সুন্দর মসৃণ ও ঘন কালো চুল সবারই কাম্য। চুলের যত্নে প্রতিনিয়ত কতো কিছুই তো করা হয় কিন্তু ভালো ফলাফল মিলছে না যেন কিছুতেই। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যদি আপনি থাকেন তাহলে আজকের আয়োজনটি আপনার জন্য। বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চুলের বারোটা না বাজিয়ে চেষ্টা করুন ঘরোয়া উপায়ে চুলের সঠিক যত্ন নেয়ার।
প্রাকৃতিক উপাদান সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জেনে নিন চুলের সঠিক যত্ন নেয়ার কার্যকরী উপায় ও চুলের যত্নে ঘরোয়া টোটকা। আরও জানতে পারবেন চুলের জন্য উপকারী বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে।
চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান
আমাদের আশেপাশে অনেক সহজলভ্য উপাদান রয়েছে যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এসকল উপাদান ব্যবহার করে বানিয়ে নিতে পারেন হোম মেড হেয়ার প্যাক, হেয়ার অয়েল ও ন্যাচারাল শ্যাম্পু। জোনে নিন চুলের যত্নে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান ও এর উপকারিতা সম্পর্কে।
১. চুলের যত্নে মেথি

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু প্রাচীন কাল থেকেই মেথি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে থাকা ভিটামিন ও ঔষধি গুন চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্নে মেথি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল হয় ঘন, সিল্কি ও শাইনি।
মেথি পাউডার বা পেস্ট করে হেয়ারপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেলে কয়েকটি গোটা মেথি ভিজিয়ে রাখলেও এটি চুলে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ব্যবহার করতে পারেন মেথির তেল। সকালে খালিপেটে মেথি ভেজানো পানি খেলেও চুলপড়া কমে।
২. চুলে কালোজিরা ব্যবহার

স্ক্যাল্পের যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে কালোজিরা একটি উপকারী ভেষজ উপাদান। চুল কালো করতে ও চুলের গোড়া মজবুত করতে কালোজিরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ব্যবহার করতে পারেন হারবাল কালোজিরা তেল। অথবা বিভিন্ন হেয়ার প্যাকের সাথে কালোজিরা পাউডার বা পেস্ট মিক্স করেও ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ার অয়েল এর সাথে গোটা কালোজিরা ভিজিয়ে মাথায় ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।
৩. অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা একটি অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ। চুল ও স্ক্যাল্পের যত্নে নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা জেল যে কোনো হেয়ার প্যাক এর সাথে ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া সরাসরি অ্যালোভেরা জেল মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা দিয়ে তেল তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৪. চুলে পেঁয়াজ ব্যবহারের নিয়ম

আপনার চুলের জেদি খুশকি দূর করতে সবথেকে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের রসে আছে প্রচুর পরিমানে সালফার এবং কোয়ারসেটিন যা চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে। পেঁয়াজের রস সরাসরি চুলে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা পেঁয়াজ পেস্ট করে হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের হারবাল তেলও চুলের জন্য বেশ উপকারী।
৫. মেহেদী
চুলের যত্নে মেহেদী ব্যবহারের ফলে চুল হয় ভেতর থেকে মজবুত, ফলে চুলপড়া কমে। পাশাপাশি নতুন চুল গজায়। চুলে মেহেদী বাটা ব্যবহার করার প্রচলন বেশ আগে থেকেই। মেহেদী বাটার সাথে ডিম, লেবু, আমলকি ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে সবথেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৬. আমলকি

আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে। আমলকীর রস চুলে ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে ও চুলপড়া প্রতিরোধ হয়। সরাসরি আমলকির রস চুলে ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া হারবাল আমলা তেল ও আমলকির হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৭. চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়ঃ জবা
চুলকে ঘন কালো ও মজবুত করতে জবা ফুলের জুড়ি মেলা ভার। এতে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো অ্যাসি়ড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি মাথার সংক্রমণ জনিত সমস্যা সমাধান করে। চুলের যত্নে জবা অয়েল খুবই জনপ্রিয় একটি হারবাল তেল। সেই সাথে জবা ফুল ও জবা পাতার পেস্ট দিয়ে হেয়ারপ্যাক তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।
৮. লেবু
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি চুলের কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। লেবুর রস স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে মাথার দুর্গন্ধ দূর হয় এবং খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হয়। লেবুর রস যে কোনো হেয়ার প্যাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। লেবুর রসে এলার্জি না থাকলে যে কোনো হেয়ার প্যাকেই দু এক চামচ লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এতে হেয়ার প্যাকের কার্যক্ষমতা কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে।
৯. মধু
আয়ুর্বেদ চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান মধু। প্রাচীনকাল থেকেই চুল ও ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। চুলের রুক্ষতা, আগা ফাটা, ভেঙে পড়া রোধ করতে মধু খুব উপকারী। এটি চুলের আদ্রতা বজায় রাখে ও শুষ্ক চুলে প্রানের সঞ্চার করে। চুলের ময়েশ্চার লক করার সবথেকে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান মধু। মধু ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পুরো চুলে হেয়ার প্যাক হিসেবে লাগালে চুল হয় মসৃণ ও সুন্দর।
১০. ডিম
চুলকে সুস্থ, সতেজ ও প্রানবন্ত রাখতে সবথেকে বেশি যে উপাদানটি ভূমিকা রাখে তা হলো প্রোটিন। মূলত ক্যারোটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন দিয়ে চুল গঠিত হয়। চুলে এই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে চুল ধীরে ধীরে নির্জীব হয়ে পড়ে। চুলের প্রোটিনের ঘাটতি পূরন করার সবথেকে ভালো উপায় ডিম। ডিমের সাথে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে সরাসরি হেয়ার মাস্ক হিসেবে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক
চুলের জন্য উপযোগী প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে তো জেনে নিলেন। এবার জেনে নিন সকল উপাদান কাজে লাগিয়ে কিভাবে একটি কার্যকরী হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন। চুলের যত্নে সপ্তাহে দুই দিন হেয়ার প্যাক লাগানো অত্যন্ত জরুরি। হেয়ার প্যাক চুলের বাড়তি খাবার জোগায়।
তাই নিয়মিত হেয়ার প্যাক লাগালে চুল তুলনামূলক অনেক বাড়বে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে৷ হাতে সময় কম থাকলে কমপক্ষে একদিন হলেও হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত। এখানে তিন ধরনের হেয়ার প্যাক তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো। আপনার চুলের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী যে কোনো একটি হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন।
১. চুল পড়া কমাতে হেয়ার প্যাক
চুল পড়া কমাতে হেয়ার প্যাক তৈরির জন্য প্রয়োজন পড়বে অ্যালোভেরা, অলিভ অয়েল, মধু ও লেবুর রস। গাছ থেকে সরাসরি প্রাপ্ত অ্যালোভেরা সংগ্রহ করতে পারলে সবথেকে ভালো। তবে সেই সুযোগ না থাকলে বাজারে প্রাপ্ত রেডিমেড অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন।
চার চামচ অ্যালোভেরা জেল একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। এর সাথে দিয়ে দিতে হবে দুই চামচ অলিভ অয়েল, এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস। এরপর আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
হাতের তালুতে হেয়ার প্যাক নিয়ে ভালোভাবে পুরো স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে পুরো চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। এভাবে ৩০ তেকে ৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই হেয়ার প্যাকটি সপ্তাহে দুইদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলপড়া কমার পাশাপাশি মাথায় নতুন চুল গজাবে। চুল হবে হেলদি ও শাইনি।
২. চুল লম্বা করার হেয়ার প্যাক

চুল লম্বা করার জন্য একটি কার্যকরী হেয়ার প্যাক তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ডিম, কাঁচা দুধ, অলিভ অয়েল ও লেবুর রস। ডিম ও দুধ চুলের প্রোটিনের যোগান দেয় ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয় এবং সেই সাথে মজবুত হয়।
একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়ে তার মধ্যে হাফ কাপ কাঁচা দুধ অর্ধেকটা লেবুর রস ও দুই চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এই প্যাকটির থিকনেস কিছুটা পাতলা হবে।
প্রথমে চুল সমান দুই ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এরপর একটু একটু করে হেয়ার প্যাক হাতে নিয়ে আলতো হাতে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে। যেহেতু হেয়ার প্যাকটি কিছুটা পাতলা হয় তাই একটু বেশি সময় নিয়ে ম্যাসাজ করে করে চুলে এপ্লাই করতে হবে।
স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগানো হয়ে গেলে আস্তে আস্তে পুরো চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালোবভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইদিন করে নিয়মিত লাগালে এক মাসের মধ্যেই আপনার চুলে পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
৩. খুশকি দূর করতে হেয়ার প্যাক
খুশকি দূর করার হেয়ার প্যাক তৈরির জন্য লাগবে পেঁয়াজ, মেথি, নারকেল তেল, মধু ও লেবু। এই প্যাকে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদান চুলের মৃত কোষকে স্ক্যাল্প থেকে ক্লিন করতে সক্ষম। সেই সাথে ত্বক ও স্ক্যাল্পের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দারুণ কার্যকরী।
একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা শিল পাটায় বেটে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর এই পেস্ট এর সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে পেঁয়াজের রসটা বের করে নিতে হবে। অন্যদিকে সারারাত ভিজিয়ে রাখা মেথি পানি সহ ব্লেন্ড করে বা বেটে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
পেঁয়াজের রস, মেথির পেস্ট এর সাথে দুই চামচ মধু, দুই থেকে তিন চামচ লেবুর রস ও দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল একসাথে একটি পাত্রে নিতে হবে। উপকরণ গুলো ভালোভাবে মিশিয়ে হেয়ারপ্যাক তৈরি করে নিতে হবে।
স্ক্যাল্প সহ পুরো চুলে হেয়ারপ্যাকটি লাগিয়ে সাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ত্রিশ মিনিটের মতো। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললেই হবে। এই হেয়ারপ্যাকটি নিয়মিত সপ্তাহে একদিন লাগালেই হবে। নিয়মিত পেঁয়াজ ও মেথির হেয়ার প্যাক লাগালে চুলের খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল সিল্কি হয়, লম্বা হয় ও চুল পড়া কমতে থাকে।
শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন
অনেককই মনে করেন চুলে শ্যাম্পু করা শেষ মানেই সব দায় শেষ। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারনা। চুলে শ্যাম্পু করলে শুধুমাত্র চুলের ময়লা দূর হয় তাছাড়া শ্যাম্পুর অন্য কোনো অবদান খুব বেশি একটা নেই। বরং শ্যাম্পু করলে চুলের ন্যাচারাল অয়েল হারিয়ে যায় ফলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। শ্যাম্পু করার পরেও আমাদের চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। জেনে নিন চুলে শ্যাম্পু করার পর কোন কাজগুলো করবেন আর কোন কাজগুলো করবেন না।
১. কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পর চুলের প্রাকৃতিক অয়েল চলে যায় ফলে চুল অনেক ড্রাই ও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই চুলের ময়েশ্চার লক করে চুলকে সুন্দর ও মোলায়েম করে তুলতে শ্যাম্পু করার পরে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন কন্ডিশনার যাতে একটুও স্ক্যাল্পে না লাগে। আর কন্ডিশনারের প্যাকেটের গায়ে উল্লিখিত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে খুবই ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে নয়তো চুলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
২. সিরাম ব্যবহার করুন
চুলকে দূষণ ও ধুলোবালির হাত থেকে বাঁচাতে একটি হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের পর চুল হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় সিরাম এপ্লাই করুন।
৩. চুল মুছতে নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পরে চুল খুবই সেনসিটিভ অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় সামান্য টান লাগলে বা ঘসা লাগলে চুল ছিড়ে যেতে পারে। তাই মোটা ও শক্ত টাওয়েল এড়িয়ে চলুন। খুব নরম ও পরিষ্কার একটি সুতি কাপড় দিয়ে চুলের পানি মুছে নিন।
৪. হাত দিয়ে জট ছাড়ান
শ্যাম্পু করার পরে কখনেই ভেজা অবস্থায় চুলে চিরুনি ব্যবহার করবেন না। হাতের আঙুল ব্যবহার করে খুবই সাবধানে চুলের জট ছাড়িয়ে নিন। ভেজা অবস্থায় জট না ছাড়ালে পরবর্তীতে আরও বেশি জট বেঁধে যেতে পারে। আর ভেজা চুলে চিরুনি ব্যবহার করলে চুল পড়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকে।
রাতে চুলের যত্ন
শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় চুলও রাতে নিজের ড্যামেজ রিপেয়ার করে। সেই সাথে চুলের বৃদ্ধিও ঘটে রাতের বেলাতেই। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলের বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত। জেনে নিন রাতে চুলের যত্ন নেয়ার উপায় সম্পর্কে।
১. চুল পরিষ্কার ও শুকনো আছে কিনা নিশ্চিত করুন
ময়লা মাথা নিয়ে ঘুমাতে গেলে চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার হওয়ার বদলে আরও বেশি ড্যামেজ হবে। তাই সারাদিন দূষণ ও ধুলোবালিতে ঘোরাফেরা করলে বাড়িতে এসেই চুলে শ্যাম্পু করে নিন। ঘুমানোর আগে শ্যাম্পু করে আবার ভেজা চুল নিয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। ভেজা চুল নিয়ে ঘুমালে চুলের গোড়া খুব বেশি দূর্বল হয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ দেখা দেবে চুলপড়া সহ আরও বিভিন্ন সমস্যা। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করুন আপনার চুল পরিষ্কার ও শুঁকনো আছে কিনা।
২. ভিটামিন ই ক্যাপসুল
চুলকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলে ব্যবহার করুন। চুলের সাইজ ও ঘনত্ব অনুযায়ী একটি বা দুটি ক্যাপসুল নিয়ে এর ভেতরের তেলটুকু বের করে নিন। আলতো হাতে চুলে লাগিয়ে নিলেই হবে। এতে করে সারারাত চুল সঠিকভাবে রিপেয়ার হবে ও বেড়ে উঠবে।
৩. চুল বেঁধে ঘুমান
খোলা চুলে ঘুমালে বিছানার সাথে ঘষা লেগে ভেঙে যেতে পারে। তাই হালকা করে চুল বিনুনি করে ঘুমান। তবে মনে রাখবেন খুব বেশি টাইট করে চুল বাঁধা উচিত না। এতে চুল স্বাধীন ভাবে বাড়তে পারে না এবং চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. বিছানার দিকে নজর দিন
আপনি যে বালিশে বা বিছানায় ঘুমাচ্ছেন তা পরিষ্কার কিনা নিশ্চিত করুন। ময়লা বালিশে সারারাত মাথা দিয়ে ঘুমালে চুলে খুশকি সহ নানা ধরনের সংক্রমণ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া তেল চিটচিটে বালিশ চুলকে মলিন ও নির্জীব করে দেয়। সবথেকে ভালো হয় সিল্ক জাতীয় কাপড়ের তৈরি বালিশ ব্যবহার করলে। এই জাতীয় কাপড় ময়লা ধরে রাখে না এবং তেল চিটচিটে ভাব খুব কম হয়।
চুলের যত্নে কি কি খাবেন?

বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি চুলকে ভেতর থেকেও পুষ্টি জোগাতে হবে। আর চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি সরবরাহ করার একমাত্র উপায় হলো খাওয়া দাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া। জানতে হবে কোন কোন খাবার চুলের জন্য উপকারী আর কোনগুলি ক্ষতিকর। জেনে নিন চুলের যত্নে কি কি খাবেন।
- সবজি ও ফলমূল: চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে মসৃণ ও সুন্দর করে তুলতে প্রচুর পরিমানে শাকসবজি ও রঙিন ফলমূল খেতে হবে। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়।
- ডিম: হেয়ার প্যাক ও হেয়ার মাস্ক হিসেবে ডিম ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত ডিম খান। এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম চুলকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
- রাজমা: সুস্বাদু রাজমা শরীরের পাশাপাশি চুলকে সতেজ করে কেননা এতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাজমা রাখতে পারেন।
- বাদাম: বাদামে থাকা প্রোটিন চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে ও দুর্বল চুলকে শক্তিশালী করে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় বাদাম খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
- ওটস: প্রোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সহ আরও বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ওটস চুলের জন্য বেশ উপকারী। তাই চুলের যত্নে খাদ্য তালিকায় ওটস হতে পারে একটি আদর্শ খাবার।
- মাছ: প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ চুলের গঠনে সবথেকে বেশি কার্যকরী। খাদ্য তালিকায় সাধ্যমতো মাছ রাখার চেষ্টা করুন।
চুলের জন্য উপকারী খাবার গ্রহণ করার পাশাপাশি চুলের ক্ষতি করে এমন খাবার পরিহার করুন। ময়দা জাতীয় খাবার চুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই একদমই পরিহার করতে না পারলেও ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার যতোটা সম্ভব কম গ্রহণ করুন। এছাড়া অ্যালকোহল, সোডা ও তেলে ভাজা খাবার চুলের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এসব খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
আশাকরি চুলের যত্নের সঠিক উপায় ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন। নিজের চুলের ধরন ও সমস্যা বিবেচনা করে সঠিক নিয়মে চুলের যত্ন নিন। চুলের জন্য উপকারী এমন খাবার বেশি ব্যবহার করুন সেই সাথে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিন। মনে রাখবেন সচেতনাই সৌন্দর্যের পূর্বশর্ত।