাইলে সেখানেও খেতে পারবেন। উল্লেখ্য, এখানে বাঙালি হোটেল ছাড়াও ভারতের সকল ধরনের খাবারের হোটেলই রয়েছে।

২. সিএমসি হাসপাতাল

সিএমসি হাসপাতালের পূর্ণরূপ হচ্ছে খ্রিষ্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি চেন্নাইয়ের সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল। এটি খ্রিস্টান মিশনারী দ্বারা পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে আপনি কম খরচে সব ধরনের চিকিৎসাই করাতে পারবেন এবং বিশ্বমানের সেবা পাবেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু এখানে চিকিৎসা করাতে একটু সময় বেশি লাগে। তাই এখানে চিকিৎসা করাতে গেলে হাতে সময় নিয়ে যাবেন।


আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করা থেকে ডাক্তার দেখানো, টেস্ট করানো সব জায়গায় সিরিয়াল দিতে হবে এবং মোটামুটি অনেক সময় চলে যাবে শুধুমাত্র এই সিরিয়ালের পিছনে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। এখানকার চিকিৎসা সেবা বিশ্বমানের।


চেন্নাইয়ের এই হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর আগে আরেকটি বিষয় জেনে নেওয়া দরকার, সেটি হচ্ছে এখানে আগে থেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হয়। আর আগে থেকে যদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না যান তাহলে আপনাকে চেন্নাই গিয়ে কয়েক দিন সময় শুধু শুধু নষ্ট করতে হবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর জন্য।
আর এই হাসপাতালে আপনি অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে ডাক্তারের সাথে পরবর্তীতে কথা বলা যায় এবং বিভিন্ন রিপোর্ট দেখানো যায়। আর আপনারা চাইলে অনলাইনেও রিপোর্ট নিতে পারবেন।

অবস্থান
Christian Medical College
Ida Scudder Road,
Vellore – 632004
Tamil Nadu, India
General: 0416-2281000, +91 9498760000
Patient Related: +91 8000338855
Whatsapp: 9385285957
Email: [email protected]
Working hours:
Mon-Fri: 8 am to 4.30 pm
Sat: 8 am to 12.30 pm

আগে সিএমসি হাসপাতালের একটিই ক্যাম্পাস ছিল। খুব সম্প্রতি তারা রানিপেটে আরেকটি ক্যাম্পাস চালু করেছে। সিএমসি হাসপাতালের মেইন ক্যাম্পাস থেকে রানিপেট ক্যাম্পাস ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তারা অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট রানিপেট ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করেছে।

কিভাবে যাবেন

খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চেন্নাইয়ের ভেলোর উপজেলায় অবস্থিত। ভেলোর উপজেলায় যে রেলস্টেশনটি রয়েছে তার নাম কাটপাটি রেলওয়ে স্টেশন। আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে কলকাতা তারপর কলকাতা থেকে কাটপাটি আসবেন।


কলকাতা থেকে অনেক ট্রেন কাটপাটি স্টেশনে যায়। তবে টিকিট কাটার সময় ভালো করে দেখে তারপর টিকিট কাটবেন, অনেক ট্রেনে কাটপাটি স্টেশনে যায় না।
বিমানে গেলে ঢাকা থেকে সরাসরি চেন্নাই এয়ারপোর্ট অথবা কলকাতা হয়ে চেন্নাই এসে তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সি অথবা বাসে ভেলোর আসতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়া দাওয়া

হাসপাতালের আশেপাশে প্রচুর লজ রয়েছে যেখানে আপনি অনেক কম খরচেই থাকতে পারবেন। এসব লজ আপনাকে রান্নাবান্নার সুবিধা দিবে। আপনি শুধু বাজার করবেন আর রান্না করবেন। তাছাড়া এর আশেপাশে সব ধরনের খাবার হোটেল রয়েছে।
অনেক হোটেলের গাড়ি সার্ভিসও রয়েছে। আপনি চাইলে তাদের গাড়িতে লজ থেকে হাসপাতালে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন আপনারা আগে থেকেই এসব লজ অনলাইনের মাধ্যমে বুক করতে পারবেন।

৩.  রামাচন্দ্র মেডিকেল সেন্টার

শ্রী রামাচন্দ্র মেডিকেল সেন্টারের নাম শুনে অনেকটা অপরিচিত লাগতে পারে। এই হাসপাতালটি অনেকটাই অপরিচিত। মানুষ এই হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক কম জানে।কিন্তু এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও বর্তমানে বিশ্বমানের। চেন্নাইয়ের এই হাসপাতালে আপনি অনেক কম খরচ করেই অনেক ভালো চিকিৎসা পেতে পারেন এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে চিকিৎসা করাতে সিএমসি হাসপাতাল থেকে এখানে অনেক কম সময় লাগে।
এই হাসপাতালটি চেন্নাইয়ের পোরুর নামক জায়গায় অবস্থিত। এটি ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবস্থান
Sri Ramachandra Medical Centre
No.1 Ramachandra Nagar, Porur
Chennai, Tamil Nadu,
India 600 116

কিভাবে যাবেন

শ্রী রামচন্দ্র মেডিকেল সেন্টারটি চেন্নাই সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। আপনারা চাইলে ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমান যেকোন ভাবে চেন্নাই গিয়ে তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পোরুরের এই হাসপাতালে যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়া দাওয়া

এই হাসপাতালের আশেপাশেও অনেক বাসা ও লজ রয়েছে এবং সব ধরনের খাবারেরই হোটেল রয়েছে।

৪.  নারায়নী হাসপাতাল

চেন্নাইয়ের আরেকটি সেরা হাসপাতাল শ্রী নারায়ণী হাসপাতাল ভেলোরের সিএমসি হাসপাতাল থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত ও আধুনিক। এখানেও আপনি অনেক কম খরচে ভালো চিকিৎসা করাতে পারবেন।
এই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাই রয়েছে আর এই হাসপাতালের অনেক শাখা পুরো ভারত জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে।

অবস্থান
Thirumalaikodi, Vellore – 632 055
Tamilnadu, India.
phone: +91 416 2206300
email: [email protected]

কিভাবে যাবেন

হাসপাতালটি কাটপাটি স্টেশন থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য আগের মতই কাটপাটি স্টেশনে যাবেন। তারপর ট্যাক্সি দিয়ে হাসপাতালে যেতে পারবেন।
আর বিমানে গেলে আগের মতই চেন্নাই এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে ভেলোরের বাসে উঠতে হবে। তারপর হাসপাতালে সামনেই নামতে পারবেন অথবা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়া দাওয়া

এই হাসপাতালের আশেপাশেই অনেক লজ, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

এই ৪টি হাসপাতাল চেন্নাই এর সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল। এখানে আপনারা সব ধরনের চিকিৎসাই করাতে পারবেন। অ্যাপোলো বাদ দিয়ে বাকি তিনটা হাসপাতালের খরচও অনেক কম।
আর এসব হাসপাতালে আশেপাশে গড়ে উঠেছে অনেক বাসা ও লজ যেগুলোতে আপনারা অনেক কম টাকায় থাকতে ও খেতে পারবেন।


নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে চেন্নাইয়ে তামিল ভাষা প্রচলিত। তবে অল্প হিন্দি বা ইংলিশ জানা থাকলেই ভালো সেবা নিতে পারবেন। আরেকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে খুশি হবেন যে চেন্নাইয়ের ডাক্তাররা কিছুটা বাংলা বুঝতে পারেন। তারপরও যদি খুব বেশি সমস্যা হয় দোভাষী নিতে পারবেন।


চেন্নাইয়ের হাসপাতালগুলো অনলাইনেও সেবা দেওয়া শুরু করেছে। চাইলে বাংলাদেশ কিংবা অন্য দেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়া কিংবা রিপোর্ট দেখাতে পারবেন। এসব হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে হওয়ায় পরবর্তীতে ট্রিটমেন্ট ও রিপোর্ট ঘরে বসেই পেতে পারেন।

চেন্নাই যাওয়ার আগে যে কাজগুলো করবেন

বাংলাদেশ থেকে চেন্নাই চিকিৎসা করতে যাওয়ার জন্য কি কি করণীয় তার সম্পর্কে একটু জেনে নিন
যাওয়ার পূর্বেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবেন। তাহলে ভারতে গিয়ে আর সময় নষ্ট করতে হবে না। সরাসরি চিকিৎসা করাতে পারবেন।


আগে থেকেই ট্রেন বা বিমানের টিকেট কেটে রাখবেন। তাহলে পরবর্তীতে টিকেট কাটা নিয়ে কোন ঝামেলায় পড়তে হবে না।


টিকিট কাটার কাটার ক্ষেত্রে ভালো করে ডেট দেখে নিবেন। না হলে পরে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
টাকা পয়সা ক্রেডিট কার্ড বা ক্যাশে নিতে পারেন। ক্যাশে নিলে ডলার রেট সম্পর্কে জেনে নিবেন।
ডলার ভাঙ্গানোর সময় যাচাই করে নিবেন।


চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় ভারতে গেলে ওখানে স্থানীয় থানায় ইনফরম করতে হয়। এই কাজটি কখনো ফেলে রাখবেন না।


যেকোন জটিলতায় হাইকমিশনের সাহায্য নিবেন।


আপনারা আগে থেকেই হোটেল বা লজ অনলাইনে বুক করে রাখতে পারেন। তাহলে ওখানে গিয়ে আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।


করোনা টেস্ট লাগবে কিনা তা ভালো করে জেনে নিবেন। আর ভারতে যাওয়ার কতদিনের মধ্যে করোনা টেস্ট করাতে হবে তা জেনে করোনা টেস্ট করাবেন।


এসব হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গেলে সময় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আর সব জায়গায় সিরিয়াল মেইন্টেন করবেন।

আশা করি এই টিপস গুলো ফলো করলে আপনি কোন ঝামেলায় পড়বেন না এবং অনেক সুন্দর ভাবে চেন্নাইয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন।


মনে রাখবেন, অনেক সময় চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। তখন হাই-কমিশনে যোগাযোগ করলে তারা ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিবে। এক্ষেত্রে কিন্তু গাফিলতি একদমই করবেন না।

যাবতীয় খরচ সম্পর্কে জেনে নিন

চলুন এখন জেনে নেই চেন্নাই বা ঐসব হাসপাতালে যাওয়া, থাকা খাওয়া সম্পর্কিত যাবতীয় খরচঃ

বিমানের খরচ (টাকায়)
ঢাকা টু চেন্নাই- ১৫০০০-৩০০০০ টাকা
ঢাকা টু কলকাতা- ৬৫০০-২৫০০০ টাকা
কলকাতা টু চেন্নাই- ১০০০০- ২৫০০০ টাকা

ট্রেনের খরচ (টাকায়)
ঢাকা টু কলকাতা- ২৫০০-৩৫০০ টাকা
কলকাতা টু চেন্নাই সেন্ট্রাল- ১০০০-৬৫০০ টাকা
কলকাতা টু কাটপাটি- ১২০০-৬৫০০ টাকা

বাসের খরচ (টাকায়)
ঢাকা টু কলকাতা- ৯০০-২০০০ টাকা

বাসা ভাড়া/খাওয়া খরচ (টাকায়)
আপনি হাসপাতালের আশেপাশে অনেক বাসা বা লজ পাবেন। একদিনে আপনি সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার বা তার বেশি পর্যন্ত টাকার মধ্যে লজ পাবেন।

আর খাওয়া দাওয়ার জন্য পুরো টাকাটাই আপনার উপর নির্ভরশীল। যদি রান্না করে খান তাহলে টাকা কম লাগবে। আর যদি হোটেলে খান তাহলে তুলনামূলক বেশি লাগবে। আর আপনাকে কতদিন থাকতে হবে তার উপর নির্ভর করবে আপনার বাসা ভাড়া খাওয়া খরচ কত হবে।

যদি আপনি অ্যাপোলোতে চিকিৎসা করান তাহলে বাসা ভাড়া এবং খাওয়া খরচ একটু কম হলেও হবে। কারণ আপনি এখানে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারবেন। আর সিএমসি তে যেহেতু সময় সাপেক্ষ তাই বেশিদিন থাকতে হবে। আর বাসা ভাড়া ও খাওয়া খরচ বাবদ একটু বেশিই লাগবে।

উল্লেখ্য চেন্নাইয়ে ফলের দাম অনেক কম। আর যেহেতু চেন্নাইয়ে গরম অনেক বেশি তাই প্রচুর পরিমাণে ফল খাওয়ার বিকল্প নেই।

আশা করি এই লেখাটি পড়ে বনাগ্লাদেশ থেকে কিভাবে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাবেন এবং চেন্নাইয়ের সবচেয়ে ভালো হাসপাতালগুলো সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি মনে করে থাকেন যে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাবেন তাহলে সময়, সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোন একটি হাসপাতাল পছন্দ করে অ্যাপোয়েনমেন্ট নিন এবং ট্রেন বা বাস বা বিমান যেভাবে আপনাদের সুবিধা হবে সেভাবে যান এবং উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসুন।
আর অবশ্যই সর্বত্র মাক্স পরিধান করুন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

Scroll to Top