বাংলাদেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন জেলা চট্টগ্রাম। প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন ভ্রমনের উদ্যেশ্যে, কাজের উদ্যেশ্যে কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যেশ্যে ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করে। আবার চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই ঢাকায় আসেন কাজের তাগিদে কিংবা ভ্রমণের উদ্যেশ্যে।
তাই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে সড়ক, আকাশ ও রেলপথ এই তিন উপায়েই ঢাকা আসা যায়। তবে রেলপথে তুলনামূলক খরচ কম এবং সময়ও কম লাগে পাশাপাশি ভ্রমনও বেশ আরামদায়ক।
বাংলাদেশ রেলের সকল ট্রেনের সময়সূচী, স্টেশন ও বিরতির তালিকার PDF: বাংলাদেশ রেল সময়সূচী
তাই অধিকাংশ যাত্রীই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে রেলপথকে বেছে নেয়। চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে নিয়মিত পর্যাপ্ত ট্রেন আছে বিধায় স্বস্তিতে ভ্রমন করা যায়। সেই সাথে একেক ট্রেনের একেক টাইম সিডিউল আছে বিধায় ভ্রমন করতে পারবেন নিজের সুবিধা অনুযায়ী।
চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচি ও ট্রেনের ভাড়ার তালিকা
চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে নিয়মিত মোট আটটি ট্রেন বিভিন্ন টাইম সিডিউলে চলাচল করে। এর মধ্যে পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেন এবং তিনটি মেইল ট্রেন।
চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের তালিকা
চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো:
- ১. সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১)
- ২. মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১)
- ৩. মহানগর গোধূলী (৭০৩)
- ৪. সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭)
- ৫. তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪১)
চট্রগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেনগুলো হলো:
- ১. ঢাকা মেইল
- ২. কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
- ৩. চট্টলা এক্সপ্রেস
চট্টগ্রাম টু ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি
জেনে নিন চট্টগ্রাম থেকে কোন ট্রেন কখন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং কখন ঢাকা গিয়ে পৌঁছায়। সেই সাথে দেখে নিন বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্থল।
১. সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১)
সুবর্ণ এক্সপ্রেস বাংলাদেশের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে অন্যতম দ্রুতগামী ও বিরতিহীন ট্রেন। ট্রেনটি নিয়মিত সকাল ৭ঃ৩০ এ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
সুবর্ণ এক্সপ্রেস সোমবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে বাকি ছয়দিন নিয়মিত একই সময়ে চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচল করে। সুবর্ণ এক্সপ্রেস একটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বিধায় ৩৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রায় কোনো স্টেশনেই থামে না। শুধুমাত্র ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে মাত্র তিন মিনিটের জন্য যাত্রা বিরতি করে।
২. মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১)
মহানগর এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি বিলাসবহুল দ্রুতগামী ট্রেন। ট্রেনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে।
মহানগর এক্সপ্রেস নিয়মিত দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে এবং সন্ধ্যা ৭টার একটু আগে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে এসে পৌঁছায়।
মহানগর এক্সপ্রেস এর সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে ট্রেনটি মোট ১২ টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রা বিরতি স্থানগুলো হলো: কুমিরা স্টেশন, ফেনী জংশন, নাঙ্গলকোট স্টেশন, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা স্টেশন, কসবা স্টেশন, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন, আশুগঞ্জ স্টেশন, ভৈরব বাজার জংশন, নরসিংদী স্টেশন এবং সবশেষে ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন।
৩. মহানগর গোধূলী (৭০৩)
১৯৮৬ সালে চালু হওয়া মহানগর গোধূলী ট্রেনটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি বিলাসবহুল আন্তঃনগর ট্রেন। ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন দুপুর ২টা ৩৫ এ যাত্রা শুরু করে এবং রাত ৮টার দিকে ঢাকার স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
গোধূলি মহানগর ট্রেনটি সপ্তাহে সাতদিনই চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচল করে। এর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই।
মহানগর গোধূলী ট্রেনটি যাত্রা পথে মোট আটটি স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। বিরতি স্থানগুলো হলো: ফেনী জংশন, গুণবতী স্টেশন, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা স্টেশন, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন, ভৈরব বাজার জংশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন।
৪. সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭)
চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন হলো সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। এটি খুবই বিলাসবহুল ও দ্রুতগামী ট্রেন।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিয়মিত বিকাল ৪টা ৪৫ এ ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা করে এবং রাত ৯টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে ছয়দিন নিয়মিত একই সময়ে চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচল করে।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস একটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বিধায় এটি যাত্রা পথে কোনো স্টেশনেই যাত্রা বিরতি করে না। শুধুমাত্র ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে অল্প সময়ের জন্য বিরতি দেয়।
৫. তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪১)
তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের পূর্ব নাম ছিল তূর্ণা নিশীথা। কেননা এই ট্রেনটির যাত্রা শিডিউল রাতে। আপনি যদি রাতে ঝামেলাহীনভাবে একটি আরামদায়ক যাত্রা করতে চান তাহলে তূর্ণা এক্সপ্রেস হবে উপযুক্ত পছন্দ। এটি একটি উচ্চগতি সম্পন্ন বিলাসবহুল আন্তঃনগর ট্রেন।
তূর্ণা এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং ভোর ৪টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায়।
তূর্ণা এক্সপ্রেস সপ্তাহে সাতদিনই চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচল করে। এই ট্রেনটির কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
তূর্ণা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে মোট সাতটি স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। বিরতি স্থানগুলো হলো: ফেনী জংশন, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা স্টেশন, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন , ভৈরব বাজার জংশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন।
চট্টগ্রাম টু ঢাকা মেইল ট্রেনের সময়সূচি
চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী তিনটি মেইল ট্রেনের সময়সূচি ও বন্ধের দিন সম্পর্কে জেনে নিন।
১. ঢাকা মেইল
ঢাকা মেইল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
ঢাকা মেইল এর কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। সপ্তাহের যে কোনো দিনই নির্দিষ্ট সময়ে এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন।
যাত্রা পথে ট্রেনটি যে সকল স্টেশনে বিরতি দেয়: পাহাড়তলী স্টেশন, ভাটিয়ারী স্টেশন, সীতাকুণ্ড স্টেশন, লাকসাম জংশন, কুমিল্লা স্টেশন, আখাউড়া জংশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন, আশুগঞ্জ স্টেশন, ভৈরব বাজার জংশন, নরসিংদী স্টেশন, টঙ্গী জংশন, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন।
২. কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস প্রতিদিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ১০ টায় ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায়।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এর কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলাচলের পথে সবগুলো স্টেশনেই যাত্রা বিরতি করে।
৩. চট্টলা এক্সপ্রেস
চট্টলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা করে এবং দুপুর ৩ টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায়।
চট্টলা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে ট্রেনটি মোট ১৪ টি স্থানে যাত্রা বিরতি করে।
চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের ভাড়া:
সুযোগ সুবিধা ও শ্রেণি ভেদে চট্টগ্রাম টু ঢাকা রুটে চলাচলকারী ট্রেনের টিকেট মূল্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। জেনে নিন চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের ভাড়া।
- ২য় শ্রেণী – ৯০ টাকা
- ২য় শ্রেণী (মেইল ) – ১১৫ টাকা
- কমিউটার – ১৪৫ টাকা
- সুলভ – ১৭৫ টাকা
- শোভন – ২৮৫ টাকা
- শোভন (চেয়ার) – ৩৪৫ টাকা
- ১ম শ্রেণী চেয়ার – ৪৬০ টাকা
- স্নিগ্ধা – ৬৫৬ টাকা
- ১ম শ্রেণী কেবিন – ৬৮৫ টাকা
- এসি (সিট) – ৭৮৮ টাকা
- এসি (কেবিন ) – ১১৭৯ টাকা
এখানে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ায় তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। এই তথ্য যে কোনো সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক হালনাগাদ করতে পারে। যাত্রা শুরুর আগে অবশ্যই সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে নেয়া জরুরি। আশাকরি আপনার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ভ্রমনের ক্ষেত্রে আজকের লেখাটি সহায়ক হবে। আপনার যাত্রা সুন্দর হোক।
